হাতের কাঁকন দিয়ে কেনা দাসী কাঁকনমালার কূটবুদ্ধিতে পরাজিত হলে রাণী কাঞ্চনমালার জীবনে নামে ঘোর অমানিশা৷ শেষে এক সুতাওয়ালার সাহায্যে চন্দ্রপুলী, মোহনবাঁশি, ক্ষীরমুরলী পিঠা বানিয়ে কাঞ্চনমালা প্রমাণ করেন যে তিনিই প্রকৃত রাণী!
বিজ্ঞাপন
আর দাসী কাঁকনমালা? আস্কে, চাস্কে আর ঘাস্কে পিঠা বানিয়ে বেচারি বেঘোরে নিজের পৈতৃক প্রাণটা খুইয়েছিলেন জল্লাদের হাতে৷
যে জনপদে পিঠা বানিয়ে নিজের পরিচয় এবং অধিকার ফিরে পাবার গল্প লোকমুখে ঘুরতে থাকে প্রজন্মান্তরে, সে জনপদের খাদ্যসংস্কৃতিতে পিঠা যে জনপ্রিয় আর গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ, তা বলাই বাহুল্য৷
‘পিঠা' শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘পিষ্টক' শব্দ থেকে৷ আবার পিষ্টক এসেছে ‘পিষ্' ক্রিয়ামূলে তৈরি হওয়া শব্দ ‘পিষ্ট' থেকে৷ পিষ্ট অর্থ চূর্ণিত, মর্দিত, দলিত৷ হরিচরণ বন্দোপাধ্যায় বঙ্গীয় শব্দকোষ বইয়ে লিখেছেন, পিঠা হলো চাল গুঁড়া, ডাল বাটা, গুড়, নারিকেল ইত্যাদির মিশ্রণে তৈরি মিষ্টান্নবিশেষ৷ বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশষ্য ধান৷ ধান থেকে চাল এবং সেই চালের গুঁড়ো পিঠা তৈরির মূল উপাদান৷
ভারত উপমহাদেশীয় সভ্যতার প্রেক্ষাপটে কখন থেকে বাঙালির খাদ্যসংস্কৃতিতে পিঠা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, তার কোনো লিখিত বিবরণ নেই৷ প্রচলিত গল্প, প্রাচীন বইপত্র থেকে এর প্রাচীনত্ব নির্ণয় করা কিছুটা কঠিনই বটে৷ সংস্কৃত সাহিত্যে ‘পিষ্টক' শব্দটির উল্লেখ মেলে৷ সেই সূত্রে বলা চলে ভারতীয় উপমহাদেশে পিঠা খাবার প্রচলন অনেক প্রাচীন৷ বাংলাভাষায় লেখা কৃত্তিবাসী রামায়ণ,অন্নদামঙ্গল, ধর্মমঙ্গল, মনসামঙ্গল, চৈতন্যচরিতামৃত ইত্যাদি কাব্য এবং ময়মনসিংহ গীতিকার কাজল রেখা আখ্যানের সূত্র ধরে গত আনুমানিক পাঁচশ' বছর সময়কালে বাঙালি খাদ্যসংস্কৃতিতে পিঠার জনপ্রিয়তার কথা উল্লেখ করা যায়৷ যেহেতু প্রাচীন বইপুস্তকে পিঠার কথা এসেছে, তাই ধরে নেওয়া যায়, পিঠা খাবার প্রচলন বাঙালি সমাজেও অনেক প্রাচীন৷ বিশাল উপমহাদেশে বসবাস করা বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যেও পিঠা যে জনপ্রিয় খাবার সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ তবে আমরা আমাদের আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখবো রাজনৈতিকভাবে পৃথক হয়ে যাওয়া বর্তমান বাংলাদেশের মধ্যে৷
