আফ্রিকা আর ইউরোপ মহাদেশের ধাক্কা থেকে আল্পস পর্বতমালা জন্ম নিয়েছে৷ সাগরের গভীর থেকে উঠে আসা এই পাহাড়ের মাথায় আজও প্রবাল ও শামুক থেকে শুরু করে মাছের আঁশ অবধি খুঁজে পাওয়া যায়৷
বিজ্ঞাপন
মিউনিখ শহরের দক্ষিণে ব্রাউনেক পাহাড়টিকে দেখলে প্রথমে বিশেষ কিছু বলে মনে হবে না৷ কিন্তু বলতে কি, এই পাহাড়টি একটি টাইম মেশিন – এর সাহায্যে বিশ কোটি বছর আগের অতীতে ফিরে যাওয়া যায়!
মার্টিন নোজে ও আলেক্সান্ডার ন্যুটসেল প্রায়ই তা করে থাকেন – কেননা এক হিসেবে টাইম ট্র্যাভেল তাঁদের পেশা৷ তথাকথিত ‘চুনাপাথরের আল্পস'-এ তাঁরা জীবাশ্মের খোঁজ করেন৷ ডাইনোসরের ফসিল নয়, এককালে এখানে যে সাগর ছিল, সেই সাগরের বাসিন্দাদের ফসিল৷
মিউনিখের লুডভিশ মাক্সিমিলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাশ্মবিদ অধ্যাপক আলেক্সান্ডার ন্যুটসেল বললেন, ‘‘আমরা এখানে মেসোজোয়িক যুগের টেথিস বা নিওটেথিস সাগরের অবশিষ্ট দেখছি৷ এটা একটা প্রবালের গুঁড়ি৷ প্রবালের শাখাগুলো লম্বালম্বিভাবে, আবার আড়াআড়ি করেও দেখা যাচ্ছে৷ সম্ভবত এখানে কয়েক মিটার ব্যাসের একটি শৈলশিরা ছিল৷''
পাহাড়-পর্বতকে নিয়ে তোলা বছরের সেরা আলোকচিত্র
আগ্নেয়গিরি, গুহা, বরফে ঢাকা পাহাড়ের চুড়া: এ বছরের ‘ইন্টারন্যাশনাল মাউন্টেইন সামিট ফটো কনটেস্ট’ বা আন্তর্জাতিক পর্বতশৃঙ্গ আলোকচিত্র প্রতিযোগিতার ছবিগুলো দেখলে তক্ষুণি ট্রেকিংয়ে যেতে ইচ্ছে করে৷
ছবি: Sergio Tapiro Velasco/IMSPC17
মাউন্টেইন ফটো অফ দ্য ইয়ার
২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে মেক্সিকোর কলিমা আগ্নেয়গিরিতে যখন বিস্ফোরণ ঘটে, সের্গিও তাপিরো ভেলাস্কো সেখান থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে ছিলেন৷ প্রচণ্ড একটা আওয়াজ, আকাশে ছাইয়ের মেঘ আর আগ্নেয়গিরির ঢাল বেয়ে লাভার স্রোত: ভেলাস্কো দৃশ্যটিকে তাঁর ক্যামেরায় ধরে রেখে এবার বছরের সেরা পাহাড়ের ছবির পুরস্কার পেয়েছেন৷
ছবি: Sergio Tapiro Velasco/IMSPC17
মাউন্টেইন অ্যাকশন
ভোরের আলো ফোটার আগে উঠে, অস্ট্রিয়ার আর্লব্যার্গে পাহাড়ের ঢালে স্নোবোর্ডারদের কেরামতির এই ছবিটি তোলেন প্যাট্রিক স্টাইনার৷
ছবি: Patrick Steiner/IMSPC17
মানুষটা কে?
