মিসরের গিজা পিরামিডে নগ্ন ফটোশুটের এক বছরের মাথায় ভাইরাল হলো পিরামিডে নগ্ন হয়ে করা ভিডিও৷ এই ভিডিশুটে অংশ নিয়েছেন ড্যানিশ ফটোগ্রাফার আন্দ্রেয়া হভিড ও তাঁর এক নারী সঙ্গী৷
বিজ্ঞাপন
এত কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে কী করে এই ভিডিশুট সম্ভব হলো তা নিয়েই চলছে জোর হট্টগোল৷ তবে মিসরীয় প্রশাসন এই ভিডিওকে বাস্তব কিনা সেটি খতিয়ে দেখতে তদন্ত করছে৷ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, কায়রো শহরকে ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে রেখে গিজা শহরের ওই পিরামিডে যে ভিডিওশুট করা হয়েছে, তা নিয়ে তদন্ত চলছে৷
ভিডিওতে দেখা যায়, ফটোগ্রাফার হভিড ও তাঁর সঙ্গী ওই নারী পিরামিড বেয়ে উঠছেন৷ কুফু পিরামিডে উঠে গায়ের পোশাক খুলে ফেলেন৷
ড্যানিশ ট্যাবলয়েড এক্সট্রা ব্ল্যডেটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফটোগ্রাফার আন্দ্রেয়া হভিড বলেন, ‘‘আমার বহুদিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে এই শুটের মাধ্যমে৷ আমি সবসময় স্বপ্ন দেখে এসেছি পিরামিড বেয়ে ওঠার৷ সেটি সত্য হলো৷'' এই ভিডিও প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘‘কয়েকজন মিসরীয় এতে বিব্রত হলেও আমি প্রচুর প্রশংসাও পেয়েছি৷'' তবে ভিডিও প্রকাশের আগেই হভিড মিসর ছেড়েছেন আর কখনো সেখানে যাবার ইচ্ছা নেই তাঁর৷
গিজার প্রশাসন প্রধান আশরাফ মহী দৈনিক আল আহরামকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, ‘‘শোনা যাচ্ছে নিরাপত্তারক্ষীকে ঘুষ দিয়ে এই আয়োজন করেছে হভিড৷ নতুবা ১৮ কিলোমিটারের নিরাপত্তা বেষ্টনির ভেতরে এ ধরনের কাজ করা সম্ভবপর নয়৷''
নগ্ন মানুষের ছবি
২০০ নগ্ন মানুষের ছবি তুলেছেন রোমানিয়ার ফটোগ্রাফার তিবেরিউ কাপুদিয়ান৷ সব সাদা-কালো ছবি৷ সেখান থেকে কয়েকটি ছবি ও ছবির মানুষের গল্প থাকছে এই ছবিঘরে৷ ছবিগুলো দেখে বলুন তো, এই নগ্নতাকে ভয়ংকর খারাপ কিছু মনে হয় কিনা?
ছবি: Tiberiu Capudean
ওয়াই, দর্জি, ফ্রান্স
আমার বাবার জন্ম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়৷ তাঁকে আমার যৌনপরিচয় নিয়ে কখনো কিছু বলিনি৷ মাকেও কিছু বলিনি৷ আমি ডাক্তারি পড়েছি৷ গ্র্যাজুয়েশনের পর এক পুরুষের প্রেমে পড়ি৷ আমার পরিবার মনে করেছিল সে শুধু আমার সেরা বন্ধু৷ দুর্ভাগ্যজনকভাবে ১৬ বছর পর ও মারা যায়৷ এখন আমি দর্জির কাজ করি৷ ভাবতে ভালো লাগে, ফ্রান্সে এখন একটা পুরুষ আরেকটি পুরুষকে বিয়ে করতে পারে৷ তবে আমার মনে হয় এটা অনেক আগে থেকেই শুরু হতে পারতো৷
ছবি: Tiberiu Capudean
জে, দোকানের কর্মী, স্পেন
স্পেনের গ্রামাঞ্চলে বড় হয়েছি আমি৷ স্কুলে সবসময় আমাকে দুয়ো দেয়া হতো৷ বয়স যখন ১৩, একদিন স্কুলের বেঞ্চে বসে পড়ছি৷ বড় একটা ছেলে এসে বলল, ‘তুমি নোংরা’৷ তারপর সে বোতলের সব চকোলেট মিল্ক আমার গায়ে ঢেলে দিলো৷ ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলাম৷ সারা শরীর ভিজে গিয়েছিল৷ অথচ আশপাশ থেকে সবাই এমনভাবে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিল যেন আমি অদ্ভুত কোনো জীব৷
