পিঁয়াজ কাটলে চোখ জ্বালা করে৷ কিন্তু এখন পিঁয়াজ কিনতে গেলেও চোখে জল আসছে৷ গত এক মাসে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে পিঁয়াজের দাম৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কলকাতা সফরে এসেছেন৷ যদিও শুভেচ্ছা সফর, তিস্তার জল থেকে পিঁয়াজের রপ্তানি, জরুরি কোনো ইস্যুতেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে তাঁর মত বিনিময়ের সম্ভাবনা কম এই যাত্রায়৷ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ কি পারত না, সৌজন্যবশত বাংলাদেশে এখন কিছুটা পিঁয়াজ পাঠাতে? যেখানে পিঁয়াজের দাম এখানকার প্রায় তিন গুণ? প্রশ্নটা শুনে আঁতকে উঠলেন পশ্চিমবঙ্গের খাদ্য ও খাদ্য সরবরাহ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক৷ বললেন, ‘‘আমাদেরই অবস্থা খারাপ!’’ না, আড়তদারের কাছে মজুত পিঁয়াজও ভাগ করে খাওয়া যাবে না৷ তার একটা বড় কারণ, পশ্চিমবঙ্গে পিঁয়াজের ফলন হয় না৷ প্রায় পুরোটাই চালান আসে মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে৷ সেই চালানি পিঁয়াজের দাম ক্রমাগত চড়েই যাচ্ছে পাইকারি বাজারে৷ গত প্রায় এক মাস ধরে সত্তর-পঁচাত্তর টাকার নীচে নামছে না৷ ফলে খুচরো বাজারের পিঁয়াজ বিক্রেতারা লাভের আশা না করেই কেনা দামে পিঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন৷ যদিও পিঁয়াজের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রাখার জন্যে আলাদা টাস্ক ফোর্স গড়েছে রাজ্য সরকার৷ এবং সরকারের দাবি, ৪০ টাকা কেজি দরে পিঁয়াজ দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে৷
আমাদেরই অবস্থা খারাপ: খাদ্যমন্ত্রী
কথাটা শুনে হাসলেন বালিগঞ্জ বাজারের আলু-পিঁয়াজ বিক্রেতা নীতুরাম মন্ডল, বললেন, ‘‘ওসব ওপর মহলের ব্যাপার৷ আমরা কী বলি বলুন তো!'' পিঁয়াজের দাম কেন বেড়েই চলেছে, সেটাও নীতুরামের কাছে ‘‘ওপর মহলের ব্যাপার৷'' তাঁর মতো সাধারণ খুচরো ব্যবসায়ী সেই রহস্য বোঝেন না৷ তবে প্রতিদিন পাইকারি বাজারে পিঁয়াজের দর করতে গিয়ে নাকাল হতে হচ্ছে৷ শুক্রবার সকালে দোকানে বসে জানালেন, আগের দিনই ৭০ টাকা কেজি দরে পিঁয়াজ কিনেছেন, ৭৫ টাকায় বিক্রি করেছেন৷ পরদিনই গিয়ে শুনছেন ৭৫ টাকা পাইকারি দর৷ ৩০০০ টাকা মণ৷ ফলে ৮০ টাকার নীচে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না৷
ওসব ওপর মহলের ব্যাপার: পিঁয়াজ বিক্রেতা
রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন, আরো মাসখানেক এরকমই চলবে৷ কিন্তু মজা হলো, পিঁয়াজের এই চড়া দাম নিয়ে সাধারণ মানুষের খুব একটা হেলদোল আছে বলে মনে হচ্ছে না৷ বরং নানা ধরনের রসিকতা, মিম এবং টিকটক ভিডিও ছড়িয়ে পড়ছে সোশাল মিডিয়ায়৷ এরকমই এক রসিকতা হলো— এক ক্রেতা বাজারে গিয়ে মাংসের দোকানিকে বলছেন, এক কেজি মাংস দিন তো, একটু পিঁয়াজ রাঁধব!
