বাংলাদেশ থেকে অর্থ আত্মসাৎ করে পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার পি কে হালদারের বিষয়ে জানতে চেয়ে এক সপ্তাহ আগে চিঠি দেওয়া হলেও এখনও সেই চিঠির জবাব দেয়নি ভারত৷
বিজ্ঞাপন
হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠার পর পালিয়ে যাওয়া পিকে হালদার গত ১৪ মে ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট- ইডি'র হাতে গ্রেপ্তার হয়৷
তার গ্রেপ্তারের খবর বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো-এনসিবি পরদিন ভারতের এনসিবি'র কাছে চিঠি দিয়ে পিকে হালদারের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চায়৷
সোমবার ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বাংলাদেশ এনসিবি শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মহিউল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা ভারতে এনসিবির কাছে পিকে হালদারের বিষয়ে জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছি কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো জবাব পাওয়া যায়নি৷’’
তবে এনসিবিসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে এ বিষয়ে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে বলে জানান তিনি৷
এরই মধ্যে গত ১৯মে পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে সঙ্গে নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে৷
সভায় কূটনৈতিক ও অন্যান্য মাধ্যম ব্যবহার করে আইন অনুযায়ী কীভাবে তাকে দ্রুত দেশে ফেরানো যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে৷ এজন্য যে সমস্ত প্রমাণ দরকার আছে, সেগুলো সংগ্রহের সিদ্ধান্ত হয়৷
পি কে হালদার নামে-বেনামে পিপলস লিজিংসহ নানা আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুলে হাজার কোটি টাকা লোপাট করে বিদেশে পালিয়ে যান বলে ২০২০ সালের শুরুতে খবর আসে৷ এরপর দুদক তদন্তে নেমে পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ৩৪টি মামলা করে৷ এর মধ্যে একটিতে আদালতে অভিযোগপত্রও দাখিল হয়৷
বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের বিপুল অর্থ আত্মসাতের ঘটনা সামনে আসার পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত নামলে গা ঢাকা দিয়েছিলেন তিনি৷
পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ জানিয়েছেন, এনসিবি'র মাধ্যমে পিকে হালদারকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে৷ এর আগে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর এনসিবি'র মাধ্যমে তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হয়৷
সোমবার রাজধানীতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘‘মূলত এটি তার (পিকে হালদার) বিরুদ্ধে দুদকের মামলা৷ আমরা দুদককে সহযোগিতা করছি৷ ইতোমধ্যে এনসিবি'র মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে৷ এছাড়া সে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এনসিবি'র মাধ্যমে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করেছিলাম৷’’
ভারতের এনসিবির সঙ্গে বাংলাদেশের এখনও যোগাযোগ আছে বলে জানান বেনজীর আহমেদ৷
এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
পশ্চিমবঙ্গে পি কে হালদার ও সুকুমার মৃধার ‘অবৈধ’ সম্পত্তি
শনিবার পশ্চিমঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছেন বাংলাদেশের অর্থপাচার মামলার আসামি পি কে হালদার৷ এর আগে তার ও তার সহযোগীদের সম্পত্তির খোঁজে অভিযান শুরু করে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Satyajit Shaw
সুকুমার মৃধার বাড়ির সন্ধানে
শুক্রবার ভোরে বাংলাদেশে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার মামলার আসামি প্রশান্ত কুমার হালদারের বা পি কে হালদারের সহযোগী সুকুমার মৃধার সম্পত্তির সন্ধানে পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি শুরু করে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)৷ শুরুতে উত্তর ২৪ পরগণার অশোকনগরের এই বাড়িতে হানা দেয় তারা৷
