শততম টেস্ট খেলছে বাংলাদেশ৷ ৯৯ টেস্টে ৮টি মাত্র জয়, যার পাঁচটি জিম্বাবোয়ে আর দুটি খেলোয়াড় ধর্মঘটে দুর্বল হয়ে পড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে৷ কেন টেস্টে এগোতে পারছে না বাংলাদেশ? উত্তর খুঁজেছেন রাজীব হাসান৷
বিজ্ঞাপন
যে কোনো উপলক্ষ্য মানুষকে স্মৃতিকাতর করে তোলে৷ স্মৃতির অদৃশ্য গোঁফে তা দিতে দিতে আমরা পাতা ওল্টাই সময়ের অ্যালবামের৷ বাংলাদেশের শততম টেস্টের প্রান্তে এসে কেন জানি খুব করে মনে পড়ছে সেই সময়টা৷ ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর৷ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম৷ টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো টস করতে নামলেন দুই বাঙালি অধিনায়ক! এক দিকে সৌরভ গাঙ্গুলি, ভারতের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে যেটি তাঁর প্রথম ম্যাচ, অন্য দিকে নাঈমুর রহমান; তাঁর তো বটেই, বাংলাদেশেরই সেটি প্রথম টেস্ট৷
মনে পড়ছে, অনেক আলোচনার জন্ম দিয়ে অভিষেক টেস্টের দলে ঢুকে পড়া হাবিবুল বাশারের সেই ঝলমলে ৭১ রানের ইনিংসটি৷ বেশি মনে পড়ছে আমিনুল ইসলামের ১৪৫৷ ৫৩৫ মিনিট উইকেটে ছিলেন আমিনুল, এখনো যেটি সময়ের হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে দীর্ঘতম ইনিংস৷
প্রথম ইনিংসে ৪০০ রান করে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ অলআউট হয়ে গেল মাত্র ৯১ রানে৷ প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৯০ রানে ভারতে ৫ উইকেট ফেলে দিয়ে যে টেস্টে বাংলাদেশ অসম্ভব জয়ের এক কল্পনায় মেতে উঠেছিল, নিদেন ড্র-ও সম্ভব হবে বলে ভাবা হয়েছিল এক সময়; সেই ম্যাচটাই চার দিনে হেরে গেল!
যে পাঁচ কারণে টেস্টে পিছিয়ে বাংলাদেশ
টেস্ট ক্রিকিটে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয় ২০০০ সালে৷ পরিসংখ্যানে এখনো বেশ পিছিয়ে সেদেশ৷ এখন পর্যন্ত খেলা ৯৯ টেস্টের মধ্যে হেরেছে ৭৬টিতে, জয় মাত্র আটটি৷ টেস্ট ক্রিকেটে টাইগারদের পিছিয়ে থাকার পাঁচ কারণ জানাচ্ছে এএফপি৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
কম টেস্ট খেলা
বিশ্বের ক্রিকেট পরাশক্তি হিসেবে বিবেচিত ভারত এবং ইংল্যান্ড যেখানে বছরে ২০টির মতো টেস্ট ম্যাচ খেলে, বাংলাদেশ সেখানে গড়ে ছয়টি টেস্ট খেলার সুযোগ পায়৷ মোটের উপর বড় দলগুলোর বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ আরো সীমিত৷ গত ১৭ বছরের মধ্যে ভারতের মাটিতে একবারই টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছে টাইগাররা, তাও গতমাসে৷ ফলে টেস্ট খেলার সুযোগ কম থাকায় খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতায় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. K. Godhuly
সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা
গত জুলাইয়ের ঢাকায় সন্ত্রাসী হামলার পরও ইংল্যান্ড বাংলাদেশ সফর করেছিল, যা টাইগারদের জন্য এক ইতিবাচক ব্যাপার৷ সেই সফর না হলে বাংলাদেশের অবস্থা পাকিস্তানের মতো হওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছিল৷ ২০০৯ সালে পাকিস্তানে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট টিমের উপর হামলার পর সেদেশ সফর করেনি কোনো বিদেশি ক্রিকেট দল৷ তবে ইংল্যান্ড ঢাকা সফর করলেও নিরাপত্তার শঙ্কায় আগের বছর অস্ট্রেলিয়া সেদেশ সফর করেনি৷ আরো কয়েকটি দল সফর সীমিত করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
খেলার মাঠের সংখ্যা কম
