1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পি কে হালদারকে পাওয়া যাবে, টাকা কি পাওয়া যাবে?

১৬ মে ২০২২

ভারতে আটক বাংলাদেশের নাগরিক পি কে হালদারকে ফেরত পাওয়া যাবে৷ কিন্তু তার পাচার করা অর্থ কি ফেরত পাওয়া যাবে? আইন বিশ্লেষকেরা বলছেন আইন থাকলেও বাস্তবে তা প্রায় অসম্ভব৷

দুদক বলছে পি কে হালদারকে বাংলাদেশে ফেরত আনা যাবে বন্দি বিনিময় চুক্তির অধীনে
দুদক বলছে পি কে হালদারকে বাংলাদেশে ফেরত আনা যাবে বন্দি বিনিময় চুক্তির অধীনেছবি: DW/Prabhakarmani Tewari

পিকে হালদারের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং-এর মোট মামলা এখন ৩৪টি৷ এই সব মামলায় মোট ৩০ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ করা হয়েছে৷ তার মধ্যে একটি মামলায় আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়েছে৷ ওই মামলায় ছয় হাজার ৮০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে৷ এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক এবং রিলায়েন্স ফাইনান্স-এর এমডি থাকাকালে তিনি ওই টাকা পাচার করেন৷ তার বিরুদ্ধে প্রথম তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকার মানিলন্ডারিং-এর মামলা মামলা করে দুদক৷ ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকারও পরও তিনি দেশের বাইরে পালিয়ে যান৷

পি কে হালদার ভারত, ক্যানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, সিংগাপুর ও সংযুক্ত আবরব আমিরাতসহ আরো কয়েকটি দেশে অর্থ পাচার করেছেন বলে দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনের সার সংক্ষেপে বলা হয়েছে৷

পিকে হালদার ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর এখন সেখানে পাচারের টাকা ফেরত আনা যাবে কি না এই প্রশ্নটা সামনে এসেছে৷ পিকে হালদারকে ফেরত আনা সম্ভব হলেও পাচারের টাকা বা সম্পদ কতটা ফেরত আনা যাবে তা নিয়ে নানা সন্দেহ আছে৷

‘অভিযোগ প্রমাণ হলে জব্দ করা অর্থ বা সম্পদ ফেরত আনা সম্ভব’

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্দিবিনিময় চুক্তি থাকায় পি কে হালদারকে ফেরত আনায় তেমন বেগ পেতে হবে না৷ ভারতে তার বিরুদ্ধে যে মামলা হবে তা নিস্পত্তি হওয়ার পরই এটা সম্ভব হবে৷ আর পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ওয়ারেন্টও জারি করা আছে৷ অর্থ ফেরত আনার সুযোগ আছে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্স-এর মাধ্যমে৷ ভারতসহ বিশ্বের ১৩৬টি দেশের সাথে বাংলাদেশের এই সহযোগিতা যুক্তি আছে৷ তবে তার জন্য পাচার হওয়া টাকা সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে হবে৷ সেটা  অনেক সময়ই করা যায় না বলে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার খুব বেশি নজির বাংলাদেশে নেই৷

ভারতে পি কে হালদারের নয়টি বাড়ির খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে৷ কিন্তু সেখানে তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ কত তা এখনো নিশ্চিত নয়৷ সংবাদ মাধ্যমে ৩০০ কোটি টাকার সম্পদের কথা বলা হচ্ছে৷

দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশের মাধ্যমে এই মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠাতে হবে৷ আমাদের প্রমাণ দিতে হবে যে ভারতে পিকে হালদারের অর্থ সম্পদ আমাদের দেশ থেকে পাচার করা অর্থে কেনা হয়েছে৷ এমএলএআর ওই দেশ একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে জবাব দেবে৷ এটা মামলা চলাকালে সম্পদ জব্দ করানো সম্ভব৷ মামলায় অভিযোগ প্রমাণ হলে জব্দ করা অর্থ বা সম্পদ ফেরত আনা সম্ভব৷ কিন্তু পাচার করা অর্থ সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে হবে৷’’

আর পি কে হালদারকে বাংলাদেশে ফেরত আনা যাবে বন্দি বিনিময় চুক্তির অধীনে৷ তবে এখনও এর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়নি৷ ভারত এখনও আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে গ্রেপ্তারের খবর জানায়নি৷ সেটা জানানোর পর  স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই উদ্যোগ নেবে বলে জানান তিনি৷

