পিকাসোর আঁকা ছবি বিক্রি দেড় হাজার কোটি টাকায়
৯ নভেম্বর ২০২৩![পিকসোর এই ছবিটিই বিপুল দামে বিক্রি হয়েছে।](https://static.dw.com/image/67349500_800.webp)
১৮৩২ সালে পাবলো পিকাসো এই ছবিটি এঁকেছিলেন। এটাই পিকাসোর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হওয়া ছবি। নিউ ইয়র্কে সদবিস-এর নিলামে ছবিটি বিক্রি হয়েছে।
এই ছবির পশ্চাদপট হলো নীল। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সিংহাসনের মতো চেয়ারে বসে আছেন এক নারী। বিশেষজ্ঞরা যাকে ফরাসি শিল্পী মেরি ওয়াল্টার বলে চিহ্নিত করেছেন এবং এই ছবিতে স্প্যানিশ শিল্পীর প্রেমিকা ও তাকে নিয়ে মুগ্ধতার আবেশ ফুটে উঠেছে বলে তারা মনে করেন।
বিশ্বের দামি কিছু শিল্পকর্ম
বিখ্যাত শিল্পীদের আঁকা ছবি ও ভাষ্কর্যের জন্য সংগ্রাহকরা বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে থাকেন – ৪০ কোটি ডলারের বেশি দাম ওঠাও আশ্চর্যের কিছু নয়৷ দেখুন ছবিঘরে৷
সালভাদর মুন্ডি
লিওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা ২০টি অক্ষত ছবির একটি এটি৷ ধারণা করা হয়, ১৫০০ সালে এ ছবিটি আঁকা হয়৷ ১৯৫৮ সালে ছবিটিকে অনুলিপি ভেবে নিলামে মাত্র ৬০ মার্কিন ডলারে এটি বিক্রি হয়৷ যিশুখ্রিষ্টের এ ছবিটি ২০১৭ সালে ১০ কোটি মার্কিন ডলারে বিক্রি হবে ধারণা করা হলেও অজ্ঞাত এক ক্রেতা ৪৫ কোটি ডলার দিয়ে কেনেন এটি৷
ইন্টারচেঞ্জ
ডাচ-অ্যামেরিকান শিল্পী উইলেম ডে কুনিং-এর আঁকা ইন্টারচেঞ্জ নামে একটি তৈলচিত্র ২০১৫ সালে ৩০ কোটি ডলারে বিক্রি হয়৷
তাস খেলায় মগ্ন
উত্তর অভিব্যাক্তিবাদ ঘরানার ফরাসি শিল্পী পল সেজানের আঁকা এ ছবিটির নাম ‘দ্যা কার্ড প্লেয়ার’৷ ২০১১ সালে ২৫ কোটি ডলারে ছবিটি বিক্রি হয়৷
‘যখন তুমি বিয়ে করবে’
এ ছবিটি আঁকা হয়েছিল ১৮৯২ সালে৷ শিল্পী ফ্রান্সের পল গগাঁ৷ ‘হোয়েন উইল ইউ মেরি’ শিরোনামের এ ছবিটির দাম ২১ কোটি ডলার৷
‘নাম্বার ১৭এ’
অ্যামেরিকান শিল্পী জ্যাকসন পোলোকের আঁকা ‘নাম্বার ১৭এ’ নামের একটি চিত্রকর্ম ২০১৫ সালে ২০ কোটি ডলারে বিক্রি হয়৷ উপরের ছবিটি পোলোকের আঁকা, যার নাম নাম্বার ৭৷
‘বিয়ের ছবি’
নেদারল্যান্ডসের বিখ্যাত মার্টেন ও ওপইয়েন এর ১৬৩৪ সালের অনুষ্ঠিত বিয়ের ছবি এটি৷ চিত্রকর ডাচ শিল্পী রেমব্রান্ট হারমেনসুন ফান রিন৷ ২০১৫ সালে বিক্রি হওয়া এ ছবিটির দাম পড়েছে ১৮ কোটি ডলার৷
আলজিয়ার্সের মহিলারা
লেডি অব আলজিয়ার্স শিরোনামে ছবিটি স্পেনের জগদ্বিখ্যাত চিত্রকর পাবলো পিকাসোর ১৯৫৫ সালে আঁকা৷ নিলামে ছবিটির দাম উঠে ১৭ কোটি ৯৪ লাখ ডলারে৷
‘ন্যু কুশে’
ইটালির চিত্রকর আমেদেও মোদিগলিয়ানি এই ছবিটি আঁকেন ১৯১৭ সালে, তার মৃত্যুর তিন বছর আগে৷ ১৭কোটি চার লাখ ডলারে ২০১৫ সালে বিক্রি হয় ছবিটি৷
