সিলেটে শিশু সামিউল আলম রাজনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা
হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১৩ জুলাই ২০১৫
সিলেটে শিশু সামিউল আলম রাজনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দেশের মানুষ স্তম্ভিত৷ সাধারণ মানুষ বিচারের দাবিতে মাঠে নেমেছেন৷ আর অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলছেন বিচারহীনতা এবং অসুস্থ সমাজের পরিণতি হল এই নির্মমতা৷
বিজ্ঞাপন
গত বুধবার সকালে সিলেটের জালালাবাদ এলাকায় চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয় ১৩ বছরের রাজনকে৷ নির্যাতনকারীরা শিশুটিকে পেটানোর ২৮ মিনিটের ভিডিও ধারণ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়৷ সেই ভিডিও দেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে৷ মূলধারার সংবাদমাধ্যমও তাদের অনলাইন সংস্করণে প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যাচ্ছে৷ আর দাবি উঠেছে অপরাধীদের গ্রেপ্তারের৷
সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বাদেআলী গ্রামের মাইক্রোবাস চালক শেখ আজিজুর রহমানের ছেলে রাজন স্থানীয় অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে৷ পরিবারকে সাহায্য করতে সে ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করত৷
ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণই রাজনের মৃত্যুর কারণ৷ তার শরীরে ৬৪টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে৷''
সিলেটের জালালাবাদ থানা পুলিশ এরইমধ্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িত একজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে৷ আরেকজনকে সন্দেহজনক হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ ভিডিও ফুটেজ দেখে মোট চারজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে, বাকিরা পলাতক৷
মন্ত্রী ও পুলিশের বক্তব্য
জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আক্তার হোসেন ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘পুলিশ নিজেই বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে৷ মামলায় নির্যাতনকারী মুহিত, তার ভাই কামরুল ইসলাম, তাদের সহযোগী আলী হায়দার ওরফে আলী ও চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়নাকে আসামি করা হয়েছে৷ এদের মধ্যে মুহিতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷'' তিনি জানান, ‘‘এই ঘটনায় কোনো আসামিই রেহাই পাবেনা৷ সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে৷''
ক্যামেরার চোখে বাংলাদেশে শিশু শ্রম
বাংলাদেশে ৪৫ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত৷ তাদের মধ্যে ১৭ লাখের বেশি আবার কাজ করে রাজধানী ঢাকায়৷ আমাদের আলোকচিত্রী মুস্তাফিজ মামুন শিশুশ্রমের কিছু চিত্র তুলে এনেছেন আপনাদের জন্য৷
ছবি: Mustafiz Mamun
বেলুন কারখানায় শিশু শ্রমিক
ঢাকার কামরাঙ্গীর চরের একটি বেলুন তৈরির কারখানায় কাজ করছে দশ বছরের এক শিশু৷ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৪৫ লাখেরও বেশি শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত, যার প্রায় ১৭ লাখেরও বেশি শিশু শ্রমিক খোদ রাজধানীতেই৷
ছবি: Mustafiz Mamun
নেই কোনো নজরদারি
কামরাঙ্গীর চরের এই বেলুন কারখানায় খোলামেলাভাবে নানা ধরনের রাসায়নিকের মাঝে কাজ করে শিশু শ্রমিকরা৷ বাংলাদেশ সরকার ঝুঁকিপূর্ণ ৩৮টি কাজে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করলেও আদতে তা মানা হচ্ছে না৷ সরকারিভাবে নেই কোনো নজরদারির ব্যবস্থা৷
ছবি: Mustafiz Mamun
সিংহভাগই শিশু শ্রমিক