৫৫ হাজার বর্গ মাইল দেশের বাসিন্দা ১৬ কোটি মানুষ৷ আর শুধু ঢাকাতেই থাকেন প্রায় দেড় কোটি মানুষ৷ দেশটিতে খেলার মাঠের সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে৷ বিশেষ করে ঢাকাতে সাধারণ মানুষের খেলার মাঠ পাওয়া মুশকিল৷ ফলে তৈরি হচ্ছে না খেলোয়াড়৷ অবস্থা এমন যে, বর্তমান টেস্ট টিমে ঢাকার খেলোয়াড় শুধু একজন, তাসকিন আহমেদ৷
ছবি: Getty Images/Q. Rooney
ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ আয়োজনে দুর্বলতা
যদিও বাংলাদেশে চারদিনের দু’টি ক্রিকেট প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়, কিন্তু সেগুলো বেশ দুর্বল পর্যায়ের৷ নির্দিষ্ট সময়ের ঠিক নেই, নেই প্রফেশনালিজমের ছোঁয়া৷ ফলে সেসব প্রতিযোগিতা আন্তর্জাতিক মানেরতো হয়ই না, অনেকক্ষেত্রে হয়ে পড়ে একপাক্ষিক৷ দেখা যায়, সেসব টুর্নামেন্টে ডাবল সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যানও পরের সপ্তাহে আন্তর্জাতিক ম্যাচে বোল্ড আউট হন দ্রুত৷ টেস্টের মান বাড়াতে গেলে এসব আয়োজনের মানও বাড়াতে হবে৷
ছবি: Getty Images
স্পিনার থাকলেও পেসারের অভাব
বাংলাদেশ দলে আন্তর্জাতিক মানের স্পিনার থাকলেও টেস্ট জিততে ভালো মানের পেসারও প্রয়োজন৷ কিন্তু টিমে পেসারের ঘাটতি রয়ে গেছে৷ যারা সম্ভাবনা তৈরি করেছেন, যেমন মাশরাফি বিন মোর্তুজা, তারা ইনজুরির কবলে পড়েছেন৷ বর্তমানে দলে থাকা দুই পেসার মুস্তাফিজুর রহমান এবং তাসকিন আহমেদও ইনজুরির কবলে পড়েছেন একাধিকবার৷ ক্রিকেট বোর্ড অবশ্য টেস্টের জন্য পেসার তৈরিতে চেষ্টা করছে৷ তবে সেই চেষ্টার ফল এখনও পাওয়া যায়নি৷
ছবি: AP
5 ছবি1 | 5
এই সেদিন নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়েলিংটন টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৫৯৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করেও বাংলাদেশ ম্যাচ হেরেছিল৷ সেই ম্যাচেও বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের অনেক ছায়া খুঁজে পাওয়া যায়৷ সত্যি বলতে কি, এমন ছায়া ফিরে আসে বারবার৷ শ্রীলঙ্কা সফরে গলের প্রথম টেস্টে পঞ্চম দিনেও ভর করেছিল সেই ভূত৷
কেন এমনটা হয় বারবার? কেন টেস্টে একটা বড় সময় দারুণ খেলেও এক সেশনেই সব প্রচষ্টো ধুলিসাতৎ করে দেয় বাংলাদেশ? এর উত্তর সেই অভিষেক টেস্টেই খুঁজে নেওয়া যায়৷ আমিনুলের পর আর কেউ ৫০০ মিনিট ব্যাটিং করার সাহস বা যোগ্যতা দেখাতে পারেননি৷ বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে ৪০০-র বেশি বল খেলা ইনিংসও মাত্র একটি, মোহাম্মদ আশরাফুলের৷ ৩০০-র বেশি বল খেলার ইনিংসও আছে মাত্র ছয়টি৷ অথচ টেস্ট ক্রিকেটে কখনো কখনো রান তোলার চেয়ে বল খেলতে পারাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷ বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সেই স্কিল বা দক্ষতা গড়ে ওঠেনি এখনো৷
অভিষেক টেস্টের জন্য একটা ‘থিম সং' বানিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)৷ যতদূর মনে পড়ে সেই গানটির শিরোনাম ছিল, ‘চার মারো রে, ছক্কা মারো রে৷' যেন চার-ছক্কা মারাই ক্রিকেটের একমাত্র নিয়ম৷ বাংলাদেশের দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট সেই ঘোর থেকে এখনো বেরোতে পারেনি৷
কেন পারেনি এর সহজ উত্তর আমাদের ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট৷ যে ঘরোয়া ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটটা কখনো কখনো থার্ড ক্লাস মানের হয়৷ বাংলাদেশের ক্রীড়া সাংবাদিকেরা যেটিকে লেখেন 'পিকনিক ক্রিকেট'৷ সত্যি বলতে কি, বাংলাদেশের সাংবাদিকেরাও ঘরোয়া ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটকে যেন পিকনিক হিসেবে নেন৷ খুব কম পত্রিকার সাংবাদিক হাজির থাকে মাঠে৷ পত্রিকার খুব সামান্য জায়গা বরাদ্দ পায়৷ বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকেরাও মাঠে গিয়ে ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ দেখেন এমন অপবাদ কেউ দিতে পারবে না৷ এই ম্যাচগুলোর কোনোটাই সম্প্রচার করা হয় না টিভিতে৷
