ইরানে ‘পারিবারিক সম্মান' রক্ষার জন্য সম্প্রতি ১৪ বছরের এক কিশোরীকে হত্যা করেন তার বাবা৷ এই হত্যা আবারো দেশটিতে নারীর প্রতি বৈষম্য ও মান্ধাতার আমলের আইনি কাঠামো নিয়ে বিতর্ক উস্কে দিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
গেল মা মাসের শেষ দিকের ঘটনা৷ ৩৭ বছর বয়সী রেজা আশরাফি নামের ঐ পিতা তার ১৪ বছরের কন্যা রোমিনার মাথা কেটে আলাদা করে দেন৷ কারণ তার মেয়ে ২৯ বছর বয়সী এক যুবকের সঙ্গে গোপনে পালিয়ে যান৷ পাঁচ বছর ধরে ঐ যুবকের সঙ্গে প্রেম চলছে তার৷ পিতা সম্মতি দিলেই তারা বিয়ে করতে পারতেন৷ কারণ ইরানে ১৩ বছর বয়স হলেই মেয়েরা বিয়ে করতে পারেন৷
কিন্তু আশরাফি তা মেনে নেননি৷ তিনি পুলিশে খবর দিলে পাঁচ দিন পর রোমিনা ও ঐ যুবককে খুঁজে বের করে তারা৷ আশরাফি মেয়েকে আত্মহত্যা করতে বলেন৷ কিন্তু তিনি তা না করলে মেয়েকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেন তিনি৷ রোমিনার মা তাকে বাঁচানোর কোন চেষ্টা করেননি৷ মৃত্যুর পর একটি শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় বটে, কিন্তু আত্মীয় স্বজনরা তা করেন ঐ ‘পিতার সম্মানে'৷
নারীরা এগিয়েছেন, তবে এখনো অনেক পেছনে
‘‘ইরানের সমাজের একেবারে রন্ধ্রে রন্ধ্রে পুরুষতান্ত্রিকতা রয়েছে,'' ডয়চে ভেলেকে বলেন লেখক ও নারী অধিকার কর্মী আসিয়েহ আমিনি৷ ‘‘যতই তারা শিক্ষিত হন কিংবা যতই সুশীল সমাজে তাদের অবস্থান তৈরি হোক না কেন৷''
আমিনি ২০০৯-এর অস্থিতিশীল সময়ে ইরান থেকে পালিয়ে যান৷ এখন তিনি নরওয়েতে থাকেন৷ ‘‘ইরানের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে শুধু ঐতিহ্যই নয়, আইনও পুরুষদের পক্ষে,'' বলেন তিনি৷
বাইরের পৃথিবীর কাছে ইরানে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য অনেক দেশের চেয়ে মেয়েরা এগিয়েছে৷ সৌদি আরবকে যেখানে মাত্রই নারীরা গাড়ি চালানোর অনুমতি পেয়েছেন কিংবা ২০১৫ সালে ভোট দেবার অধিকার পেয়েছেন, সেখানে ইরানে ১৯৪০ সাল থেকে নারীরা গাড়ি চালানোর অনুমতি পেয়েছেন এবং ভোটাধিকার পেয়েছেন ১৯৬৩ সালে৷
ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অর্ধেক ডিগ্রি নারীদের দখলে৷ অসুখী দাম্পত্য জীবন থেকে মুক্তি পেতে নারীরা এখন আগের চেয়ে বেশি ডিভোর্স দিতে পারছেন৷
পুরুষের সমান নন
কিন্তু ইরান ও সৌদি আরবে একটি বিষয়ে মিল আছে, সেখানে পুরুষদের সমান অধিকার নারীদের দেয়া হয়নি৷ সেখানে শরিয়া বা ইসলামিক আইন মানা হয়৷ সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো বাবা বা স্বামী নেন, এমনকি তাদের মৃত্যুর পরও৷ যেমন, কোন নারী যদি কোন অপরাধের শিকার হন বা হত্যার শিকার হন, তাহলে অপরাধীকে শাস্তি দেয়া হবে, না ক্ষমা করে দেয়া হবে সে সিদ্ধান্তও পিতা বা স্বামী নিতে পারেন৷ সে হিসেবে রোমিনার ঘটনায় যিনি হত্যাকারী, অর্থাৎ তার পিতা, তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন নিজেকে ক্ষমা করবেন না শাস্তি দেবেন৷
