ছয় মাস ধরে পায়ে হেঁটে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করা চাট্টিখানির কথা নয়৷ এক তথ্যচিত্র নির্মাতা এভাবে গোটা জার্মানি চষে বেড়িয়ে অপরূপ নিসর্গ ও আবেগের নানা মুহূর্ত তুলে ধরেছেন৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির স্যাক্সনি রাজ্যের ‘স্যাক্সন সুইজারল্যান্ড’ নামে পরিচিত অঞ্চলে পাহাড়ের অদ্ভুত আকার-আয়তন ও বন্য উপত্যকা নজর কাড়ার মতো৷ জার্মানির পূর্বাঞ্চলে চেক প্রজাতন্ত্রের সীমান্তে এলবে নদীর যাত্রাপথে বেলেপাথরের এই পর্বতমালা ট্রেকারদের স্বর্গ হিসেবে আকর্ষণীয়৷ তথ্যচিত্র নির্মাতা হিসেবে এনো সাইফ্রিড সেই অঞ্চল সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ‘‘দৈনন্দিন জীবনের চাপ থেকে মুক্তি পেতে আমি ট্রেকিং করতে খুব ভালোবাসি৷ এলবে নদীর যাত্রাপথে স্যান্ডস্টোন মাউন্টেনস আমার কাছে সত্যি অনন্য, কারণ বাস্তবে জায়গাটি বেশ অবাস্তব ও রূপকথার জগতের মতো লাগে৷ আচমকা ভুঁইফোড় সূঁচের মতো টিলা চোখে পড়ে৷ আমার চোখে অন্য কোথাও এমন নিসর্গ নেই৷’’
জার্মানির কিছু স্বপ্নের গন্তব্য
স্যুগ্সপিৎস, আইফেল এবং র্যুগেনের একটি সমুদ্রতট – ডয়চে ভেলে ট্রাভেল টিমের সদস্যরা জার্মানিতে তাদের প্রিয় গন্তব্যের কথা জানিয়েছেন৷ করোনার কারণে আরোপ করা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে যাওয়া যাবে এসব পর্যটনকেন্দ্রে৷
ছবি: picture-alliance/Dumont Bildarchiv/P. Hirth
স্যুগ্সপিৎস পর্বতশৃঙ্গ
স্যুগ্সপিৎস হচ্ছে জার্মানির সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ৷ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমে গেলে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,৯৬২ মিটার উঁচু এই পর্বতশৃঙ্গে যেতে চান ডয়চে ভেলের ক্রিস্টিয়ান হফমান৷ রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে এখান থেকে নাকি ১০০ কিলোমিটার দূরের মিউনিখ শহরও দিব্যি দেখা যায়৷
করোনা নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে জার্মানির আইফেল অঞ্চলে সাইকেল ট্যুরে যেতে চান ডয়চে ভেলের সুসান বনিকক্স৷ কিল নদীর তীর ধরে সাইকেল চালানো নাকি বেশ সোজা, আর আশেপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য অসাধারণ৷
ছবি: picture-alliance/R. Goldmann
বর্ণিল শহর ভের্নিগেরোডে
বসন্তে হার্ৎস মাউন্টেইনস-এর বর্ণিল ভের্নিগেরোডে শহরে যাওয়ার কথা ছিল ডয়চে ভেলের কার্স্টেন স্মিড্ট-এর৷ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে সেখানে যাবেন তিনি৷ অঞ্চলটি নাকি হাইকিংয়ের জন্য চমৎকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Bein
স্যাক্সন সুইজারল্যান্ড
এলিজাবেথ ইয়র্কের বিবেচনায় জার্মানির সবচেয়ে সুন্দর প্রাকৃতিক ল্যান্ডস্কেপের দেখা মেলে নাকি স্যাক্সন সুইজারল্যান্ডে৷ করোনা মহামারি শেষ হলে সেখানে যাবেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/Dumont Bildarchiv/P. Hirth
