কুর্দি শ্রমিক সংগঠন পিকেকে জার্মানিতে নিষিদ্ধ৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই সংগঠনটিকে সন্ত্রাসী গ্রুপ বলে গণ্য করে৷ এখন পরিস্থিতি বদলে যাওয়ায় পিকেকে-র ব্যাপারে নতুন করে চিন্তাভাবনা করার সময় এসেছে বলে মনে করছেন অনেকে৷
বিজ্ঞাপন
কুর্দরা বহুদিন ধরেই নিজস্ব রাষ্ট্রের জন্য সংগ্রাম করছেন৷ এই সম্প্রদায়ের মানুষজন তুরস্ক, সিরিয়া, ইরান ও ইরাকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন৷ তুরস্কের পুর্বাঞ্চল ও আশেপাশের সীমান্ত অঞ্চলে পরস্পরের আক্রমণে হাজার হাজার মানুষ মারা গিয়েছে৷ তুর্কি সেনা, পিকেকে যোদ্ধা ও অসংখ্য বেসামরিক লোকজন৷
অনেক দেশ মার্ক্সপন্থি শ্রমিক দলটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে গণ্য করে আসছে৷ পিকেকে নেতা আব্দুল্লাহ ও্যচলান বহু বছর ধরে তুরস্কের কারাগারে বন্দি৷ এর ফলে কুর্দদের কাছে সংগঠনটির জনপ্রিয়তা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে৷
সময় বদলেছে৷ পিকেকে নেতা আব্দুল্লাহ সহিংসা বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন৷ গত বছর থেকে তুরস্করে সাথে অস্ত্র বিরতি চুক্তিও সম্পাদন করা হয়েছে৷ এখন স্বাধীনতার বদলে স্বায়ত্ত্বশাসনের কথা বলা হচ্ছে৷
ইরাকে জিহাদিবিরোধী যুদ্ধ
চরমপন্থি ইসলামি সংগঠন আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে ইরাকে৷ সন্ত্রাসবাদী এ সংগঠনটির সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশেও তৎপরতা রয়েছে৷ দেখুন ইরাকে আইএস-বিরোধী যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট কিছু ছবি৷
ছবি: Reuters
টিকরিট পুনরুদ্ধারের চেষ্টা
সুন্নিদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস) উত্তর ও দক্ষিণ ইরাকের কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে৷ বাগদাদ থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরের শহর টিকরিটও এখন তাদের দখলে৷ সে এলাকায় ইরাক সরকারের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের জন্য আইসিস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়ছে সেনাবাহিনী৷
ছবি: Reuters
মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব চায় আইসিস
আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে আইসিস-এর একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর দিকে ইরাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চলছে তখনই আইসিস-এর জন্ম৷ সংগঠনটির লক্ষ্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান মিলিয়ে বেশ বড় একটা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা৷ ইরাকে নুসরা ফ্রন্টসহ বেশ কিছু সংগঠন তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বিদ্রোহীদের পাশে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ আর ইরাকে নুরি আল মালিকির সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের মধ্যে মধ্যপন্থি এবং মৌলবাদী সংগঠনের কর্মী রয়েছে৷ সিরিয়ায় ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মতো কিছু মধ্যপন্থি সংগঠনকে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা বিদ্রোহীদের একাংশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছেন৷
ছবি: Reuters
ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জানিয়েছেন, কংগ্রেস বিদ্রোহীদের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদন করলে তা সিরিয়া এবং ইরাকে দেয়া হবে৷ এই বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ, কেননা, ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বড় একটা অংশ যে আইসিস-এর কাছে যাবেনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই৷
ছবি: Reuters
কুর্দিরা চায় স্বাধীন কুর্দিস্তান
যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি সুন্নি এবং কুর্দিদের অংশিদারিত্বের সরকার গঠন করুন৷ ইরাকের কিছু অংশে কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসন রয়েছে৷ কুর্দিরা ‘পেশমেরগা’, অর্থাৎ কুর্দিদের স্বাধিকার আন্দোলনের অংশ হিসেবে আইসিসের বিরুদ্ধে লড়ছে৷ কুর্দিদের মূল লক্ষ্য ইরাকে স্বাধীন কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: Reuters
ইরানের ভূমিকা
ইরাকে শিয়া-সুন্নি সংঘাতের মধ্যে জড়াতে চায়না ইরান৷ কিন্তু শিয়া প্রধান দেশ ইরানের সরকার ইরাকের মালিকি সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে বলে ধারণা করা হয়৷ নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিস-বিরোধী যুদ্ধে মালিকি সরকারকে ড্রোন এবং অন্যান্য সমর উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছে ইরান সরকার৷
ছবি: Atta Kanare/AFP/Getty Images
এক হাজারেরও বেশি নিহত
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে সৌদি আরব৷ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি মনে করেন, আইসিসকেও মদদ দিচ্ছে সৌদি সরকার৷ ইরাকে চলমান সংঘাতে কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ জন্য ইরাক সরকার এবং আইসিস-এর কঠোর সমালোচনা করেছে৷
ছবি: Reuters
বাড়ছে শরণার্থী
আইসিসের হামলা শুরুর পর থেকে ইরাকের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ১২ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷ সিরিয়া সংকট শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আড়াই লাখ সিরীয় স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি রাজ্যগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে৷ এখন আইসিসের দখল করে নেয়া শহরগুলো থেকে পালিয়ে ইরাকিরাও আসছে৷ ছবিতে খাজাইর চেকপয়েন্ট অতিক্রম করে কুর্দিদের নিয়ন্ত্রিত শহর এরবিলের দিকে যেতে দেখা যাচ্ছে মসুল থেকে আসা ইরাকিদের৷
ছবি: Getty Images
স্বেচ্ছাসেবীরাও নেমেছে যুদ্ধে
প্রধানমন্ত্রী মালিকি জানিয়েছেন, রাশিয়া আর বেলারুশের কাছ থেকে পুরোনো যুদ্ধ বিমান কিনেছে ইরাক৷ আইসিসের বিরুদ্ধে সেগুলো ব্যবহার করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ বাড়ছে সমরাস্ত্র৷ বাড়ছে যোদ্ধা৷ স্বেচ্ছাসেবীরাও যোগ দিচ্ছেন আইসিস বিরোধী যুদ্ধে৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
পিকেকে ও তুরস্কের শত্রু এখন এক: আইসিস-এর সন্ত্রাসীরা৷ পিকেকে-র যোদ্ধারা এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বেশ কিছু সাফল্য দেখাতে পেরেছেন৷
এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে পেশমেরগার যোদ্ধাদের চেয়েও সফল পিকেকে৷ ইরাকের উত্তরে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সামরিক বাহিনীকে বলা হয় পেশমেরগার বা ‘মৃত্যুর মুখোমুখি হয় যারা'৷
পশ্চিমা গোষ্ঠী আইসিস-সন্ত্রাস দমনে জাতীয়তাবাদী পেশমেরগারদের ওপর ভরসা করতে চায়৷ ফ্রান্স, ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই যোদ্ধারা সামরিক সহায়তা পাচ্ছেন৷ জার্মানিও অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷
কখনও কখনও পেশমেরগার ও পিকেকে-র অনুসারীরা কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে৷ যুদ্ধাবস্থায় এই দুই কুর্দি সংগঠনকে আলাদা করা সহজ নয়৷ অবশ্য জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্কেল স্পষ্টই জানিয়েছেন, জার্মান অস্ত্র পিকেকে নয়, শুধু পেশমেরগারদেরই দেওয়া হবে৷
জার্মানির সরকারি ও বিরোধী দলের কয়েকজন রাজনীতিবিদ পিকেকে-কে ভবিষ্যতেও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে গণ্য করা হবে কিনা সে ব্যাপারে আলোচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন৷ যেখানে তুরস্ক সরকার এই সংগঠনটির ব্যাপারে তার মনোভাব বদলাচ্ছে৷