সেপ্টেম্বরেই গণভোট হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাশিয়া। ইউক্রেন জানিয়েছে, দক্ষিণে বেশ কিছু জায়গা পুনর্দখল হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
খেরসন, দনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে সেপ্টেম্বরে গণভোটের পরিকল্পনা করেছিল রাশিয়া। গণভোটের মাধ্যমে ওই অঞ্চলগুলিকে নিজেদের দেশে অন্তর্ভুক্তির পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু খেরসনে মস্কোর মদতপুষ্ট প্রশাসন জানিয়েছে, এখনই গণভোট হবে না। নিরাপত্তার কারণেই গণভোট পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছএ বলে রাশিয়ার একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।
রুশ গোলায় লাগা আগুন যেভাবে নেভান ইউক্রেনীয় দমকলকর্মীরা
আপৎকালীন পরিস্থিতিতে কাজের অভিজ্ঞতা ছিল ইউক্রেনের দমকলকর্মীদের। অগ্নিকাণ্ড মোকাবেলার জিনিসপত্র থাকতো তাদের কাছে। কিন্তু রুশ আগ্রাসন কঠিন কাজকে আরো কঠিন করে দিয়েছে।
ছবি: Leah Millis/Reuters
জ্বলছে ঘর, পুড়ছে বাড়ি
সুবিশাল এক অ্যাপার্টমেন্টে রাশিয়ার গোলাবর্ষণের ফলে আগুন লাগে। খারকিভের আশেপাশের এলাকাগুলিতেও গোলাবর্ষণ চলে। যুদ্ধপীড়িত ইউক্রেনের দমকলকর্মীরা এখন জানেন, একাধিক বাড়িতে আগুন লাগলে কোনটিকে আগে বাঁচাতে হবে, কাদের প্রথমে উদ্ধার করতে হবে এবং একই সময়ে কিলোমিটার দূরে কারখানায় আগুন লাগলে, তা কীভাবে সামলাতে হবে।
ছবি: Leah Millis/Reuters
একযোগে হার না মানা লড়াই
ইউক্রেনের খারকিভ শহরের একটি দমকলকেন্দ্রের প্রধান রোমান কাশানভ রয়টার্সকে বলেন, "একই সময়ে ছয় বা সাতটি অ্যাপার্টমেন্ট জ্বলতে দেখছেন। অথচ আপনি জানেন না কিছু লোক আদৌ কোথায় রয়েছে। এদিকে আপনার কাছে মাত্র তিনটি ট্রাক আছে। এটা একটা লটারির মতো।"
ছবি: Leah Millis/Reuters
পরিবারকে কবে দেখবেন
গোলাবর্ষণের মাঝেই রোমান কাশানভদের মনে পড়ে পরিবারকে। তার সাত বছরের শিশুকন্যা ভিওলেত্তা, স্ত্রী মারিনা জার্মানিতে রয়েছেন। জীবন মৃত্যুর মধ্যে লড়াই করতে করতে ভিডিও কলে প্রিয়জনের মুখ দেখেন কাশানভ। তার কথায়, "পরিস্থিতি ইরাক, আফগানিস্তানের মতো। কোথায় কখন বোমা হামলা হবে কেউ জানে না।"
ছবি: Leah Millis/Reuters
লড়ছেন নারী কর্মীরাও
মার্গারিটা এবং অন্যান্য দমকল কর্মীরা কাজের মাঝে কখনো সখনো জানলার বাইরে চোখ রাখেন। কিন্তু কালো পর্দায় ঢাকা তাদের কার্যালয় ভবনটি। যাতে সহজে সেটি লক্ষ্য করে শত্রুশিবির আক্রমণ করতে না পারে। উদাস চোখে চেয়ে থাকেন মার্গারিটা।
ছবি: Leah Millis/Reuters
মাঝরাতে কাজের ডাক
ঝুঁকি নেওয়ার জন্য অতিরিক্ত অর্থ পান দমকলকর্মীরা। কাজের ধরন বদলে যায়, কর্মীরা যাতে সবাই একটু বিশ্রাম নিতে পারেন, সে কথাও মাথায় রাখা হয়। কিন্তু মাঝরাতে ডাক এলেই আলেকজান্ডারের মতো কর্মীরা মানুষকে বাঁচাতে বেরিয়ে পড়েন। কাজের মাঝে প্রশিক্ষণ নেন, ব্যায়াম করেন কারণ সুস্থ থাকতেই হবে।
ছবি: Leah Millis/Reuters
অন্ধকারে কাজ
অগ্নিদগ্ধ বাড়িগুলিতে কাজ করতে হয় তাদের। অন্ধকার, সামান্য টর্চের আলো ভরসা। তারা খতিয়ে দেখেন, গোলার আঘাতের ফলে ভাগ্যজোরে কেউ বেঁচে রয়েছেন কিনা। কাশানভ বলেন, তিনি খুশি স্ত্রী এবং সন্তান নিরাপদে রয়েছে। প্রতি রাতে মেয়েকে গল্প বলে ঘুম পাড়িয়ে দেয়ার কথা মনে পড়ে তার।
ছবি: Leah Millis/Reuters
লক্ষ্যে অবিচল
বুলেটরোধক পোশাক, জ্যাকেট সবমিলিয়ে নিজের ওজনের থেকে প্রায় ২০ কেজি বেশি ওজন সমেত চলাফেরা করতে হয় তাদের। খারকিভের আপৎকালীন পরিষেবা বিভাগের গণণাধ্যম সচিব ইভজেনি ভাসিলেঙ্কো আগস্টে বলেছিলেন, যুদ্ধের শুরু থেকে, দমকলকর্মীরা ১৭০০ বার খারকিভের নানা এলাকায় গোলার হানার ফলে আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছেন।
ছবি: Leah Millis/Reuters
খবর পড়েন মোবাইলে, ক্লান্তি আসে
