উত্তর কোরিয়ার ওপর নতুন করে অবরোধ আরোপের বিষয়ে শনিবার একমত হয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ৷ এখন পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ার উপর সবচেয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা বলা হচ্ছে একে৷ তবে এর প্রয়োজন ছিল বলে মনে করছে চীন৷
বিজ্ঞাপন
ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে জাতিসংঘের কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর এ বিষয়ে উত্তর কোরিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে চীন৷ দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই রবিবার বলেছেন, জুলাইতে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পর উত্তর কোরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করাটা আবশ্যক হয়ে গিয়েছিল৷ তবে এর মাধ্যমে আসল উদ্দেশ্য সফল হবে না বলে উল্লেখ করেছেন তিনি৷ ফিলিপাইন্সের রাজধানী ম্যানিলায় জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন৷ তাঁর মতে এই সংকট সমাধানের একমাত্র উপায় হলো আলোচনায় বসা৷ উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধের বিষয়ে ছয় জাতি আলোচনার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি৷ সোমবার আসিয়ান দেশগুলোর অংশগ্রহণে ম্যানিলায় বার্ষিক নিরাপত্তা ফোরাম শুরু হতে যাচ্ছে৷ এই উপলক্ষ্যে এই ছয় জাতি, অর্থাৎ চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়াসহ বাকি দেশগুলোর প্রতিনিধিরা এখন ম্যানিলায় অবস্থান করছেন৷ তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের মুখপাত্র জানিয়েছেন ম্যানিলায় এ প্রসঙ্গে কোনো বৈঠকে বসতে রাজি নন তিনি৷
এ যাবৎকালের কঠোর নিষেধাজ্ঞা
গত মাসে দু'টি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জেরে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নতুন করে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতিসংঘ৷ শনিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ভোটে প্রতিবেশী দেশগুলোসহ সব পক্ষ সর্বসম্মতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি করা নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাবটির পক্ষে সমর্থন জানায়৷ নতুন এই অবরোধের কারণে উত্তর কোরিয়ার বার্ষিক ৩০০ কোটি ডলার রপ্তানির এক-তৃতীয়াংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ প্রস্তাবে দেশটির কয়লা, লোহা, লোহার আকরিক, সিসা, সিসার আকরিক এবং সি-ফুড রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে৷
উত্তর কোরিয়ার সামরিক শক্তি কতটা?
উত্তর কোরিয়া যে কোনো ধরনের সামরিক প্ররোচনার আঁচ পেলেই পাল্টা প্রতিক্রিয়ার হুমকি দিয়েছে৷ ওদিকে একটি মার্কিন নৌ-বহর কোরীয় উপদ্বীপের কাছে৷ কিন্তু কী ধরনের আঘাত হানতে পারে উত্তর কোরিয়া?
ছবি: picture-alliance/dpa/KCNA
বিশ্বের বৃহত্তম সেনাবাহিনীগুলির মধ্যে একটি
সাত লাখ সক্রিয় সেনা ও আরো ৪৫ লাখ রিজার্ভ সৈন্য থাকার অর্থ, উত্তর কোরিয়া যে কোনো সময়ে তার মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশকে সামরিক সেবার ডাক দিতে পারে৷ দেশের প্রত্যেকটি পুরুষকে কোনো না কোনো ধরনের সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হয় এবং তাদের যে কোনো সময় সামরিক সেবায় নিযুক্ত করা চলে৷ সৈন্যসংখ্যায় উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিগুণ বলে মনে করা হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
বিপুল অস্ত্রসম্ভার
২০১৬ সালের গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইন্ডেক্স অনুযায়ী উত্তর কোরিয়ার সমরসজ্জা চমকে দেওয়ার মতো: ৭০টি ডুবোজাহাজ, ৪,২০০ ট্যাংক, ৪৫৮টি জঙ্গিজেট, ৫৭২টি ফিক্স্ড উইং অ্যাটাক এয়ারক্রাফ্ট ও আরো অনেক কিছু৷ ২০১৩ সালের ছবিটিতে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনকে দেখা যাচ্ছে, তিনি কিভাবে রণকৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনীকে বিভিন্ন মার্কিন ও দক্ষিণ কোরীয় লক্ষ্যের উপর আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সামরিক কুচকাওয়াজ
প্রতিবছর হাজার হাজার সৈন্য ও সাধারণ নাগরিকদের রাজধানী পিয়ংইয়াং-এর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজে অংশ নিতে দেখা যায়৷ এ ধরনের কুচকাওয়াজের প্রস্তুতি চলে বেশ কয়েক মাস ধরে এবং সাধারণত তার উপলক্ষ্য হয় কমিউনিস্ট পার্টি অথবা কিম পরিবারের কোনো সদস্যের কোনো গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিকী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/KCNA
পরীক্ষামূলক পারমাণবিক বিস্ফোরণ
আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও পিয়ংইয়াং তার আণবিক বোমা ও রকেট তৈরির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ রকেট পরীক্ষা তো নিয়মিত ব্যাপার, এছাড়া পাঁচবার পরীক্ষামূলক পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে উত্তর কোরিয়া, তার মধ্যে এক ২০১৬ সালেই দু’বার৷ দৃশ্যত শেষবারের বিস্ফোরণে যে বোমাটি ব্যবহার করা হয়, তা একটি রকেটে লাগানোর উপযোগী – অন্তত পিয়ংইয়াং-এর তাই দাবি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/KCNA
শত্রু চতুর্দিকে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও, পিয়ংইয়াং প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানকে তার মুখ্য বৈরি বলে মনে করে৷ এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক মহড়াকে উত্তর কোরিয়ার উপর অভিযান চালানোর প্রস্তুতি বলে গণ্য করে পিয়ংইয়াং৷
ছবি: Reuters/K. Hong-Ji
মার্কিন ‘রণকৌশলগত ধৈর্য্যের’ অন্ত?
২০১৭ সালের এপ্রিল মাসের গোড়ার দিকে ‘কার্ল ভিনসন’ বিমানবাহী পোতটিকে কোরীয় উপদ্বীপের দিকে পাঠায় ওয়াশিংটন৷ সঙ্গে সঙ্গে পিংয়ংইয়াং ‘যে কোনো ধরনের যুদ্ধের জন্য’ প্রস্তুতি ঘোষণা করে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবধি পৌঁছাতে সক্ষম, এমন রকেট বানানোর জন্য উত্তর কোরিয়ার আরো বছর দু’য়েক সময় লাগবে, বলে গুপ্তচরবিভাগগুলির ধারণা৷ তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ততদিন অপেক্ষা করবেন কিনা, সেটা আরেক প্রশ্ন৷
ছবি: picture-alliance/Zumapress/M. Brown
6 ছবি1 | 6
প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়ার পর জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি পরিষদকে বলেছেন, ‘‘উত্তর কোরিয়া এখনো আমাদের জন্য হুমকি, উত্তরোত্তর এটি আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠছে৷'' এ বিষয়ে আরও পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি৷
এদিকে, উত্তর কোরিয়ারা বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত হওয়ার পর শনিবার এক টুইটার বার্তায় এর প্রশংসা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
তিনি লিখেছেন, ‘‘জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে অবরোধের পক্ষে এই মাত্র ১৫-০ ভোট দিয়েছে৷ চীন ও রাশিয়াও আমাদের সঙ্গে ভোট দিয়েছে৷ এটা অনেক বড় অর্থনৈতিক আঘাত!’’