বাংলাদেশে, এই একুশ শতকের শহুরে জীবনে সারা বছরই প্রায় পিঠা খাওয়া হয় দোকান থেকে কিনে৷ কিন্তু গ্রামীণ পরিসরে সারা বছর পিঠা খাওয়ার প্রচলন নেই৷ সেখানে শীতই হচ্ছে পিঠা বানানোর আদর্শ সময়৷ কৃষিসংস্কৃতির সাথে গ্রামীণ মানুষের প্রত্যক্ষ যোগাযোগই এর কারণ৷ অগ্রহায়ণ মাসে নতুন ধান উঠে যাবার পর সেগুলো গোলাবন্দি করতে বেশ কিছুটা সময় লেগে যায়৷ এই কর্মব্যস্ত সময়ে গ্রামীণ মানুষের ‘শখ' করার সময় থাকে না৷ নবান্ন করার পর ধীরেসুস্থে জাঁকিয়ে শীত পড়লে পৌষের সংক্রান্তিতে পিঠা তৈরির আয়োজন করা হয়৷ তারপর বসন্তের আগমন পর্যন্ত চলে হরেক পদের পিঠা খাওয়া৷ মূলত মাঘ আর ফাল্গুন এই দুই মাসই জমিয়ে পিঠা খাওয়া হয়৷ এর পরে আর পিঠার স্বাদ পাওয়া যায় না ঠিকমতো৷ নতুন ধান থেকে তৈরি চালে যে সুঘ্রাণ আর আর্দ্রতা থাকে, পিঠা বানানোর আটা তৈরিতে সেই চাল আদর্শ৷ ধান যত পুরাতন হতে থাকে ততই সে আর্দ্রতা হারাতে থাকে৷ ফলে সেই চালের আটায় তৈরি পিঠা আর সুস্বাদু থাকে না আগের মতো৷ হেমন্তে নতুন ধান উঠে গেলে নারীরা ঢেঁকিতে পিঠার জন্য চালের আটা বানাতো৷ ‘বানাতো' বলছি, কারণ, এখন আর ঢেঁকির প্রচলন নেই৷ এখন ‘কল' থেকে আটা তৈরি করে আনা হয়৷
মজাদার, লোভনীয় যত পিঠা
পিঠা বাংলার নিজস্ব এক সংস্কৃতি৷ আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকমের পিঠা দেখা যায়৷ গ্রামাঞ্চলে সাধারণত নতুন ধান তোলার পর থেকেই পিঠা তৈরির ধুম লাগে৷ নানা ধরনের পিঠা নিয়ে আমাদের এই বিশেষ ছবিঘর...
ছবি: Farukh Ahmed
ভাপা পুলি
পুর ভরা থাকে এবং ভাপ দিয়ে তৈরি হয় বলে এ পিঠার নাম ভাপা পুলি পিঠা৷ পুর হিসেবে পছন্দ অনুযায়ী নারকেল, ক্ষীর বা ঝালযুক্ত উপকরণ দেয়া হয়৷ রুটি তৈরি করে চাঁদের মতো করে কাটা হয় বলে একে চন্দ্রপুলি পিঠাও বলা হয়৷
ছবি: Farukh Ahmed
ডিম সুন্দরী
চালের গুঁড়ার সাথে ভাজা ডিম চুবিয়ে পরতে পরতে ভাজা হয়৷ সুন্দর ঘ্রাণের জন্য এলাচ-দারচিনির গুঁড়াও মিশানো হয় এতে৷ কুমিল্লা, ব্রাক্ষণবাড়িয়া অঞ্চলে এ পিঠাটির প্রচলন বেশি৷
ছবি: Nowrin Akther
পোয়া/তেলে
সবচেয়ে পরিচিত, সহজ ও দ্রুত তৈরি করা যায় এই পিঠা৷ ফলে শীত-গ্রীষ্ম সারা বছরই এর চাহিদা বেশি থাকে৷ চালের গুঁড়ার সাথে খেজুর বা আখের গুড় মিশিয়ে গোলা তৈরি করে ডুবো তেলে ভেজে এ পিঠা তৈরি করা হয়৷ কখনো কখনো এতে নারকেলও মিশানো হয়৷
ছবি: Nowrin Akther
মুগ পাক্কন
মুগের ডালের সাথে চালের গুঁড়া ও নারকেল মিশিয়ে কাই তৈরি করে বিভিন্ন আকৃতিতে কাটা হয়৷ তারপর তেলে ভেঁজে পিঠাটিকে চিনি বা গুড়ের সিরায় চুবিয়ে খাওয়া হয় ৷
ছবি: Farukh Ahmed
নকশি পিঠা
কোনো পিঠার উপর যখন নকশা করা হয়, তখন তাকে নকশি পিঠা বলে৷ খেজুর কাঁটা, খোঁপার কাঁটা, সুচ, পাটকাঠি, খড়কা ইত্যাদির সাহায্যে হাতে দাগ কেটে-কেটে নকশা তোলা হয়৷ হাতের পরিবর্তে ছাঁচের সাহায্যেও এ নকশা তৈরি করা যায়৷
ছবি: Farukh Ahmed
মেরা বা হাতমুঠি