ঢাকার কামরাঙ্গীর চরে কমপক্ষে দশটি বেলুন তৈরির কারখানা আছে, যেগুলোর সিংহভাগেই শিশু শ্রমিক কাজ করে৷ সড়ক থেকে একটু আড়ালে ভেতরের দিকেই কাজ করানো হয় শিশুদের৷ সপ্তাহে সাত দিনই সকাল-সন্ধ্যা কাজ করতে হয় তাদের৷ তবে শুক্রবারে আধাবেলা ছুটি মেলে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ
ঢাকার কেরাণীগঞ্জে সিলভারের তৈজসপত্র তৈরির কারখানায় কাজ করে শিশু শ্রমিক আলী হোসেন৷ মারাত্মক উচ্চ শব্দের মধ্যে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে হয় তাকে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
ট্যানারি কারখানায় শিশু শ্রমিক
ঢাকার হাজারীবাগের একটি ট্যানারি কারখানায় বাইরে কাজ করে নোয়াখালীর আসিফ৷ বয়স মাত্র বারো৷ রাসায়নিক মিশ্রিত চামড়া শুকানোর কাজ করে সে৷ দিনে ১২ ঘণ্টারও বেশি কাজ করে সামান্য যে মজুরি পায় তা দিয়ে সংসার চালাতে মাকে সাহায্য করে আসিফ৷
ছবি: Mustafiz Mamun
মায়ের সঙ্গে রাব্বি
কামরাঙ্গীর চরের একটি প্লাস্টিক বোতল প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে মায়ের সঙ্গে কাজ করে চাঁদপুরের রাব্বি৷ এই কেন্দ্রের মালিক নাকি শিশু শ্রমিক নিয়োগের বিরোধী৷ মায়ের অনুরোধে রাব্বিকে কাজ দেয়া হয়েছে বলে দাবি তাঁর৷ কারণ রাব্বির মা সারাদিন খেটে যে মজুরি পান তাতে সংসার চলে না৷ সংসার চালাতে তাই কাজ করতে হচ্ছে রাব্বিকে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
হিউম্যান হলারে শিশু হেল্পার
ঢাকার রাস্তায় চলাচলকারী হিউম্যান হলারগুলোতে শিশু শ্রমিক চোখে পড়ার মতো৷ বাহনগুলো দরজায় ঝুলে ঝুলে কাজ করতে হয় এ সব শিশুদের৷ চলন্ত গাড়ি থেকে পড়ে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকারও হয় এসব শিশুরা৷
ছবি: Mustafiz Mamun
ব্রিক ফিল্ডে শিশুরা
ঢাকার আমিন বাজারের বিভিন্ন ব্রিক ফিল্ডেও কাজ করে শিশু শ্রমিকরা৷ প্রতি হাজার ইট বহন করে পারিশ্রমিক পায় ১০০-১২০ টাকা৷ একটি কাঁচা ইটের ওজন কমপক্ষে তিন কেজি৷ একেকটি শিশু ৬ থেকে ১৬টি ইট এক-একবারে মাথায় নিয়ে পৌঁছে দেয় কমপক্ষে ৫০০ গজ দূরে, ইট ভাটায়৷ তাদের কোনো কর্মঘণ্টাও ঠিক করা নেই৷ একটু বেশি উপার্জনের আশায় রাত পর্যন্ত কাজ করে তারা৷
ছবি: Mustafiz Mamun
লেদ কারখানায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুরা
পুরনো ঢাকার লালবাগের একটি লেদ কারখানায় কাজ করে ১১ বছরের শিশু রহিম৷ সারাদিন লোহা কাটা, ভারি যন্ত্রপাতি মেরামত, হাতুরি পেটানোসহ নানা রকম ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে সে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
9 ছবি1 | 9
এদিকে সোমবার ঢাকায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালও বলেছেন, ‘‘ঘটনাটি হৃদয়বিদারক ও মর্মস্পর্শী৷ একজনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে৷ আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ বাকিদেরও দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে৷ কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না৷’’
বিক্ষোভ
এদিকে সোমবার মুহিতকে রিমান্ডের জন্য আদালতে আনা নেয়ার পথে সাধারণ মানুষ ব্যাপক বিক্ষোভ এবং ঘৃণা প্রকাশ করেন৷ তারাঁ অপরাধীদের ফাঁসি চেয়ে স্লোগান দেন৷ সিলেটের সাংবাদিক ওয়ায়েস খসরু ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এই ঘটনায় সিলেটবাসী স্তম্ভিত এবং ব্যথিত৷ তারা বিচার চেয়ে স্বত:স্ফূর্তভাবে মাঠে নেমেছেন৷''
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই নির্মম নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ার পর তা ইউটিউবেও আপলোড করা হয়৷ তবে ইউটিউব কর্তৃপক্ষ তাদের নীতিমালার কারণে রোববার বিকেলে ভিডিওটি তাদের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নেয়৷ তবে ফেসবুকসহ আরো অনেক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি এখনো আছে৷
