1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পুজোর মৌসুমেও নিরানন্দে বাঘ বিধবারা

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৮ অক্টোবর ২০২১

উৎসব আসে, উৎসব যায়। সুন্দরবনের প্রান্তিক জীবনে পরিবর্তন ঘটে না। লকডাউনের সময় থেকে জঙ্গলে যাওয়ার প্রবণতা আরো বেড়েছে। ফলে বাড়ছে বাঘ-বিধবার সংখ্যা।

BG Bangladesch "Tiger Witwen"
ছবি: AFP/M. Uz Zaman

শুধু করোনা নয়, একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা। এর ফলে সংগ্রাম আরও কঠিন হয়েছে স্বামীহারা মহিলাদের। গ্রামের পর গ্রাম, অনেক বাড়িতে কেন নেই উপার্জনশীল পুরুষ। কেন? এই কাহিনি বড় মর্মান্তিক। কারা বাঘ বিধবা একদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সুন্দরবনে বাঘের খাবারের ঘাটতি হচ্ছে। অন্যদিকে বিকল্প কর্মসংস্থান না পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাছ, কাঁকড়া ও মধু সংগ্রহে যাওয়ার প্রবণতা আরও বেড়েছে। আগে বছরে ১০-১২ জন বাঘের কবলে পড়তেন। লকডাউনের পর থেকে এখন সেটা বেড়েছে কয়েক গুণ। এই দেড় বছরে সুন্দরবনে বাঘের কবলে পড়েছেন ৫৫-৬০ জন। স্বামীকে হারিয়ে নতুন লড়াই শুরু হয় বাঘ বিধবাদের। স্থানীয় সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনে এমন বাঘ বিধবার সংখ্যা ১২০০-১৫০০। অধিকাংশেরই দিন কাটে অতি কষ্টে।

বাঘ বিধবার লড়াই

সুন্দরবনের ঘরে ঘরে কান পাতলে শোনা যায় স্বজন হারানোর হাহাকার। যেমন শোনা যায় কুলতলির অঞ্জলি বৈদ্য বা গোসাবা ব্লকের সোনাগাঁর বাসিন্দা কৌশল্যা বর্মণের ঘরে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে অঞ্জলির স্বামীকে বাঘে নিয়ে যায়। তারপর সন্তানদের নিয়ে শুরু সংগ্রাম। কোনো উপার্জনই নেই বললেই চলে। আর ১৬ বছর আগে মাছ ধরতে জঙ্গলে গিয়ে কৌশল্যার স্বামী জীবিত ফেরেননি। এখন দান ও ত্রাণই ভরসা। কৌশল্যা ডয়চে ভেলেকে বলেন, "খুব কষ্টে ছেলেমেয়েদের পালন করছি। ক্ষতিপূরণ পাইনি। বিধবা ভাতাও নেই। কোনোরকমে দিন চলে।" কৌশল্যা বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন, কিন্তু ২৪ বছরের অঞ্জলির কী হবে?

সুমিতা মুখোপাধ্যায়

This browser does not support the audio element.

গোসাবার কুমিরমারির বাসিন্দা বাসন্তী মণ্ডল অবশ্য বিধবা ভাতা পেয়েছেন। সাত বছর আগে স্বামীকে নিয়ে গিয়েছিল বাঘ। তারপর একার লড়াই। বাসন্তী স্বামীকে হারানোর আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাননি। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, "স্বামীর মীন শিকারের রেজিস্ট্রেশন ছিল না। তাই ক্ষতিপূরণ মেলেনি। রোজগারও প্রায় কিছু নেই।" ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গে গোসাবার বিডিও বিশ্বনাথ চৌধুরী বলেন, "ক্ষতিপূরণ নিয়ে আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। বিষয়টা বন দপ্তরের অধীন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী মারা গেলে সরকারের তরফে এনএফডিসি প্রকল্পের এককালীন ৪০ হাজার টাকা পাওয়া যায়।"

