1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাড়ায় পাড়ায় লাইব্রেরি, উদ্যোগ ছাত্রের

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২০ মে ২০২১

করোনার ফলে মানুষ গৃহবন্দি৷ অথচ বই পড়ার অভ্যাস কমেছে৷ হাতে হাতে স্মার্টফোন পেয়ে বইকে ভুলেছে মানুষ৷ তাই ঘরে ঘরে লাইব্রেরি গড়ার উদ্যোগ নিয়েছেন ২২ বছরের এক তরুণ৷

করোনার ফলে মানুষ গৃহবন্দি৷ অথচ বই পড়ার অভ্যাস কমেছে৷ হাতে হাতে স্মার্টফোন পেয়ে বইকে ভুলেছে মানুষ৷ তাই ঘরে ঘরে লাইব্রেরি গড়ার উদ্যোগ নিয়েছেন ২২ বছরের এক তরুণ৷
ছবি: Payel Samanta/DW

করোনা আসার পর পৃথিবীতে অনলাইন ক্লাস, লকডাউন শব্দগুলো খুব চেনা৷ গৃহবন্দি মানুষ মত্ত হয়ে থাকছে মোবাইল আর ওটিটি প্ল্যাটফর্মে৷ এরকম পরিস্থিতিতে লাইব্রেরিগুলো বন্ধ৷ ফলে বইয়ের সঙ্গে সম্পর্কস্থাপনের যাবতীয় আশাও শেষের পথে৷ এমন পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী পথে হেঁটে বইকে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার অভিনব রাস্তা বেছে নিলেন বিশ্বভারতীর এক পড়ুয়া, সৌম্যদীপ্ত বসু৷   

গ্রামদুটির নাম বড়বেড়িয়া এবং রামরামপুর৷ ডায়মন্ড হারবার থেকেও প্রায় ১০-১২ কিলোমিটার দূরে৷ দক্ষিণ ২৪ পরগণার এই বর্ধিষ্ণু গ্রামদুটির পাড়ায় পাড়ায় লাইব্রেরি করার উদ্যোগ নিচ্ছেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্র সৌম্যদীপ্ত বসু৷ সৌম্যদীপ্তর পড়াশুনোর বিষয়ও সোশ্যাল ওয়ার্ক৷ অনলাইন ক্লাসের ফাঁকে তিনি নিজেদের গ্রামেই সমাজসেবার কাজ নিয়ে ব্যস্ত৷ সৌম্যদীপ্ত নিজে থাকেন দেরিয়া গ্রামে৷ আশেপাশের গ্রামে পাড়ায় পাড়ায় লাইব্রেরি গড়ে তোলার উদ্যোগ কেন? তিনি বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামে একটা লাইব্রেরি আছে, যেটা একটা বিরাট বড় এলাকায় একটিমাত্র৷ লকডাউনে সেটাও বন্ধ৷ এছাড়া কোনো লাইব্রেরি নেই৷ প্রত্যেকটা পাড়ায় পাড়ায় যদি লাইব্রেরি থাকে, তাহলে মানুষের কাছে বই পৌঁছে যাবে সহজেই৷”

সৌম্যদীপ্ত বসু

This browser does not support the audio element.