এটিকে শীতকালীন পিঠাও বলা যেতে পারে৷ হেমন্তে নতুন ধানের চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি করা হয় বলে এ পিঠার স্বাদই হয় অন্যরকম৷ মূলত চালের গুঁড়াকে পানিতে মিশিয়ে তা প্রয়োজনমতো সিদ্ধ করে কাই বানানো হয়৷ এ কাইকে ছোট ছোট বিভিন্ন আকৃতি দিয়ে তা আবার সিদ্ধ করে নেয়া হয়৷ কেউ কেউ আবার এতে চিনি বা গুড়ও মেশান৷
ছবি: Farukh Ahmed
ভাপা পিঠা
শীতকালীন এ পিঠাটি মূলত চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি করা হয়৷ ছোট বাটিতে প্রথমে মাখানো চালের গুঁড়ার সাথে নারকেলের গুঁড়া ও খেজুর গুড় বাটিতে রাখা হয়৷ এরপর বাটির মুখ পাতলা কাপড় দিয়ে মুড়ে ফুটন্ত হাঁড়ির ছিদ্রতে বসিয়ে এ পিঠাটি তৈরি করা হয়৷ তবে গুড় ও নারিকেলের পরিবর্তে কেউ কেউ চালের গুঁড়ার সাথে শুধু ধনে পাতা মিশিয়েও এটি তৈরি করে থাকেন৷
ছবি: Amena Anar
মালপোয়া
মালাই ও চালের গুঁড়া মিশিয়ে তৈরি করা হয় এই পিঠা৷ তবে সাধারণ পোয়া পিঠার মতো ফুলকো থাকে না৷ ভীষণ নরম ও খেতে সুস্বাদু হয় পিঠাটি৷
ছবি: Farukh Ahmed
ঝাল পাক্কন
স্বাদে ঝাল বলে একে বলা হয় ঝাল পাক্কন পিঠা৷ চালের গুঁড়ার সাথে, ডিম, কাঁচা মরিচ, ধনে পাতা, পিয়াজ ইত্যাদি মিশিয়ে কাই তৈরি করা হয়৷ তারপর পছন্দ অনুযায়ী কেটে তেলে ভেজে এ পিঠাটি তৈরি করা হয়৷
ছবি: Farukh Ahmed
লবঙ্গলতিকা
লবঙ্গ দিয়ে এ পিঠাটির উপর গাঁথুনি দেয়া হয় বলে একে বলা হয় লবঙ্গলতিকা পিঠা৷ মিষ্টি স্বাদের এ পিঠাটির ভেতরে থাকে নারকেলেন পুর৷ চিনির শিরায় ডুবিয়ে পিঠাটির উপরে দেয়া হয় চিনির প্রলেপ৷
ছবি: Farukh Ahmed
খোলা জালি
চালের গুঁড়ার সাথে ডিম আর প্রয়োজন মতো লবন মিশিয়ে মাটির খোলায় এ পিঠা তৈরি করা হয় বলে এর নাম খোলা জালি পিঠা৷ কুমিল্লা, ব্রাক্ষণবাড়িয়া ও বিক্রমপুর এলাকায় পিঠাটির প্রচলন বেশি৷
ছবি: Amena Anar
চন্দ্রপুলি
এ পিঠাটি বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই জনপ্রিয়৷ নারকেলের গুঁড়া, দুধ, সুজি, এলাচের গুঁড়া ও বাদাম ইত্যাদি মিশিয়ে তৈরি করা হয় এ পিঠাটি৷
ছবি: Farukh Ahmed
চিতই
মূলত শীত কালে এ পিঠাটি বেশ জনপ্রিয়৷ বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে এ পিঠার জনপ্রিয়তা রয়েছে৷ চালের গুঁড়া দিয়ে পাতলা ‘কাই’ বানিয়ে খোলায় সেঁকে এ পিঠাটি তৈরি করা হয়৷বিভিন্ন রকমের ভর্তা দিয়ে শীতকালে এ পিঠা খাওয়া হয়৷
ছবি: Amena Anar
দুধ পুলি/দুধ চিতই
দধে চুবিয়ে তৈরি করা হয় বলে এর নাম দুধ পুলি পিঠা৷ চালের গুঁড়ার কাই দিয়ে ছোট ছোট রুটি বানানো হয়৷ তারপর নারকেলের পুর দিয়ে রুটিকে এঁটে দিয়ে জাল দিয়ে রাখা দুধে মিশিয়ে সামান্য আগুনের আঁচে প্রয়োজনমতো জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হয় সুস্বাদু এ পিঠাটি৷ একই পদ্ধতিতে বানানো হয় দুধ চিতইও৷
