1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে পিটিয়ে মারার হিড়িক

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুনদিল্লি
৩ জুলাই ২০১৮

গত দুই মাসে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে  ছেলে ধরা সন্দেহে ২৭ জনকে গণপিটুনি দেয়া হয়েছে৷পিটুনিতে মারা গেছে ২২জন৷ পুলিশ বলছে, সোস্যাল মিডিয়ায় শিশু পাচারের গুজব ছড়িয়ে এ সব ঘটানো হচ্ছে৷

Kinderarbeit Indien
ছবি: AP

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে সোশ্যাল মিডিয়া কি সিরিয়াল কিলার হয়ে উঠছে? অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়াই যে একমাত্র কারণ, সমাজ বিজ্ঞানি ডঃ পূজন সেন কিন্তু তা মনে করেন না৷

শিশু পাচারকারী বা ছেলে ধরা সন্দেহে পিটিয়ে মারার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে৷ নেপথ্য ঘাতক নাকি সোশ্যাল মিডিয়ার গুজব৷ কুড়ি কোটিরও বেশি ভারতীয় ব্যবহার করে থাকে হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক ইত্যাদি সোশ্যাল মিডিয়া৷ প্রধান অপরাধী নাকি হোয়াটসঅ্যাপ৷ বেশিরভাগ বহিরাগতই এর প্রধান নিশানা৷ কেউ হয়ত অন্য রাজ্যের বাসিন্দা, চেহারায় বা হাবভাবে কিছুটা আলাদা৷ অন্য ভাষায় কথা বলছে৷ পোশাক-পরিচ্ছদ জীর্ণ, ভিখারির মতো৷ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এদের ছেলেধরা বলে ছড়িয়ে দেওয়া হয় ভুয়া খবর ও গুজব৷ অত্যন্ত দ্রুত গতিতে৷ পরিণাম গণপিটুনি৷ পুলিশ প্রশাসন কিছু করার আগেই যা হবার তা হয়ে যায়৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরণ রিজ্জু স্বীকার করেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া খবর এবং গুজব ছড়ানো একটা দৌরাত্ম্য হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ রাজ্য সরকার এবং সরকারি সংস্থাসহ এনজিওগুলিকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে জনসাধারণকে সচেতন করে তুলতে৷ ভুয়া খবর এবং গুজব নিরীহ মানুষের জীবনের পক্ষে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷

‘এইসব মর্মান্তিক ঘটনার কোনো কূল কিনারা ভেবে পাচ্ছিনা’

This browser does not support the audio element.

যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কোনো সতর্কতা জারি করা হয়নি, তবে রাজ্য ও জেলা স্তরে মিডিয়া টিম  বিষয়ে সক্রিয়, বলেছেন, উত্তরপ্রদেশ পুলিশের মহাঅধিকর্তা ও.পি সিং৷ অনুরূপ ব্যবস্থা নিয়েছে রাজস্থান পুলিশ প্রশাসন৷ সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ পবন দুগ্গাল মনে করেন, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সার্ভিস প্রোভাইডারদের যথেষ্ট স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে বিনা দায়বদ্ধতায়৷ দুঃখের বিষয় সার্ভিস প্রোভাইডারদের দায়বদ্ধতা সুনিশ্চিত করার রাজনৈতিক সদিচ্ছা নেই৷ সাইবার অপরাধ দমনে যথেষ্ট শাস্তির বিধান না থাকায় তাদের সাহস বেড়ে যাচ্ছে৷ বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতার সুযোগে জনতাই নিজেদের হাতে বিচার তুলে নিচ্ছে৷ উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে জাতীয় অপরাধ ব্যুরোর রিপোর্ট অনুসারে দেশে মোট এক লাখ সাত হাজার অপরাধের মধ্যে ৫৩ হাজার শিশু পাচার ও ছেলে ধরা সন্দেহে৷ এরপর আছে শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত অপরাধ৷