২০১৬ সালে যেমন ছিল ক্রিকেট
২০১৬ সালে বাংলাদেশের ক্রিকেটের বড় ঘটনা ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট জয়৷ আর বিশ্ব ক্রিকেটের বড় খবর ছিল শেষ ওভারে চমক দেখিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টি-২০ বিশ্বকাপ জেতা৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
টেস্টে বাংলাদেশের সাফল্য
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো টেস্ট জেতে টাইগাররা৷ অক্টোবরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত টেস্টে মেহেদী হাসান মিরাজ আর সাকিব আল-হাসানের বোলিং নৈপুণ্যে ইংল্যান্ডকে ১০৮ রানে হারায় বাংলাদেশ৷ ২০০০ সালে প্রথম টেস্ট খেলা বাংলাদেশের এটি ছিল অস্টম টেস্ট জয়৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
নতুন তারকা মিরাজ
তরুণ এই ক্রিকেটারের টেস্টে অভিষেক ঘটে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে৷ দুই টেস্টে তিনি উইকেট নেন মোট ১৯টি৷ প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট৷ পরের ম্যাচে দুই ইনিংস মিলিয়ে পান ১২ উইকেট৷ ক্যারিয়ারের প্রথম দুই টেস্টে ৫ উইকেট পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি বোলার মিরাজ৷ তাঁর আরেকটি রেকর্ড: বাংলাদেশের হয়ে এক সিরিজে সবচেয়ে বেশি উইকেট পেয়েছেন মিরাজ৷
ছবি: Picture-alliance/AP Photo/A.M. Ahad
চার বলে চার ছয় মেরে চ্যাম্পিয়ন
এপ্রিলে টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জিততে শেষ ওভারে ১৯ রান প্রয়োজন ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের৷ ক্রিজে ছিলেন কার্লোস ব্রেথওয়েট৷ বেন স্টোকসের করা সেই ওভারের প্রথম চার বল থেকে চারটি ছক্কা মেরে দলকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/R. Pierse
দেশের বাইরে সফল দক্ষিণ আফ্রিকা
চলতি বছর বেশিরভাগ শীর্ষ দল তাদের দেশে ভালো ফল করলেও দেশের বাইরে গিয়ে সাফল্য দেখাতে পারেনি৷ তবে ব্যতিক্রম ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা৷ অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে তারা ২-১-এ টেস্ট সিরিজ জয় করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Parks
দিনরাত্রির টেস্ট
ফ্লাডলাইটে একদিনের ম্যাচ প্রথম হয়েছিল ১৯৭৯ সালে৷ তবে প্রথম টেস্টম্যাচ হয় মাত্র গত বছর, অর্থাৎ ২০১৫ সালে৷ এ বছর ফ্লাডলাইটের আলোয় মোট তিনটি টেস্টম্যাচ হয়েছে৷ এর মধ্যে একটি দুবাইতে৷ বাকি দু’টি অ্যাডেলেইড আর ব্রিসবেনে৷ ছবিতে দুবাই টেস্টের দৃশ্য দেখতে পাচ্ছেন৷ ম্যাচটি হয়েছিল পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Qureshi
ওডিআই ব়্যাংকিংয়ে শীর্ষ অস্ট্রেলিয়া
৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলা ম্যাচগুলো হিসেবে ধরে আইসিসি বলছে ব়্যাংকিংয়ে শীর্ষে আছে অসিরা৷ তাদের পয়েন্ট ১২০৷ বাংলাদেশ আছে সাত নম্বরে৷ সংগ্রহ ৯৫ পয়েন্ট৷ তারপর আছে পাকিস্তান (৮৯) এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ (৮৬)৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Wanniarachchi
টেস্ট ব়্যাংকিংয়ে সবার ওপরে ভারত