ইটালির ডলোমাইট পর্বতমালায় পাহাড়, মেঘ আর কুয়াশার এই ফটোটি তোলেন ইওনা সালকার৷ কথা হলো, অতল খাদের মুখে দাঁড়িয়ে কি এক মানুষ, না একটি স্তম্ভ? সালকার ‘পর্বত প্রকৃতি বিভাগে প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন ‘প্রকৃতির খেলায় নিত্য নতুন আঙ্গিক’ তুলে ধরার জন্য৷
ছবি: Jona Salcher/IMSPC17
বাদুড় ঝোলা
ভিয়েনা থেকে আসা স্ল্যাকলাইনাররা অস্ট্রিয়ার পাইলস্টাইনে বাদুড়ঝোলা হয়ে আছেন: ছবিটি ‘টিম স্পিরিট’ বিভাগে প্রথম পুরস্কার পেয়েছে৷ আলোকচিত্রী সেবাস্টিয়ান ভালহ্যুটার বলেছেন, দেখে নাকি তাঁর তিব্বতে শালু ঝোলানোর কথা মনে পড়েছে৷
ছবি: Sebastian Wahlhuetter/IMSPC17
স্টকনেসের রাত্রি
মাউরিৎসিও কাসুলা আইসল্যান্ডে তাঁর প্রথম সফরে স্টকনেসের মাউন্ট ক্লিফাটিন্ডুরে এই ছবিটি তোলেন৷ এ ছবিই ‘পাহাড় ও পানি’ বিভাগে প্রথম পুরস্কার জয় করেছে৷
ছবি: Maurizio Casula/IMSPC17
মাউন্টেইন মোবাইল
মোবাইল ফোন দিয়ে তোলা পাহাড়ের ছবি ইন্টারন্যাশনাল মাউন্টেইন সামিট প্রতিযোগিতায় একটি নতুন বিভাগ৷ ক্রিস্টিনে ট্রেবো ইটালির ডলোমাইট পর্বতমালায় তাঁর স্মার্টফোন দিয়ে এই ছবিটি তুলে নতুন বিভাগে প্রথম বিজয়ী হয়েছেন৷
ছবি: Chistine Trebo/IMSPC17
পাহাড়ের মুখ
বিভাগটির নাম ‘মাউন্টেইন ফেসেস’৷ নেপালে ট্রেকিং করতে গিয়ে এক নেপালি কিশোরের ছবিটি তোলেন আন্টন ইয়ানকোভি৷
ছবি: Anton Yankovoy/IMSPC17
মাউন্টেইন অ্যাকশন বিভাগে দ্বিতীয় পুরস্কার
পাহাড়ে তারের ওপর ব্যালান্স করার ছবিটি তুলেছেন স্টেফান শ্লুম্ফ৷
ছবি: Stefan Schlumpf/IMSPC17
টিম স্পিরিট বিভাগে দ্বিতীয় পুরস্কার
মাউরো গাম্বিকর্তির ছবিতে একদল পর্বতারোহী বরফ সরিয়ে পথ করছেন৷
ছবি: Mauro Gambicorti/IMSPC17
মাউন্টেইন নেচার বিভাগে দ্বিতীয় পুরস্কার
পর্বতের দিনরাত্রির স্বপ্নময় ছবিটি তুলেছেন মিশেল চিমিনি৷
ছবি: Michele Cimini/IMSPC17
মাউন্টেইন মোবাইল বিভাগে দ্বিতীয় পুরস্কার
পাহাড় নয়, পাহাড়ে বাস করা কোনো উপজাতিক মানুষের ছবি৷ ছবিটি তোলেন কার্লোস নরিয়েগা৷
ছবি: Carlos Noriega/IMSPC17
মাউন্টেইন ওয়াটার বিভাগে দ্বিতীয় পুরস্কার
বরফে ঢাকা পাহাড়ের ছবিটি তোলেন ফের্নান্দো মারেল্লি৷
ছবি: Dario Fernando Marelli/IMSPC17
মাউন্টেইন ফেসেস বিভাগে দ্বিতীয় পুরস্কার
পাহাড়ের মুখ: রোনাল্ড রাইনস্টাডলারের তোলা ছবি৷
ছবি: Roland Reinstadler/IMSPC17
13 ছবি1 | 13
‘ আল্পস' পর্বতমালার প্রতিটি পাথর বাস্তবিক প্রবাল ও শ্যাওলার জীবাশ্ম থেকে সৃষ্টি হয়েছে – কেননা, প্রবাল ছাড়া তথাকথিত অতি ক্ষুদ্র শৈবালও চুন সৃষ্টি করতে পারে৷ সেই চুন লক্ষ কোটি বছর ধরে সমুদ্রবক্ষে জমা হয়ে তিন কিলোমিটার পুরু একটি স্তর সৃষ্টি করেছে৷
দুই মহাদেশের টক্কর
