ভারতে আটক বাংলাদেশের নাগরিক পি কে হালদারকে ফেরত পাওয়া যাবে৷ কিন্তু তার পাচার করা অর্থ কি ফেরত পাওয়া যাবে? আইন বিশ্লেষকেরা বলছেন আইন থাকলেও বাস্তবে তা প্রায় অসম্ভব৷
বিজ্ঞাপন
পিকে হালদারের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং-এর মোট মামলা এখন ৩৪টি৷ এই সব মামলায় মোট ৩০ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ করা হয়েছে৷ তার মধ্যে একটি মামলায় আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়েছে৷ ওই মামলায় ছয় হাজার ৮০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে৷ এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক এবং রিলায়েন্স ফাইনান্স-এর এমডি থাকাকালে তিনি ওই টাকা পাচার করেন৷ তার বিরুদ্ধে প্রথম তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকার মানিলন্ডারিং-এর মামলা মামলা করে দুদক৷ ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকারও পরও তিনি দেশের বাইরে পালিয়ে যান৷
পি কে হালদার ভারত, ক্যানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, সিংগাপুর ও সংযুক্ত আবরব আমিরাতসহ আরো কয়েকটি দেশে অর্থ পাচার করেছেন বলে দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনের সার সংক্ষেপে বলা হয়েছে৷
পিকে হালদার ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর এখন সেখানে পাচারের টাকা ফেরত আনা যাবে কি না এই প্রশ্নটা সামনে এসেছে৷ পিকে হালদারকে ফেরত আনা সম্ভব হলেও পাচারের টাকা বা সম্পদ কতটা ফেরত আনা যাবে তা নিয়ে নানা সন্দেহ আছে৷
‘অভিযোগ প্রমাণ হলে জব্দ করা অর্থ বা সম্পদ ফেরত আনা সম্ভব’
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্দিবিনিময় চুক্তি থাকায় পি কে হালদারকে ফেরত আনায় তেমন বেগ পেতে হবে না৷ ভারতে তার বিরুদ্ধে যে মামলা হবে তা নিস্পত্তি হওয়ার পরই এটা সম্ভব হবে৷ আর পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ওয়ারেন্টও জারি করা আছে৷ অর্থ ফেরত আনার সুযোগ আছে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্স-এর মাধ্যমে৷ ভারতসহ বিশ্বের ১৩৬টি দেশের সাথে বাংলাদেশের এই সহযোগিতা যুক্তি আছে৷ তবে তার জন্য পাচার হওয়া টাকা সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে হবে৷ সেটা অনেক সময়ই করা যায় না বলে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার খুব বেশি নজির বাংলাদেশে নেই৷
ভারতে পি কে হালদারের নয়টি বাড়ির খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে৷ কিন্তু সেখানে তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ কত তা এখনো নিশ্চিত নয়৷ সংবাদ মাধ্যমে ৩০০ কোটি টাকার সম্পদের কথা বলা হচ্ছে৷
দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশের মাধ্যমে এই মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠাতে হবে৷ আমাদের প্রমাণ দিতে হবে যে ভারতে পিকে হালদারের অর্থ সম্পদ আমাদের দেশ থেকে পাচার করা অর্থে কেনা হয়েছে৷ এমএলএআর ওই দেশ একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে জবাব দেবে৷ এটা মামলা চলাকালে সম্পদ জব্দ করানো সম্ভব৷ মামলায় অভিযোগ প্রমাণ হলে জব্দ করা অর্থ বা সম্পদ ফেরত আনা সম্ভব৷ কিন্তু পাচার করা অর্থ সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে হবে৷’’
আর পি কে হালদারকে বাংলাদেশে ফেরত আনা যাবে বন্দি বিনিময় চুক্তির অধীনে৷ তবে এখনও এর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়নি৷ ভারত এখনও আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে গ্রেপ্তারের খবর জানায়নি৷ সেটা জানানোর পর স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই উদ্যোগ নেবে বলে জানান তিনি৷