ছবি: Nowrin Akther
চাপড়ি/চাপটি
বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলের ভীষণ পরিচিত পিঠা চাপড়ি বা চাপটি৷ চালের গুঁড়ার সঙ্গে ঝাল মশলা মিশিয়েই গোলা তৈরি করে তাওয়ায় পাতলা করে ভাজা হয় এই পিঠা৷ মাংস বা সবজি তরকারি দিয়ে এই চাপটি খাওয়া হয়৷ কোথাও কোথাও চাপড়ি বানানোর সময়েই মাংস তরকারি বা সবজি মিশিয়ে বানানো হয়৷
ছবি: Nowrin Akther
বাহারি চিতই
শুধু চালের গুঁড়া আর লবণ দিয়েই চিতই বানানো হয়৷ এরপর সেই চিতই দুধে ভিজিয়ে কিংবা তরকারি দিয়ে খাওয়া হয়৷ তবে অনেক স্থানেই চিতই গোলানোর সময় ইচ্ছামতো মাংস, সবজি ও ডিম দেওয়ার রেওয়াজ আছে৷ এটি বাহারি চিতই নামে পরিচিত৷
ছবি: Amena Anar
বিবিখানা
দেখতে কেকের মতো এ পিঠাটি চালের গুঁড়া, লবণ, ঘন দুধ, ঘি ও নারকেলের গুঁড়া দিয়ে তৈরি৷ বিক্রমপুরে এ পিঠাটির প্রচলন বেশি৷
ছবি: Nowrin Akther
17 ছবি1 | 17
বাংলাদেশের বিস্তীর্ন জনপদে ঠিক কত পদের পিঠা প্রস্তুত হয় তার সঠিক কোনো হিসাব নেই৷ পুরো বাংলাদেশে জনপ্রিয় কিছু পিঠার কথা আমরা বলতে পারি৷ এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, তেলের পিঠা, পুলি পিঠা, ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, দুধ পিঠা, রসের পিঠা, নকশি পিঠা ইত্যাদি৷ সব ধরনের পিঠার মূল উপাদান নতুন ধানের আতপ চালের গুঁড়ো৷ এর সাথে বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরিতে বিভিন্ন উপকরণ যোগ করা হয়৷ লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, বাংলাদেশে তৈরি পিঠা রন্ধনপ্রণালীগতভাবে দুই প্রকার— ভাজা এবং ভাপা৷ এই ভাজা এবং ভাপা দু'ধরনের পিঠাকে কখনো দুধে চুবিয়ে দুধ পিঠা আবার কখনো চিনি অথবা গুড়ের শিরায় বা খেজুরের রসে ভিজিয়ে রসের পিঠা তৈরি করা হয়৷ নকশি পিঠা আদতে নকশা করা ভাজা পিঠা৷ এটিকে দুধ, খেজুরের রস, চিনি বা গুড়ের শিরায় ভিজিয়ে অথবা না ভিজিয়েও খাওয়া যায়৷
পিঠার আলোচনায় ‘পুলি পিঠা' বেশ গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ, পুলি পিঠা হচ্ছে একমাত্র পিঠা, যাতে পুর দেওয়া হয় বিভিন্ন উপাদানের৷ পুলি শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘পোলিকা' থেকে৷ প্রাচীন মতে, পোলিকা হলো ভারী রুটি৷ এদিকে হরিচরণ বন্দোপাধ্যায় বঙ্গীয় শব্দকোষ বইয়ে জানাচ্ছেন, পুলি/পুলী হচ্ছে নারকেলের পুর দেওয়া খাদ্যবিশেষ৷
পুলি পিঠার প্রধান পুর হচ্ছে নারকেল৷ তবে অঞ্চল ভেদে নারকেলের সাথে তিল, আখ বা খেজুরের গুড়, আদা, ক্ষীর ইত্যাদির পুর দেওয়ার প্রচলন রয়েছে৷ পুলি পিঠা তেলে ভেজেও খাওয়া হয়৷ আবার ভাপিয়ে দুধে ভিজিয়েও খাওয়া হয়৷ এছাড়া পুলি পিঠা হাতে নকশা করে অথবা ছাঁচেও নকশা করে তৈরি করা হয়৷