দশ কোটি বছর আগে আফ্রিকা যখন ইউরোপের দিকে আসতে শুরু করে, তখন সাগরের নীচে ভূপৃষ্ঠ ভেঙে আফ্রিকার নীচে ঢুকে যায়৷ শেষমেষ আফ্রিকার সঙ্গে ইউরোপের ধাক্কা লাগে ও দুই মহাদেশের মধ্যে ৬,০০০ মিটার উঁচু একটি ভাঁজ সৃষ্টি হয়, যা কিনা আজকের আল্পস, যদিও কোটি কোটি বছরের ঝড়-বাতাসে তার উচ্চতা অনেক কমে গেছে৷ কিন্তু দুই মহাদেশের ধাক্কা তো এখনও শেষ হয়নি৷ আজকের ভাষায়, অতি স্লো মোশনে আজও চলেছে – যার চাপে আল্পস কোনো এক সময় আবার বাড়তে শুরু করেছে৷
আল্পস বাড়ছে বলে টেথিস সাগরের আদি বাসিন্দারাও ধীরে ধীরে আরো উঁচুতে উঠে আসছে৷ ব্রাউনেক পাহাড়ের কাদামাখা হাঁটাপথ দেখলেও সুদূর অতীতের অনেক ছবি ফুটে ওঠে৷
মিউনিখের লুডভিশ মাক্সিমিলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাশ্মবিদ অধ্যাপক আলেক্সান্ডার ন্যুটসেল বললেন, ‘‘এখানে সব কিছু ফসিলে ভর্তি৷ সর্বত্র ঝিনুক পড়ে রয়েছে, অসংখ্য ঝিনুক৷ বেশ বড় বড় ঝিনুক৷ এখানে যেসব পাথরকুচি পড়ে রয়েছে, তাদের অনেকগুলোই ঝিনুকের টুকরো৷''
বোধহয় কোটি কোটি বছর আগের কোনো ঝড়ে এত বেশি ঝিনুক মারা পড়েছিল৷ কয় কোটি বছর, তা-ও গবেষকরা ঝিনুকের ফসিল দেখে বলে দিতে পারেন৷ এই অ্যামোনাইট সেফালোপডগুলো সম্ভবত বিশ কোটি চল্লিশ লাখ থেকে বিশ কোটি বছর আগে বেঁচে ছিল৷
আরো ওপরে পথের ধারে জীবাশ্মবিদদের জন্য অপেক্ষা করছিল আরেকটি চাঞ্চল্যকর আবিষ্কার! মাটিতে অসংখ্য ছোট ছোট শামুক, এমন সব শামুক, যা নিয়ে আজ পর্যন্ত কোনো বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ লেখা হয়নি৷ তার ঠিক পাশেই আবার মাছের আঁশ... সুদূর অতীতের শৈলশিরায় দৃশ্যত জীবনের কোনো অভাব ছিল না৷
হ্যারব্যার্ট হাকল/এসি
পাহাড়ে জুম চাষ
পাহাড়ের ঢালে বন উজাড় করে ও তা আগুনে পুড়িয়ে জমিকে চাষের উপযোগী করার মাধ্যমে যে চাষাবাদ করা হয় তারই নাম জুম চাষ৷ পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় শ্রেণিভুক্ত নয় এমন প্রায় ৫,৪৮০ বর্গকিলোমিটার বনভূমির সিংহভাগেই জুম চাষ করা হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
জুম চাষে জড়িত যাঁরা
বান্দরবানে জুমঘেরা পাহাড়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা একটি বসতি৷ তিন পার্বত্য জেলায় ৩৫ হাজারেরও বেশি জুমিয়া পরিবার এই জুম চাষের সঙ্গে জড়িত৷
ছবি: DW/M. Mamun
ভিন্ন নাম
খাগড়াছড়ির মহালছড়ির এক পাহাড়ের গাছপালা পোড়ানো হচ্ছে জুম চাষের জন্য৷ চাষ পদ্ধতি এক হলেও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের কাছে জুম চাষ আলাদা নামে পরিচিত৷ জুম চাষকে চাকমা ভাষায় জুম, মারমা ভাষায় ইয়াঁ, ত্রিপুরা ভাষায় হুগ, ম্রো ভাষায় উঃঅ, খিয়াং ভাষায় লাই, বম ভাষায় লাও বলা হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
যেসব ফসল জন্মায়
খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে পাহাড়ের গায়ে জুম চাষ করছেন ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের মানুষ৷ ভারী বৃষ্টির পর পাহাড়ের মাটি খুঁড়ে রোপণ করা হয় বিভিন্ন ফসল৷ জুমের ফসলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নানাজাতের ধান, কুমড়া, অড়হড়, শিম, শশা, করলা, ঢেঁড়শ, তিল, ভুট্টা, আদা, যব, তুলা, হলুদ, পাহাড়ি আলু, কচু, ইত্যাদি৷
ছবি: DW/M. Mamun
বন উজাড়
বান্দরবানে জুম চাষের ফলে গাছপালা শূন্য পাহাড়৷
ছবি: DW/M. Mamun
ফসল কাটার সময়
রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরের পাহাড় থেকে জুমের ফসল তুলছেন চাকমা সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ৷ জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত জুমের ফসল কাটার মৌসুম৷
ছবি: DW/M. Mamun
ফসল ঘরে তোলা
রাঙ্গামাটির সাজেকে পাহাড় থেকে জুমের ফসল নিয়ে ফিরছেন ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের এক বৃদ্ধ৷
ছবি: DW/M. Mamun
কর্মব্যস্ততা
রাঙ্গামাটির সাজেকের কংলাক পাহাড়ে জুমের চাল ঝাড়ছেন এক ত্রিপুরা নারী৷
ছবি: DW/M. Mamun
নতুন বনাঞ্চল
জুম চাষে পাহাড়ের বন উজাড় হলেও অনেক পাহাড়েই নতুন নতুন বনাঞ্চল গড়ে তুলেছে বাংলাদেশের বন বিভাগ৷ রাঙ্গামাটির মানিকছড়ির এই বনাঞ্চল এরকমই একটি উদাহরণ৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিকল্প কর্মসংস্থান
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে কাপড় বুনছেন ত্রিপুরা নারীরা৷ পাহাড়ে বসবাসরত সব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীই কাপড় বুননসহ নানান শৈল্পিক কাজে অভিজ্ঞ৷ এসব জনগোষ্ঠীকে আরো প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাঁদের বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা যেতে পারে৷
ছবি: DW/M. Mamun
হস্তশিল্প
বান্দরবানের শৈলপ্রপাত এলাকায় নিজেদের তৈরি কাপড় ও হস্তশিল্প সামগ্রীর পসরা সাজিয়েছেন স্থানীয় বম সম্প্রদায়ের নারীরা৷ পাহাড়ে তৈরি এসব পণ্যের দেশে ও বিদেশে বেশ সমাদর রয়েছে৷ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ পেলে এইসব সম্প্রদায় তাদের কাজের বিস্তৃতি ঘটাতে সক্ষম হবেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
জলকেলি উৎসব
রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় পানি খেলায় ব্যস্ত মারমা তরুণীরা৷ এই পানি খেলা বা জলকেলি উৎসব মারমা সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব, যা পালন করা হয় নববর্ষে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাঁশ নৃত্য
বান্দরবানের রুমা উপজেলার বেথেলপাড়ায় ঐতিহ্যবাহী বাঁশ নৃত্য পরিবেশনে বম তরুণীরা৷