ছবি: Tiberiu Capudean
এস, আইটি প্রোজেক্ট ম্যানেজার এবং মাসাজ থেরাপিস্ট, জার্মানি
প্রথমে বাবার যে প্রতিক্রিয়া হয়েছিল, সেটা সামাল দেয়া বেশ কঠিন ছিল৷ উনি স্পষ্ট করে জানিয়েছিলেন, ছেলে হিসেবে বাড়িতে সব সময় আমি স্বাগত৷ কিন্তু আমার বয়ফ্রেন্ডকে কখনোই বাড়িতে ঢুকতে দেয়া হবে না৷ আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল৷ অনেক কেঁদেছিলাম৷ তারপর আট বছর তার সঙ্গে আর যোগাযোগ রাখিনি৷ এখন তার স্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই, কেননা তার কারণে শুধু সেই বয়ফ্রেন্ডই নয়, আমার সব বয়ফ্রেন্ডই দেখা করতে আসতে পারে৷
ছবি: Tiberiu Capudean
এ, ফ্যাশন ডিজাইনার, স্পেন
আমি এমন এক পরিবেশে আছি যেখানে পুরুষদেরই আধিপত্য৷ আমাকে যদিও কেউ দুয়ো দেয় না, তবে আমার যেসব সমকামী সহকর্মী আছে, তাদের সঙ্গে কী করা হয় তা আমি দেখি৷ আসলে ‘পৌরুষ’ মানে কী? আমাদের সবাইকেই কি কমবয়সি আর শক্তসমর্থ হতে হবে? সবার দেহই কি পেশিবহুল হতে হবে? আমরা কি শুধুই আকাঙ্খার বস্তু?
ছবি: Tiberiu Capudean
ডি, আইটি ম্যানেজার, বেলজিয়াম
বাবার সঙ্গে যখন ছিলাম, তখন স্থানীয় একটি বেকারিতে রাতের শিফটে কাজ করতাম৷ একদিন ভোরে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরে ঘুমিয়েছি৷ হঠাৎ আমার মা এসে জানতে চাইলেন, ‘‘তুমি যে এমন, এটা কাকে বলেছো?’’ আসলে হয়েছে কি, কে যেন আমার গাড়ির চাদে লিখে দিয়েছিল, ‘হোমো’৷ মনে হয়েছিল সেটা যেন আমার জন্য সম্মানের স্মারক৷
ছবি: Tiberiu Capudean
এম, রাগবি খেলোয়াড়, স্পেন
মানুষ যখন জানলো যে আমি উভকামী (বাইসেক্সুয়াল), তাদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘‘তুমি কত ভাগ্যবান! বেছে নেয়ার সব পথই তোমার সামনে খোলা৷’’ কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ অন্যরকম৷ উভকামী হওয়াটা কোনো সম্পর্ক স্থাপনের পথে বাধা হিসেবে কাজ করে৷ প্রায়ই জানতে চাওয়া হয়, শেষ কবে আমি কোনো মেয়ের সঙ্গে ছিলাম৷ যেন আমি যে এখনো ‘সক্ষম’ তা প্রমাণ করে দেখাতে হবে৷
ছবি: Tiberiu Capudean
ডি, অভিনেতা, নৃত্যশিল্পী ও পরিচালক, রোমানিয়া
একদিন বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে একটা সুপারমার্কেটে গিয়েছি৷ মুভি দেখতে যাবো বলে দুই বোতল পানি, স্ন্যাকস আর চকলেট কিনতে লাইনে দাঁড়ালাম৷ হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন, ‘‘সমকামী, সমকামী’’ বলে উঠল৷ লোকটিকে অনেক কথা বলা যেত৷ কিন্তু এমন আচরণের প্রতিবাদ করতে গেলে সহিংসতা শুরু হয় বলে নিজেকে শান্ত রেখেছিলাম৷
ছবি: Tiberiu Capudean
এস, ইলাস্ট্রেটর, স্পেন