বিরাট কোহলির পারফরমেন্সের উপর ভর করে ভারত টেস্ট ব়্যাংকিংয়ে এখন সবার উপরে আছে৷ ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে সিরিজ জয় ও নিজের দেশে নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয় পাওয়ায় ভারত এখন শীর্ষে৷ বছরের একটা সময় কিছুদিনের জন্য সেই অবস্থানে ছিল পাকিস্তান৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Topgyal
একদিনের ম্যাচের সর্বোচ্চ স্কোরার
অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার চলতি বছর (ডিসেম্বরের ২০ তারিখ পর্যন্ত) সাতটি সেঞ্চুরি করেছেন৷ ফলে ওডিআইতে ক্রিকেট বিশ্বের আর সবার চেয়ে তাঁর ঝুলিতেই সবচেয়ে বেশি রান ( ২৩ ম্যাচে ১,৩৮৮ রান)৷ তাঁর পরেই আছেন অসি অধিনায়ক স্মিথ (২৬ ম্যাচে ১,১৫৪ রান)৷
ছবি: Getty Images/Paul Kane
টেস্টের সর্বোচ্চ স্কোরার
ছবিটি নিশ্চয় সবার মনে আছে৷ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট হেরে হতাশায় ভেঙে পড়া সাব্বিরকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন জো রুট৷ তিনিই চলতি বছরে টেস্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক৷ ১৭ টেস্টে তিনি ১,৪৭৭ রান করেছেন৷ অবশ্য বাংলাদেশ সফরে ভালো করতে পারেননি রুট৷ দুই টেস্টের চার ইনিংস মিলিয়ে তাঁর সংগ্রহ ছিল মাত্র ৯৮ রান৷
ছবি: Getty Images/G. Copley
9 ছবি1 | 9
সি.এল.আর. জেমস বহু আগে লিখে গেছেন, ‘‘যে শুধু ক্রিকেট জানে, সে ক্রিকেটের কী-ই বা জানে৷'' ক্রিকেট শুধু একটা খেলা নয়; একটা সংস্কৃতি৷ বাংলাদেশের ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটের সূত্র ধরে সেই সংস্কৃতিটা তৈরি হতে পারত৷ কিন্তু সবাই এটিকে ধরে নিয়েছেন এক দিনের বনভোজন হিসেবে৷ ক্রিকেটাররা, অংশত দেশের মিডিয়া ও সমর্থকেরা; এবং অবশ্যই বিসিবি৷
বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটটা ঠিকমতো বোঝার আগেই নেমে পড়েছিল এই উত্তাল সাগরে৷ ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয় ছিল দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় সাফল্য৷ অথচ এর তিন বছরের মাথায় টেস্ট অভিষেক৷ অথচ তখনো ওয়ানডেতে বাংলাদেশের জয়ই ছিল সাকল্যে তিনটি৷ '৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই অবিস্মরণীয় জয় (বাকি দুটি জয় কেনিয়া ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে) আর এ দেশের মানুষের ক্রিকেটউন্মাদনা ছিল টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার আসল চাবিকাঠি৷ তাতে অনুঘটক ছিল ক্রিকেট কূটনীতি৷
বাংলাদেশ টেস্ট খেলার মাত্র এক বছর আগে বড় পরিসরের ঘরোয়া ক্রিকেটের আয়োজন করেছে, যেটা তখনো ফার্স্ট ক্লাস স্বীকৃতিই পায়নি৷ কিন্তু গত ১৭ বছরে বাংলাদেশ তার ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটকে নিয়ে এখনো সিরিয়াস নয়৷ অথচ অপ্রস্তুত যাত্রাটা গুছিয়ে নিতে ১৭ বছর যথষ্টে দীর্ঘ সময় ছিল৷
আর এ কারণে যে ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট হতে পারত বাংলাদেশের ক্রিকেটের মূল মেরুদণ্ড, নতুন ক্রিকেটার তুলে আনার কারখানা; কার্যত সেটি ফলশূন্য৷ বাংলাদেশের বর্তমান জাতীয় দলের বেশির ভাগ তারকা আসলে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের ফসল৷ সাকিব-মুশফিকরা ছিলেন বিকেএসপির ছাত্র৷ হালের সৌম্য-মোস্তাফিজ-মিরাজরা বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের আবিষ্কার৷
