সয়াবিন তেল যখন সোনার হরিণ, মুদ্রাস্ফীতি যখন চোখ রাঙাচ্ছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানে নিত্যপণ্যের বাজার যখন ঊর্ধ্বমুখী, তখন গ্রীষ্মের খরতাপে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা নিম্ন আয়ের মানুষের৷ এর মাঝেই এলো ঈদ৷
বিজ্ঞাপন
রাঙামাটি শহরছবি: Tanjir Mehedi/DW
এত্তসব যন্ত্রণার মাঝেও ঈদ উৎসবে বর্ণিল ছিল গোটা বঙ্গীয় ব-দ্বীপ৷
উৎসবের আমেজের বাইরে ছিল না দেশের পার্বত্য জনপদও৷ বরং পুরো এলাকা জুড়ে ছিল উৎসব মুখরতা৷ এর অন্যতম কারণ গত দুটি বছর উৎসবের বাইরে ছিল পুরো দেশ৷
করোনা ভাইরাস মহামারি আঘাত হানলে সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষকে আটকে থাকতে হয়েছে চার দেয়ালের মাঝে৷ লকডাউন, শাটডাউন, স্ট্রিক্ট ভিউ, সামাজিক দূরত্ব নানা নতুন নতুন শব্দ এসময় পরিচিত হয়ে ওঠে করোনা ভাইরাসকে মোকাবিলায়৷ পুরো দেশজুড়ে তৈরি হয় অচলাবস্থা৷ ফলে ঈদ এলে প্রিয়জনের কাছে ফেরা, বাড়ি ফেরার যে আকুলতা, উদ্বেলতা সেটাও দেখা যায়নি গত দু বছরে৷
চারটি ঈদ আর দুটি বর্ষবরণ উৎসবের আনন্দ আয়োজন থেকে বঞ্চিত হয় গোটা দেশের মতো পাহাড়ের মানুষ৷ কিন্তু পাল্টে গেছে সে দৃশ্যপট৷ করোনা প্রতিরোধী টিকার দ্বিতীয় ডোজ শেষে চলছে বুস্টার ডোজ, সংক্রমণও অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে, তাই নেই কোনো বিধিনিষেধ৷ মানুষ তার দুঃখ-কষ্ট, জীবন জীবিকার কথা ভুলে মেতে ওঠে উৎসবের রঙে৷ অন্তত বিপণি বিতান ঘুরে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে৷
অভিযোগ এসেছে এবারের পোশাকের মূল্য ছিল অন্যান্যবারের চেয়ে বেশি৷ কিন্তু তাতে আটকায়নি ক্রেতারা৷ দুই বছর ধরে সন্তানদের জন্য কিছু কিনতে না পারার আক্ষেপ, তাদের শৈশবের ঈদ চুরি যাওয়া দুঃখ ভোলাতে অভিভাবকরা ছিলেন বেশ উদার৷ সন্তানদের বায়না পূরণে দ্বিতীয় কথাটি ভাবেননি তারা৷
যেমন ছিল ঢাকার নিম্ন আয়ের মানুষদের ঈদ
গত দুইবছরের মতো করোনা বিধিনিষেধ না থাকায় এবার পরিবার-স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকা ছেড়েছেন আগের চেয়ে বেশি মানুষ৷ তবে অনেক নিম্ন আয়ের মানুষের সেই সুযোগ হয়নি৷ ঢাকায় কেমন কেটেছে তাদের ঈদ, জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘দেনার নীচে পইড়া গেসি’
ঢাকার মিরপুরে ভ্রাম্যমাণ খাবার বিক্রেতা মো. নয়ন বলেন, ‘‘করোনার আগে তো দিন আনসি, দিন খাইসি৷ কিছু টাকাপয়সা হাতেও রাখতে পারসি, ঈদ গেসে কোনোরকম৷ এহন করোনা হওয়ার পর ঈদ-উদ দেখার সুযোগ নাই৷ হাতে জমানো টাকা শেষ হয়া আরো ৪০-৫০ হাজার টাকা দেনার নীচে পইড়া গেসি৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘বাপ-মারে ঈদে কাপড় দিতে পারি নাই’
ঢাকার আগারগাঁওয়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. সুমন মিয়া দুই ছেলে এক মেয়ের জনক৷ ঈদে গ্রামের বাড়ি বরিশালে যাওয়ার সুযোগ হয়নি এবার৷ তিনি বলেন, ‘‘আগের ঈদ্গুলি আছিল ভালোই, পরিবার, ছেলেমেয়ে, আত্মীয়-স্বজনরে কাপড় দিতে পারসি৷ কিন্তু করোনার পর থেকে আর এইগুলি সম্ভব হইতেসে না৷ এইবারের ঈদে খালি ছেলে-মেয়েরে এক সেট কাপড় দিসি, বাপ-মা’রে কিছু দিতে পারি নাই, মনটা ছোট হয়া আছে এইজন্য৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘আমগো কথা কে ভাবে!’