আশরাফি একাই শুধু নন যিনি ইরানের আইনি বিধানের সুবিধা নিতে যাচ্ছেন৷ ইরানের পুলিশ একাডেমির তথ্য অনুযায়ী, দেশটির পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলে যত হত্যা হয় তার ৪৫ ভাগই পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে হত্যা৷
মোটরক্রসে ইরানের বারান হাদিজাদেহ
ইরানে এখনো নারীদের রাস্তায় মোটরবাইক চালানোর অনুমতি নেই৷ তাই বলে পুরুষদের রেস দেখায় নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি বারান হাদিজাদেহ৷ নেমে পড়েছেন মোটরক্রস রেসে৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/West Asia News Agency/N. Tabatabaee
দীর্ঘ প্রস্তুতি
ইরানে মেয়েদের অনেক অধিকারই এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি৷ অনেক ক্ষেত্রে তাই নারী পুরুষদের চেয়ে পিছিয়ে৷ ইরানের দক্ষিণের শহর ইসফাহানের মেয়ে বারান হাদিজাদেহ সীমিত সুযোগের মধ্যেই এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন৷ তাই শৈশব থেকেই কখনো ভলিবল, কখনো বাস্কেটবল, কখনো বা সাঁতার বা কারাতে নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন৷ মোটরক্রস রেসে তার সুফল পাচ্ছেন এখন৷
ছবি: Reuters/West Asia News Agency/N. Tabatabaee
এক সময়ের দর্শক
খুব শখ ছিল মোটর সাইকেল চালানোর৷ কিন্তু ইরানের মেয়েদের সেই অধিকার নেই৷ কী করা যায়? প্রথমে শুরু করলেন পুরুষদের রেস দেখা৷ অনেক দেখেছেন, দেখে দেখে শিখেছেনও অনেক৷
ছবি: Reuters/West Asia News Agency/N. Tabatabaee
কেন মোটরক্রসে?
একদিকে মোটরবাইক চালানোর শখ, অন্যদিকে মেয়েদের জন্য রাস্তায় মোটর সাইকেল চালানোয় নিষেধাজ্ঞা— মাঝামাঝি পথে তো আসতেই হতো৷ সেই সুযোগই দিয়েছে মোটরক্রস রেস৷
মোটরক্রস রেস মানে লোক চলাচলের পথ থেকে দূরের কোনো মাঠ, টিলা, পাহাড়ে মোটরবাইক চালানো৷ মেয়েদের জন্যও সেখানে আইন কোনো বাধা নয়৷
ছবি: Reuters/West Asia News Agency/N. Tabatabaee
পরিচয়পত্র নেই
রাস্তায় চালানোর সুযোগ নেই বলে ইরানের মোটরসাইকেল ও অটোমোবাইল ফেডারেশন (এমএএফআইআরআই)-র পরিচয়পত্র পাননি বারান হাদিজাদেহ৷ তবে দেশে মেয়েদের মোটরক্রস রেসে অংশ নিচ্ছেন ঠিকই৷
ছবি: Reuters/West Asia News Agency/N. Tabatabaee
নিয়মিত প্র্যাকটিস
সপ্তাহে অন্তত তিনদিন তেহরান শহরের বাইরের প্রকৃতিতে ডুবে যান মোটরবাইক নিয়ে৷ ঘণ্টার পর ঘণ্টা দুর্গম পথ ধরে এগিয়ে চলে ভারী মোটরবাইক৷ এত বড় মোটরবাইক সামলানো ভীষণ কঠিন৷ শরীরের বিভিন্ন পেশি শক্তিশালী করতে তাই নিয়মিত জিমেও যেতে হয় তাঁকে৷
ছবি: Reuters/West Asia News Agency/N. Tabatabaee
ভাঙা নাক নিয়েই খুশি
দুর্গম পথে চালাতে গিয়ে অনেকসময় মোটরবাইক থেকে পড়েও যান৷ ফলে ব্যথা সইতেই হয়৷ একবার নাক ভেঙেছে, কোমরে, হাঁটুতে ব্যথা পেয়েছেন অনেক৷ তাতে দমে যাননি, বরং শরীরের নানান চোট সম্পর্কে প্রশ্ন করলে হাসিমুখে বারান বলেন, ‘‘স্বপ্ন তো সহজে পূরণ হয় না৷’’