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক বলেন, ‘‘আসামি ফেরত আনা সহজ৷ আমরা অনুপ চেটিয়াকে ফেরত দিয়েছি৷ ভারত থেকে কাউন্সিলর নুরকে আমরা এনেছি৷ এটা বন্দিবিনিময় চুক্তির অধীনে আমরা পেরেছি৷ পি কে হালদারকেও আনা যাবে৷ তবে তার সম্পদ আনা  প্রায় অসম্ভব বলে আমি মনে করি৷ কারণ এজন্য দুই দেশের মধ্যে  আলাদা  চুক্তি থাকতে হয়৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পারে৷ কারণ সেদেশে আইন আছে৷ তার দেশের নাগরিকেরা যে দেশেই ব্যাংক হিসাব খুলুক তার তদারকি সে করতে পারে৷’’

তার কথা,"ফেরত আনতে হলে পাচার হওয়া টাকা আগে খুঁজে বের করতে হবে৷ আমাদের দেশের মামলায় আগে প্রমাণ করতে হবে ভারতে যে তিনি বাড়ি বা সম্পদ করেছেন তা এখান থেকে পাচার হওয়া টাকায় করা৷ যদি আবার ওখানে তার ট্যাক্স ফাইল থাকে  আর তাতে যদি ওখানকার সম্পদ বা টাকা দেখানো হয় তাহলে নানা সমস্যা আছে৷ এটা দীর্ঘকালীন একটা প্রক্রিয়া৷ তবে দুই দেশ যদি সমঝোতায় আসে তাহলে সম্ভব হতে পারে৷’’

তবে সুপ্রিম কোর্টের আরেকজন আইনজীবী ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল বলেন, ‘‘মানিলন্ডারিং-এর অর্থ ট্রেসিং কঠিন হলেও অসম্ভব নয়৷ প্রথমত আসামি যদি আদালতে দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তি দেয় যে তিনি কীভাবে টাকা পাচার করেছেন, কোথায় খরচ করেছেন তাহলে তা ধরে চিহ্নিত করা যায়৷ আবার তার কাছ থেকে যদি ডকুমেন্ট উদ্ধার করা যায় তাহলে সেই ডকুমেন্টের ভিত্তিতেও পাচার হওয়া টাকা সর্বশেষ কোথায় আছে বা তিনি কী সম্পদ করেছেন সেই টাকায় তা প্রমাণ করা যায়৷ আর যে দেশে যেমন ভারতে সে সম্পদ করে থাকলে আয়কর ফাইলে অর্থের উৎস কী বলা হয়েছে সেখান থেকেও জানা যায়৷ তবে এরজন্য দুই দেশের মধ্যে চুক্তি থাকা দরকার৷ মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্স-এর মত এমওইউর মাধ্যমেও তা সম্ভব৷’’

‘পি কে হালদারের সম্পদ আনা প্রায় অসম্ভব’

This browser does not support the audio element.

দুদক এপর্যন্ত ২০১২ এবং ২০১৩ সালে তিন দফায় সিঙ্গাপুরের একটি ব্যাংকে থাকা খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর ২১ কোটি টাকারও বেশি অর্থ ফেরত আনতে পেরেছিল৷ পাশাপাশি যুক্তরাজ্যকে তিন লাখ মার্কিন ডলার উদ্ধার করে দিয়েছে বাংলাদেশ৷

এর বাইরে মোরশেদ খান ও তার পরিবারের সদস্যদের হংকংয়ে পাচার করা ৩২১ কোটি টাকা ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ প্রথম ধাপে ১৬ কোটি টাকা ফেরত আনার জন্য হংকংয়ের অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়েছে দুদক৷

বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ৯ কোটি টাকা ফ্রিজ করা হয়েছে৷ গিয়াসউদ্দিন আল মামুন এবং তার ভাই হাফিজ ইব্রাহিমের টাকাও উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে দুদক জানায়৷ ফলে টাকা ফেরত আনার নজির সামান্যই৷

ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাবু বলেন, ‘‘এই ট্রেসিং করতে করতেই সরকার পরিবর্তন হয়ে যায়৷ তখন দুদক আবার তদন্তের গতি পরিবর্তন করে দেয়৷ আবার অনেকে আছেন রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী৷ তাদের ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হয় না৷ মানিলন্ডারিং-এর সাথে অনেক লোক যুক্ত থাকে তারা আবার প্রভাবিত করেন৷ এসব কারণেই পাচারের টাকা ফেরত আনার তেমন নজির নাই৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