আমরা ‘পিঠাপুলি' শব্দবন্ধটি ব্যবহার করি মূলত পুর ছাড়া এবং পুর দেওয়া পিঠাকে একসাথে বোঝাতে৷ ‘পিঠাপুলির আয়োজন' বলতে আমরা বুঝি, এই আয়োজনে যেমন চিতই পিঠা, তেলের পিঠা, নকশি পিঠা, দুধে বা রসে ভেজানো পিঠা থাকবে, তেমনি নারকেল বা অন্যান্য জিনিসপত্রের পুর দেওয়া ভাজা বা ভাপা পুলিও থাকবে৷ জানিয়ে রাখি, মূলত পাটিসাপটা পিঠাও উৎসগতভাবে পুলিপিঠার অন্তর্গত৷ এটাও জানিয়ে রাখি, একমাত্র ভাপা পিঠা বা ধুকি/ ধুপি পিঠা ছাড়া যে-কোনো ধরনের ভাজা বা ভাপা পিঠাকে দুধে বা রসে ভেজানো যায়৷
আদিতে পিঠা মিষ্টি খাবার হিসেবেই খাওয়া হতো৷ এখনো বাংলাদেশের বেশিরভাগ পিঠা মিষ্টি জাতীয় এবং গুড়সহযোগে খাওয়া হলেও কখনো কখনো ঝাল পিঠা খাওয়ারও প্রচলন রয়েছে৷ যেমন— চিতই পিঠা সরিষা বাটা কিংবা মরিচের ভর্তা বা শুটকির ঝাল ঝাল ভর্তা দিয়েও খাওয়া হয়৷ আবার ছিটা পিঠার আটায় মরিচ বাটা মিশিয়ে ঝাল করে ভাজা হয়৷ ছিটা পিঠা আবার হাঁসের মাংস দিয়েও খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে৷ তবে চিতই পিঠা খাবার আদি পদ্ধতি হলো ঝোলাগুড় সহযোগে খাওয়া৷ বেশিরভাগ পিঠা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খাওয়া হলেও কিছু পিঠা আছে আঞ্চলিক, যেগুলো নির্দিষ্ট অঞ্চলের বাইরে তেমন একটা খাওয়া হয় না৷ যেমন— সিলেটের চুঙ্গি পিঠা, বিক্রমপুরের বিবিখানা পিঠা ইত্যাদি৷
মিষ্টি মণ্ডার চাইতে সম্ভবত প্রাচীন বাংলায় মিষ্টান্ন হিসেবে পিঠার জনপ্রিয়তা ছিল বেশি৷ চৈতন্যচরিতামৃতে দেখা যায়, ‘পঞ্চাশ ব্যাঞ্জনে'র সাথে তৈরি হচ্ছে ‘ক্ষীর পুলি নারিকেল পুলি আর পিষ্ট'৷ বাঙালি এক আধখানা পিঠা খায় না, খায় থালা ভরে৷ কাজল রেখা আখ্যানে এই থালা ভরে পিঠা খাবার নমুনা দেখা যায়— ‘চই চপরি পোয়া সুরস রসাল৷/ তা দিয়া সাজাইল কন্যা সুবর্ণের থাল৷' প্রাচীন বাংলার মতো এখনো বাঙালি থালা ভরে, গণ্ডা (৪ টায় এক গণ্ডা) গুনে পিঠা খায়৷ মিষ্টান্ন তো আর একা খাবার জিনিস নয়৷ তাই বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ে দেখা যায়, বছরের প্রথম দিনে বানানো প্রথম পিঠা ঘরের চালের উপর দিয়ে ছুঁড়ে দেওয়া হয় যাতে ‘শেয়াল-কুকুরে' তা খেতে পারে৷ কোনো কোনো অঞ্চলের মুসলিম সম্প্রদায়েও এই প্রথা দেখা যায়৷
প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে নারীরাই বয়ে নিয়ে চলেছে পিঠা তৈরির পরম্পরাগত বিদ্যা৷ রন্ধনশিল্পে বিভিন্ন অংশে পুরুষের প্রবেশাধিকার থাকলেও পিঠা তৈরির ক্ষেত্রটি তাই নারীদের অধিকারেই থেকে গেছে সুদীর্ঘকাল ধরে৷ ঐতিহ্যের সাথে স্বাদের সমান বিন্যাসের গুপ্তবিদ্যাটি সেকারণে এখনো মেলে গৃহিণীদের অভিধানেই৷