ছবি: Reuters/West Asia News Agency/N. Tabatabaee
যে স্বপ্ন এখনো অধরা
এখন শুধু ইরানেই মোটরক্রস রেসে অংশ নিতে পারছেন বারান হাদিজাদেহ৷ ৩০ বছর বয়সি এই মোটরসাইক্লিস্টের স্বপ্ন— একদিন দেশের বাইরের প্রতিযোগিতাতেও অংশ নেবেন৷ এছাড়া মোটরাবাইক নিয়ে সারা বিশ্ব ঘুরে দেখারও ইচ্ছে আছে তার৷
ছবি: Reuters/West Asia News Agency/N. Tabatabaee
7 ছবি1 | 7
‘সম্মানই নারীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ'
‘পরম্পরাগতভাবে ইরানের সমাজে নারীর সম্মানকেই সবচেয়ে বড় সম্পদ বলে মনে করা হয়,'' বলেন ইরানের সাংবাদিক মাহরোখ গোলামহোসেইনপুর৷ ‘‘কোন পুরুষের স্ত্রী বা কন্যা সেই সম্মান হারালে তাকে প্রত্যাখ্যান, অপদস্থ ও সমাজ থেকে বহিষ্কৃত করা হয়৷''
মাহরোখ অনেক বছর ধরে ইরানের ‘অনার কিলিং' নিয়ে কাজ করছেন৷ তিনি জানান অনেক ক্ষেত্রেই বাবা বা দাদা ‘অপরাধী' নারীর একজন ভাই বা চাচাত-মামাত ভাইকে হত্যার দায়িত্ব দেন৷ হত্যার পর আদেশকারী ব্যক্তি নিজের ওপর দায়িত্ব নেন বা হত্যাকারীকে ক্ষমা করেন৷
‘‘বেশিরভাগ অনার কিলিংয়ে বাদী বা বাদীর পরিবার কোন অভিযোগ করে না৷ আর বিষয়টি খুব দ্রুত মিটিয়ে ফেলা হয়,'' বলেন মাহরোখ৷ তবে রোমিনার ঘটনাটি হত্যাকাণ্ডে পরিণত হত না যদি তারা কোন বড় শহরে থাকতেন, বলে জানান যুক্তরাষ্ট্র নিবাসী এই ইরানি সাংবাদিক৷
সংস্কারের বিরোধিতা
রোমিনার ঘটনা ইরানের সমাজকে আবারো নাড়া দিয়েছে৷ শুধু ইন্টারনেট নয়, সব পত্রপত্রিকাও বিষয়টি কাভার করেছে৷ প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি তার মন্ত্রিসভাকে এমন হত্যা বন্ধে প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছেন৷
কিন্তু প্রেসিডেন্টও জানেন, সমাজের রক্ষণশীল অংশ এর প্রতিবাদ করবে৷ তাদের যুক্তি, এমন আইনের মাধ্যমে পশ্চিমা মূল্যবোধের আগ্রসন হবে যা ইসলামী মূল্যবোধের পরিপন্থি৷
দেশটির উইমেন্স সোশ্যাল ও কালচারাল কাউন্সিল (ডাব্লিউএসসিসি)-র সদস্য কোবরা চাসালি এই যুক্তির সমর্থক৷ তিনি মনে করেন, রোমেনার হত্যার জন্য ইসলামী মূল্যবোধ ও আইনকে দায়ী করা যাবে না৷ বরং টেকসই উন্নয়নের জন্য জাতিসংঘের ২০৩০ এজেন্ডাকে দায়ী করতে হবে যেখানে নারীপুরুষের সমতার কথা বলা হয়েছে৷
ডাব্লইএসসিসি সরাসরি দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ আল খামেনির কাছে জবাবদিহি করে৷ গত ৩৫ বছর ধরে তারা যেসব কাজকে ইসলামী সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের পরিচায়ক মনে করে, ইরানের সংস্কৃতিতে সেগুলো সমুন্নত রাখার কাজ করে যাচ্ছে৷ এর মধ্যে জাতিসংঘের কয়েকটি উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রাও রয়েছে, যেমন যৌন শিক্ষা কিংবা সমাজে ছেলেমেয়ের সমতা৷
রক্ষণশীলদের মতে, মেয়েদের যত কম বয়সে সম্ভব বিয়ে দিয়ে দিলে ‘অনার কিলিং' বন্ধ হবে৷
শবনম ফন হাইন/জেডএ
২০১৬ সালের ছবিঘরটি দেখুন৷ কিছু কি বদলেছে?