পশ্চিমবঙ্গে পি কে হালদার ও সুকুমার মৃধার ‘অবৈধ’ সম্পত্তি
শনিবার পশ্চিমঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছেন বাংলাদেশের অর্থপাচার মামলার আসামি পি কে হালদার৷ এর আগে তার ও তার সহযোগীদের সম্পত্তির খোঁজে অভিযান শুরু করে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Satyajit Shaw
সুকুমার মৃধার বাড়ির সন্ধানে
শুক্রবার ভোরে বাংলাদেশে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার মামলার আসামি প্রশান্ত কুমার হালদারের বা পি কে হালদারের সহযোগী সুকুমার মৃধার সম্পত্তির সন্ধানে পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি শুরু করে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)৷ শুরুতে উত্তর ২৪ পরগণার অশোকনগরের এই বাড়িতে হানা দেয় তারা৷
ছবি: Satyajit Shaw
সিলগালা
তল্লাশির পর তিনতলা বাড়িটি সিলগালা করে দেয় ইডি৷ ফটকে লাগিয়ে দেয়া হয় নোটিশ৷ তাতে বলা হয়েছে, অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইন ২০০২ এর আলোকে বাড়িটি জব্দ করা হয়েছে৷ তাই সেখান থেকে কোনো সম্পত্তি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নির্দেশ বা অনুমতি ছাড়া সরাতে বা পরিবর্তন করতে পারবে না কেউ৷
ছবি: Satyajit Shaw
দ্বিতীয় বাড়ির খোঁজ
অশোকনগরে সুকুমার মৃধার আরো একটি বাড়ির খোঁজ মেলে৷ সেখানেও তল্লাশি চালায় ইডি৷ তিনি বাংলাদেশের পলাতক আসামি পি কে হালদারের আয়কর আইনজীবী ছিলেন৷ পি কে হালদারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের করা অর্থ পাচারের মামলায় গত বছর সুকুমার ও তার মেয়ে গ্রপ্তার হন৷ তখন থেকেই তারা বাংলাদেশের কারাগারে আছেন৷
ছবি: Satyajit Shaw
তল্লাশি স্বজনদের বাড়িতেও
সুকুমার মৃধার কয়েকটি বাড়ি পরই তার আত্মীয় প্রণব হালদারের বাড়ি৷ সেখানেও তল্লাশি চালিয়েছে ইডি৷ তবে প্রণব হালদার ও তার পরিবার ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেছেন সুকুমার মৃধার ব্যবসার সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা তাদের নেই৷ তল্লাশির মাধ্যমে তারা হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন৷
বাংলাদেশের পেশায় আয়কর আইনজীবী হলেও পশ্চিমবঙ্গে তিনি মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত৷ বিভিন্ন স্থানের তার মাছের ভেড়ি রয়েছে বলে জানা গেছে৷ অশোকনগরে তার বাড়ির ভিতরেই রয়েছে একটি৷
ছবি: Satyajit Shaw
‘লোক ডেকে খাওয়াতো’
বাংলাদেশের নাগরিক সুকুমার মৃধা প্রায়ই পশ্চিমবঙ্গে থাকতেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা৷ পিন্টু দাস নামের এই ব্যক্তি জানান, ‘‘সুকুমার মৃধা খুব ধনী লোক বাংলাদেশও ওর সম্পত্তি আছে শুনেছি, বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান হলে ক্লাব থেকে ১০০ লোক ডেকে খাওয়াতো৷ প্রত্যেক বছর পাড়ার পুজোর সভাপতি হতো এবং ভালো টাকা ডোনেশন দিত৷’’
ছবি: Satyajit Shaw
‘ধনী ব্যক্তি হিসেবে চিনি’
স্থানীয় বাসিন্দা বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্তী জানান, ‘‘আমরা ওনাকে ধনী ব্যক্তি হিসেবে চিনি৷ আমাদের কোনোরকম সন্দেহ হয়নি কারণ আমরা জানি বাংলাদেশে ওনার ঘর-বাড়ি আছে ও কাজ করে ওখান থেকে টাকা পয়সা নিয়ে আসে৷ তারপর শুনি এই ঘটনা ইডির লোকজন এসে বাড়ি সিল করে দিয়ে যায়৷’’
ছবি: Satyajit Shaw
ইডি যা বলছে
শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশের নাগরিক প্রশান্ত কুমার হালদার, প্রিতীশ কুমার হালদার, প্রনেশ কুমার হালদার ও তাদের সহযোগীদের খোঁজে পশ্চিমবঙ্গের ১০ টি জায়গায় অভিযান পরিচালনা করছে৷ এই ব্যক্তিরা বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেছে বলেও উল্লেখ করেছে ইডি৷
ছবি: Subrata Goswami/DW
পি কে হালদারের খোঁজ
এই অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে বাংলাদেশে পলাতক আসামী পি কে হালদারেরও খোঁজ পায় ইডি৷ তিনি অবৈধভাবে কাগজপত্র সংগ্রহ করে সেখানে শিবশঙ্কর হালদার নামে বসবাস করছিলেন৷ ইডি বলছে, তিনি ও তার সহযোগীরা কলকাতার মেট্রোপোলিসসহ বিলাসবহুল সব এলকায় অবৈধভাবে বহু সম্পত্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকানা অর্জন করেছেন৷ তাকে তিনদিনের রিমান্ডে নেয় ইডি৷
ছবি: Subrata Goswami/DW
বাংলাদেশ যা বলছে
এদিকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রোববার বলেছেন, “পি কে হালদার ওয়ান্টেড ব্যক্তি, ইন্টারপোলের মাধ্যমে অনেক দিন ধরে তাকে চাচ্ছি৷ ...সে গ্রেপ্তার হয়েছে, তবে আমাদের কাছে এখনও (ভারত থেকে) অফিসিয়ালি কিছু আসেনি৷’’ এর আগে শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেছিলেন, ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে জানালে যত দ্রুত সম্ভব বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে৷
ছবি: bdnews24.com
11 ছবি1 | 11
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক বলেন, ‘‘আসামি ফেরত আনা সহজ৷ আমরা অনুপ চেটিয়াকে ফেরত দিয়েছি৷ ভারত থেকে কাউন্সিলর নুরকে আমরা এনেছি৷ এটা বন্দিবিনিময় চুক্তির অধীনে আমরা পেরেছি৷ পি কে হালদারকেও আনা যাবে৷ তবে তার সম্পদ আনা প্রায় অসম্ভব বলে আমি মনে করি৷ কারণ এজন্য দুই দেশের মধ্যে আলাদা চুক্তি থাকতে হয়৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পারে৷ কারণ সেদেশে আইন আছে৷ তার দেশের নাগরিকেরা যে দেশেই ব্যাংক হিসাব খুলুক তার তদারকি সে করতে পারে৷’’
তার কথা,"ফেরত আনতে হলে পাচার হওয়া টাকা আগে খুঁজে বের করতে হবে৷ আমাদের দেশের মামলায় আগে প্রমাণ করতে হবে ভারতে যে তিনি বাড়ি বা সম্পদ করেছেন তা এখান থেকে পাচার হওয়া টাকায় করা৷ যদি আবার ওখানে তার ট্যাক্স ফাইল থাকে আর তাতে যদি ওখানকার সম্পদ বা টাকা দেখানো হয় তাহলে নানা সমস্যা আছে৷ এটা দীর্ঘকালীন একটা প্রক্রিয়া৷ তবে দুই দেশ যদি সমঝোতায় আসে তাহলে সম্ভব হতে পারে৷’’
তবে সুপ্রিম কোর্টের আরেকজন আইনজীবী ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল বলেন, ‘‘মানিলন্ডারিং-এর অর্থ ট্রেসিং কঠিন হলেও অসম্ভব নয়৷ প্রথমত আসামি যদি আদালতে দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তি দেয় যে তিনি কীভাবে টাকা পাচার করেছেন, কোথায় খরচ করেছেন তাহলে তা ধরে চিহ্নিত করা যায়৷ আবার তার কাছ থেকে যদি ডকুমেন্ট উদ্ধার করা যায় তাহলে সেই ডকুমেন্টের ভিত্তিতেও পাচার হওয়া টাকা সর্বশেষ কোথায় আছে বা তিনি কী সম্পদ করেছেন সেই টাকায় তা প্রমাণ করা যায়৷ আর যে দেশে যেমন ভারতে সে সম্পদ করে থাকলে আয়কর ফাইলে অর্থের উৎস কী বলা হয়েছে সেখান থেকেও জানা যায়৷ তবে এরজন্য দুই দেশের মধ্যে চুক্তি থাকা দরকার৷ মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্স-এর মত এমওইউর মাধ্যমেও তা সম্ভব৷’’
‘পি কে হালদারের সম্পদ আনা প্রায় অসম্ভব’
দুদক এপর্যন্ত ২০১২ এবং ২০১৩ সালে তিন দফায় সিঙ্গাপুরের একটি ব্যাংকে থাকা খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর ২১ কোটি টাকারও বেশি অর্থ ফেরত আনতে পেরেছিল৷ পাশাপাশি যুক্তরাজ্যকে তিন লাখ মার্কিন ডলার উদ্ধার করে দিয়েছে বাংলাদেশ৷
