জার্মান আলোকচিত্রশিল্পী ব্যার্ন্ড রিচেল সারা জীবন ধরে পাহাড়ের রৌদ্রঝলমল, সুখি, বিজ্ঞাপনের সুদিকটিই দেখিয়েছেন তাঁর ছবিতে৷ কিন্তু তাঁর ক্যামেরায় পর্বতঘেরা পৃথিবীর অন্য এক চেহারাও ধরা পড়েছে৷
বিজ্ঞাপন
সুন্দর, সুবিশাল, নয়নাভিরাম পাহাড়-পর্বতের ছবি দেখে দেখে মানুষের চোখ পচে গেছে৷ জার্মানির মানুষ, পর্বতারোহী ও আলেকচিত্রশিল্পী ব্যার্ন্ড রিচেলও সেটা জানেন৷ বিজ্ঞাপন সংস্থা আর তাদের মক্কেলরা ব্যার্ন্ডের কাছ থেকে নিসর্গের ছবিই কিনতে চায়, রৌদ্রকরোজ্জ্বল, সুভাসিত প্রকৃতিদেবীর ছবি৷ তাই মাঝেমধ্যে একটু অন্যরকম ছবি তোলার সাধ হয় ব্যার্ন্ডের৷
‘‘গত ২৯ বছর ধরে নৈসর্গিক দৃশ্য খুঁজে বেড়াচ্ছি'', বলেন ব্যার্ন্ড৷ ‘‘আমার সমস্ত অভিজ্ঞতা আর দক্ষতার ভিত্তি হল আবহাওয়ার পূর্বাভাস; পরিষ্কার আকাশ, সুন্দর আলো৷ কিন্তু ভালো আবহাওয়ার জন্য অপেক্ষা করার সময় প্রকৃতির নাটকীয় দিকটাও দেখেছি – আর তার ছবি তুলেছি৷ সেই সব গুরুগম্ভীর, রহস্যময়, বিষাদমলিন মুহূর্তের ছবি নানা সম্পাদকীয় বিভাগকেও পাঠিয়েছি৷ কিন্তু তারা সবাই মাথা নেড়ে বলেছে, না, ও সব ছবি চলবে না৷ সকলের শুধু সুন্দর ছবি চাই৷''
ক্যামেরায় পাহাড়ের অন্য রূপ
04:30
অন্ধকারে আলো
অথচ অন্ধকারই আলোকে ফুটিয়ে তোলে৷ অন্ধকারের একটা নিজস্ব রূপ আছে – যেমন আল্পস পর্বতমালার মঁ ব্লঁ পর্বতশিখরের ল্য গ্রঁদ শোরাস – আলো-আঁধারিতে ভীতিময়৷ রিচেল-এর বিষয়বস্তু হলো তাই: আঁধার, প্রকৃতির নাটকীয় রূপ, যেমন শেক্সপিয়ারের নাটকে পাওয়া যায়৷
‘‘আমি শুধু বাভেরিয়ার এই পাহাড়ি এলাকাতেই সাত-আটবার ঝড়বৃষ্টির পিছনে দৌড়েছি – বাড়ির কার্নিশের নীচে কিংবা ঝোপঝাড়ের নীচে দাঁড়িয়ে – কিন্তু কোনো ভালো ছবি তুলতে পারিনি'', শোনালেন ব্যার্ন্ড৷‘‘তারপরে আসে কখেল হ্রদের উপর সেই চূড়ান্ত কালবৈশাখি, কোনোরকম বৃষ্টি ছাড়াই৷ অথচ এখানেই আমার বাস৷ আর এখানেই আমি আমার সেরা বজ্র-বিদ্যুতের ছবিগুলো তুলতে পেরেছি৷ তবে বহুবছর সময় লেগেছে৷''
পর্বতারোহী এবং আলোকচিত্রশিল্পী হিসেবে তিনি পাহাড় চেনেন; গেছেন হিমালয় থেকে পাটাগোনিয়ার লোফোটেন পর্বতমালা অবধি সর্বত্র৷ আবার খুব কাছেই: অস্ট্রিয়ার ও্যটসটাল উপত্যকায়৷ হিমবাহের গহ্বরের মধ্যে ঢুকে দেখা, সেখানে কী আছে ও তার ছবি তোলা৷
শিশুর ক্যামেরায় নিজের জগত
দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনের কাইয়েলিচা এলাকার শিশুরা তাদের কাছে যা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় সেসবের ছবি তোলে৷ ক্যামেরা হাতে আশেপাশের ছবি তুলে বেড়ায় ওরা৷ কাইয়েলিচায় প্রায় ১২ লাখ মানুষের বাস, তাঁদের প্রায় সবাই খুব গরিব৷
