1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘পাহাড়খেকোদের’ কারণেই ধস আর মৃত্যুর মিছিল

১৪ জুন ২০১৭

পার্বত্য এলাকায় পাহাড় ধসের জন্য দায়ী পাহাড় কাটা, বনভূমি উজাড় করা আর পাহাড়িদের মধ্যে ‘সেটেলার’দের ঢুকিয়ে দেয়া৷ প্রভাবশালীরা বছরের পর বছর এই অবৈধ কাজ করে শত শত মানুষের মুত্যু ডেকে আনছে৷ তাদের সহায়তায় রয়েছে প্রশাসন৷

Bangladesch Zahl der Toten nach Erdrutschen auf 145 gestiegen
ছবি: picture alliance/AP Photo/Str

টানা বর্ষণে সোমবার পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে পাহাড় ধসে কমপক্ষে ১৩৯ জন নিহত হয়েছেন৷ এর মধ্যে রাঙামাটিতে সেনা কর্মকর্তাসহ ৯৮ জন, বান্দরবানে ৯ জন এবং চট্টগ্রামে ৩০ জন মারা গেছেন৷ মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ এখনও মাটির নিচে অনেকে চাপা পড়ে আছেন৷ উদ্ধারকর্মীরা এখনো ধসে যাওয়া মাটির পাহাড়ের সব ধ্বংসস্তুপে পৌঁছাতে পারেননি৷

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পাহাড় ধসে গত ১০ বছরে ৬ সেনা সদস্যসহ ৩ শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷ পাহাড় ধসের এই ঘটনা ঘটতে শুরু করে ২০০০ সালের পর ধেকে৷ পাহাড় ধসের সবচেয়ে বড় ঘটনাটি প্রথম ঘটে ২০০৭ সালের ১১ জুন৷ টানা বর্ষণে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের হাটহাজারী, পাহাড়তলি, বায়েজিদ বোস্তামি, খুলশী এলাকায় পাহাড় ধসে ১২৭ জন নিহত এবং দুই শতাধিক মানুষ আহত হন৷ পরের বছর, অর্থাৎ ২০০৮ সালে বান্দরবান শহরের বালুচরা এলাকায় পাহাড় ধসে ১৩০ জনের প্রাণহানি ঘটে৷ 

Sahidul Islam - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

২০০৭ সালের পাহাড় ধসে শতাধিক মানুষের মুত্যুর ঘটনার পর তখনকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার পাহাড় ধসের কারণ ও প্রতিকার জানতে ১১ সদস্যের একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে৷ সেই কমিটি প্রতিবেদন দিলেও কমিটির সুপারিশ কাজে লাগানো হয়নি৷ কমিটির অন্যতম সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা দেখেছি, পাহাড় ধসের কারণ প্রাকৃতিকের চেয়ে মানুষেরই সৃষ্টি বেশি৷ পাহাড় কেটে ফেলা, গাছপালা কেটে ফেলা, পাহাড় লিজ দেয়া, পাহাড়ে সেটেলারদের বসতি, পাহাড়কে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবাহার করা অন্যতম কারণ৷''

তিনি জানান, ‘‘আমরা পাহাড় ধস রোধে বেশ কিছু সুপারিশ করেছিলাম৷ এরমধ্যে প্রধান সুপারিশ ছিল পাহাড় লিজ দেয়া বন্ধ করা৷ পাহাড়ের বাণিজ্যিক ব্যবহার বন্ধ করা৷ পাহাড় কেটে হাউজিং, শিল্পস্থাপন পাহাড়ের বড় ক্ষতি করে৷ পাহাড়ে ঘর বানিয়ে ভাড়া দেয়া আরেকটি ক্ষতি৷ আর আমরা অবৈধভাবে পাহাড় কাটা বন্ধেরও সুপারিশ করেছিলাম৷''

