1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাহাড়ে কেন বার বার রক্ত ঝরে?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৯ আগস্ট ২০১৮

আবারো পাহাড়ে রক্ত ঝরল৷ শনিবার খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ-এর একটি কর্মসূচিতে সশস্ত্র হামলায় সাতজন নিহত হয়েছেন৷ আর হামলার জন্য দায়ী করা হয়েছে জেএসএস নামে পাহাড়ের আরেকটি সংঠনকে৷

Bangladesch   Jhum Kultur
ছবি: DW/M. Mamun

এ নিয়ে গত ১০ মাসে পাহাড়ে ৩৭ জন নিহত হলেন৷ পুলিশ এই হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রবিবার পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি৷ কোনো মামলাও হয়নি৷ তবে সন্ত্রাসীদের ধরতে ওই জেলায় যৌথ অভিযান শুরু হয়েছে৷ হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসেবে পাহাড়ে সক্রিয় সংগঠনগুলোর কোন্দলকেই দায়ী করা হচ্ছে৷

শনিবারের হামলার ঘটনা ঘটে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর বাজার এলাকায়৷ পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পাহাড়ি সংগঠন ইউনাটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) লোকজন একটি কর্মসূচি উপলক্ষে জড়ো হচ্ছিলেন৷ এ সময় অতর্কিতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়৷ দুই পক্ষের মধ্যে এলোপাতাড়ি গোলাগুলি হয়৷ এ সময় ইউপিডিএফ সদস্য ও সাধারণ মানুষ হতাহত হন৷ ঘটনাস্থলেই ছয় জন নিহত হন৷ পরে আরো একজন হাসপাতালে মারা যান৷

‘প্রশাসনের সহযোগিতায় এই হামলা চালানো হয়’

This browser does not support the audio element.

পাহাড়িদের সংগঠনগুলো দুইভাবে বিভক্ত৷ শান্তিচুক্তির পক্ষ-বিপক্ষ ইস্যুতে ২০০৯ সালে জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ভেঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএনলারমা ) নামের আরেকটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে৷ মূলতঃ নেতৃত্বের কোন্দলেই এই বিভক্তি৷ দু'টি গ্রুপই শান্তি চুক্তির পক্ষের৷

অন্যদিকে, ১৯ বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের দাবিতে গঠিত ইউনাটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) গত বছরের নভেম্বরে দুই ভাগ হয়ে যায়৷ নতুন অংশ ইউপিডিএফ-গণতন্ত্র নামে পরিচিতি পায়৷ তারা পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবি থেকে কিছুটা সরে এসে শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন দাবি করে৷

পাহাড়ে এখন এই চারটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন সক্রিয়৷ তারা আবার পরস্পরের প্রতিপক্ষ৷ রাঙামাটির সংবাদিক জিয়াউল হক জিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মূলত নেতৃত্বের কোন্দলেই দু'টি সংগঠন ভেঙে চারটি হয়েছে৷  পাহাড়ে মানুষ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, আর তাদের আন্তঃকোন্দলের শিকার হচ্ছেন৷ প্রভাব বিস্তার নিয়ে কিছু দিন পরপর খুন, গুম ও অপহরণের ঘটনা ঘটছে৷''

‘আমাদের হেয় করার জন্য আমাদের দায়ী করা হচ্ছে’

This browser does not support the audio element.

শনিবারের হামলা ও হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে ইউপিডিএফ দাবি করেছে যে, জনসংহতি সমিতি (এমএনলারমা ) এই হামলা চালায়৷ তাদের সঙ্গে ইউপিডিএফ-গণতন্ত্র'র লোকজন ছিল৷ ইউপিডিএফ-এর প্রচার সম্পাদক নিরণ চাকমা ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেন যে, তারা প্রশাসনের সহযোগিতায় এই হামলা চালানো হয়৷

নিরণ বলেন, ‘‘তাদের গাড়িতে করেই আসে৷ কারণ তারা যে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবি করছে তা বানচাল করতে চায়৷'' তাঁর দাবি, এ পর্যন্ত আরো যত হামলা হয়েছে সেই সব হামলাও এরা করেছে৷

এর জবাবে জনসংহতি সমিতির (এমএনলারমা ) প্রচার সম্পাদক প্রশান্ত ত্রিপুরা অভিযোগ অস্বীকার করেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘শনিবারের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আমাদের সংগঠন জড়িত না৷ ওই হত্যাকান্ড ঘটেছে ইউপিডিএফ-এর অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে৷ আমাদের হেয় করার জন্য আমাদের দায়ী করা হচ্ছে৷ আমাদের নেতা-কর্মীরাও এর আগে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে৷''

‘এই হত্যাকাণ্ডে ইউপিডিএফ-এর প্রতিপক্ষরা জড়িত’

This browser does not support the audio element.

স্থানীয় সূত্র এবং পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১০ মাসে একের পর এক হামলা-পালটা হামলার ঘটনায় পাহাড়ে ৩৪ জন নিহত হয়েছে৷ বেশির ভাগ ঘটনায়ই থানায় কোনো পক্ষ কোনো মামলা করেনি৷

২০১৭ সালের নভেম্বরে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামে নতুন সংগঠন আত্মপ্রকাশের পর থেকেই পাহাড়ে হত্যার ঘটনা বাড়ছে৷ এই সময়ে প্রসীত খীস্যার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ-এর ২৪ জন এবং জেএসএস (এমএন লারমা) ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)-এর ১৬ নেতাকর্মী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন৷

শনিবারের হামলার আগে গত ৩ মে রাঙামাটির নানিয়াচর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেএসএস (এমএন লারমা)-এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শক্তিমান চাকমা খুন হন৷ শক্তিমান চাকমা ছিলেন দলটির অন্যতম প্রধান নেতা৷ আর তার শেষকৃত্যে যোগ দিতে গিয়ে হামলার শিকার হয়ে নিহত হন পাঁচজন৷

এদিকে, জনসংহতি সমিতির (এমএনলারমা ) প্রচার সম্পাদক প্রশান্ত ত্রিপুরা বলেন, ‘‘আমাদের সংগঠনের যাদের হত্যা করা হয়েছে সে ব্যাপারে আমরা মামলা করেছি৷ অন্যরা করেছে কিনা জনিনা৷''

‘শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন হলে এই পরিস্থিতি হতো না’

This browser does not support the audio element.

খাগড়াছড়ির শনিবারের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে পুলিশ সুপার আলি আহমদ খান ডয়চে ভেলেকে বলে, ‘‘আমরা অপেক্ষা করছি৷ কেউ মামলা না করলে পুলিশ মামলা করবে৷ এই হত্যাকাণ্ডে ইউপিডিএফ-এর প্রতিপক্ষরা জড়িত৷ আমরা নিরাপত্তা জোরদার করেছি৷ নিহতদের পোস্টমর্টেম ও শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করেছি৷''

আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গত ১০ মাসে ৩৪ জন নন, ৩৭ জন হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন পাহাড়ে৷ আর এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে দলগুলোর মধ্যে নানা কোন্দলে৷ কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না৷ পাহাড়ে রক্ত ঝরছেই৷''

তিনি বলেন, ‘‘শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন হলে এই পরিস্থিতি হতো না৷ এটা পূর্ন বাস্তবায়ন না করায় এটাকে কেন্দ্র করেই পাহাড়ে নানা গ্রুপ-উপগ্রুপ সৃষ্টি হচ্ছে, বা সৃষ্টি করা হচ্ছে৷ পাহাড়কে অশান্ত করা হচ্ছে৷ শান্তিচুক্তি'র পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এটা থামবে না৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