এক রাতে কোরুনা শহরের এক পার্কে বসে এক বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছি৷ হঠাৎ ছয়-সাতটা ছেলে এসে ‘ফাগটস’ (সমকামী পুরুষ) বলেই আমাদের মারতে শুরু করলো৷ আমরা রুখে দাঁড়ালাম৷ কিন্তু ঝগড়ার এক পর্যায়ে একটি ছেলে আামাকে ছুরি মেরে দিলো৷
ছবি: Tiberiu Capudean
ডি, সেলস ম্যানেজার, ইটালি
আমি সবসময়ই একটু মোটাসোটা৷ ১৪ বছর বয়সেই আমার শরীর রোমে ভরে যায়৷ স্কুলে সবাই আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করত৷ ইটালির ছোট একটা শহরে থাকতাম৷ তাই কোনোদিনই নিজের যৌন পরিচয়টা কাউকে বলিনি৷ ৩০ বছর বয়সে সমকামী হিসেবে ভালোভাবে জীবনযাপনের আশায় ফ্রান্সে চলে যাই৷ কিন্তু সেখানেও সমস্যা হওয়ায় সারা শরীরের রোম ‘ওয়াক্স’ করে তুলে ফেললাম৷ খুব খারাপ লেগেছিল সেদিন৷ এখন অবশ্য বাস্তবতা মেনে নিয়েছি৷ এখন শরীর নিয়ে আমি সুখী৷
ছবি: Tiberiu Capudean
সি, দোকান কর্মচারি, স্পেন
সেদিন মা, বোন আর এক আন্টিকে নিয়ে ‘ফিফটি শেডস অফ গ্রে’ দেখতে গিয়েছি৷ মুভিটা শেষ হতেই ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সি দু’টি মেয়ে আমাদের ‘সমকামী’ বলল৷ এই ২০১৮ সালে দাঁড়িয়েও মানুষ যে এমন করতে পারে আমি ভাবতেই পারিনি৷ আমার ছোট বোন ওদের সঙ্গে ঝগড়া বাধিয়ে দিলো৷ আরেকটি দম্পতিও এগিয়ে এসে মেয়ে দু’টিকে থামতে বলল, আরো বলল না থামলে পুলিশ ডাকা হবে৷ এ কথা শুনে মেয়ে দু’টি পালিয়ে গেল৷
ছবি: Tiberiu Capudean
তিবেরিউ কাপুদিয়ান, ফটোগ্রাফার এবং এলজিবিটি অ্যাক্টিভিস্ট
আমার কাছে ছবির এই মানুষগুলো যে নগ্ন এটা সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ এ সব ছবির মাধ্যমে আমি দেখাতে চেয়েছি যে, যৌনপরিচয়, শরীরের গঠন, বয়স বা জাতি ইত্যাদি বিষয়ের বৈচিত্র্য আসলে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার৷
ছবি: Javier Santiago
11 ছবি1 | 11
অন্যদিকে মিসরীয় পুলিশ জানিয়েছে, প্রকাশ্য নগ্নতা মিসরে নিষিদ্ধ, পিরামিডে এই ধরনের কাজ রীতিমতো অবৈধ৷ এটির তদন্ত চলছে৷ ঘটনাটি আদৌ তাঁরা ঘটিয়েছেন, নাকি পুরো বিষয়টি এক ধরনের ‘স্টান্ট' সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷
তবে মিসরের জনগণ এই ঘটনাকে অবৈধ ও পিরামিডের মাহাত্মের প্রতি অসম্মানজনক হিসেবে দেখছেন৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তোলপাড় আলোচনা৷
উল্লেখ্য, গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে এই গিজাতেই নগ্নশুট করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন বেলজিয়ামের মডেল মেরিসা৷ তিনি গিজার পিরামিড ও মিশরীয় প্রাচীন মন্দিরের সামনে ফটোশুট করতে গিয়েছিলেন৷নগ্ন ফটোশুটের জন্য স্থানীয় এক গাইডকে মোটা অঙ্কের ঘুষও দিতে হয়৷ সব কিছু ঠিকঠাকই ছিল৷ হঠাৎই মেরিসার ফটোশ্যুট দেখে ফেলেন চারজন নিরাপত্তারক্ষী৷ ঘটনাস্থলেই মেরিসা ও ফটোগ্রাফারকে গ্রেফতার করেন তাঁরা৷ ওই অবস্থাতেই দু'জনকে জেলে ঢুকিয়ে দেয়া হয়৷ মেরিসা বলেন, ‘'প্রায় দু' বছর ধরে ঘুরেছি ৫০টি দেশে৷ কখনো এরকম হেনস্থা হতে হয়নি, মিসরে যা হলো৷''