রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনকে হত্যা চেষ্টার দায়ে চেচেন সেনা আদম ওসমায়েভকে খুঁজছিল মস্কো৷ ইউক্রেনে ওসমায়েভের উপর হামলায় তার স্ত্রী নিহত হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সোমবার জানান, আদম ওসমায়েভ ও তাঁর স্ত্রী আমিনা অকুয়েভা হামলার সময় তাঁদের গাড়িতে ছিলেন৷ গাড়িটি ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের বাইরে একটি রেলক্রসিংয়ের কাছে ছিল৷ ক্রসিংয়ের পাশে থাকা ঝোপ থেকে তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়৷ এতে ওসমায়েভের স্ত্রী আমিনা অকুয়েভা প্রাণ হারান৷ আর ওসমায়েভ আহত হন৷ ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আমিনার নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন৷ আমিনা ইউক্রেনের নাগরিক ছিলেন৷
২০১২ সালে একটি বোমা হামলা চালিয়ে রাশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলেন ওসমায়েভ৷ ঐ ঘটনায় ইউক্রেনের কারাগারে প্রায় আড়াই বছর বন্দি ছিলেন ওসমায়েভ৷ তবে তার বিচার করতে তাকে ইউক্রেন থেকে বিতাড়নের দাবি জানিয়ে আসছিল মস্কো৷
ওসমায়েভ ও আমিনা ইউক্রেনে বেশ পরিচিত৷ তারা দুজনেই পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়াপন্থি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের সরকারি বাহিনীর পাশাপাশি লড়েছেন৷
এর আগে, জুন মাসেও ওসমায়েভকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল৷ তবে সেই সময় স্ত্রী আমিনা উলটো বন্দুকধারীর দিকে গুলি চালিয়েছিলেন৷
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার কিয়েভে এক বোমা হামলায় দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন৷ আহত হয়েছেন তিন জন৷ এর মধ্যে একজন ইউক্রেনের সাংসদ ইহোর মোসিয়েচুক৷ আমিনা মোসিয়েচুকের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতেন৷
বোমা হামলার জন্য মোসিয়েচুক রাশিয়াকে দায়ী করেছেন৷ ইউক্রেনের পুলিশও জানিয়েছে, তারা বোমা হামলার সঙ্গে মস্কোর যোগসূত্র থাকার বিষয়টিও তদন্ত করে দেখছেন৷ তবে রাশিয়া এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷
জেডএইচ/এসিবি (রয়টার্স, এপি, এএফপি)
ভ্লাদিমির পুটিনের ভিন্ন রূপ
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷ ছবিঘরে পুটিনের ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন দিক ফুটে উঠেছে৷
ছবি: Reuters/A. Novosti/RIA Novosti/Kremlin
কেজিবি থেকে ক্রেমলিন
পুটিন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নিরাপত্তা সংস্থা কেজিবিতে যোগ দেন ১৯৭৫ সালে৷ আশির দশকে তিনি কেজিবি এজেন্ট হিসেবে জার্মানির ড্রেসডেনে কর্মরত ছিলেন৷ বার্লিন ওয়ালের পতনের পর রাশিয়ায় ফিরে গিয়ে বরিস ইয়েলৎসিনের ক্রেমলিনে প্রবেশ করেন তিনি৷ ইয়েলৎসিন তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে পুটিনের নাম ঘোষণা করলে তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ প্রশস্ত হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/M.Klimentyev
প্রথম প্রেসিডেন্সি
বড় পদে যাওয়ার আগ অবধি রাশিয়ার সাধারণ জনতা পুটিনকে বলতে গেলে চিনতেনই না৷ ১৯৯৯ সালের আগস্টে চেচনিয়ার একদল সশস্ত্র মানুষ রাশিয়ার দাগেস্তান দখল করে নিলে পুটিন লাইম লাইটে আসেন৷ প্রেসিডেন্ট ইয়েলৎসিন তখন তাঁকে চেচনিয়াকে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনার দায়িত্ব দেন৷ সেবার বর্ষবরণের আগের রাতে অপ্রত্যাশিতভাবে পদত্যাগ করেন ইয়েলৎসিন এবং পুটিনকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব দেন৷
ছবি: picture alliance/AP Images
গণমাধ্যমে কঠোর পুরুষ
সোচিতে একটি প্রীতি হকি গেমে পুটিনের দল ১৮-৬ গোলে জয়লাভ করে৷ এরমধ্যে আটটি গোলই করেছেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট!
ছবি: picture-alliance/AP/A. Nikolsky
বাকস্বাধীনতায় লাগাম
পুটিন বিরোধীদের এক ব়্যালিতে এভাবে মুখে টেপ লাগিয়ে তার উপরে পুটিন লিখে হাজির হয়েছিলেন এক প্রতিবাদকারী৷ ২০১৩ সালে সেদেশের রাষ্ট্রীয় সংবাদসংস্থা রিয়া নোভোস্টিকে সংস্কারের ঘোষণা দেয় ক্রেমলিন এবং সেটির দায়িত্ব উগ্র পশ্চিমাবিরোধী মতের জন্য পরিচিত এক ক্রেমলিনপন্থির হাতে তুলে দেয়া হয়৷ রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের প্রেস ফ্রিডম সূচকে ১৭৮টি দেশের মধ্যে রাশিয়ার অবস্থান ১৪৮তম৷
ছবি: Getty Images/AFP/V.Maximov
পুটিনের ভাবমূর্তি: কাজে বিশ্বাসী এক ব্যক্তি
রাশিয়ায় অনেকে বিশ্বাস করেন পুটিন কাজে বিশ্বাসী৷ এই ভাবমূর্তি গড়তে গিয়ে গণমাধ্যমে মাঝেমাঝেই ঊর্দ্ধাঙ্গ অনাবৃত ঘৌড়সওয়ারের বেশে বা জুডোতে প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করার বেশে পুটিনের ছবি প্রকাশ হয়৷ রাশিয়ায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারায় পুটিনের প্রশংসা করেন অনেকে, পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে একনায়কতন্ত্রের অভিযোগও রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Nikoskyi
গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ
২০০৭ সালে পুটিনের দল ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টি যখন ব্যাপক ভোটে জয়লাভ করে, তখন সমালোচকরা দাবি করেন, ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া মুক্ত এবং গণতান্ত্রিক ছিল না৷ পুটিনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রণের কণ্ঠরোধে অভিযোগে আয়োজিত এক বিক্ষোভ থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করে দাঙ্গা পুলিশ৷ সেই বিক্ষোভ ব়্যালিতে একটি পোস্টারে লেখা ছিল, ‘ধন্যবাদ, না!’
ছবি: Getty Images/AFP/Y.Kadobnov
সাজানো ঘটনা
ক্রাইমিয়ার সেভাস্টোপোলে একটি ছোট সাবমেরিনের মধ্যে দেখা যাচ্ছে পুটিনকে৷ বলা হয়ে থাকে, কৃষ্ণ সাগরের গভীরে তিনি গিয়েছিলেন এই সাবমেরিনে করে৷ এরকম ছবি মাঝে মাঝেই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়৷ কখনো তিনি বুনো বাঘকে কাবু করেন চেতনানাশক দিয়ে কিংবা ওড়ের বিলুপ্তপ্রায় সারসের সঙ্গে৷ এভাবে এক দুঃসাহসী অভিযাত্রীর বেশে পুটিনকে উপস্থাপন করা হয়৷