বাংলাদেশে পিঠার ঐহিত্য সুপ্রাচীন৷ ঘরে বানানো সেই পিঠা এখন নগরের দোকানেও পাওয়া যায়৷ আর শীতকালে তো ঢাকার পথে পথে বসে পিঠার দোকান৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: DW/H. Ur Rashid
পথের পিঠা
শীতের বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ঢাকার অলিতে গলিতে পড়ে যায় পিঠা বিক্রির ধুম৷ রাস্তার পাশেই চুলা পেতে তৈরি হয় পিঠা৷ এসব দোকানে ক্রেতাও অনেক৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
চিতই আর ভাপা
পথের পিঠায় চিতই আর ভাপা পিঠারই প্রাধান্য৷ দামও কম৷ গরম ধোঁয়া ওঠা পিঠার এই আয়োজন নগরে শীতের আমেজ এনে দেয়৷ চিতই পিঠার সাথে থাকে নানা ধরনের ভর্তা৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
ভর্তা ফ্রি
রাজধানীতে চিতই পিঠার সাথে নানা ধরনের ভর্তা খাওয়ার রেওয়াজ আছে৷ এই ভর্তার মধ্যে শুটকি, ধনেপাতা, সরিষা বাটাই প্রধান৷ সব দোকানেই পিঠা খেলে ভর্তা বিনা মূল্যে পাওয়া যায়৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
ভর্তাই যখন পিঠার আকর্ষণ
শুক্রাবাদে এরশাদের চিতই পিঠার দোকানে যেন ভর্তাই প্রধান আকর্ষণ৷ এরশাদের মতে, ভর্তার কারণেই তাঁর গ্রাহক বেশি৷ ৫ টাকার চিতই পিঠার সাথে তিনি দেন ১২ রকমের ভর্তা৷ শুধু শুটকি ভর্তাই আছে ৫ প্রকারের৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
এক সাথে ১৬ চুলায় পিঠা
মোহাম্মদপুর হাউজিংয়ে দেখা গেল ১৫-১৬টি চুলায় একই সঙ্গে চিতই পিঠা ভাজার দৃশ্য৷ আছে ভাপা পিঠাও৷ দু’জন নারী এখানে পিঠার ব্যবসা করেন৷ সন্ধ্যা থেকেই পিঠার জন্য ভীড় করেন নগরবাসী৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
অভিনব ডিম চিতই
তাঁদের কেউ শিখিয়ে দেয়নি, স্বাদের ভিন্নতা আনতেই তাঁরা ডিম চিতই ‘আবিস্কার’ করেন৷ ভাজার সময় চালের গোলার সঙ্গে একটি ডিম ভেঙে দেন– হয়ে গেল ডিম চিতই৷ ডিম চিতইয়ের চাহিদাও বেশ৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
সাধারণ উপকরণ
চালের গুঁড়া, গুড়, লবন আর নারকেল– এই হলো চিতই আর ভাপা পিঠার উপকরণ৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
সংসার চালায় পিঠা
বিলকিস বেগমের বাড়ি শরিতপুর৷ ঢাকায় আসেন ১০ বছর আগে৷ মোহাম্মদপুরে এই পিঠা বিক্রি করেন ৫ বছর ধরে৷ ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি – এই তিন মাস তিনি পিঠা বিক্রি করেন৷ স্বামীসহ পরিবারের সদস্য ৬ জন৷ তিনি জানান, পিঠা বিক্রির এই তিন মাসের আয়ে তাঁর প্রায় সারা বছর চলে যায়৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
চুলার বিশেষত্ব!