ঢাকার শ্যামলী এলাকার ময়লা সংগ্রহকর্মী জামাল হোসেন৷ করোনার আগে-পরের ঈদের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমাগো আর ঈদ কী? করোনার আগে যা-ও আছিল, এহন এক্কেরে আমরা শ্যাষ৷ আপনেগো মতো কত সাংবাদিক ছবি তুললো, কই আমরা কিছু পাইছি? কেউ এক পয়সা দিয়া জিগাইছে কিছু? আমগো কথা কে ভাবে? কেউ না৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘এই ঈদে মার্কেট থিকা কাপড় কিনসি’
ঢাকার পীরেরবাগে মুদি দোকানি মোছা. সীমা আক্তার৷ স্বামীর অন্য আয়ের পাশাপাশি এই ছোট দোকান করছেন তিনি ৩-৪ বছর যাবত৷ সাম্প্রতিক ঈদ কেমন ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘গত দুই রোজার ঈদে তিন মেয়েকে ফুটপাথ থেকে কাপড় কিনা দিসি কম দামে৷ কাপড়চোপড় না দিলে কান্নাকাটি করে, নিজেরও খারাপ লাগে৷ এই ঈদে লকডাউন না থাকায় ব্যবসাপাতি কিছুটা ভালো, তাই মার্কেট (শপিং মল) থেকে ওগোরে কাপড় কিনা দিতে পারসি৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘করোনার ক্ষতি পূরণ করা কঠিন’
ঢাকার শেওড়াপাড়ায় মিথুন হেয়ার ড্রেসারের নরসুন্দর রতন চন্দ্র শীল৷ এই ঈদে তার আয় গত দুই বছরের চেয়ে কিছুটা ভালো হয়েছে বলে জানান তিনি৷ বলেন, ‘‘করোনার লকডাউনে দীর্ঘ সময় দোকানপাট খুলতে পারি নাই৷ বাসা ভাড়া বাকি পড়সে প্রায় ৪০ হাজার টাকা৷ করোনায় আমাদের যে ক্ষতি হইসে, তা পূরণ করতে আমার মনে হয় বছর ৩-৪ লাগবে৷ এছাড়া উপায় নাই৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘পরিবারকে গ্রামে পাঠায় দিসি’
ঢাকার আগারগাঁওয়ের ফুটপাতে জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন রিপন দেবনাথ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ধর্মে তো ঈদ নাই, আমরা পূজা পালন করি৷ সামনের বড় পূজা দূর্গাপূজা এই কোরবানি ঈদের আগেই৷ তবে লকডাউনের কারণে গত দুই বছর কামাই-রোজগার তেমন আছিল না, পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে দিন পার করসি৷ পূজায় ছেলেমেয়েদের তেমন কিছুই দিতে পারি নাই৷ পরিবারকে লকডাউনে বাড়িতে যে পাঠাইসি, এখনো আনার সাহস পাই নাই৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘পুলিশ খালি দৌড়ানি দিতো’
ঢাকার মিরপুরের কাঁচা সবজি বিক্রেতা মো. নাসির উদ্দিন৷ বাড়তি খরচ করে ঈদে বাড়ি যাননি তিনিও৷ নাসির বলেন, ‘‘লকডাউনে যে চাইরটা ঈদ গেসে, টেরই পাই নাই৷ লকডাউনের সময় পুলিশ রাস্তায় খাড়াইতেই দেয় নাই, যদিও নিত্য প্রয়োজনীয় কাঁচাবাজারের অনুমতি আছিল বইলা শুনসিলাম৷ কিভাবে যে দিনগুলা পার করাইসে আল্লাহ, বইলা বুঝাইতে পারবো না৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘মানুষের দুয়ারে ভিক্ষা করার অবস্থা হইসিলো’