ছবি: Elethu/Karin Banduhn
একদিনের রিপোর্টার
‘‘জীবনে সত্যি যা ভালোবাসো তা দেখাও’’ – ঠিক এই কথাটাই বলে দেয়া হয়েছে স্থানীয় একটি স্কুলের ছয় বছর বয়সি এই শিশুদের৷ এই প্রথম ক্যামেরা হাতে নিয়েছে ওরা৷ কয়েক ঘণ্টা ক্যামেরা চালানো শেখার পর নেমে পড়েছে সেরা ছবি তোলার কাজে৷
ছবি: Karin Banduhn
‘নতুন বাড়ি’
কোসা ভাষায় কাইয়েলিচা মানে ‘নতুন বাড়ি’৷ সরকার চায় এলাকায় নতুন ঘর-বাড়ি হোক৷ কিন্তু লিখতার পরিবারের মতো অনেকেরই কাঠের বাড়ি ছেড়ে নতুন বাড়িতে ওঠার সাধ্য নেই৷
ছবি: Liktha/Karin Banduhn
ভরপুর বাড়ি
সিফোকাজির পরিবারে এক ছাদের নীচে বাস করে তিন প্রজন্ম৷ কাইয়েলিচার বেশির ভাগ পরিবারের মতো এ পরিবারেরও মূল উপার্জনকারী বাবা, পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে অন্য বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে মা৷ মা-বাবা যখন কাজে ব্যস্ত, তখন বাচ্চাদের দেখাশোনা করেন দাদা-দাদি৷
ছবি: Siphokazi/Karin Banduhn
অমূল্য সম্পদ
খেলনা খুব প্রিয় মাহলের৷ বেশিরভাগ খেলনাই তার স্কুলে আসে জার্মানির হামবুর্গ শহরের শুলকাম্প প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে৷ কাইয়েলিচা সংস্থা ওদের স্কুলের পাশে আছে সবসময়৷
ছবি: Mahle/Karin Banduhn
ছেলেদের খেলনা
মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের পাশাপাশি একটা গাড়ি থাকলে কার না ভালো লাগে! জায়গা নেই বলে কাইয়েলিচার বাচ্চারা বাড়িতে খুব একটা খেলতে পারে না৷ খুদে ফটোগ্রাফার ইভিভসে তাই খালি ক্যান দিয়েই বানিয়ে নিয়েছে রেস ট্র্যাক৷
ছবি: Ivivse/Karin Banduhn
ক্ষুধা নিবারণ
লুলুথো স্কুল থেকে ফেরে ভীষণ ক্ষুধা নিয়ে৷ ঘরে সবসময় খাওয়ার মতো কিছু না কিছু থাকে বলে রক্ষা৷ কাইয়েলিচার অধিকাংশ পরিবার খাবারের পেছনে প্রতিদিন খরচ করে ২২ রান্ড, অর্থাৎ ১.৭০ ইউরোর মতো৷
ছবি: Lulutho/Karin Banduhn
ঐতিহ্য আর দৈনন্দিন জীবন
স্থানীয়দের অধিকাংশই কোসা জনগোষ্ঠীর৷ নেলসন ম্যান্ডেলা আর তাঁদের ভাষা এক৷ তাঁদের কাছে ঐতিহ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ সাধারণত মেয়েরা রান্না করে আর ছেলেরা কাজ করতে যায় বাইরে৷
ছবি: Yandise/Karin Banduhn
কাইয়েলিচার শিশুরা
ফটোসাংবাদিক এলেথুর জন্য বন্ধুরা খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ এখানে শিশুরা আত্মবিশ্বাসী এবং সুখি মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতে পারে৷ এটা দরকারও, কেননা শিশুদের হাতেই তো দেশের ভবিষ্যৎ!