এর বাইরে মোরশেদ খান ও তার পরিবারের সদস্যদের হংকংয়ে পাচার করা ৩২১ কোটি টাকা ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ প্রথম ধাপে ১৬ কোটি টাকা ফেরত আনার জন্য হংকংয়ের অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়েছে দুদক৷
বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ৯ কোটি টাকা ফ্রিজ করা হয়েছে৷ গিয়াসউদ্দিন আল মামুন এবং তার ভাই হাফিজ ইব্রাহিমের টাকাও উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে দুদক জানায়৷ ফলে টাকা ফেরত আনার নজির সামান্যই৷
ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাবু বলেন, ‘‘এই ট্রেসিং করতে করতেই সরকার পরিবর্তন হয়ে যায়৷ তখন দুদক আবার তদন্তের গতি পরিবর্তন করে দেয়৷ আবার অনেকে আছেন রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী৷ তাদের ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হয় না৷ মানিলন্ডারিং-এর সাথে অনেক লোক যুক্ত থাকে তারা আবার প্রভাবিত করেন৷ এসব কারণেই পাচারের টাকা ফেরত আনার তেমন নজির নাই৷’’
ভারত বাংলাদেশ যত চুক্তি
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক পেয়েছে অন্য এক মাত্রা৷ দুই দেশের সরকারের মধ্যে বেড়েছে পারস্পরিক যোগাযোগ, হয়েছে নানা চুক্তি, আর একে অপরকে দিয়েছে ‘সবচেয়ে পছন্দের দেশের’ মর্যাদা৷
ছবি: AFP/P. Singh
১০০ কোটি ডলার ঋণ ও ১৪ প্রকল্প
২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার একবছর পর ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম ভারত সফরে যান৷ সেসময় ১০০ কোটি ডলারের এলওসি বা ঋণরেখা অনুমোদন করে ভারত৷ এই অর্থে জনপরিবহন, সড়ক, রেলপথ সেতু আর অভ্যন্তরীন নৌপথের ১৪ টি প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি হয়৷
ছবি: Getty Images/G. Crouch
বন্দী বিনিময়
২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে বন্দী বিনিময় চুক্তি হয়৷ ২০১১ সালের ১৩ই জানুয়ারি তা কার্যকর হয়৷ চুক্তি অনুযায়ী কোনো দেশের নাগরিক অন্য দেশে সাজাপ্রাপ্ত হলে তাকে অনুরোধক্রমে ফেরত পাঠাতে পারবে৷ তবে এর আগেই অনুপ চেটিয়াসহ ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদি নেতাদের গ্রেপ্তার করে দেশটিতে পাঠানো হয় বলে গণমাধ্যমে খবর বেরোয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Barreto
ছিটমহল বিনিময়
২০১৫ সালের জুন মাসে ভারত-বাংলাদেশের স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুমোদন হয়৷ যার মাধ্যমে ২০১৫ সালের জুলাইতে দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত ছিটমহল বিনিময় হয়৷ ভারতের ১১১টি ছিটমহল যুক্ত হয় বাংলাদেশের সাথে৷ একইভাবে ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলও হয়ে যায় ভারতের অংশ৷
ছবি: AFP/Getty Images
নদীর পানি বন্টন
বাংলাদেশের ভারতের অভিন্ন নদীর সংখ্যা ৫৪ টি৷ এর মধ্যে শুধু গঙ্গা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি আছে৷ যদিও পানি বন্টনের ক্ষেত্রে এই চুক্তি ভারত মানছে না বলে অভিযোগ আছে৷ অন্যদিকে পাঁচ দশক ধরে তিস্তা চুক্তির চেষ্টা চললেও তা সম্ভব হচ্ছে না দেশটির উদাসীনতার কারণে৷ যার ফলে এখন একতরফাভাবে নদীটির পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে ভারত৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
ভারসাম্যহীন বাণিজ্য