ডিমা আর নিকোলাই বেশ পরিশ্রান্ত। ছবি দেখেই তা বোঝা যাচ্ছে। যুদ্ধ থেমে যাওয়ার আশা নিয়ে মোবাইলে খবরে চোখ রাখেন তারা। তারা জানেনা না কবে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি মিলবে। মৃত শিশুর দেহ কিংবা অনাথ হয়ে যাওয়া শিশুর বাবা মায়ের দেহ দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন কাশানভও। মানসিকভাবে একেবারে বিধ্বস্ত তিনি, জানান কাশানভ।
ছবি: Leah Millis/Reuters
মন শান্ত রাখার চেষ্টা
সামান্যতম সুযোগ পেলে একটু মন হালকা রাখার চেষ্টা করেন কেউ কেউ। মোবাইলে গান শোনেন হয়তো কিংবা মনকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা। মৃতদেহ দেখতে দেখতে চোখে জল চলে আসে দমকলকর্মীদের।
ছবি: Leah Millis/Reuters
প্রাণের ঝুঁকি, অপেক্ষা পরিস্থিতি বদলের
এতকিছুর মাঝেও লড়াই ছাড়ছেন না তারা, আশা রাখছেন পরিস্থিতির বদল হবে, প্রিয়জনকে ফিরে পাবেন এই দমকলকর্মীরাও। এই সাইনবোর্ডটা লাগাতে ইগর তার বন্ধুদের সাহায্য করছেন। এখানে লেখা আছে, শুভ সন্ধ্যা, আমরা ইউক্রেন থেকে এসেছি।
ছবি: Leah Millis/Reuters
10 ছবি1 | 10
সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, নিপ্রো নদীর উপর অ্যান্তোনিভস্কাই সেতুটি ইউক্রেন বোমা মেরে কার্যত উড়িয়ে দিয়েছে। ওই সেতু পার করেই খেরসনে ঢুকতে হয়। পরিকাঠামোগত বেশ কিছু সমস্যা থাকায় ভোটের আয়োজন করা মুশকিল হচ্ছে বলে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে।
ঝাপোরিজ্ঝিয়া, দোনেৎস্ক এবং লুহানস্কেও এমাসে গণভোট হওয়ার কথা ছিল। সেই ভোটগুলি নিয়ে অবশ্য এখনো স্পষ্ট করে কিছু জানা যায়নি। ইউক্রেন-সহ গোটা পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার এই গণভোটের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কোনোভাবেই ইউক্রেন এই গণভোট মানবে না। নিজেদের জমি তারা রাশিয়ার হাতে তুলে দেবে না। শুধু তা-ই নয়, ২০১৪ সালে রাশিয়া একই প্রক্রিয়ায় ক্রাইমিয়া দখল করে নিয়েছিল। ইউক্রেন তা-ও মেনে নেয়নি।
জেলেনস্কি সোমবার দাবি করেছেন, দক্ষিণ ইউক্রেনের বেশ কিছু জমি রাশিয়া দখল করে নিয়েছিল। ইউক্রেন তা পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে। তবে রাশিয়া এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
গাড়ি বোমায় নিহত ‘পুটিনের মস্তিষ্কের’ মেয়ে
00:56
ট্রাসের সাহায্য চান জেলেনস্কি
সোমবার রাতের দৈনিক বক্তৃতায় জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি আশা করছেন যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী ইউক্রেনের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন। সোমবারই যুক্তরাজ্য নতুন প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করেছে। বরিস জনসনের জায়গায় বসবেন লিজ ট্রাস। বরিস জনসন ইউক্রেনকে বিপুল সাহায্য করেছেন। জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি প্রত্যাশা করেন যে ট্রাসও একইভাবে তাকে সাহায্য করবেন। বস্তুত, বরিস জনসন বিদায়কালেও ইউক্রেনের জন্য একাধিক সামরিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। ট্রাসও একইভাবে ইউক্রেনের পাশে থাকবেন বলে মনে করছেন জেলেনস্কি।
রাশিয়ান ওয়ার্ল্ডের ঘোষণা
সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন একটি ডকট্রিনে সই করেছেন। যেখানে রাশিয়ান ওয়ার্ল্ড নামক একটি ধারনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর ফলে রাশিয়ার পররাষ্ট্র নীতি আরো আগ্রাসী হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০০৮ সালে জর্জিয়ার কিছু এলাকা দখল করেছিল রাশিয়া। মস্কো ওই এলাকাগুলিকে স্বাধীন হিসেবে মর্যাদা দেয়। একইসঙ্গে পূর্ব ইউক্রেনের কিছু অঞ্চলকেও মস্কো একইরকম স্বীকৃতি দেয়। এই সমস্ত অঞ্চল রাশিয়ার বলে মনে করে মস্কো। ৩১ পাতার রাশিয়ান ওয়ার্ল্ড ডকট্রিন তারই স্বীকৃতি।