অনার কিলিং: পরিবারের সম্মানের নামে হত্যা
পরিবারের সম্মান রক্ষার নামে প্রতি বছর সারা বিশ্বে কত কিশোরী, তরুণী ও মহিলাকে অংশত শারীরিক নির্যাতনের পর নির্মম নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই৷ সংখ্যাটা ৫,০০০ থেকে ২০,০০০ পর্যন্ত হতে পারে৷
ছবি: DW
প্রতিবছর কতজন অনার কিলিংয়ের শিকার?
২০০০ সাল থেকে বিক্ষিপ্তভাবে সংগৃহীত ও প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারা বিশ্বে বছরে প্রায় ৫,০০০ অনার কিলিংয়ের ঘটনা ঘটে থাকে৷ এই সংখ্যা জাতিসংঘের বিবৃতির সঙ্গেও মেলে৷ যেহেতু বহু অনার কিলিংয়ের ঘটনাকে দুর্ঘটনা বা আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়, সেহেতু বাস্তব পরিসংখ্যান এর চারগুণ হলেও আশ্চর্য হবার কিছু নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যাদের হত্যা করা হয়
পরিবারের সম্মান রক্ষার নামে যাদের হত্যা করা হয়, তাদের গড় বয়স ২৩ ও তাদের ৯৩ শতাংশই মেয়ে৷ দুই-তৃতীয়াংশ প্রাণ হারায় পরিবারের সদস্যদের হাতে৷ নিহতদের অর্ধেক হত্যাকারীর মেয়ে, নয়তো বোন; নিহতদের এক চতুর্থাংশ হত্যাকারীর স্ত্রী কিংবা বান্ধবী৷ হত্যার কারণ ষাট ভাগ ক্ষেত্রে ‘বড় বেশি পশ্চিমি’ হয়ে পড়া; বাকিদের ক্ষেত্রে পুরুষ বা পরপুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর অভিযোগ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Sarbakhshian
পাকিস্তান: ইজ্জতের নামে হত্যা
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৫ সালে পাকিস্তানে প্রায় ১,১০০ অনার কিলিংয়ের ঘটনা ঘটে৷ পাকিস্তানের গ্রামীণ সমাজে অনার কিলিংয়ের প্রতি জনসাধারণেরও সমর্থন থাকার ফলে, এই কুপ্রথা দূর করার যাবতীয় প্রচেষ্টা ব্যহত হয়েছে ও হচ্ছে৷ ইতিপূর্বে নিহতের পরিবার হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দিলে সে ছাড় পেতো; এ’বছর আইনের সে ফাঁকটি বন্ধ করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সোশ্যাল মিডিয়া স্টার কান্দিল বেলুচের হত্যা
২০১৩ সালে পাকিস্তানি আইডলের জন্য অডিশন করার পর থেকেই এই পাকিস্তানি তরুণী একজন ইন্টারনেট সেলিব্রিটি হয়ে পড়েছিলেন৷ ২০১৬ সালের ১৫ই জুলাই কান্দিলকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তাঁর নিজের ভাই ওয়াসিম আজিম৷ আজিম বোনকে খুন করার কথা স্বীকার করে বলেছে, পরিবারের ‘ইজ্জতের’ উপর ‘দুর্নাম’ আনছিলেন কান্দিল, তাই...৷
ছবি: Facebook/Qandeel Baloch via Reuters
পাথর ছুঁড়ে হত্যা
২০১৪ সালের ২৭শে মে৷ পাকিস্তানের লাহোর শহরে পুলিশ মর্গের সামনে অ্যাম্বুলেন্সে শোয়ানো ফারজানা ইকবালের মৃতদেহকে ঘিরে কাঁদছেন প্রবীণারা৷ প্রেমিককে বিয়ে করার দোষে লাহোর হাইকোর্টের সামনে পাথর ছুঁড়ে ফারজানাকে হত্যা করে তাঁর পরিবারের সদস্যরা৷