এ ছাড়া বাংলাদেশের ক্রিকেটের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখা প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেটটিও ঢাকাকেন্দ্রিক ওয়ানডে টুর্নামেন্ট৷ যেটি বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বেশির ভাগের আয়-রোজগারের বড় উৎস৷ ২০১২ সালে বিসিবি জাতীয় দলের বাইরে থাকা ১০০-র মতো ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটারকে অবশ্য বেতনের আওতায় এনেছিল৷ কিন্তু তাদের মাসিক বেতন নির্ধারণ করা হয় সর্বোচ্চ ৩০০ থেকে ১৮০ ডলার!
ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটটাকে শুরু থেকে জাতীয় লিগের আবহ দেওয়ার একটা চেষ্টা অবশ্য ছিল৷ দ্রুতই এই টুর্নামেন্ট অঞ্চলভিত্তিক দল দিয়ে তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছে৷ বাংলাদেশের প্রশাসনিক বিভাগগুলো ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল নাম নিয়ে জাতীয় লিগে খেলে৷ এই জাতীয় লিগের পাশাপাশি খুব সম্প্রতি ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ (বিসিএল) নামের আরেকটি লিগ চালু করেছে বিসিবি৷ সেখানে চারটি দল খেলে৷
উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলের এই দলগুলো বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির নামে থাকল কার্যত, তা নিয়ন্ত্রণ করে বিসিবি৷ জাতীয় লিগের বিভাগীয় দলগুলোও তা-ই৷ বিভাগ বা অঞ্চল পর্যায়ে কোনো ক্রিকেট অভিভাবক গড়ে ওঠেনি৷ যেমন, রাজশাহীর দলটা কী হবে, কীভাবে চলবে তা চালানোর কোনো কর্তৃত্ব রাজশাহীর নেই৷ ফলে এই দলগুলোর অঞ্চলভিত্তিক সমর্থনও গড়ে ওঠেনি৷ ফলে এই ক্রিকেটে কোনো তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই৷ শিরোপা জয়ের মধ্যেও নেই তীব্র উত্সাহ বা উল্লাস৷
বাংলাদেশের ক্রিকেট ঢাকাকেন্দ্রিক ছিল, আরও বেশি করে ঢাকামুখী হয়েছে৷ প্রিমিয়ার লিগ আছে৷ পাশাপাশি আছে বিপিএল নামের টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট, যেটি ধীরে ধীরে হাওয়াও ফোলানো বেলুনের একটা বড় সাদা হাতি হিসেবেই প্রমাণিত হচ্ছে৷
ঢাকার বাইরে ক্রিকেট ছড়িয়ে দিতে না পারার কুফল কী হতে পারে এর বড় প্রমাণ চট্টগ্রাম৷ এক সময় চট্টগ্রামই ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রতিভার উত্স৷ নান্নু-আকরাম খানদের সেই চট্টগ্রামে প্রতিভার স্রোতটি এখন ক্ষীণধারা৷
‘কানা মামাই ভালো' আপ্তবাক্যও সান্ত্বনা হয় না, যখন দেখবেন, ঘরোয়া এই ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে খুব অসাধারণ খেলেও জাতীয় দলে জায়গা হয় না কারও৷ খুব সম্প্রতি তুষার ইমরান ঘরোয়া ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটের এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি রানের (১২৪৯) রেকর্ড ভেঙেছেন৷ জাতীয় লিগে টানা তিন ম্যাচে সেঞ্চুরি, বিসিএল-এ দুটি ডাবল সেঞ্চুরি৷ তবু তুষারের জায়গা হয় না টেস্ট দলে৷ কারণ, তুষারদের বলেই দেওয়া হয়, ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলা এ আর এমন কী! এখানে বোলারদের মান ভালো নয়; উইকেটের মানও৷
যেসব টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ
সেই ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৪৩ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে টাইগাররা৷ তার মধ্যে জয় এসেছে ২১টিতে৷ চলুন জেনে নিই সেই টেস্টগুলোর কথা৷
ছবি: Anjum Naveed/AP/picture alliance
আগস্ট ৩০-সেপ্টেম্বর ০৩, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী
পরপর ২ টেস্ট পাকিস্তানকে নিজেদের মাটিতে হোয়াইট ওয়াশ করেছে বাংলাদেশ৷ রাওয়ালপিন্ডিতে বাবর আজমদের দুই ইনিংসে ২৭৪ ও ১৭২ রানে অলআউট করে ৬ উইকেটের জয় তুলে নেন শান্তরা৷ লিটনের সেঞ্চুরি, মিরাজের অর্ধশতক ও ৫ উইকেট, হাসান মাহমুদের ৫ উইকেট এই জয়ে বড় ভূমিকা রাখে৷ এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মধ্য সিরিজ জয় পায় বাংলাদেশ৷
ছবি: Anjum Naveed/AP Photo/picture alliance
আগস্ট ২১-২৫, ২০২৪, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান
টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ১০ উইকেটের জয়। এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৩ টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। ১৪তম টেস্টে ঐতিহাসিক জয়। টেস্টে নবম দল হিসেবে পাকিস্তানকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। বাকি থাকলো শুধু ভারত ও সাউথ আফ্রিকা। দেশের বাইরে বাংলাদেশের এটা সপ্তম জয়। ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে পাকিস্তান। জবাবে বাংলাদেশ তাদের প্রথম ইনিংসে ৫৬৫ রানের বড় সংগ্রহ তোলে। পাকিস্তানের ২য় ইনিংস গুটিয়ে যায় ১৪৬ রানে।
ছবি: Farooq Naeem/AFP/Getty Images
২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর, ২০২৩, প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫০ রানের বিশাল এক জয় পায় অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর দল। বাংলাদেশের হয়ে ৬ উইকেট নেন তাইজুল। নিউজিল্যান্ড : ৩১৭ ও ১৮১, বাংলাদেশ:৩১০ ও ৩৩৮৷
ছবি: Munir uz Zaman/AFP
জুন ১৪-১৮ (২০২৩), প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান
মিরপুরে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ৷ ৫৪৬ রানের বিশাল ব্যবধানে ম্যাচ জেতে বাংলাদেশ, যা টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের ব্যবধানে জয়ের তিন নম্বরে আছে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ৩৮২ রানে অল-আউট হয়। পালটা ব্যাট করতে নেমে আফগানিস্তান ১৪৬ রান তুলেছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ৪২৫ রান তুলে ব্যাটিং ছেড়ে দেয় বাংলাদেশ। শেষ ইনিংসে আফগানিস্তান অল-আউট হয় ১১৫ রানে।
ছবি: Munir uz Zaman/AFP
এপ্রিল ৩-৭ (২০২৩), প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড
মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে ৭ উইকেটের জয় পায় টাইগাররা৷ আয়ারল্যান্ড ১ম ইনিংসে ২১৪ এবং ২য় ইনিংসে ২৯২ করে৷ বাংলাদেশ ১ম ইনিংসে ৩৬৯ এবং ২য় ইনিংসে ৩ উইকেটে ১৩৮ রান করে ৭ উইকেটের জয় পায়৷
ছবি: Farooq Naeem/AFP/Getty Images
জানুয়ারি ১-৫ (২০২২), প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড
নিউজিল্যান্ডকে তাদেরই মাটিতে হারিয়ে টেস্টে ঐতিহাসিক এক জয় পায় বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে যেকোনো ফরম্যাটেই এটি বাংলাদেশের প্রথম জয়। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে প্রথম টেস্টের শেষ দিনে ৮ উইকেটের বড় জয় পেয়েছে মুমিনুলবাহিনী।
ছবি: Marty Melville/Photospor/AP/picture alliance
জুলাই ৭-১১ (২০২০) প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে
হারারের একমাত্র টেস্ট ২২০ রানে জিতেছে সফরকারীরা। বাংলাদেশের দেওয়া ৪৭৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে পঞ্চম দিনে দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবোয়ে অলআউট হয় ২৫৬ রানে। এই জয়ের অন্যতম রূপকার মেহেদী হাসান মিরাজ।