মৃত্যুর ফাঁদে ফেরা

সরকারি প্রকল্প থাকলেও তা সকলের কাছে পৌঁছয় না। এমনই অভিজ্ঞতা দীর্ঘদিন বাঘ বিধবাদের পাশে থাকা সমাজকর্মী উজ্জ্বল সর্দারের। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "যে পরিমাণ কাঠখড় পুড়িয়ে নির্দিষ্ট নথি সরকারি দপ্তরের জমা করতে হয়, তার সামর্থ্য এঁদের থাকে না। প্রশাসনের দিক থেকেও কোনো তৎপরতা দেখা যায় না। অনেক ক্ষেত্রে বাঘের আক্রমণকে মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেখানোই হয় না।" অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ত্রাণ দিয়ে বাঘ বিধবাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তাতে স্বনির্ভরতা আসে না। ফলে ফের জঙ্গলে যেতে হয় প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে। বাঘ বিধবাদের সমস্যা নিয়ে সক্রিয় ‘পথের সাথী' সংগঠনের সদস্য, অধ্যাপিকা সুমিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, "লকডাউন ও ইয়াস ঝড়ের ফলে চাষের জমির কাজটুকুও হাতছাড়া। স্বামী ও ছেলেকে যে জায়গা থেকে বাঘে নিয়ে গিয়েছে, বাঘ বিধবারা ফের সেখানে গিয়ে কাঁকড়া, মীন ধরেন। নইলে তাদের চলবে না।" তাদের অধিকাংশ স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে শহরের দিকে আসতে চান না? অধ্যাপিকা বলেন, "এক্ষেত্রে রয়েছে পাচারের ভয়। মোটের উপর শহরের বিষয়ে এই মহিলাদের ভীতি রয়েছে। তাই চট করে শহরে যেতে চান না।"

উমাশঙ্কর মন্ডল

This browser does not support the audio element.

পাশে ‘ম্যানগ্রোভ ম্যান’ 

এই যাঁদের রোজনামচা, তাঁদের কাছে কি কোনো সুদিন নিয়ে আসে শারদীয়া? সুন্দরবনের ‘ম্যানগ্রোভ ম্যান', চরঘেরির বাসিন্দা উমাশঙ্কর মণ্ডল ছবিটা বদলাতে চাইছেন। এই পুজোয় সাড়ে ৩০০ বাঘ বিধবাকে শাড়ি উপহার দেবেন তিনি। তবে এ শুধু দান নয়, শর্ত আছে। ম্যানগ্রোভ রোপণের শর্ত। সেই চারা বছরভর রক্ষণাবেক্ষণের শর্ত। শাড়ি ছাড়াও উমাশঙ্কর দিচ্ছেন ছেলেময়েদের বইপত্র থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন। কৌশল্যা-বাসন্তীর মত ৪০ জন বাঘ বিধবা এগিয়ে এসেছেন

ম্যানগ্রোভ সৃজনের কাজে। সতী মণ্ডল, বকুলপ্রিয়া মণ্ডল, অনীতা কয়াল, সুচিত্রা মণ্ডল, হরিমতি মণ্ডল সারা বছর ধরে ম্যানগ্রোভ লাগানো ও বাঁচানোর আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। এতে একদিকে যেমন বিপর্যয় থেকে বাঁচবে সুন্দরবন, তেমনি মহিলারা স্বনির্ভরতার স্বাদ কিছুটা পাবেন। বাঘ বিধবা ছাড়াও আরও ২০০ মহিলা এই প্রকল্পের সঙ্গে জুড়েছেন। উমাশঙ্কর বলেন, "২০০৯ সালে আয়লা বিপর্যয়ের পর থেকে ম্যানগ্রোভ রোপণ শুরু করেছি। কমিউনিটি ডেভলপমেন্টের এই কাজে অন্যান্য মহিলাদের সঙ্গে আছেন বাঘ বিধবারা। আগামীতে সীমিত সামর্থ্যে ওঁদের একটু স্বনির্ভর করে তোলার চেষ্টা করছি।"

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