আগারগাঁওয়ের ৬০ ফুট সড়কে একটি দোকানে রংয়ের কাজ করছিলেন রংমিস্ত্রী আবুল হোসেন৷ ঈদের তৃতীয় দিনেই কাজে লেগে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘পারলে তো আমরা ঈদের দিনেও কাম করি৷ প্যাটে ভাত না থাকলে ঈদ কী আর আনন্দ কী৷ কাজ কাম যে এখন পাইতেসি টুকটাক এইটাই বেশি৷ করোনার সময় জমানো টাকা-পয়সা সব শেষ হয়া ধার কর্জ করসি মানুষের কাছে৷ মানুষের দুয়ারে ভিক্ষা করার দশা হইসিলো আমাগো মতো গরীব মানুষের৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘সংসার চালাইতে রিক্সাও টানসি’
করোনার সময় আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায় মো. আবদুল জলিলের৷ সম্প্রতি তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে চাকরি পেয়েছেন৷ ঈদে তাই মেলেনি ছুটি৷ জলিল বলেন, ‘‘সংসার চালাইতে এই বয়সে রিক্সা পর্যন্ত টানসি৷ এখন আল্লাহ মুখ তুইলা একটু চাইসে৷ দুই মাস হইসে এই চাকরি পাইসি, তা-ও ঈদে ছুটি পাই নাই৷ খাইয়া-পইরা কোনোরকম এখন আছি মন্দের ভালো৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘প্যাটে ভাত না থাকলে আবার ঈদ কী’
দৈনিক মজুরিতে হোটেলে কাজ করেন ছবির এই ব্যক্তি৷ লকডাউনে সব বন্ধ থাকায় দীর্ঘদিন তার আয় ছিল না৷ এবার ঈদে তারও বাড়িতে পরিবারের কাছে যাওয়ার সুযোগ হয়নি৷ ঈদ উদযাপনের কথা জিজ্ঞেস করাতে তিনি বলেন, ‘‘পেটে যদি ভাত না থাকে, তাইলে ঈদ আইলেই কী আর গেলেই কী৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘কাম না করলে খাওন নাই’
ঢাকার চিড়িয়াখানা-কমলাপুর রুটে চলাচলকারী আয়াত পরিবহণের চালকের সহকারি মো. রুবেল মিয়া৷ বাড়িতে না গিয়ে ঈদের মধ্যেও কাজ করে যাচ্ছেন তিনি৷ রুবেল মিয়া বলেন, ‘‘করোনায় অনেকদিন পরিবহণ বন্ধ আছিল৷ যা-ও চালু আছিল, প্যাসেঞ্জার আছিল না, কারণ, অফিস আদালত, স্কুল কলেজ বন্ধ আছিল৷ আমরা যে কেমনে সংসার চালাইসি, কইতে পারি না৷ খায়া না খায়া দিন কাটসে৷ আমগো কাম না করলে খাওন নাই৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
বিপরীত চিত্র
করোনার সময় বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের চাকরি হারান মিল্টন শেখ৷ পরে শুরু করেন খাবার ও পণ্য ডেলিভারির কাজ৷ আয়-রোজগার করে গত বছরের ঈদে বাড়িতে টাকাও পাঠিয়েছেন৷ কিন্তু এবার সেই তুলনায় আয় ভালো হয়নি বলে জানান তিনি৷ বলেন, ‘‘গত তিন-চার মাসে কাজের চাপ তুলনামূলক কম৷’’ ঈদের মধ্যে বাড়ি না গিয়ে ঢাকায় বাড়িতে বাড়িতে খাবার ও পণ্য সরবরাহের কাজ করে গেছেন মিল্টন৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