আরেক পিঠা বিক্রেতা রোজিনা বেগমের দাবি, তাঁদের এই চুলা একটু বিশেষ ধরনের৷ এঁটেল মাটি দিয়ে নীচে স্টিলের প্লেট দিয়ে এই চুলা তাঁরা নিজেরাই তৈরি করেন৷ চুলায় কাঠের আগুনে চিতই আর ভাপা’র স্বাদ নাকি বেড়ে যায়৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
যখন খুশি তখন খাই
সড়কের পাশে এই পিঠার এত চাহিদা কেন? বাসায়ও তো তৈরি করে খেতে পারেন৷ নির্ঝর আর জামান জানান বললেন, বাসায় তো আর প্রতিদিন আয়োজন করা যায় না৷ আর ঝক্কিও অনেক৷ তাই এখানে এসে যখন মন চায় তখনই পিঠা খাই৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
ঢাকায় প্রথম রেস্টুরেন্ট কাম পিঠাঘর
বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে খাবার-দাবার পিঠাঘর সম্ভবত রাজধানীতে প্রথম রেস্টুরেন্টে পিঠা বিক্রি শুরু করে৷ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ফরিদুর রেজা সাগর তাঁর মা, কথা সাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের উৎসাহে রেস্টুরেন্টে পিঠার ব্যবসা শুরু করেন৷ পিঠা ছাড়াও হাঁসের মাংশ, খিচুড়িসহ নানা ব্যতিক্রমী খাবার পাওয়া যায় এখানে৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
কত রকমের পিঠা
খাবার দাবার পিঠাঘরে ১২ রকমের পিঠা তৈরি হয়৷ দোকানের ম্যানেজার রবিউল আলম জানান, ভাপা, পাটিসাপটা, পোয়া, পুলি, চিতই তাঁরা তৈরি করেন৷ শীত কালে চাহিদা বেশি, তবে সারাবছরই তাঁরা পিঠা বিক্রি করেন৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
নিজস্ব ডিজাইন
আজকাল পিঠা তৈরির নানা ধরনের সাজ পাওয় যায়৷ কিন্তু খাবার দাবার পিঠাঘরের সব পিঠাই হাতে ডিজাইন করা হয়৷ কোনো সাজ ব্যবহার করা হয় না৷ এখানে যে-কেনো ধরনের পিঠার হয় ২৫ টাকা৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
শুধুই পিঠার দোকান
বেইলি পিঠাঘরের অবস্থান বেইলিরোড নাটক সরণীতে৷ আর এখানে তারা পিঠার ব্যবসা করেন ২৫ বছর ধরে৷ তাদের রয়েছে ৪০ ধরনের পিঠা৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
বাহারি নামের পিঠা
বেইলি পিঠাঘরে আছে বাহারি সব নামের পিঠা৷ স্বাদেও আছে ভিন্নতা৷ দেশে প্রচলিত পিঠার সাথে তাঁরা যুক্ত করেছেন বিবি খানা, শাহী রস পাকন, ক্ষীর লুচি, লবঙ্গ লতিকা, শাহী জবা, রস ফুল, সুন্দরী পাকনসহ আরো নানা নামের ও স্বাদের পিঠা৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
পিঠা যায় বিদেশে
বেইলি পিঠাঘরের পিঠা ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়৷ দোকান কর্তৃপক্ষ জানায়, এই পিঠার চাহিদা আছে সারা দেশে৷ বঙ্গভবন, গণভবন আর সচিবালয়ে তাঁরা নিয়মিত পিঠা দেন৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
বিদেশিদের নজর কেড়েছে
ঢাকার বিভিন্ন দূতাবাসে যেসব বিদেশি কাজ করেন, তাঁদের আকর্ষণ করতে পেরেছে বেইলি পিঠাঘরের পিঠা৷ এখানে নাকি ভারতের অন্তত ২ জন প্রধানমন্ত্রী পিঠা খেয়েছেন৷ যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজেনা নাকি এই দোকানের নিয়মিত গ্রাহক ছিলেন৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
দামি পিঠা
এখানকার সবচেয়ে দামি পিঠার নাম শাহী মালাই৷ পউরুটি আর দুধের ক্ষীর দিয়ে তৈরি হয় এই পিঠা৷ তাদের দাব, এই পিঠা তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ড৷ প্রতি পিসের দাম ৫০ টাকা৷ আর অন্য পিঠার দাম ২০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
যে চার ধরনের পিঠার চাহিদা সবচেয়ে বেশি
ঢাকায় চার ধরনের পিঠার চাহিদা সবচেয়ে বেশি৷ এগুলো হলো ভাপা, চিতই, পাটিসাপটা এবং পোয়া৷ এই পিঠাগুলো সুস্বাদু এবং এগুলো সংরক্ষণ করাও সহজ৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
পিঠার কারিগর
বাংলাদেশে পিঠা তৈরি প্রশিক্ষণ দেয়ার কোনো প্রতিষ্ঠান নেই৷ সবাই দেখতে দেখতেই শেখেন৷ এটা নিয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে কেউ কেউ পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করেন৷ তাঁদেরই একজন বেইলি পিঠাঘরের মোহাম্মদ বাসান৷ তিনি ১৫ বছর ধরে এখানে পিঠা তৈরি করছেন৷ তাঁর সঙ্গে কাজ করেন আরো ১২ জন৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
ফাস্টফুড ও মিষ্টির দোকানেও পিঠা
এখন ফাস্টফুড আর মিষ্টির দোকানে ১২ মাসই পাটিসাপটা পিঠা পাওয়া যায়৷ তবে শীতকালে অভিজাত কিছু দোকানে আয়োজন করে পিঠা বিক্রি হয়৷ চিতই, ভাপা ছাড়াও পুলি, পাক্কন পাওয়া যায় সেখানে৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
সবই কি স্বাস্থ্যসম্মত?