অপরাধ বিজ্ঞানীর প্রতিক্রিয়া
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সমাজে বিচারহীনতা এবং অসুস্থ মানসিকতার প্রকাশ এই নির্মম শিশু নির্যাতন৷ বিচারহীনতার সংস্কৃতি শেকড় গেঁড়ে বসায় একটি শিশুকে নির্মম নির্যাতন করে হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ করতে তারা সাহস পেয়েছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘যারা এই কাজ করেছে তারা ভয়ংকর বিকৃত মানসিকতার৷ তবে তাদের এই কাজের মধ্য দিয়ে আমাদের অসুস্থ সমাজের চেহারা বেরিয়ে এসেছে৷ শিশুদের প্রতি সমাজ যে দরদি নয় তারই প্রকাশ ঘটেছে৷''
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, ‘‘আমাদের দেশের আইনে ৯ বছর পর্যন্ত শিশুরা কোনো অপরাধ করে বলে গণ্য করা হয় না৷ আর ১৮ বছর পর্যন্ত শিশুরা অপরাধ করে না, ভুল করে৷ কিন্তু আইনের এই কথা হৃদয়ে নেই৷ ফলে এই নির্মমতা ঘটেছে৷''
বাংলাদেশে গৃহকর্মীদের দুর্দশার কথা
পশ্চিমা বিশ্ব যখন ঘরের কাজে রোবট ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে, বাংলাদেশে তখনও ঘরের কাজ করছেন গৃহকর্মীরা৷ মাসে তাঁদের গড় বেতন ৫১০ টাকা, কাজ করতে হয় কমপক্ষে দশ ঘণ্টা৷ আর ঘুমাতে হয় রান্না ঘরের মেঝেতে৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/Godong
মাসিক বেতন ৫১০ টাকা
পশ্চিমা বিশ্ব এখন ঘরের কাজে রোবট ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে৷ এই নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা৷ তবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভিন্ন৷ সেদেশে ঘরের কাজের জন্য অধিকাংশ বাড়িতে রয়েছেন গৃহকর্মী৷ যাঁদের মাসিক গড় বেতন ৫১০ টাকা৷ আর দিনে কাজ করতে হয় কমপক্ষে দশ ঘণ্টা৷
ছবি: imago/Michael Westermann
৮৩ শতাংশ নারী
ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন বা আইটিইউসি ২০১২ সালে বাংলাদেশের গৃহকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করেছে৷ এতে দেখা যাচ্ছে, শুধুমাত্র ঢাকা এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে গৃহকর্মীর সংখ্যা বিশ লাখের মতো৷ এঁদের মধ্যে ৮৩ শতাংশ নারী, যাঁদের অনেকে বয়সে শিশু কিংবা তরুণী৷
ছবি: imago/imagebroker
মেঝেতে ঘুমানো
আইটিইউসি-র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গৃহকর্মীদের মধ্যে ৩৩ শতাংশ রাতে রান্নাঘরে ঘুমান৷ এছাড়া বসার এবং শোয়ার ঘরের মেঝেতে ঘুমান গড়ে ২০ শতাংশ করে গৃহকর্মী৷ কারো কারো আবার ঘুমাতে হয় স্টোর রুমে৷ (প্রতীকী ছবি)
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
অন্যায়, নির্যাতন
অধিকাংশ গৃহকর্মী বা কাজের মেয়ে পড়ালেখার সুযোগ পান না৷ বিনোদনেরও অভাব রয়েছে৷ কমপক্ষে ৫৩ শতাংশ গৃহকর্মীর সঙ্গে বাজে ভাষায় কথা বলা হয়৷ কাজ হারানোর আতঙ্কও কাজ করে তাঁদের মধ্যে৷ যৌন নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মীর সংখ্যা ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ৷ (প্রতীকী ছবি)
ছবি: Fotolia/Miriam Dörr
প্রাণহানি
২০০১ থেকে ২০১০ সাল সময়কালের মধ্যে বাংলাদেশে নির্যাতনের শিকার হয়ে কমপক্ষে ৩৯৮ গৃহকর্মী প্রাণ হারিয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ লেবার স্টাডিজ বা বিলস৷ এছাড়া নির্যাতনে আহত গৃহকর্মীর সংখ্যা ২৯৯৷ আইটিইউসি-র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বাংলাদেশ বিষয়ক বিভিন্ন তথ্যের উৎস বিলস এবং ‘গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্ক’৷ (প্রতীকী ছবি)