‘মাস্টারপিস’
অ্যামেরিকান পপ আর্টিস্ট রয় লিচটেনস্টাইনের ১৯৬২ সালে একেছিলেন বিখ্যাত এ ছবিটি৷ ২০১৭ সালে ১৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারে ছবিটি বিক্রি হয়৷
লুসিয়ান ফ্রয়েডের তিনটি প্রতিকৃতি
আইরিশ চিত্রকর ফ্রান্সিস বেকন এই তিন খণ্ডের ছবিটি আঁকেন ১৯৬৯ সালে৷ ছবিতে যার আলেখ্য, তিনি হলেন ব্রিটিশ চিত্রকর লুসিয়ান ফ্রয়েড, পক্ষান্তরে মনস্তত্বের জনক সিগমুন্ড ফ্রয়েডের পৌত্র৷ ২০১৩ সালে ক্রিস্টি’স-এর নিলামে ছবিটির দাম ওঠে ১৪ কোটি ২৪ লাখ মার্কিন ডলার৷ রয়েছে মার্কিন শিল্পকলা সংগ্রাহক এলেইন ওয়াইনের সংগ্রহে৷
অঙ্গুলিনির্দেশ
সুইস ভাস্কর আলবের্তো জাকোমেত্তির সৃষ্টি এই মানুষ-সমান ব্রোঞ্জ মূর্তিটি নিউ ইয়র্কে ক্রিস্টি’স-এ নিলাম করা হয় ২০১৫ সালে, কেনেন স্টিভ কোহেন নামের এক হেজফান্ড ম্যানেজার৷ মূর্তিটি আজ বিশ্বের সবচেয়ে দামি ক্রয়যোগ্য ভাস্কর্য বলে গণ্য৷ এটি বিক্রি হয়েছেল ১৪ কোটি ১৩ লাখ মার্কিন ডলারে৷
সোনার আডেলে
অস্ট্রিয়ার চিত্রকর গুস্তাফ ক্লিম্ট আডেলে ব্লখ-বাউয়ারের এই প্রতিকৃতিটি আঁকেন ১৯০৭ সালে৷ ম্যানহ্যাটানের ‘নয়ে গ্যালেরি’ নামের সংগ্রহশালার জন্য ২০০৬ সালে ছবিটি কেনেন মার্কিন ব্যবসায়ী রোনাল্ড লডার৷ ছবিটি ১৩ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারে কেনার ব্যবস্থা করে ক্রিস্টি’স সংস্থা৷
চিৎকার
নরওয়েজীয় চিত্রকর এডভার্ড মুঞ্চ ‘চিৎকার’ ছবিটি এঁকেছেন একাধিক বার ৷ দা ভিঞ্চির মোনালিসা ও ফান গখ-এর সূর্যমুখি ফুলের পরেই মুঞ্চের এই ছবিটিকে বিশ্বের খ্যাততম চিত্রকর্ম বলে গণ্য করা হয়৷ ছবিটির প্যাস্টেল রঙে আঁকা এই সংস্করণ নিলাম করা হয় ২০১২ সালে, নিউ ইয়র্কের সথেবি সংস্থায়৷ মার্কিন শিল্পপতি লিয়ন ব্ল্যাক ১১ কোটি ৯৯ লাখ মার্কিন ডলারে কিনেন এটি৷
নগ্নমূর্তি, সবুজ পাতা, আবক্ষ
পাবলো পিকাসো এই তেলরঙের ছবিটি এঁকেছিলেন মাত্র একদিনে – দিনটা ছিল ৮ই মার্চ, ১৯৩২৷ প্রায় অজ্ঞাত ছবিটি নিউ ইয়র্কের নিলামে বিক্রি হয় ১০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যে, কেনেন এক অজ্ঞাত ক্রেতা৷ ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকলেও, ছবিটি লন্ডনের টেট মডার্ন গ্যালারিকে ধার দেওয়া হয়েছে ২০১১ সালে৷
রুপোলি গাড়ি দুর্ঘটনা
মার্কিন চিত্রকর অ্যান্ডি ওয়ারহল ১৯৬৩ সালে এই সিল্ক স্ক্রিন প্রিন্টটি সৃষ্টি করেন – যার বিষয়বস্তু হল একটি গাড়ি দুর্ঘটনা৷ ২০ বছর ধরে ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকার পর ২০১৩ সালে সথেবি-তে ছবিটি নিলাম করা হয়৷ ক্রেতা অজ্ঞাতই থাকেন; তবে ছবিটি পপ আর্ট শিল্পী ওয়ারহলের সবচেয়ে দামী ছবি বলে গণ্য করা হয়৷