স্প্রিভাল্ড
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জার্মানির স্প্রিভাল্ড অঞ্চলে যেতে চান ভিন্নি মডেসটো৷ সেই অঞ্চলটি পায়ে হেঁটে, সাইকেলে কিংবা নৌকায় ঘোরা যায়৷ তবে প্রকৃতির সৌন্দর্য পুরোটাই উপভোগ করতে ক্যাম্প করে রাতে জঙ্গলে ঘুমাবেন মডেসটো৷
ছবি: DW/Christina Deicke
বার্লিন
করোনার কারণে নিজের হোমটাউনটাই এখন স্বপ্নের গন্তব্যে পরিতন হয়েছে ইয়ান্স ফ্রিৎসের কাছে৷ করোনা সংকট কেটে গেলে গ্রীষ্মটা বার্লিনে কাটাতে চান তিনি৷
ছবি: picture-alliance/S. Reents
মেক্লেনবুর্গ লেক
ডয়চে ভেলের আনে টর্মাকে যেতে চান মেক্লেনবুর্গ লেক অঞ্চলে৷ সেখানে হাইকিং, সাইক্লিংয়ের পাশাপাশি সাঁতরানোও যায়৷ সেখানকার বিস্তীর্ণ খোলা অঞ্চল, জঙ্গল আর লেক টানে তাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Wüstneck
র্যুগেন দ্বীপ
করোনা সংকট কেটে গেলে বাল্টিক সাগরের র্যুগেন দ্বীপে যেতে চান আন্দ্রেয়াস কির্শহফ৷ দ্বীপটির মূল আকর্ষণ হচ্ছে ওয়াইল্ড বিচ৷ আর সাইক্লিং আর হাইকিংয়ের জন্যও দ্বীপটি আদর্শ৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER
8 ছবি1 | 8
২০১৯ সালে এনো সাইফ্রিড জার্মানির মধ্য দিয়ে ৩,৪৪২ কিলোমিটার পথে হাঁটার সময়ে এলবে স্যান্ডস্টোন পর্বতমালাও অতিক্রম করেছিলেন৷ শুধু দশ কিলো ওজনের রাকস্যাক সঙ্গে নিয়ে তিনি প্রায় ছয় মাস পথে কাটিয়েছেন৷ আঁকাবাঁকা পথে তিনি জার্মানির উত্তর থেকে দক্ষিণ প্রান্তে চষে বেড়িয়েছেন৷
উত্তর সাগরের সিল্ট দ্বীপ থেকে তিনি বাল্টিক সাগরের উপকূল হয়ে স্যাক্সন সুইজারল্যান্ড ও টুরিঙ্গিয়া রাজ্যের অরণ্যের মধ্য দিয়ে হেঁটেছেন৷ তারপর দক্ষিণে সারল্যান্ড রাজ্য হয়ে আল্পস পর্বতমালায় পৌঁছেছেন৷ এনো জানান, ‘‘যাত্রার আগে আমি বিস্তারিতভাবে রুটের পরিকল্পনা করি নি৷ মানচিত্রে পছন্দের এলাকা ও জায়গা খুঁজে নিয়েছি মাত্র৷ বেরিয়ে পড়ার পর প্রতি সপ্তাহে যাত্রাপথের বিস্তারিত পরিকল্পনা করেছি, কারণ আমি স্বতঃস্ফূর্ত থাকতে চেয়েছিলাম৷’’
তথ্যচিত্রে জার্মানির সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার
03:18
ভ্রমণের সময়ে তিনি নিজেই নিজের ভিডিও তুলেছেন৷ নিজের তোলা ভিডিও দিয়ে তিনি ১০৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্র তৈরি করেছেন৷ ‘পায়ে হেঁটে জার্মানি’ ছবিতে এনো সাইফ্রিড শুধু নিজের দেশের বৈচিত্র্য তুলে ধরেন নি, আবেগের সঙ্গে বেশ কিছু বিষয়ের প্রতিও মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন৷ এনো সাইফ্রিড বলেন, ‘‘ভ্রমণের সময় একবারও মনে হয় নি যে হাল ছেড়ে দেবো অথবা বাসায় থাকলেই ভালো হতো৷ এই বিশাল সুযোগ সম্পর্কে আমি সব সময়ে সচেতন ছিলাম৷যেমন সন্ধ্যা হলে নির্জন প্রকৃতির কোলে একা কোথাও ঘুমানোর অভিজ্ঞতা অথবা সূর্যাস্ত উপভোগের সুযোগ তাঁর কাছে অনবদ্য৷ অবশ্যই কিছু নেতিবাচক অভিজ্ঞতাও হয়েছে৷ যেমন টানা পাঁচ দিন ধরে প্রবল বৃষ্টি হয়েছে অথবা আমার সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে গেছে৷ তা সত্ত্বেও বলতে হয় সে সব আসলে মোটেই নেতিবাচক নয়, কারণ শুরু থেকেই এমন আশঙ্কা সম্পর্কে আমি সচেতন ছিলাম৷’’
