1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পিকে হালদারের ৮০ বান্ধবী এবং দুর্নীতি দমন চিত্র

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২১ ডিসেম্বর ২০২০

প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে তদন্তের অগ্রগতিতে জানা গেল তার ৮০ জন বান্ধবী আছে৷ কিন্তু তার পাচার করা টাকাসহ তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার কোনো খবর নাই৷

Bangladesch Büro der Anti-Korruptions Kommission
ছবি: bdnews24.com

লিজিং কোম্পানি দিয়ে জালিয়াতি করে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পাচার করে পিকে হালদার এখন কানাডায় আছেন৷ সেখানেও তিনি সম্পদ গড়ে তুলেছেন৷ এই টাকার পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকা হবে বলে মনে করছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম৷

তিনি জানান, মামলার তদন্ত পর্যায়ে অনেকেই তার কাছে এসেছেন অভিযোগ নিয়ে৷ তাদের মধ্যে সাবেক বিচারকের মেয়ে, সাবেক একজন পররাষ্ট্র সচিব, সাবেক আমলাসহ আরো সমাজের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি আছেন৷ ক্ষতিগ্রস্তরাই খুরশীদ আলমকে তথ্য দিয়েছেন যে পিকে হালদার অবিবাহিত এবং তার কমপক্ষে ৮০ জন বান্ধবী আছে৷ তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পিকে হালদার টাকা জমা রাখতেন৷

খুরশীদ আলম জানান, ‘‘পিকে হালাদারের বান্ধবীরা দেশেই আছেন বলে জানতে পেরেছি৷ তাদের নাম ঠিকানা পেয়েছি৷ তাদের তদন্তের মুখোমখি হতে হবে৷ তাদের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট আমাদের হাতে আছে৷ তাদের অ্যাকাউন্টে পিকে হালদার টাকা পাঠাতেন৷’’

কিন্তু পিকে হালদার ও পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার তদন্ত কতদূর জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘তাকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাঠানো হয়েছে৷’’ এর আগে পিকে হালদার দেশে ফিরে আত্মসমর্পণ করে টাকা ফিরিয়ে দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার আর কোনো অগ্রগতি নাই৷

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, পিকে হালাদারের বান্ধবীরা এই মামলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷ এখানে আরো একটা বিষয় স্পষ্ট হয়েছে মানি লন্ডারিং-এ এধরনের ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করা হয়।তাহলে ব্যাংকের দায়দায়িত্ব আছে৷

তিনি বলেন, ‘‘পিকে হালদারের বান্ধবীদের ব্যাপারে আরো গভীর তদন্ত হলে অনেক গোপন তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে৷’’

‘‘অর্থ পাচারের সাথে যারা জড়িত তারা ক্ষমতাবান’’: ড. ইফতেখারুজ্জামান

This browser does not support the audio element.

যারা দেশের বাইরে অর্থ পাচার করেছেন তাদের একটি তালিকা চেয়েছিলো হাইকোর্ট৷ দুদক গত সপ্তাহে যে ২৮ জনের তালিকা দিয়েছে তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আদালত৷ দুদক আসলে যে ২৮ জনের তালিকা দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলমান৷ আর তাদের তথ্য সংবাদ মাধ্যমে আগেই ছাপা হয়েছে৷ আর এই তালিকায় বিএনপির দুই-একজন রাজনীতিবিদ ছাড়া আর উল্লেখযোগ্য কারুর নাম নাই৷ আদালত তাদের নতুন করে তালিকা দিতে বলেছেন৷ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘‘‘আদালত এই সময়ে আলোচিত অর্থ পাচারকারীদের ব্যপারের বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়েছিলেন৷  কিন্তু দুদক তা এড়িয়ে গেছে৷ দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়৷ সবাই তাদের চেনেন৷ কিন্তু দুদক কোনো তথ্য দিচ্ছে না৷’’

এনবিআরসহ সরকারের আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে তালিকা দিতে বলা হলেও তারা এখন পর্যন্ত দেয়নি৷

দুদক সম্প্রতি বিভিন্ন দেশ থেকে ৫০ জনের পাচার করা অর্থের তথ্য এনেছে৷ তার মধ্যে আওয়ামী লীগেরও বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য রয়েছেন৷ তাদের তালিকা  হাইকোর্টে দেয়া হয়নি৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ‘‘দেশে টপ টু বটম যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয় তার তুলনায় দুদকের তৎপরতা কিছুই না৷ তাদের আবার দ্বিচারিতা আছে৷ তার কাউকে ধরে আবার কাউকে ছাড় দেয়৷ রাজনীতিবিদ, আমলা এবং ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে দুর্নীতির একটি শক্তিশালী চক্র আছে এদেশে৷ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে তাদের সহায়তা করার লোক আছে৷ তারা টাকা পাচার করে। বিদেশে যায় আবার দেশে ফিরে আসে৷ ফলে মূল দুর্নীতিবাজেরা ধরা পড়ে না৷’’

ড. ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন দুর্নীতি দমনে দুদকের তিন ধরনের দুর্বলতা আছে৷ আর তা হলো: সক্ষমতার ঘাটতি, সমন্বয়ের ঘাটতি এবং সৎ সাহসের ঘাটতি৷ তিনি বলেন, ‘‘পিকে হালদারে যোগাযোগ কোথায় জানি না৷ কিন্তু অনেক সময়ই অর্থ পাচারের সাথে যারা জড়িত তারা ক্ষমতাবান৷ তাদের আর্থিক এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা আছে৷ তাই যত কথা হয় বাস্তবে কাজ হয় না৷ তাদের বিচারের আওতায় আনার সৎ সাহস কতটা আছে সেটাই প্রশ্ন৷’’

‘‘হাইকোর্টের চাপ অব্যাহত থাকলে পাচারকারীদের নাম সবাই জানবেন’’: মনজিল মোরসেদ

This browser does not support the audio element.

আর মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘‘দুদক ,অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস এগুলো তো সরকারেই প্রতিষ্ঠান৷ দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের সাথে সরকারের টপ লেভেলের যারা জড়িত, সরকারি দলের যারা প্রভাবশালী তাদের বিরুদ্ধে কি তারা ব্যবস্থা নিতে পারবে? পারার কথা না৷’’ তবে তিনি মনে করেন, ‘‘হাইকোর্ট যেভাবে এখন চাপ সৃষ্টি করছে এটা অব্যাহত থাকলে পাচারকারীদের নাম দেশের মানুষ জানতে পারবেন৷’’

প্রসঙ্গত, গ্লোবাল ফাইনান্সিলিয়াল ইন্টিগ্রিটির(জিএফআই) তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে গড়ে বছরে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার পাচার হয়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