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপকের আরো বলেন, ‘‘পাহাড়ের বন উজার করা হয়েছে৷ গাছ না থাকলে পাহাড় টিকবে কী করে৷ তাই আমরা পাহাড়ে দ্রুত বনায়নের প্রস্তাব করেছিলাম৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘বন উজাড় এবং পাহাড় কাটা হচ্ছে অবৈধভাবে৷ যারা এসব করছেন, তারা প্রভাবশালী৷ তাদের সঙ্গে আছেন প্রশাসনের অসাধু কিছু লোক৷'' 

Shakil Hasan - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

সামারি চাকমা পাহাড়ে বেড়ে ওঠা আদিবাসী নারী৷ তিনি এখন খাগড়াছড়িতে আইন পেশায় নিয়োজিত৷ সামারি চাকমা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পাহাড়ে এখন আর বড় কোনো গাছ নাই৷ সব ন্যাড়া পাহাড়৷ আমাদের ছোট বেলায় আলুটিলায় অনেক গাছ দেখেছি৷ কিন্তু সব উজাড় হয়ে গেছে৷ তাই পাহাড় আর তার মাটি ধরে রাখতে পারছে না৷''

তিনি বলেন, ‘‘পাহাড়ের মাটিও নিয়ে যাওয়া হয়, পাহাড়ে নানা বাণিজ্যিক কাজ হয়৷ ফলে পাহাড় তার নিজস্ব ক্ষমতা হারিয়েছে৷ আমরা কথা বলেও কোনো ফল পাইনি৷''

সাংবাদিক এবং মাউন্টেনিয়ার ( ট্র্যাকার) শাকিল হাসান এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২৯ বার পাহাড়ি এলাকায় গিয়েছেন৷ পাহাড়ের ধস নিয়ে তার কাজও রয়েছে৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পাহাড় ধসের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে আশির দশকের শুরুতে পার্বত্য এলাকায় ব্যাপক হারে অন্য এলাকা থেকে এনে বাঙালিদের বসতি স্থাপন করা৷ যেহেতু পুরো এলাকাটি পাহাড়ি, তাই সেগুলো কেটেই বসতি নির্মান করা হয়েছে৷'' 

Sawmari Chakma - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

তিনি মনে করেন,‘গত ১৫ বছরে  বগা লেক, থানচি, আলীকদম, সাজেক, বাঘাইছড়ির মতো দুর্গম এলাকাতেও পাকা সড়ক নির্মান করা হয়েছে৷ এই কষ্টসাধ্য কাজটি করেছে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ৷ কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে, দেশের পাহাড়ের ভূমিবিন্যাস, মাটি নিয়ে দীর্ঘ গবেষনায় ঘাটতি ছিল৷ আর পার্বত্য এলাকায় পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি৷ ষাটের দশকে দেয়া বাঁধের ফলে রাঙামাটির বিস্তীর্ণ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে, যা ওই এলাকার ভূমি বিন্যাস, মাটির উপর দীর্ঘ মেয়াদি প্রভাব ফেলেছে৷''

তাঁর মতে, ‘‘ব্যাপকহারে গাছ কাটার ফলে পার্বত্য এলাকা অদ্ভুত ন্যাড়া চেহারা নিয়েছে৷ তবে পাহাড়গুলো সবুজ দেখায় প্রচুর বৃষ্টির কারণে লতা গুল্ম আর ছোট প্রজাতির গাছ জন্মায় বলে৷কিন্তু এসবের শেকড় মাটির খুব গভীরে যায় না৷ বড় গাছের শেকড় যেমন গভীরে গিয়ে মাটিকে আকড়ে থাকে৷ তো বড় গাছ কেটে ফেলার কারণে মাটির শক্তি কমে যাচ্ছে৷ ভূমি ধসের এটাও বড় কারণ৷''

সবমিলিয়ে পাহাড়ে এখন পাহাড় খেকোদের দাপট৷ আর পাহাড়খেকোদের কারণেই ভূমি ধসে শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