জার্মানির মধ্য দিয়ে দীর্ঘ এই ভ্রমণের শেষে, অর্থাৎ ১৬৫ দিন পর এনো নিজের চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছান৷ জার্মানির দক্ষিণতম প্রান্তে আল্পস পর্বতের হাল্ডেনভাঙার নামের এক জায়গায় যাত্রা শেষ হলো৷
ডরোটেয়া প্রেচ/এসবি
জার্মানির ওয়াইন রুট
জার্মানির ওয়াইন রুটে ভ্রমণের জন্য শরৎকাল সব থেকে উত্তম সময়৷ বিশ্বের প্রাচীনতম এই ওয়াইন পর্যটন রুটটি প্যালাটাইনেট অঞ্চলে শ্বেইগেন-রেকটেনবাচ থেকে বোকেনহাইম পর্যন্ত ৮৫ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত৷
ছবি: Herbert Kehrer/imagebroker/picture alliance
দমবন্ধকরা সুন্দর
জার্মানির দ্বিতীয় বৃহত্তম মদ উৎপাদনকারী অঞ্চল প্যালাটিনেটের ২৩ হাজার হেক্টর এলাকা স্থানীয়ভাবে প্যাফালজ নামে পরিচিত ৷ এখানে প্রায় চার হাজার মদ উৎপাদনকারী রয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই পরিবারিকভাবে এই ব্যবসায় জড়িত৷
ছবি: Wolfgang Cezanne/dpa/picture alliance
মদের রাজা
রাইজলিং নামে এক ধরনের আঙ্গুর থেকে তৈরি হোয়াইট ওয়াইনকে জার্মানির মদের রাজা বলা হয়৷ এই জাতের আঙ্গুরের ফলন জার্মানি ছাড়া বিশ্বের অন্য কোথাও তেমন দেখা যায় না৷ প্যাফালজ থেকে এই জাতীয় আঙ্গুর সরবরাহ করা হয়৷ এখানকার প্রায় ছয় হাজার হেক্টর জমিতে এর চাষাবাদ করা হয়৷
ছবি: Günter Lenz/imagebroker/picture alliance
মদের রাণী
প্রতি শরতে জার্মানির মদের সড়ক নিউস্টাডটে একজনকে মদের রাণী হিসেবে নির্বাচিত করা হয়৷ তিনি এক বছরের জন্য দেশ বিদেশে জার্মানির মদের প্রতিনিধিত্ব করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Arnold
মদ ব্যবসায়ী
এই অঞ্চলটিতে এক ধরণের মদের দোকান রয়েছে যা স্ট্রেইউয়ার্সচ্যাট হিসেবে পরিচিত৷ বছরের নির্দিষ্ট দিনে সাধারণত এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাসে মদ ব্যবসায়ীরা তাদের খামারগুলো খোলা রেখে সেখান থেকে নিজেদের বানানো মদ পরিবেশন করেন৷
ছবি: Jürgen Schulzki/imagebroker/picture alliance
সসেজ ও মদ
ব্যাড ডার্কহিমের দারখিমার উরস্টমার্ককে বিশ্বের বৃহত্তম মদ উৎসব হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ দ্বাদশ শতাব্দীতে দ্বাদশীমের লোকেরা তীর্থযাত্রীদের খাবার ও পানীয় সরবরাহের পরিকল্পনা করেছিলেন, তখন থেকে এটি মধ্যযুগীয় ভোক্তা বাজারে পরিণত হয়েছিল৷ পরে এটি লোকজ উৎসবে রূপ নেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Anspach
জার্মান ওয়াইন গেট
ওয়াইন গেটটি জার্মানির মদের সড়কের শুরু বা শেষ হিসেবে চিহ্নিত হয়, যদিও এটি নির্ভর করে কোথা আপনি শুরু করেছন তার উপর৷ এটি ফরাসী সীমান্তে শোয়েগেন-রেকটেনবাখে অবস্থিত৷ ১৯৩৫ সালে হিটলারের জাতীয় সমাজতান্ত্রিকেরা এই গেটটি তৈরি করেন৷