১৯৭২ সালে প্রথম বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়৷ ২০১৫ সালে স্বাক্ষর হয় এ বিষয়ে নতুন চুক্তি৷ এর আওতায় দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত হাটসহ আরো কিছু বাণিজ্য সম্পর্কিত চুক্তি হয়েছে৷ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের আকার ছিল ৯১৪ কোটি ডলার৷ যার সিংগভাগই ভারতের অনুকূলে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Dutta
উন্নয়ন সহযোগিতার কাঠামো
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে একটি উন্নয়ন সহযোগিতাবিষয়ক কাঠামোগত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ যার মধ্যে আছে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পানি সম্পদ; বিদ্যুৎ; শিক্ষা, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি ইত্যাদি৷
ছবি: Getty Images/AFP/M.U. Zaman
দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধি
এই চুক্তি সম্পর্কে ভারতীয় দূতাবাসের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘‘দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে এক দেশ অন্য দেশের ভূখণ্ড থেকে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও রক্ষার লক্ষ্যে এ চুক্তি হয়েছে৷ ভারত ও বাংলাদেশ একে অপরকে ‘সবচেয়ে পছন্দের দেশ’-এর মর্যাদা দিয়েছে৷’’
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup
বাংলাদেশ ভারতের পণ্য পরিবহন
দুই দেশের মধ্যে হওয়া বাণিজ্য চুক্তি অনুযায়ী এক দেশ আরেক দেশের জল, স্থল ও রেলপথ ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পণ্য ট্রানজিটের সুবিধা নিতে পারে৷ ২০১৬ সালে মাশুলের বিনিময়ে ভারতকে আশুগঞ্জ নৌ বন্দর দিয়ে বহুমাত্রিক ট্রানজিট সুবিধা দেয় বাংলাদেশ৷ সড়কপথে ট্রানজিট দিতে ২০১৫ সালে আখাউড়া অগরতলা সীমান্ত দিয়ে পরীক্ষামূলক চালান পাঠানো হয়৷ যা পরবর্তীতে নিয়মিত হয়নি৷
ছবি: DW/M. Mamun
ভারতের রেল যাবে বাংলাদেশ হয়ে
আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে কোলকাতা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে শিলিগুড়ি যাবে৷ ২০১১ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় এ বিষয়ক একটি চুক্তি হয়৷ চুক্তি অনুযায়ী এজন্য দুই দেশকে তাদের অংশের রেলপথ নির্মাণ করতে হবে৷ বাংলাদেশ অংশের সাত কিলোমিটার রেলপথ আগামী বছরে জুন মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা৷
ছবি: DW/P. Mani
সাবরুমের মানুষে জন্য ফেনীর পানি
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে সাতটি সমঝোতা সই ও চুক্তি হয়েছে৷ একটি সমঝোতার আওতায় ফেনী নদীর ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি প্রত্যাহার করতে পারবে ভারত৷ ওই পানি তারা ত্রিপুরার সাবরুম শহরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্পে ব্যবহার করবে৷
ছবি: AFP/P. Singh
বন্দর ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করে ভারত আটটি রুটে তার উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোদে পণ্য আনা নেয়া করতে পারবে৷ এজন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর বা পদ্ধতি কী হবে, তা নির্ধারণে একটি সমঝোতা স্বাক্ষর হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সফরে৷
ছবি: DW/U. Danisman
চুক্তি থাকলেও হত্যা থেমে নেই
সীমান্তে হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে ২০১১ সালে বিজিবি-বিএসএফ একটি চুক্তি করে৷ নেয়া হয় সীমান্ত পারাপারে অস্ত্র ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত৷ তবে সীমান্তে দেশটির আচরণে তার প্রতিফলন নেই৷ গত ১০ বছরে ২৯৪ বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ৷