12 ছবি1 | 12
পাহাড়ি জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামের মূল উৎসব বৈসুক-সাংগ্রাই-বিঝু৷ এবারও সেই উৎসবে মেতেছে সবাই৷ কারণ ছিল না কোনো বিধি-নিষেধ৷ কিন্তু রমজান মাস চলমান থাকায়, সেই উৎসবে কিছুটা ভাটার টান ছিল৷ বাঙালি সম্প্রদায়ের বড় অংশ ইসলামধর্মানুসারী হওয়ায় তাদের আথিতেয়তা করা সম্ভব হয়নি পাহাড়িদের পক্ষে৷
ধর্ম-বর্ণ ভুলে যে নতুন বছর বরণের এ উৎসবে সব আয়োজন থেকেও এসব কারণে রঙ ছিল কিছুটা ফ্যকাশে৷ কিন্তু সেই আক্ষেপ ঘুচিয়ে দিয়েছে ঈদ৷
রাঙামাটি শহরে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা করছেন তরুণ পরিবেশবাদী সংগঠক ফজলে এলাহী৷ তার সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা গেল, ‘জাতীয় ও আঞ্চলিক রাজনীতির যে মান-অভিমান’ (শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন ও আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে টানাপড়েন), উৎসবকে ঘিরে সেটার খুব একটা প্রভাব এবার পড়েনি রাঙামাটিতে৷
‘‘এছাড়া গত দু বছরের হিসাবটা দেখলেও বোঝা যায়, বড় ধরনের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কোনো খবর আসেনি৷ ফলে পারস্পরিক আস্থা ও ভরসা দেখা গেছে এবার পাহাড়ে৷ আর এ কারণে পাহাড়ে ঈদ উৎসব হিসেবে পালিত হয়ে এলেও এবার যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা৷’’
ঈদের আগের রাতে কালবৈশাখী মৃদু আঘাত হেনেছে রাঙামাটিতে৷ তাতেও উৎসবের বর্ণিলতায় কোনো প্রভাব পড়েনি৷ তবে বাহারি পোশাকে শিশু-কিশোর থেকে বয়স্করা ছুটে গেছেন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে৷
পোশাকের কেনাকাটায় রাঙামাটিবাসী এখনও বারোয়ারি দোকানেরওপরই নির্ভরশীল৷ স্থানীয় টেক্সটাইল ছাড়া তেমন কোনো ব্র্যান্ডশপ এখানে গড়ে ওঠেনি৷ দেশীয় বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো আউটলেটও নেই এই শহরে৷ বেশিরভাগ পোশাক ব্যবসায়ী ঢাকা থেকে পাইকারি দরে নানা পোশাক কিনে এনে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করে৷
ব্যবসায়ীদের দাবি, পোশাক কেনা, পরিবহণখরচ, দোকান ভাড়া, কর্মচারির বেতন সব মিলিয়ে যেটুকু লাভ না করলে নয়, সেই লাভটুকু রেখে বিক্রি করছেন তারা৷ ফলে পোশাকের মূল্য কিছুটা বেশি হলেও সেখানে তাদের তেমন হাত নেই বলে জানালেন খুচরা ব্যবসায়ীরা৷
