পাহাড়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণ, পিছনে হুজি নেতা
১৪ অক্টোবর ২০২২পলাতক অনেকে ঐ ক্যাম্পে আছে বলেও র্যাবের বরাতে প্রকাশ করা খবরে দাবি করা হয়৷
তবে প্রশ্ন উঠেছে কেএনএফ কেন জঙ্গিদের তাদের প্রশিক্ষণ শিবির ব্যবহার করতে দেবে? কেননা, দুটি সংগঠন বিপরীতধর্মী আদর্শ ও উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে৷ স্বাভাবিকভাবেই তারা একে অপরকে সাহায্য করার কথা না৷
পাহাড়ে সশস্ত্র সংগঠন হিসাবে কেএনএফ-এর আত্মপ্রকাশ বেশি দিন হয়নি৷ তবে এর মধ্যেই তারা তাদের ‘সামর্থ্য' দেখিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংঘতি সমিতি (জেএসএস) উপর হামলা চালিয়ে৷ বলা হচ্ছে, এরা জেএসএস-এর প্রতিপক্ষ একটি দল৷ সম্প্রতি হামলা চালিয়ে জেএসএস-এর নেতাকে হত্যার পর পাহাড়ে কেএনএফ-কে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে৷
পিছনে শামীম মাহফুজ
গাইবান্ধার শামীম মাহফুয হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের একজন প্রবীণ পৃষ্ঠপোষক৷ কেএনএফ শিবিরে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণের সাথে তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি বেশ কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে৷
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক শামীম ৯০ দশকের শেষে পার্বত্য অঞ্চলে চলে যান৷ গত ২০ বছরে অনেক জঙ্গিকে পাহাড়ে নিয়ে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তিনি৷ চাষবাসের কাজে লাগানোর নামে দেশের বিভিন্ন স্থান, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ থেকে শ্রমিক সংগ্রহ করার নামে জঙ্গিদের সেখানে নিয়ে যান৷ বান্দরবান-মিয়ানমার সীমান্তে একটি গ্লোবাল ভিলেজ বা ছোট একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঘাঁটি গাড়েন তিনি৷
শামীম বিভিন্ন নামে তার কাজ চালিয়ে আসছিলেন৷ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বেশ কয়েকবার তাকে ও তার গ্রুপের সদস্যদের আটক করেছে৷ কিন্তু জামিনে বেরিয়ে তিনি আবার তার তৎপরতা শুরু করেন৷ এ পর্যন্ত তাকে ৪ বার আটক করা হয়েছে বলে জানা যায়৷
বাধা পেলেও শামীম থেমে থাকেনি৷ নতুনভাবে, নুতন কোনো নামে জঙ্গিদের সংগঠিত করে আবার তৎপরতা শুরু করে৷
নতুন একটি ক্যাম্প স্থাপনের জন্য বেশ কিছুদিন ধরে কেএনএফ-এর সাথে সে যোগাযোগ করে আসছিল৷ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক না হলেও প্রশিক্ষনের ব্যাপারে তারা সম্মত হয় বলে জানা যায়৷
পুলিশের বেশ কয়েকটি সুত্র জানিয়েছে, কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্টের সাথে তার এক ধরনের বোঝাপড়ার ফলস্রুতিতে পাহাড়ে ক্যাম্প স্থাপন করে কয়েকজন যুবককে সেখানে প্রশিক্ষনের জন্য নেয়া হয়৷
জামাতুল আনসার কতটা ভয়ংকর?
জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া বান্দরবানের সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য কোথাও নেই৷ তবে এটা শামীম মাহফুজের ‘ব্রেইনচাইল্ড’ হতে পারে বলে অনেকের ধারণা৷
তার সাথে আছে মূলত হুজিবির লোকজন৷ তবে অন্য জঙ্গি সংগঠনের দলছুট অনেকে এই গ্রুপে যুক্ত হতে পারে৷ এটি অনেকটা নতুন বোতলে পুরান মদের মতো৷ লোক সব পুরান, তবে নামটা নতুন৷
দীর্ঘদিন জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে এমন এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, গত কয়েক বছর ধরে জঙ্গিরা ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে৷ সেখানে ভিন্ন ভিন্ন জঙ্গি মতাদর্শের লোক থাকে৷ অনেক সময় এরা নতুন কোনো নাম ধারণ করে৷ তবে তারা কেউই ভয়ংকর কিছু হয়ে উঠতে পারেনি৷
ঐ কর্মকর্তা মনে করেন, কিছু জঙ্গি ধরে বা নতুন কোনো জঙ্গি সংগঠনের সন্ধান পেলেই সেটা বড় কিছু হয়ে যাবে ব্যাপারটা সেরকম না৷ এছাড়াও আটককৃত জঙ্গিরা সব সময় যে সত্য কথা বলবে সেটাও ঠিক না৷ বরং জঙ্গিরা সঠিক তথ্য না দেয়ারই কথা৷ কোনো জঙ্গি বা সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে জড়িত কেউ ধরা পড়লে স্বাভাবিকভাবেই তারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে৷ ধৃত জঙ্গিদের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য৷ তাই জঙ্গিদের দেয়া তথ্য যাচাই না করে সেটা সংবাদ মাধ্যমের সাথেও শেয়ার করা উচিত হবে না বলে তিনি মনে করেন৷