প্রকৃতির প্রায় কোনো ক্ষতি না করেই নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন ও সংরক্ষণের নানা উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে৷ সুইজারল্যান্ডে পাহাড়ের গুহার মধ্যেই সহজ এক আইডিয়া প্রয়োগ করে এক্ষেত্রে সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
ভবিষ্যতে জ্বালানি সরবরাহের অভিনব এক পথ প্রদর্শন করছেন দুই গবেষক৷ সুইজারল্যান্ডের দক্ষিণে তিচিনো অঞ্চলে তাঁরা জ্বালানি সংরক্ষণের এক নতুন প্রযুক্তি সৃষ্টি করেছেন৷ এক পরিত্যক্ত সুড়ঙ্গে তাঁরা এক কমপ্রেস্ড এয়ার স্টোরেজ তৈরি করেছেন৷ টিলার গভীরে এই ভাণ্ডারে জ্বালানি কমপ্রেস্ড এয়ারের রূপে জমা রাখা সম্ভব৷ আলাকায়েস কোম্পানির গিভ সানগানে বলেন, ‘‘আমাদের আইডিয়া প্রয়োগ করতে গেলে চাই গুহার মধ্যে কমপ্রেস্ড পরিবেশ৷ এই গুহা ব্যবহারের সুযোগ আদর্শ পরিবেশ এনে দিয়েছে৷ গোটা পাহাড়টিকেই স্টোরেজ হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে৷''
এই প্রক্রিয়ার আওতায় উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ কাজে লাগিয়ে একটি গুহার মধ্যে এয়ার কম্প্রেশন করা হয়৷ প্রয়োজনে সেই বাতাস বার হতে দিলে তা দিয়ে জেনারেটর চালিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব৷ জ্বালানি সংরক্ষণের লক্ষ্যে দ্রুত নতুন পদ্ধতির খোঁজ চলছে৷ কারণ বাতাস না থাকলে বায়ুশক্তি চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র চলতে পারে না৷ অথবা সূর্যের আলো ছাড়া সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রও চলে না৷
বাংলাদেশে বাড়ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার
খনিজ জ্বালানি শক্তির ভাণ্ডার দিনে দিনে ফুরিয়ে আসায় পৃথিবীজুড়ে নির্ভরযোগ্যতা বাড়ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তির৷ বাংলাদেশে এ শক্তির ব্যবহার বাড়ছে উল্লেখযোগ্য হারে৷ ছবিঘরে থাকছে তারই কিছু নমুনা৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
সোলার ইরিগেশন সিস্টেম
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকাতেই বিদ্যুতের সংযোগ পৌঁছেনি৷ যে জায়গাগুলাতে সংযোগ আছে সেখানে লোডশেডিং একটি বড় সমস্যা৷ সে কারণে দেশে ‘সোলার ইরিগেশন সিস্টেম’ জনপ্রিয় হচ্ছে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
ধোঁয়া ও শব্দ দূষণ মুক্ত
সেচ কাজে ডিজেল ইঞ্জিন ব্যবহারে বিকট আওয়াজে একদিকে শব্দ দূষণ অন্যদিকে এর কালো ধোঁয়া পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি করে৷ এ দুই ক্ষতির দিক বিবেচনায় জনপ্রিয় হচ্ছে সোলার ইরিগেশন সিস্টেম৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
বন্যা কবলিত এলাকায় সোলার জনপ্রিয়
বাংলাদেশের গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন চরাঞ্চলের বিভিন্ন বন্যাপ্রবণ এলাকায় বাড়ছে সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার৷ এসব এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছানোও ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
হোটেল-রির্সোটে
বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার হোটেল-রির্সোটে বাড়ছে সৌর শক্তির ব্যবহার৷ পানি গরম করার যন্ত্র চালাতে প্রচুর বিদ্যুৎ শক্তির খরচ হয়৷ সেক্ষেত্রে সোলার ওয়াটার হিটার ব্যবহারে খরচ অনেক কম৷
বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে দিন দিন বাড়ছে সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার৷ দেশের তিন পাবর্ত্য জেলার বেশিরভাগ এলাকা বিদ্যুৎহীন হওয়ায় সেসব এলাকার বাসিন্দাদের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে সৌর বিদ্যুৎ৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
উপকূলীয় এলাকায়
বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে সৌর বিদ্যুৎ বেশ জনিপ্রয়৷ প্রায়ই প্রাকৃতিক দুযোর্গে এসব এলাকা দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎহীন থাকে৷ ফলে সৌর বিদ্যুৎ জনপ্রিয় হয়েছে সেসব এলাকাগুলোতে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
সৌরশক্তি ব্যবহারে শীর্ষে বাংলাদেশ
সৌরশক্তি ব্যবহারকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে৷ ‘রিনিউয়েবলস ২০১৭ গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট' অনুযায়ী বিশ্বে ব্যবহৃত ৬০ লাখ সৌর প্যানেলের মধ্যে ৪০ লাখই ব্যবহার করা হচ্ছে বাংলাদেশে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
বায়ু বিদ্যুতে পিছিয়ে বাংলাদেশ
সৌর বিদ্যুতের ব্যবহারে বাংলাদেশ বেশ এগিয়ে গেলেও পিছিয়ে রয়েছে বায়ু বিদ্যুৎ ব্যবহারে৷ কক্সবাজারের কুতুবদিয়া দ্বীপের ১ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি চালু হলেও দেশের অন্যান্য প্রকল্প বন্ধ রয়েছে দীর্ঘ সময় ধরে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
জনপ্রিয় হচ্ছে বায়োগ্যাস
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বেড়েছে বায়োগ্যাসের ব্যবহার৷ যেসব বাড়িতে গবাদি পশু রয়েছে তারা এখন ঝুঁকছেন বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
10 ছবি1 | 10
এতকাল পাম্প স্টোরেজ প্লান্ট বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কে জ্বালানি যোগানের তারতম্য সামলে এসেছে৷ তবে কমপ্রেস্ড এয়ার স্টোরেজের বাড়তি সুবিধা রয়েছে৷ গিভ সানগানে বলেন, ‘‘পাম্প স্টোরেজ প্লান্টের তুলনায় আমাদের ব্যয় প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কম৷ তাছাড়া প্রকৃতির ক্ষতি করে আমাদের কোনো বড় বাঁধ বা জলাধার তৈরি করতে হয় না৷ সবকিছুই পাহাড়ের মধ্যেই তৈরি করা হয়৷ ফলে শুধু অর্থনৈতিক সুবিধার কারণে নয়, পরিবেশের জন্যও এটা ভালো৷''
প্রায় কোনো অংশই বাইরে চোখে পড়ে না৷ নির্মাণের কাজও যথেষ্ট পরিমিত৷ গিভ সানগানে বলেন, ‘‘৫ মিটার দীর্ঘ সিমেন্টের তৈরি কোন গুহার মধ্যে চাপ ধরে রাখে৷ ডানদিকে ইস্পাতের তৈরি দুর্ভেদ্য দরজা৷ পাহাড়ের মধ্যেও কোনো ফাঁকফোকর নেই৷ পাহাড় থেকে অবিরত পানি ঢুকছে, অর্থাৎ কোনো বাতাস বার হচ্ছে না৷''
গুহার মধ্যে প্লান্টের একটা অংশ হলো তাপ ধরে রাখার এক স্টোরেজ৷ এটাই গোটা প্রকল্পের আসল উদ্ভাবন৷ এর ফলে দক্ষতা ৫০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭০ শতাংশ হয়ে দাঁড়ায়৷ সাইকেলের পাম্পের মতো এ ক্ষেত্রেও বাতাস কমপ্রেশনের ফলে উত্তাপ সৃষ্টি হয়৷ সেই উত্তাপ হিট স্টোরেজে জমা হয়৷
জেনারেটরের মাধ্যমে বাতাস বার করে দিলে তাপমাত্রা কমে যায়৷ হিট স্টোরেজে রাখা জ্বালানি তখন জেনারেটরটিকে শীতে জমে যেতে দেয় না৷ গোটা প্লান্ট এর মধ্যে পরীক্ষা করা হয়েছে৷ গবেষকরা জানিয়েছেন, প্লান্ট ঠিকমতো চলছে৷ আন্দ্রেয়াস হাসেলবাখার বলেন, ‘‘আমরা নিখুঁতভাবে হিট স্টোরেজ, গুহার দেওয়াল এবং গোটা প্লান্টের কাজ পরীক্ষা করতে পেরেছি৷ ফলে এই প্রযুক্তির প্রয়োগ সম্পর্কে যথেষ্ট আস্থা তৈরি হয়েছে৷''
পরের পদক্ষেপ হবে এমন এক প্লান্ট তৈরি করা, যা এই আইডিয়ার লাভজনক প্রয়োগের দৃষ্টান্ত৷ বিশেষ করে বিদ্যুতের উচ্চ মূল্যের কারণে ইউরোপে এই প্রযুক্তি যথেষ্ট লাভজনক হতে পারে৷