তাতে অবশ্য বিক্রি আটকায়নি৷ বর্ষবরণ উৎসব যেতে না যেতেই আবার ঈদ৷ সব মিলিয়ে জম্পেশ বিক্রি করেছেন তারা৷ তবে কেউ কেউ দাবি করেছেন, ব্যবসা-বাণিজ্য মন্দ না হলেও আশানুরূপ বিক্রিটা হয়নি৷ তবে বেশিরভাগ বলেছেন, দুই বছর পর এই রমজানে ব্যবসা হয়েছে৷ আর তাতেই দারুণ সন্তুষ্ট তারা৷
তবে রাঙামাটি শহরের কেনা-বেচা আসলে অর্থের অংকে কত দাঁড়িয়েছে তা অবশ্য জানা যায়নি৷ তেমন কোনো পরিসংখ্যানও পাওয়া যায়নি৷
তবে নিত্যপণ্যের বাজার ভুগিয়েছে সাধারণ মানুষকে৷ এমনিতে বাজার চড়া, তার ওপর ঈদকে সামনে রেখে কাঁচা মরিচ, শসা, টমেটো, গাজরের মতো পণ্যের দাম কেজিতে প্রায় ১০ থেকে ৩০টাকা
পর্যন্ত বেড়ে গেছে৷ সেমাইর বাজার কিনতে গিয়ে চিনিতে কেজি প্রতি গুণতে হয়েছে ৮০ টাকা, যা ছিল মরার খাড়ার ঘা৷
তানজীর মেহেদী, সাংবাদিকছবি: Privat
রাঙামাটিতে ব্যবসার মূল প্রাণ কাঠ, বাঁশ আর মাছ৷ এদিকে প্রজনন সুবিধার্থে কাপ্তাই লেকে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন৷ ফলে অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছেন বিপাকে৷ মাছ বিক্রি করে তাদের আয় বন্ধ আছে৷ আবার অন্য দিকে স্থানীয় মাছ না থাকায়, মাছের দাম ছিল বেশ চড়া৷ এক কেজি রুই মাছের দাম সাড়ে তিনশ ছাড়িয়েছে৷
ব্যবসায়ী কিরো চৌধুরী বললেন, ‘‘মানুষের হাতে নগদ টাকার সংকট আছে৷ নগদ টাকা না থাকলে, কিসের উৎসব, কিসের কী? কিন্তু অনেকদিন পর উৎসবকে জমকালো করতে অনেকে ধার-দেনা করেও বাজার করতে কার্পণ্য করেনি৷’’
ঈদের পর ৫ মে ছুটি নিলে সরকারি চাকরিজীবীদের ছুটি দাঁড়িয়েছে ৯ দিনে৷ ফলে দারুণ উপভোগের চেষ্টা ছিল সবার মধ্যে৷ এই সময়ে ভ্রমণ পিয়াসী মানুষেরা ছুটে বেড়িয়েছেন দেশের নানা প্রান্তে৷ যেহেতু রাঙামাটি পর্যটকদের তীর্থস্থান, ফলে ঈদের মধ্যে পর্যটকদের আনাগোণাও ছিল চোখে পড়ার মতো৷
রাঙামাটির স্থানীয় বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন চৌধুরীর মতে, ‘‘অনেক দিন পর এতটা উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে রাঙামাটিতে৷ গরমে কাপ্তাই লেকের জল শুকিয়ে গেছে৷ তাতে অবশ্য রূপ কমেনি লেকের৷ প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ বোট নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছে এদিকে সেদিক৷’’
এ ছাড়াও জীবিকা, কিংবা পড়াশোনার প্রয়োজনে যারা দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকেন, ঈদ ছুটিতে তারাও ভিড় জমিয়েছেন পাহাড়ে নিজ বাড়িতে৷ সব মিলিয়ে জম্পেশ ঈদ কাটিয়েছে পাহাড়ের মানুষ৷