পিএইচডি গবেষণায় নকল করে ডিগ্রি হারালেন ঢাবি শিক্ষক
৩১ আগস্ট ২০২২
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল কালাম লুৎফুল কবীর পিএইচডি থিসিসে ৯৮ শতাংশ হুবহু নকল করায় তার ‘ডক্টরেট' ডিগ্রি বাতিল করা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
দৈনিক সমকালের খবর অনুযায়ী, একই সঙ্গে তাকে সহযোগী অধ্যাপক থেকে সহকারী অধ্যাপকে পদাবনতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম (সিন্ডিকেট) ৷ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন৷ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিন্ডিকেটের এক সভায় তার ‘ডক্টরেট' ডিগ্রি বাতিলের এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ সভায় সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান৷ সমকালকে বিষয়টি একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য নিশ্চিত করেছেন৷
আবুল কালাম লুৎফুল কবীর ২০১৪ সালের ‘টিউবারকিউলোসিস অ্যান্ড এইচআইভি কো-রিলেশন অ্যান্ড কো-ইনফেকশন ইন বাংলাদেশ: অ্যান এক্সপ্লোরেশন অব দেয়ার ইমপ্যাক্টস অন পাবলিক হেলথ' শীর্ষক এক নিবন্ধের কাজ শুরু করেন৷ তার এই গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আবু সারা শামসুর রউফ এবং সহ-তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন একই বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক৷
কালাম লুৎফুল কবীরকে একাধিকবার অনুরোধ করলেও তিনি সহ-তত্ত্ববধায়কদের কাছে অভিসন্দর্ভের কোনো কপি সরবরাহ করেননি বলে কালামের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ৷
ঢাবির ওই শিক্ষকের গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি নিয়ে গণমাধ্যমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি৷ এবং ফেব্রুয়ারি মাসে সিন্ডিকেট সভায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়৷ পাশাপাশি অভিযোগ তদন্তে কমিটি করে দেয় সিন্ডিকেট ৷ এবং পরে ২০২১ সালের ২৮ অক্টোবর শাস্তি দিতে একটি ট্র্যাইবুনাল গঠন করে ৷
পিএইচডি থিসিস জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সিন্ডিকেট সভায় লুৎফুল কবীরের ডিগ্রি বাতিল ও পদাবনতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান সিন্ডিকেট সদস্য এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির ৷
এনএস/কেএম (সমকাল)
জার্মান রাজনীতিবিদদের পিএইচডি-মোহ ও চৌর্যবৃত্তি
পিএইচডি গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন জার্মানির পরিবার বিষয়ক মন্ত্রী৷ জার্মান রাজনীতিবিদদের পিএইচডি-প্রীতি যেমন আলোচিত, তেমনি চৌর্যবৃত্তির অভিযোগও এবারই প্রথম নয়৷
২০১১ সালে জার্মানির কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টের ৬২২ সদস্যের ১১৫ জন ছিলেন ডক্টরেট৷ সেসময় ১৬ জন মন্ত্রীর ১০ জনই ছিলেন পিএইচডি ডিগ্রিধারী৷ বর্তমান পার্লামেন্টের ৮২ শতাংশেরই অন্তত একটি বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি রয়েছে৷ আর পিএইচডিধারী ১৭ শতাংশ৷ অন্য দেশগুলোতে সচরাচর এত পিএইচডি করা জনপ্রতিনিধি দেখা যায় না৷
ছবি: ODD ANDERSEN/AFP/Getty Images
ড. ম্যার্কেল
জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের পূর্বসূরী ছিলেন হেলমুট কোল৷ তিনি ইতিহাসের ডক্টরেট৷ কম যান না তার উত্তরসূরী আঙ্গেলা ম্যার্কেলও৷ তিনি কোয়ান্টাম রসায়নে পিএইচডি করেছেন৷ পেশাজীবনের শুরু বিজ্ঞানী হিসেবে৷ বর্তমান মন্ত্রীসভায় আইন, ব্যবস্থাপনা, সমাজ বিজ্ঞান, শিক্ষা, এমনকি ধর্মতত্ত্বের পিএইচডিধারী রাজনীতিবিদ রয়েছেন৷ জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার শ্টাইনমায়ারও একজন ডক্টরেট৷