সড়কের পাশের অথবা অভিজাত দোকানের পিঠা বিক্রেতা- সবারই দাবি তাঁর দোকানের পিঠা স্বাস্থ্যসম্মত৷ কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি সব ক্ষেত্রে তা বলে না৷ পিঠার মান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও নেই বিআইএটিএ’র৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
পিঠার সাজ
পিঠা তৈরির জন্য নানা ধরনের সাজের প্রয়োজন হয়৷ ঢাকার বিভিন্ন মার্কেট ও কাঁচাবাজারে ভাপা ও চিতই পিঠার মাটির সাজ পাওয়া যায়৷ দাম ৪০ থেকে ৮০ টাকা৷ নকশি পিঠার প্লাস্টিকের সাজও পাওয় যায় বাজারে৷ এসব সাজ দিয়ে ঘরে বসেই বানাতে পারেন পিঠা৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
আতপ চালের রকমভেদ
পিঠার প্রধান উপাদান আতপ চাল৷ যে চাল সিদ্ধ না করে সরাসরি শুকানো হয়, তা-ই আতপ চাল৷ এর দাম কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ১২০ টাকা৷ চিতই আর ভাপা তৈরি হয় সাধারণ আতপ চালে৷ আর নকশি পিঠা চিনিগুঁড়া চালে৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
যে গুড়ে পিঠা হয়
চাল ছাড়াও পিঠার অন্যতম উপাদান হলো গুড়, চিনি ও দুধ৷ এই গুড় কিনতে হবে বুঝেশুনে৷ ঢাকার কৃষি মার্কেটসহ আরো কয়েকটি মার্কেটে যশোর এবং রাজশাহীর ভালো মানের খেজুরের গুড় পাওয়া যায়৷ দাম প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
পিঠার নারকেল
পিঠার স্বাদ বাড়ায় নারকেল৷ বিশেষ করে জনপ্রিয় ভাপা পিঠা তো নারকেল ছাড়া হবেই না৷ বরিশাল, খুলনার ভালো নারকেল পাবেন কারওয়ান বাজার ও কৃষি মার্কেটে৷ তবে এই নারকেল ফাটানো ও কোরানো এক ঝক্কির বিষয়৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
অনলাইনে পিঠা
এখন ঢাকায় অনলাইনে অর্ডার করেও পিঠা পেতে পারেন৷ এরকম প্রচুর অনলাইন শপ গড়ে উঠেছে৷ সাধারণভাবে দুধ চিতই আর চুই পিঠা দোকানে পাওয় যায় না৷ তবে অনলাইনে পাওয়া যায়৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
পিঠা উৎসব
ঢাকা ও ঢাকার বাইরে শীতে আয়োজন করা হয় পিঠা উৎসব আর পিঠা মেলার৷ কোনোটি বড় আবার কোনোটি ঘরোয়া পরিবেশে৷ শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গনে জাতীয় পিঠা উৎসব পিঠার সবচেয়ে বড় আয়োজন৷ শুরু হয় ২০ জানুয়ারি৷ এরইমধ্যে ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি আয়েজন করেছিল পিঠা উৎসবের৷
ছবি: DW/H. Ur Rashid
রাস্তার পাশে পিঠা বিক্রি করে ঢাকায় তিন তলা বাড়ি
হানিফ হাওলাদার ভাগ্যের টানে ঢাকায় আসেন ১২ বছর বয়সে৷ এখন বয়স প্রায় ৫০৷ তিনি চার সন্তানের জনক৷ ৩৫ বছর ধরে ঢাকার জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডে চিতই পিঠা বিক্রি করছেন৷ আর এই পিঠা বিক্রির টাকায় সংসার চালিয়ে, সন্তানদের পড়াশোনা করিয়ে ঢাকার কামরাঙ্গির চরে করেছেন তিন তলা পাকা বাড়ি৷ তার চিতই পিঠার সুখ্যাতি পুরো এলাকা জুড়ে৷ প্রতিদিন গড়ে আয় করেন ৩ হাজার টাকা৷