পাড়ায় পাড়ায় লাইব্রেরির ভাবনাটা কী? সৌম্যদীপ্ত দেখেছেন, ছোটদের বই পড়ার ইচ্ছে আছে, কিন্তু বই তারা পাচ্ছে না৷ তাই বই পৌঁছে দিলেই পড়ুয়া পাওয়া যাবে৷ কোনো একজনের বাড়িতে একটি নির্দিষ্ট স্থানে যদি কিছু বই রেখে লাইব্রেরি চালু করা যায়, তাহলেই তো সকলের হাতে বই পৌঁছে যাবে৷ লকডাউনে বইয়ের থেকে ভাল বন্ধুই বা কে? এই ভাবনা থেকেই সৌম্যদীপ্ত তার ‘আলোকধারা’ সংস্থার মাধ্যমে একমাস আগে ‘বোধিপীঠ' নামে তিনটি লাইব্রেরি খুলে ফেলেছেন৷ ছোটরা নিয়ম করে বই নিয়ে যায় এবং আসে৷ সবটাই কোনো মূল্য ছাড়া৷ ছোটদের হাত ধরে তাদের বাবা-মায়েরা এবং অনান্য বয়স্করাও লাইব্রেরিতে যাতায়াত শুরু করেছেন৷ পেশায় শিক্ষক তিনজনের বাড়িতে কয়েকটা তাক নিয়ে জমা রাখা হয়েছে আশি থেকে একশো বই৷ এমনই একজন হলেন মলয় প্রামাণিক৷ তিনি হাসতে হাসতে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাচ্চারা পছন্দমতো বইপত্র নিয়ে যাচ্ছে৷ সেখানে থাকছে ভূত-পাখি-ছড়া বা টুনিটুনির গল্প৷ লকডাউনে পড়ার যে অভ্যাসের ক্ষতি হয়েছে, সে ক্ষতি অনেকটাই মিটেছে৷ আর আমার বাড়িতেই যেহেতু লাইব্রেরি ফলে আমার ছেলেও সবসময় বই নিয়ে পড়ছে৷”

মলয় প্রামাণিক

This browser does not support the audio element.

লকডাউনে স্কুল বা পড়াশুনোর প্রক্রিয়াটা স্থগিত৷ তাছাড়া অনেকেরই পাঠ্যপুস্তক কেনার সামর্থ্য নেই৷ তাদের জন্য সৌম্যদীপ্তর সমাধান কমিউনিটি বুক ব্যাঙ্ক৷ এতে পাঠ্যপুস্তক নিয়ে পড়াশুনো করে আবার ফেরত দিয়ে আসা যায়৷ গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের পাশাপাশি শান্তিনিকেতনেও সৌম্যদীপ্ত এই কমিউনিটি বুক ব্যাঙ্ক চালু করেছেন৷ কিন্তু এত বই আসে কোত্থেকে? হাসিখুশি সৌম্যদীপ্ত বলেন, ‘‘অনেকেই বই দিয়ে সাহায্য করেছেন৷ অনেকে টাকা পাঠিয়েছেন৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় সাহায্য চেয়েছিলাম৷ অনেকে বাড়িতে ডেকে বই দিয়েছেন৷’’

আরো অনেক লাইব্রেরি গড়ে তোলার ইচ্ছেতে বাধা দিয়েছে করোনা৷ কলকাতা থেকে বই নিয়ে আসা বা জমায়েতে মস্ত বাধা দিচ্ছে এই করোনা৷ মেধাবৃত্তি পাওয়া সৌম্যদীপ্ত বলেন, ‘‘আলোকধারা প্রকল্পের সাহায্যে আরো অনেক কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে৷ স্বাস্থ্য বা শিক্ষা নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে ভবিষ্যতে পিএইচডি করতে চাই সোস্যাল ওয়ার্কে৷” সৌম্যদীপ্তর কাজে খুশি তাঁর বিশ্বভারতীর সতীর্থরা৷ বোধিপীঠের একটি শাখা ইতিমধ্যে শান্তিনিকেতনেও স্থাপন করেছে তারাই৷ ‘বোধিপীঠ’ নামকরণের হোতা ওরফে বিশ্বভারতীর স্নাতকোত্তর বাংলা বিভাগের ছাত্র সৈকত বালা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই বাড়িতে বাড়িতে লাইব্রেরির পরিকল্পনা তো অপূর্ব৷ সৌম্যদীপ্ত বরাবরই এরকম৷ গতবছর প্রথম লকডাউনের সময় একটি অনাথ আশ্রমের অনেকদিনের খরচ ও এবং ওর বাবা বহন করেছিল৷ আমপানে চাল উড়ে গিয়েছিল, সেই চালও ছেয়ে দিয়েছিল৷’’ সৌম্যদীপ্তর সব লড়াইয়ের সহযোগী বাবা শুভেন্দু বসু আপাতত করোনার ধাক্কায় কর্মহীন৷ কিন্তু তাঁদের কি কাজের অভাব আছে সত্যি?

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