ছবি: Filip Singer/AP Photo/picture alliance
রাজনীতির পাঠ ও পিএইচডি
অনেকেই রাজনীতি শুরু করেছেন পিএইচডি অর্জনের পরে৷ আবার কেউ কেউ রাজনীতিতে যোগ দেয়া অবস্থাতেও গবেষণা করেছেন৷ যেমন, ম্যার্কেলের সিডিইউ দলের সাবেক পরিবার বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ক্রিস্টিনা শ্যোর্ডার ২০০৯ সালে তার পিএইচডি শেষ করেন জার্মান সংসদ সদস্যদের আইনের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে৷ কিন্তু এই গবেষণায় দলের সদস্যদের উপর তার নির্ভরশীলতা নিয়ে পরে বিতর্ক তৈরি হয়৷
ছবি: picture alliance / dpa
গবেষণায় অবদান
রাজনীতি করা অবস্থায় রাজনীতি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গবেষণা নিয়ে বিতর্ক যেমন রয়েছে, আবার অনেক ক্ষেত্রে তাদের গবেষণা অ্যাকাডেমিক জ্ঞানের প্রসারে ভূমিকা রেখেছে৷ জার্মানির বর্তমান প্রেসিডেন্ট গবেষণা করেছেন গৃহহীনদের সমস্যার বিষয়ে সরকারি উদ্যোগের ভূমিকা নিয়ে, সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান স্পিকার এর পিএইচডির বিষয় ছিল কর্পোরেট নিরীক্ষাকারীদের আইনি অবস্থান নিয়ে৷
ছবি: Bernd von Jutrczenka/dpa/picture alliance
চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ
রাজনীতিবিদদের পিএইচডির এই মোহের পাশাপাশি গবেষণা তৈরিতে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগও উঠেছে কয়েকজনের বিরুদ্ধে৷ ২০১১ সালে এজন্য পদত্যাগ করতে হয়েছিল সেসময়কার প্রতিরক্ষামন্ত্রী কার্ল থিওডর সু গ্যুটেনবার্গকে৷ পরবর্তীতে এমনকি ডক্করেট উপাধিও হারান তিনি৷ যদিও সম্প্রতি তিনি ব্রিটিশ একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নতুন করে ডক্টরেট অর্জন করেছেন৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Gambarini
আরো যারা
২০১২ সালে তখনকার শিক্ষামন্ত্রী আনেত্তে শাভান (ছবি) -এর থিসিসে চৌর্যবৃত্তি ধরা পড়ায় তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল৷ লিবারেল ফ্রি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সিলভিয়া কখ-মেহরিনের গবেষণা প্রবন্ধের ৩৪ শতাংশে চৌর্যবৃত্তি ধরা পড়ে৷ ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েনও পিএইচডি অভিসন্দর্ভ নিয়েও প্রশ্ন ওঠে৷ যদিও তার গবেষণার ফলাফলের অংশটি যথাযথ ছিল বলে রায় দিয়েছিল এ সংক্রান্ত অ্যাকাডেমিক কমিটি৷
ছবি: picture-alliance/Ulrich Baumgarten
পরিবারমন্ত্রীর পদত্যাগ
জার্মান রাজনীতিবিদদের পিএইচডি ও গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে৷ দেশটির পরিবার বিষয়ক মন্ত্রী ফ্রান্সিসকা গিফে সম্প্রতি এই অভিযোগের মুখে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন৷ তার বিরুদ্ধে অভিযোগটি অবশ্য বহুদিনের৷ ২০১০ সালে ফ্রি ইউনিভার্সিটি অব বার্লিনে তিনি পিএইচডি প্রবন্ধ জমা দিয়েছিলেন৷
৪৩ বছর বয়সি এই রাজনীতিবিদের বিষয়টি নিয়ে আলোচনার শুরু ২০১৯ সালে৷ বিশ্ববিদ্যালয় তাকে তিরস্কার করলেও জানিয়েছিল ডক্টরেট উপাধি ব্যবহারে কোনো বাধা নেই৷ তবে গিফে নিজেই টাইটেলটি ব্যবহার করবেন না বলে ঘোষণা দেন৷ সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনার প্রেক্ষিতে গত ১৯ মে মন্ত্রীত্ব ত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি৷ গবেষণাটি নিজের সামর্থ্যে করা দাবি করে গিফাই বলেন, যদি কোনো ভুল করে থাকেন তাহলে তার জন্য তিনি দুঃখিত৷