এর আগে পিকাসোর ছবি ক্রিস্টিজর নিলামে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। ‘লে ফেম দ’আলজের’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৫টি ছবি আঁকেন৷ পিকাসোষ তারই একটি প্রায় এক হাজার নয়শ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
পিকাসোই আধুনিক সময়ে সবচেয়ে প্রভাবশালী শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম।
নিলামে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়া শিল্পকর্ম
নিলামে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়া শিল্পকর্মটি পিকাসোর৷ তবে ক্লিম্ট এবং ফান গখ-ও আছেন তালিকায়৷
পিকাসোর ‘ওমেন অফ আলজিয়ার্স’: ১৭৯.৪ মিলিয়ন
১৯৫৪ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত পাবলো পিকাসো দেলাক্রোয়ার ‘লে ফেম দ’আলজের’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৫টি ছবি আঁকেন৷ সেসব ছবির একটি, ‘ভার্সন ও’, ২০১৫ সালের মে মাসে নিলামে বিক্রি হয়েছে ১৭৯.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে৷
মোদিগলিয়ানির ‘রিক্লাইনিং ন্যুড’: ১৭০.৪ মিলিয়ন
২০১৫ সালের নভেম্বরে ক্রিস্টির এক নিলামে সাতজন সম্ভাব্য ক্রেতা এই পেইন্টিংটি কেনার জন্য নয় মিনিট ধরে উত্তেজনাপূর্ণ দর কষাকষিতে অংশ নেন৷ শেষমেষ টেলিফোনে নিলামে অংশ নেয়া চীনের এক ক্রেতা চিত্রকর্মটি কিনে নেন৷ ১৯১৭-১৮ সালে ছবিটি আঁকা হয়েছিল৷
ক্লিম্টের ‘দ্য উওম্যান ইন গোল্ড’: ১৩৫ মিলিয়ন
১৯০৭ সালে এই ছবিটি আঁকেন গুস্তাভ ক্লিম্ট৷ ২০০৬ সালে সেটি নিলামে বিক্রি হয় ১৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে৷ তখন এটাই ছিল কোনো পেইন্টিং এর নিলামে ওঠা সর্বোচ্চ দাম৷ সেবছরই অবশ্য আরেকটি পেইন্টিং বিক্রি হয় ১৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে৷
ফান গখের ‘পোট্রেইট অফ ড. গাশে’: ১৪৯.৭ মিলিয়ন
কথিত আছে ফান গখ ১৮৯০ সালে হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার গাশে সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘‘ও আমার চেয়েও অসুস্থ৷’’ গাশের এই পোট্রেট ১৪৯.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বিক্রি হয়৷
বেকনের ‘থ্রি স্টাডিজ অফ লুসিয়ান ফ্রয়েড’: ১৪২.৪ মিলিয়ন
১৯৬৯ সালে আঁকা এই ছবি তিনটি ফ্রান্সিস বেকনের সঙ্গে তাঁর সতীর্থ পেইন্টার লুসিয়ান ফ্রয়েডের বন্ধুত্ব এবং শত্রুতার সম্পর্ককে তুলে ধরেছে৷ ২০১৩ সালের নভেম্বরে ছবিটি নিলামে বিক্রি হয় ১৪২.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে৷
জিএইচ/এসজি(এএফপি, রয়টার্স)