প্রবীণ সমাজ বিজ্ঞানী ড. পূজন সেন কিন্তু পিটিয়ে মারার ঘটনার নেপথ্যে সোশ্যাল মিডিয়াকেই একমাত্র অপরাধী বলে মনে করেন না৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এইসব মর্মান্তিক ঘটনার কোনো কূল কিনারা আমি ভেবে পাচ্ছি না৷ এই সমস্যার কোনো টুকরো সমাধান নেই৷ শুধু সোশ্যাল মিডিয়াই দোষী বলে মনে করি না৷ সোশ্যাল মিডিয়া হয়ত এটা বাড়িয়েছে, কিন্তু সমস্যাটা সমাজ জীবনের গভীরে গেঁথে আছে৷ আমরা অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছি৷ আমাদের অসহিষ্ণু করে তোলা হচ্ছে৷ আমাদের বিচারবুদ্ধি ও যুক্তিবোধ ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে৷ কোনো বিকাশ হচ্ছে না. আমরা শেখাই কি যুক্তিবাদী হতে বা সহিষ্ণু হতে? না৷  আমরা দেখি, শুধু যাঁরা এর শিকার হয়েছে তাঁদেরকে৷ এরা কারা, কি তাঁদের সামাজিক ব্যাকগ্রাউন্ড, সেটা দেখি না৷ এই নিয়ে কোনো চর্চাও হয় না৷ দ্বিতীয়ত, যাঁরা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছেন, তাঁরা তো একেবারে অজ্ঞ নয়. টেকনোলজি মোটামুটি তাঁরা বোঝেন৷ তাহলে এই রকম মানসিকতা কেন তাঁদের ?'' ড. পূজন সেন আরো বলেন, ‘‘মেটিরিয়াল কালচার যতটা উন্নত হয়েছে, নন-মেটিরিয়াল কালচার ততটা হয়নি৷ সরকারি নিয়ন্ত্রণ দরকার তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ কিন্তু শুধু সরকারি নিয়ন্ত্রণই যথেষ্ট নয়৷ আমাদের আধুনিক সমাজের বড় ব্যর্থতা হলো কোথাও সংস্কার হয়নি৷ সুশীল সমাজের ওপর ভরসা রেখেও মনে হয় সুশীল সমাজও কোথাও না কোথাও ব্যর্থ হচ্ছে৷ এই নিয়ে সমাজকে আরও ভাবতে হবে৷''

সর্বশেষ গণপিটুনির দুটি পৃথক ঘটনায়  ত্রিপুরা রাজ্যে মারা গেছে দু'জন, আহত তিনজন৷ সোশ্যাল মিডিয়ার গুজবে কান না দেবার জন্য ত্রিপুরা সরকার বিশেষভাবে নিয়োগ করেন সুকান্ত চক্রবর্তী বলে এক ব্যক্তিকে৷ রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকায় সেই কাজ করতে গিয়ে তিনি নিজেই গণপিটুনির শিকার হন৷ মহারাষ্ট্রের ধুলে জেলায় ‘ছেলে-ধরা ঢুকেছে' বলে রটেছিল গুজব৷ সেই সন্দেহে পিটিয়ে মারা হয় পাঁচ জনকে৷ ঐ এলাকায় বাস থেকে নামে ঐ পাঁচ জন৷ একটি বাচ্চার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন তাঁরা৷ তখনই গ্রামবাসীদের সন্দেহ হয়৷ বেধড়ক মারের চোটে তাঁরা মারা যায়৷ পুলিশ অবশ্য গ্রেপ্তার করেছে ১৫ জনকে৷ আসামের কার্বি আংলং-এ সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার  নীলোত্পল দাস এবং ব্যবসায়ী  অভিজিত নাথকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয় একই সন্দেহে৷ ওরা গুয়াহাটি থেকে সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলেন৷ ছেলে-ধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ার্সের মালবাজারের ওদলাবাড়িতে প্রাণ হারায় একজন৷ মৃত ব্যক্তি নেপালের৷ আগে ঐ অঞ্চলে কেউ তাঁকে দেখেনি বলে স্থানীয় লোকজনদের সন্দেহ হয় ছেলে ধরা বলে৷ রাজ্যের মালদা জেলায় পৃথক পৃথক ঘটনায় আরও সাত ব্যক্তি গণপিটুনির শিকার হয় গত মাসে৷ গুরুতর আহত হন তাঁরা৷ কর্নাটকে একজন ভিন রাজ্যের নির্মাণ শ্রমিক প্রাণ হারায় গণপিটুনিতে৷ তাঁকে নির্মমভাবে মারা হয়৷ অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে দুটি পৃথক ঘটনায় স্থানীয় জনতা পিটিয়ে মারে দুই জন ভিখারিকে৷ সেই শিশু পাচারকারী সন্দেহে! একইভাবে পিটিয়ে মারার খবর আসে গুজরাটের আমেদাবাদ থেকে৷ সেখানে দুই জন মহিলার প্রাণ যায় গণপিটুনিতে৷ তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, ওড়িষা থেকেও আসে পিটিয়ে মারার খবর৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