পেঁয়াজ রপ্তানি আয়ে শীর্ষ দেশগুলো
কোন কোন দেশ পেঁয়াজ রপ্তানি করে সব থেকে বেশি আয় করে সেই তালিকা করেছে ওয়ার্ল্ডস টপ এক্সপোর্ট ডটকম৷ ২০১৯ সালে পেঁয়াজ রপ্তানি করে শীর্ষ আয় করা দেশের তালিকা দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: bdnews24.com/A. Mannan
নেদারল্যান্ডস
পেঁয়াজ রপ্তানি করে দেশটি গত বছর ৮১ কোটি ৫২ লাখ ইউএস ডলার আয় করেছে৷ বিশ্বের রপ্তানি হওয়া মোট পেঁয়াজের সাড়ে ২০ শতাংশ রপ্তানি করেছে নেদারল্যান্ডস৷
ছবি: Imago Images/J. Tack
চীন
পেঁয়াজ রপ্তানি করে ২০১৯ সালে ৬০ কোটি ৪৪ লাখ ইউএস ডলার আয় করেছে৷ বিশ্বের রপ্তানি হওয়া মোট পেঁয়াজের ১৫ শতাংশ রপ্তানি করে চীন৷
ছবি: picture-alliance/Panimages
ভারত
বাংলাদেশের আমদানিকৃত পেঁয়াজের অন্যতম উৎস ভারত৷ গতবছর পণ্যটি রপ্তানি করে ৩৬ কোটি ৪৭ লাখ ইউএস ডলার আয় করেছে দেশটি৷ বিশ্বে পেঁয়াজ রপ্তানি বাজারের নয় দশমিক এক শতাংশ ছিল ভারতের দখলে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Nanu
মেক্সিকো
বিশ্বে রপ্তানি হওয়া মোট পেঁয়াজের আট দশমিক নয় শতাংশ রপ্তানি করে মেক্সিকো৷ এই দেশটি গতবার পেঁয়াজ রপ্তানি করে ৩৫ কোটি ৬০ লাখ ইউএস ডলার আয় করেছে৷
ছবি: Reuters/A. Latif
যুক্তরাষ্ট্র
পেঁয়াজ রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সালে ২৮ কোটি ৭৭ লাখ ইউএস ডলার আয় করেছে৷ গতবার যত পেঁয়াজ রপ্তানি হয়েছে তারমধ্যে সাত দশমিক দুই শতাংশ রপ্তানি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Lage
মিশর
পেঁয়াজ রপ্তানি করে দেশটি গতবার ২৭ কোটি ২৫ লাখ ইউএস ডলার আয় করেছে৷ বাংলাদেশ প্রায় সময়ই এই দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে৷
ছবি: AFP/Getty Images/K. Desouki
স্পেন
পেঁয়াজ রপ্তানি করে দেশটি গত বছর ২১ কোটি ৬৭ লাখ ইউএস ডলার আয় করেছে৷ পেঁয়াজ রপ্তানি করে আয়ের দিক থেকে এই দেশটির অবস্থান সপ্তম স্থানে৷
ছবি: Reuters/N. Frandino
নিউজিল্যান্ড
পেঁয়াজ রপ্তানি করে দেশটি গতবার এগারো কোটি ৪০ লাখ ইউএস ডলার আয় করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Melville
পোল্যান্ড
পেঁয়াজ রপ্তানি করে দেশটি গতবছর ১০ কোটি ৪৩ লাখ ইউএস ডলার আয় করেছে৷ ওয়ার্ল্ডস টপ এক্সপোর্ট ডটকমের তালিকায় পেঁয়াজ রপ্তানি করে শীর্ষ আয়ের দিক থেকে দেশটির অবস্থান নবম৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Skarzynski
ফ্রান্স
ইউরোপের এই দেশটি পেঁয়াজ রপ্তানি করে ২০১৯ সালে নয় কোটি ৬১ লাখ ইউএস ডলার আয় করেছে৷ গতবার রপ্তানি হওয়া মোট পেঁয়াজের দুই দশমিক চার শতাংশ রপ্তানি করে দেশটি৷ তাদের অবস্থান দশম৷
ছবি: AFP/M. Bertorello
পেরু
দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশটি পেঁয়াজ রপ্তানি করে গতবার আট কোটি ৫৬ লাখ ইউএস ডলার আয় করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তুরস্ক
২০১৯ সালে পাঁচ কোটি ৩০ লাখ ডলার আয় করেছে পেঁয়াজ রপ্তানি করে৷ তাদের অবস্থান ১২তম৷
ছবি: picture-alliance/TASS/dpa/S. Bobylev
জার্মানি
পেঁয়াজ রপ্তানি করে দেশটি গতবার চার কোটি ৫১ লাখ ইউএস ডলার আয় করেছে৷ গতবার রপ্তানি হওয়া মোট পেঁয়াজের এক দশমিক এক শতাংশ রপ্তানি করে দেশটি৷
ছবি: imago/blickwinkel/McPhoto/K. Steinkamp
ইটালি
ইউরোপের এই দেশটি ২০১৯ সালে চার কোটি ৩০ লাখ ডলার রপ্তানি করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Huguen
ক্যানাডা
পেঁয়াজ রপ্তানি করে দেশটি গতবার চার কোটি ১৯ লাখ ইউএস ডলার আয় করেছে৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/G. Wenbao
পাকিস্তান
মোট রপ্তানি আয়ে বাংলাদেশের থেকে অনেক পিছিয়ে থাকলেও শুধু পেঁয়াজ রপ্তানি করে পাকিস্তান গতবার প্রায় তিন কোটি ১৫ লাখ ইউএস ডলার আয় করেছে৷ পেঁয়াজ রপ্তানিতে ২০১৯ সালে তাদের অবস্থান ছিল ১৯তম৷