মুশফিকুর রহিমের দ্বিশতক (২০৩) আর মুমিনুলের শতকে (১৩২) ভর করে বাংলাদেশ জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে এক ইনিংস ও ১০৬ রানের জয় পায়৷ প্রথমে ব্যাট করতে নেমে জিম্বাবোয়ে ২৬৫ রান করেছিল৷ এরপর বাংলাদেশ খেলতে নেমে ছয় উইকেটে ৫৬০ রান তোলে৷ পরের ইনিংসে জিম্বাবোয়ে ১৮৯ রান করে অলআউট হয়ে যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. U. Zaman
নভেম্বর ৩০-ডিসেম্বর ২, ২০১৮ প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ
মিরপুর টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ইনিংস ও ১৮৪ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ৷ এই প্রথম প্রতিপক্ষকে ফলো অন করানো ও ইনিংস ব্যবধানে জয়ের অনির্বচনীয় দুটি স্বাদ দল পেল একদিনেই৷ দুই ম্যাচের সিরিজে ২-০তে জয়৷ ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ৷ ১১৭ রানে ১২ উইকেট, বাংলাদেশের হয়ে এক ম্যাচে সেরা বোলিংয়ের কীর্তি৷ ম্যান অব দা ম্যাচ মেহেদী হাসান মিরাজ৷ ম্যান অব দা সিরিজ সাকিব আল হাসান৷
ছবি: Picture-alliance/AP Photo/A.M. Ahad
নভেম্বর ২২-২৪, ২০১৮ প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ
প্রতিপক্ষকে দুই ইনিংস মিলিয়ে সবচেয়ে কম বলে দুবার অলআউট করে জেতা ম্যাচের নতুন রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ৷ আড়াই দিনে টেস্ট জিতেছিল টাইগাররা৷ সাড়ে সাত সেশনের মতো খেলা হয়েছে এই টেস্টে৷ এটিই টেস্টে বাংলাদেশের দ্রুততম জয়৷ নাঈম হাসান প্রথম ইনিংসে পেয়েছেন ৫ উইকেট৷ দ্বিতীয় ইনিংসে তাইজুল পেয়েছেন ৬ উইকেট৷ মুমিনুল হক পেয়েছেন ম্যাচসেরার পুরস্কার৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. U. Zaman
নভেম্বর ১১-১৫, ২০১৮ প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে
জিম্বাবোয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ২১৮ রানের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ৷ সিরিজ ১-১ ড্র৷ ৪৪৩ রানের লক্ষ্য তাড়ায় দ্বিতীয় সেশনে জিম্বাবুয়ে থামে ২২৪ রানে৷ ৩৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের সফলতম বোলার মেহেদী হাসান মিরাজ৷ দ্বিশত হাঁকিয়ে ম্যাচ সেরা মুশফিকুর রহিম৷ সিরিজ সেরা হয়েছেন তাইজুল ইসলাম৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
জানুয়ারি ৬-১০, ২০০৫, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ ২২৬ রানে জয়ী
টাইগাররা প্রথমবারের মতো টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় চট্টগ্রামে৷ ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ৪৮৮ রান তোলে স্বাগতিকরা৷ আর দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ৯ উইকেটে ২০৪ রান করে৷ প্রথম ইনিংসে জিম্বাবোয়ের স্কোর ছিল ৩১২ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫৪ রান৷
ছবি: Getty Images/AFP
জুলাই ৯-১৩, ২০০৯, প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ: বাংলাদেশ ৯৫ রানে জয়ী
দেশের বাইরে বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট জয়ের দেখা পায় ২০০৯ সালের ১৩ জুলাই৷ কিংসটাউনে সেই টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৯৫ রানে হারায় টাইগাররা৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Samad
জুলাই ১৭-২০, ২০০৯, প্রতিপক্ষ ওয়েস্টইন্ডিজ: বাংলাদেশ চার উইকেটে জয়ী
সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর ছিল সাফল্যে ঠাসা৷ দ্বিতীয় টেস্টে সেন্ট জর্জেসে স্বাগতিকদের হারায় টাইগাররা, সেবার জিতেছিল চার উইকেটে৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Brooks