ছবি: Satyajit Shaw
সিলগালা
তল্লাশির পর তিনতলা বাড়িটি সিলগালা করে দেয় ইডি৷ ফটকে লাগিয়ে দেয়া হয় নোটিশ৷ তাতে বলা হয়েছে, অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইন ২০০২ এর আলোকে বাড়িটি জব্দ করা হয়েছে৷ তাই সেখান থেকে কোনো সম্পত্তি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নির্দেশ বা অনুমতি ছাড়া সরাতে বা পরিবর্তন করতে পারবে না কেউ৷
ছবি: Satyajit Shaw
দ্বিতীয় বাড়ির খোঁজ
অশোকনগরে সুকুমার মৃধার আরো একটি বাড়ির খোঁজ মেলে৷ সেখানেও তল্লাশি চালায় ইডি৷ তিনি বাংলাদেশের পলাতক আসামি পি কে হালদারের আয়কর আইনজীবী ছিলেন৷ পি কে হালদারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের করা অর্থ পাচারের মামলায় গত বছর সুকুমার ও তার মেয়ে গ্রপ্তার হন৷ তখন থেকেই তারা বাংলাদেশের কারাগারে আছেন৷
ছবি: Satyajit Shaw
তল্লাশি স্বজনদের বাড়িতেও
সুকুমার মৃধার কয়েকটি বাড়ি পরই তার আত্মীয় প্রণব হালদারের বাড়ি৷ সেখানেও তল্লাশি চালিয়েছে ইডি৷ তবে প্রণব হালদার ও তার পরিবার ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেছেন সুকুমার মৃধার ব্যবসার সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা তাদের নেই৷ তল্লাশির মাধ্যমে তারা হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন৷
বাংলাদেশের পেশায় আয়কর আইনজীবী হলেও পশ্চিমবঙ্গে তিনি মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত৷ বিভিন্ন স্থানের তার মাছের ভেড়ি রয়েছে বলে জানা গেছে৷ অশোকনগরে তার বাড়ির ভিতরেই রয়েছে একটি৷
ছবি: Satyajit Shaw
‘লোক ডেকে খাওয়াতো’
বাংলাদেশের নাগরিক সুকুমার মৃধা প্রায়ই পশ্চিমবঙ্গে থাকতেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা৷ পিন্টু দাস নামের এই ব্যক্তি জানান, ‘‘সুকুমার মৃধা খুব ধনী লোক বাংলাদেশও ওর সম্পত্তি আছে শুনেছি, বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান হলে ক্লাব থেকে ১০০ লোক ডেকে খাওয়াতো৷ প্রত্যেক বছর পাড়ার পুজোর সভাপতি হতো এবং ভালো টাকা ডোনেশন দিত৷’’
ছবি: Satyajit Shaw
‘ধনী ব্যক্তি হিসেবে চিনি’
স্থানীয় বাসিন্দা বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্তী জানান, ‘‘আমরা ওনাকে ধনী ব্যক্তি হিসেবে চিনি৷ আমাদের কোনোরকম সন্দেহ হয়নি কারণ আমরা জানি বাংলাদেশে ওনার ঘর-বাড়ি আছে ও কাজ করে ওখান থেকে টাকা পয়সা নিয়ে আসে৷ তারপর শুনি এই ঘটনা ইডির লোকজন এসে বাড়ি সিল করে দিয়ে যায়৷’’
ছবি: Satyajit Shaw
ইডি যা বলছে
শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশের নাগরিক প্রশান্ত কুমার হালদার, প্রিতীশ কুমার হালদার, প্রনেশ কুমার হালদার ও তাদের সহযোগীদের খোঁজে পশ্চিমবঙ্গের ১০ টি জায়গায় অভিযান পরিচালনা করছে৷ এই ব্যক্তিরা বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেছে বলেও উল্লেখ করেছে ইডি৷
ছবি: Subrata Goswami/DW
পি কে হালদারের খোঁজ
এই অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে বাংলাদেশে পলাতক আসামী পি কে হালদারেরও খোঁজ পায় ইডি৷ তিনি অবৈধভাবে কাগজপত্র সংগ্রহ করে সেখানে শিবশঙ্কর হালদার নামে বসবাস করছিলেন৷ ইডি বলছে, তিনি ও তার সহযোগীরা কলকাতার মেট্রোপোলিসসহ বিলাসবহুল সব এলকায় অবৈধভাবে বহু সম্পত্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকানা অর্জন করেছেন৷ তাকে তিনদিনের রিমান্ডে নেয় ইডি৷
ছবি: Subrata Goswami/DW
বাংলাদেশ যা বলছে
এদিকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রোববার বলেছেন, “পি কে হালদার ওয়ান্টেড ব্যক্তি, ইন্টারপোলের মাধ্যমে অনেক দিন ধরে তাকে চাচ্ছি৷ ...সে গ্রেপ্তার হয়েছে, তবে আমাদের কাছে এখনও (ভারত থেকে) অফিসিয়ালি কিছু আসেনি৷’’ এর আগে শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেছিলেন, ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে জানালে যত দ্রুত সম্ভব বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে৷