ছবি: Reuters
ভারতে অনার কিলিং
গোটা দেশে বছরে হাজার খানেক অনার কিলিং হয় বলে অনুমান করা হয়ে থাকে, যদিও বাস্তবিক সংখ্যা জানা সম্ভব নয়৷ উত্তর ভারতে, বিশেষ করে উত্তর প্রদেশ ও হরিয়ানাতেই অনার কিলিংয়ের ঘটনা ঘটে বেশি, দক্ষিণ ভারত বা মহারাষ্ট্র কিংবা গুজরাটে সে তুলনায় কম৷ অনার কিলিংয়ের খবর পাওয়া গেছে পাঞ্জাব ও বিহার থেকেও৷ পশ্চিমবঙ্গে অনার কিলিং গত একশ’ বছর ধরেই প্রায় নেই বললেই চলে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Saurabh Das
‘বাংলাদেশে অনার কিলিং মানসিকতায়’
বাংলাদেশে অনার কিলিংয়ের খবর এখনো পাওয়া যায়নি৷ তবে পরিবারের পছন্দে বিয়ে না করার কারণে হত্যার ঘটনা বেশ কিছু ঘটেছে৷ তাই জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেছেনন, ‘‘অনার কিলিংয়ের মানসিক অবস্থা এখানে (বাংলাদেশে) বিদ্যমান৷ পাকিস্তানের মতো এখানে এটা প্রকট নয়৷ তবে যা হচ্ছে তা ব্যক্তি ও পরিবারের অহংবোধ থেকে৷ এখানে সমস্যাটি হলো ধনী-গরীবের ব্যবধান নিয়ে৷''
ছবি: Meya online netwark
অন্য দেশে...
ব্রিটেনে অভিবাসীদের মধ্যে অনার কিলিং বিরল নয়৷ কুর্দি, পাকিস্তানি ও সিরীয় বাবারা নিজেদের মেয়েদের স্বহস্তে হত্যা করছেন, এমন ঘটনা বারংবার ঘটেছে৷ ২০১০ সালে এক শিখ পিতা তাঁর কন্যাকে হত্যা করেন৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষিপ্ত হলেও, অভিবাসী সম্প্রদায়গুলির মধ্যে একাধিক অনার কিলিংয়ের ঘটনা ঘটেছে৷ জার্মানি ও ইউরোপের অন্য কয়েকটি দেশেও অনার কিলিংয়ের ঘটনা ঘটেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. R. Caivano
ক্যানাডায় আফগান বাবার হাতে তিন মেয়ে খুন
ঘটনাটা আলোড়ন তুলেছিল ২০০৯ সালে৷ সে বছর ক্যানাডার অন্টারিও প্রদেশের কিংস্টন শহরের খালে একটি গাড়ি ডুবন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়৷ গাড়িতে ছিল ১৯, ১৭ ও ১৩ বছর বয়সের তিনটি মেয়ে ও তাদের মায়ের লাশ৷ ২০১২ সালের ছবিতে (ওপরে) মেয়ে তিনটির বাবা মোহম্মদ শাফিয়া, তাঁর স্ত্রী তুবা মোহম্মদ ইয়াহিয়া ও পুত্র হামেদকে কিংস্টন আদালতে পৌঁছতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters
বার্লিনে হাতুন সুরুচু হত্যাকাণ্ড
হাতুন সুরুচু ছিলেন তুরস্কের আনাতোলিয়া থেকে জার্মানিতে আসা এক কুর্দ দম্পতির সন্তান৷ বার্লিনের তুর্কি-অধ্যুষিত ক্রয়েৎসব্যার্গ অঞ্চলে মানুষ হয়েছেন৷ ১৬ বছর বয়সে তাঁকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয় তুরস্কে৷ জার্মানিতে ফিরে হাতুন পুত্রসন্তানের জন্ম দেন ও স্বাধীন জীবন যাপন শুরু করেন৷ একটি কলহের পর হাতুনকে বার্লিনের এক বাস স্টপে মাথায় তিনবার গুলি করে মারেন তাঁর ভাই আইহান সুরুচু৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে সেই বাস স্টপ৷