ছবি: Fotolia/GrafiStart
জনসচেতনতা সৃষ্টি
গৃহকর্মীদের অধিকারের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে বিভিন্ন উদ্যোগও রয়েছে বাংলাদেশে৷ ‘গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্ক’ এক্ষেত্রে সক্রিয়৷ এই নেটওয়ার্ক ১৪ বছরের কম বয়সিদের গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে৷
ছবি: imago/epd
ঘরে আটকে রাখা নয়
বাংলাদেশের বিভাগীয় শহরগুলো অনেক সময় গৃহকর্মীদের ঘরের মধ্যে রেখে বাইরে থেকে বাড়িতে তালা দিয়ে রাখা হয়৷ ‘গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্ক’ এই কাজের তীব্র বিরোধীতা করেছে৷ গৃহকর্মীদের সুরক্ষা নীতির আওতায় এ ধরনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে নেটওয়ার্কটি৷ (প্রতীকী ছবি)
ছবি: TAUSEEF MUSTAFA/AFP/Getty Images
শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি
গৃহকর্মী বা গৃহশ্রমিকদের ‘শ্রমিক হিসেবে’ স্বীকৃতি ও শ্রম আইনে তাঁদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করারও দাবি জানিয়েছে ‘গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্ক’৷ ‘বাংলাদেশ লেবার অ্যাক্ট-২০০৬’-এ গৃহকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/Godong
8 ছবি1 | 8
মানবাধিকার কর্মীর দৃষ্টিতে
মানবাধিকার নেত্রী অ্যাডভোকেট এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই বর্বরতা সীমাহীন৷ শিশুর প্রতি সহিংসতার জন্য আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থাই দায়ী৷'' তিনি বলেন, ‘‘শিশুটিকে বুধবার প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয় অনেক লোকের সামনে৷ আর তা ভিডিওতে ধারণ করা হয়েছে৷ কিন্তু সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর প্রতিবাদের ঝড় উঠলে চারদিন পর রোববার পুলিশ তৎপর হয়৷ আমার প্রশ্ন, প্রকাশ্যে ঘটা এই নির্মমতার খবর কী তখন পুলিশের কাছে পৌঁছায়নি? নিশ্চয়ই পৌঁছেছে৷ তাহলে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কেন?''
এলিনা খান বলেন, ‘‘আমাদের সমাজ এবং রাষ্ট্রব্যবস্থার ভেতরেই নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার বীজ লুকানো রয়েছে৷'' তিনি বলেন, ‘‘নির্যাতনকারীরাই নির্যাতনের ভিডিও করেছে৷ এটা প্রমাণ করে এই দেশে অপরাধীরা কতটা বেপরোয়া৷''
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের মত
এদিকে শুধুমাত্র নির্মমভাবে শিশু নির্যাতনের এই ঘটনাই নয়, এর আগে দুই নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্মম নির্যাতনের ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে৷ আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তথ্য ও ছবি ধরেই মূলধারার সংবাদমাধ্যম ছবি ও খবর প্রকাশ করে৷
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এর দুটো দিক আছে৷ একটা হলো অপরাধীরাই এসব ছবি এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়ে তাদের ক্ষমতা দেখাতে চায়৷ আবার সাধারণ মানুষই এসব অপরাধের ছবি তুলে বিচারের আশায় তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়৷ মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেটের প্রসার এটাকে সহজ করেছে৷ তবে এই ফুটেজ ও ছবি প্রকাশে কোনো নীতিমালা মানতে চান না সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা৷''
তিনি বলেন, ‘‘তবে ইতিবাচক দিক হলো মানুষ আর মূলধারার সংবাদ মাধ্যমের অপেক্ষা করছেনা৷ তারা তাৎক্ষণিকভাবেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেই সম্প্রচার কর্মী হয়ে উঠছে৷ ফলে এখন আর অনেক অপরাধের ঘটনাই চাপা রাখা যায়না৷''