এপ্রিল ২৫-২৯, ২০১৩, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ ১৪৩ রানে জয়ী
জিম্বাবোয়ের হারারেতে স্বাগতিকদের আবার ‘বধ’ করে টাইগাররা৷ প্রথম ইনিংসে ৩৯১ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৯ উইকেটে ২৯১ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ৷ জবাবে প্রথম ইনিংসে ২৮২ আর দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫৭ রানেই গুটিয়ে যায় জিম্বাবোয়ে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Njikizana
অক্টোবর ২৫-২৭, ২০১৪, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ তিন উইকেটে জয়ী
ঢাকায় বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়৷ তিন দিনে শেষ হওয়া সেই টেস্টে শুরুতে ব্যাট করতে গিয়ে প্রথম ইনিংসে ২৪০ রান করে জিম্বাবোয়ে৷ আর দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের সংগ্রহ ছিল ১১৪৷ অন্যদিকে, প্রথম ইনিংসে ২৫৪ আর দ্বিতীয় ইনংসে ৭ উইকেটে ১০৭ রান তুলে জিতে যায় স্বাগতিকরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
নভেম্বর ৩-৭, ২০১৪, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ ১৬২ রানে জয়ী
খুলনায় জিম্বাবোয়েকে হারায় বাংলাদেশ৷ সেই টেস্ট পাঁচ দিন পর্যন্ত গড়ালেও শেষমেশ তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি জিম্বাবোয়ে৷ ফলাফল স্বাগতিকদের ১৬২ রানের জয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
নভেম্বর ১২-১৬, ২০১৪, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ ১৮৬ রানে জয়ী
আবারো চট্টগ্রামে জিম্বাবোয়েকে হারায় টাইগাররা৷ সেবার ব্যবধান ছিল ১৮৬ রানের৷
ছবি: Getty Images/AFP/Strdel
অক্টোবর ২৮-৩০, ২০১৬, প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড: বাংলাদেশ ১০৮ রানে জয়ী
এখন পর্যন্ত বড় কোনো ক্রিকেট শক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের একমাত্র টেস্ট জয় এটি৷ ঢাকায় ইংল্যান্ডকে নাস্তানাবুদ করে টাইগাররা৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
মার্চ ১৫-১৯, ২০১৭, প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী
একদিকে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের শততম ম্যাচে জয়, অন্যদিকে প্রথমবারের মত শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জয়-দুই দিক দিয়েই ঐতিহাসিক বাংলাদেশের এই টেস্ট ম্যাচটি৷ পঞ্চম দিনে ৪ উইকেটে জয় নিশ্চিত করে টাইগাররা৷ ম্যাচ সেরা হয়েছেন তামিম ইকবাল৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. S. Kodikara
আগস্ট ২৭-৩০, ২০১৭, প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া: বাংলাদেশ ২০ রানে জয়ী
প্রথমবারের মত অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বাংলাদেশ ইতিহাস গড়ে৷ এটা ছিল সাকিব ও তামিমের ৫০তম টেস্ট। সাকিব মোট ১০ উইকেট নিয়ে এবং তামিম দুই ইনিংসেই অর্ধশত করে স্মরণীয় করে রাখলেন এই টেস্টকে৷ ম্যাচ সেরা সাকিব আল হাসান৷ দ্রষ্টব্য: ইএসপিএন ক্রিকইনফো থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ছবিঘরটি তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
21 ছবি1 | 21
বিসিবির কর্তাব্যক্তিরাই যে মেনে নিয়েছেন, বাংলাদেশের ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট আসলে পিকনিক ক্রিকেট!
ওয়ানডে ক্রিকেটে দলের সাফল্যে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে ব্যস্ত বিসিবি৷ হয়ত আমরাও৷ কেন আমাদের আজও টেস্ট খেলার মানসিকতাই গড়ে উঠল না; এর উত্তর খোঁজা হবে কখন!