ছবি: Elethu/Karin Banduhn
8 ছবি1 | 8
কেননা এ এমন একটি বস্তু, যা উপে যাবে, হারিয়ে যাবে; আল্পস পর্বতমালার হিমবাহগুলির দিন ফুরিয়ে আসছে৷
পাহাড়ের ডাক
ব্যার্ন্ড বলেন, ‘‘অধিকাংশ মানুষ বা পর্বতারোহী ম্যাটারহর্ন, গ্রোসগ্লকনার-এর মতো সুবিখ্যাত চুড়োগুলোর দিকে দৌড়ান, যাদের নাম সবাই চেনে৷ যাতে পরে অফিসে গিয়ে বড়গলা করে বলা যায়, ‘আমি ম্যাটারহর্নে চড়েছিলাম৷' যত নির্জন পাহাড়, ততো গভীর সেই অনুভূতি৷ চড়া ঠিক ততটাই কঠিন, উচ্চতাও এক, তবুও...৷''
ব্যার্ন্ড রিচেল-এর ছবির বইটির নাম ‘‘ডার্ক মাউন্টেন্স'', ‘আঁধার পাহাড়'৷ ক্ষণভঙ্গুর, স্বল্পস্থায়ী৷ এংগাডিন-তে শেষ ঝড় যে ক্ষয়ক্ষতি করেছে; সুইজারল্যান্ডের গ্রিন্ডেলভাল্ড হিমবাহ; যা কিছু ভগ্ন, রিক্ত, আহত, তাই যেন ব্যার্ন্ড রিচেলের ক্যামেরায় ধরা পড়ে৷
‘ডার্ক মাউন্টেন্স' বইটিতে তার অন্য দিক, তার অন্ধকার দিকটিকেও দেখা যায় – যেন পাহাড়ের অন্য মুখ৷
ফটোকিনা: ফটোগ্রাফি এবং সিনেমাপ্রেমীদের স্বর্গ
ফটোগ্রাফি সংক্রান্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় মেলা ‘ফটোকিনা’ আবারও শুরু হয়েছে জার্মানির কোলন শহরে৷ ৬৬ বছর ধরে ফটোগ্রাফি এবং সিনেমাপ্রেমীদের কাছে এই মেলাটি অনেকটা স্বর্গের মতো৷ ফটোকিনা-২০১৬ আসর নিয়েই এই ছবিঘর...
ছবি: DW/A. Purwaningsih
যখন থেকে শুরু
‘ফটোকিনা’-র প্রথম আসরটি জার্মানির এই কোলন শহরেই হয়েছিল, ১৯৫০ সালে৷ ১৯৬৬ সাল থেকে দু’বছর পরপর নিয়মিতই অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ আসর৷
ছবি: DW/A. Purwaningsih
এবারের আকর্ষণ
সব আয়োজনেই বিশ্বের সেরা ক্যামেরাশিল্পী এবং ক্যামেরার সমাবেশ হয় এখানে৷ এবার এসেছে ফুজির এই এক্স-টি২ ক্যামেরা৷ ক্যামেরাটি ‘ওয়েদারপ্রুফ’, অর্থাৎ সব রকমের আবহাওয়ায়, যে কোনো জায়গায় এটি নিয়ে কাজ করা যাবে৷
ছবি: DW/A. Purwaningsih
নাইকনের অ্যাকশন ক্যামেরা
নাইকনের এই অ্যাকশন ক্যামেরাটিও ফটোকিনা-২০১৬-র অন্যতম আকর্ষণ৷
ছবি: DW/A. Purwaningsih
হাইস্পিড ক্যামেরা
সনির এই ডিএসএলআর হাইস্পিড ক্যামেরাটিও সবার নজর কাড়ছে৷
ছবি: DW/A. Purwaningsih
ক্যামেরাম্যান হওয়ার উপায়
সনির বুথে গিয়ে যে কেউ অতি আধুনিক মুভি ক্যামেরা চালিয়ে দেখতে পারেন৷ এভাবে অল্প সময়ে ক্যামেরাম্যান হওয়ার সুযোগটা অনেকেই লুফে নিচ্ছেন৷
ছবি: DW/A. Purwaningsih
অন্যরকম
ক্যাননের এই প্রদর্শনীটি হচ্ছে একটি কন্টেইনারে৷
ছবি: DW/A. Purwaningsih
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
ক্যাননের আয়োজনে ছিল বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়ার ব্যবস্থা৷ ক্যামেরা এবং ফটোগ্রাফির বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে নিজেকে আরো সমৃদ্ধ করার সুযোগটা অনেকেই ছাড়েননি৷
ছবি: DW/A. Purwaningsih
ফটোগ্রাফি নিয়ে বক্তৃতা
ফটোকিনাতে বিশ্বখ্যাত ফটোগ্রাফাররা এসে ফটোগ্রাফি নিয়ে মন খুলে কথা বলেন৷ তা শুনে অনেক কিছু শেখাও যায়৷
ছবি: DW/A. Purwaningsih
শিক্ষানবিশ
মেলায় এসে একজন খুব মন দিয়ে ক্যামেরা চালানো শিখছেন৷
ছবি: DW/A. Purwaningsih
বড় দিনের উপহার
মেলা শেষে সব কোম্পানিই নতুন নতুন মডেলের ক্যামেরাগুলো বাজারে ছাড়বে৷ বড় দিনের উৎসবের আর বেশি বাকি নেই৷ বড় দিনের উপহার হিসেবে অনেকের কাছে ক্যামেরাই হয়ে উঠবে বড় আকর্ষণ৷