এবার সরাসরি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। জাতিসংঘে জরুরি অধিবেশন। কিয়েভে বিস্ফোরণ।
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেনে সরাসরি সামরিক অভিযানের ঘোষণা দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন। অন্যদিকে অ্যামেরিকায় জরুরি বৈঠকে বসেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের অনুরোধে গভীর রাতে শুরু হয়েছে বৈঠক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করেছেন। অন্যদিকে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ-সহ একাধিক শহরে বিস্ফোরণ ঘটছে বলে ইউক্রেনের সংবাদমাধ্যম।
সংবাদসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টার সামান্য আগে ক্রেমলিন একটি বিবৃতি জারি করেছে। সেখানে সরাসরি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের কথা বলা হয়েছে। প্রেসিডেন্টের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'সেনা অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।' টেলিভিশনে এই বিবৃতি প্রকাশ করা হয় বলে এএফপি জানিয়েছে।
রাশিয়ার আক্রমণের শঙ্কা, ঘর ছাড়ছেন ইউক্রেনের মানুষ
ইউক্রেনের দুই বিচ্ছিন্ন অংশের স্বীকৃতি ও সেখানে ‘শান্তিরক্ষী বাহিনী’ পাঠানোর ঘোষণা করে রুশ প্রেসিডেন্ট পুটিন দৃশ্যত সংঘাতের পথ বেছে নিয়েছেন৷ আক্রমণের শঙ্কায় সীমান্তবর্তী এলাকা ছাড়ছেন পূর্ব ইউক্রেনের বাসিন্দারা৷
ছবি: Sergey Pivivarov/REUTERS
বিদ্রোহীদের দখলে
রাশিয়াপন্থি বিদ্রোহীগোষ্ঠীর দখলে রয়েছে পূর্ব ইউক্রেনের একাংশ৷ সেখান থেকে রাশিয়ার ভরোনেজহের অস্থায়ী আশ্রয়ে থাকার জন্য পা বাড়িয়েছেন অসংখ্য মানুষ৷ সপরিবারে নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছেন অনেকেই৷
ছবি: Vladimir Lavrov/REUTERS
নিরাপদ গন্তব্যে পাড়ি
ইউক্রেন সীমান্তে হওয়া রাশিয়ার সেনা বাহিনীর যে কোনো আক্রমণাত্মক কার্যকলাপের দাম দিতে হবে রাশিয়াকে- পশ্চিমের দেশগুলি এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছিল আগেই৷ কিন্তু পুটিন অবিচল৷ তাই যুদ্ধের শঙ্কায় ঘর ছাড়ছেন মানুষ৷ রাশিয়ার রস্তভের তাগানরগ শহরে সমাজকল্যাণ বিভাগের সামনে অজস্র মানুষের ভিড় চোখে পড়েছে৷ এই ব্যক্তিদের পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকা থেকে নিরাপদ স্থানে ফিরিয়ে আনা হয়েছে৷
ছবি: Sergey Pivivarov/REUTERS
যুদ্ধ পরিস্থিতিতে শিশু
ট্রেনে করে নিরাপদ এলাকার দিকে চলে যাচ্ছেন অনেকেই৷ ট্রেনের মধ্যে ইউক্রেনীয় একটি শিশুর ছবি ধরা পড়েছে আলোকচিত্রীর ক্যামেরায়৷ যুদ্ধ, রাজনীতি- কোনোকিছুর মানেই সে বোঝে না এখনো৷
ছবি: Sergey Pivivarov/REUTERS
অস্থায়ী আয়োজন
রস্তভের তাগানরগে একটি স্থানীয় স্পোর্টস স্কুলে অস্থায়ী আশ্রয় তৈরি করা হয়েছে৷ সেখানে এক খুদেকে সামলানোর চেষ্টা করছেন তার অভিভাবক৷ সারি সারি বিছানা, বালিশ আর কম্বলের ব্যবস্থা করা হয়েছে কর্তৃপক্ষের তরফে৷
ছবি: Sergey Pivivarov/REUTERS
নতুন আশ্রয়ের পথে
রস্তভ থেকে ট্রেন ধরতে যাচ্ছিলেন এই ব্যক্তি৷ বিদ্রোহী অধ্যুষিত পূর্ব ইউক্রেন থেকে তাকেও নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনা হয়েছে৷ ক্রাচে ভর দিয়ে নতুন গন্তব্যের দিকে পাড়ি দিচ্ছেন তিনি৷
ছবি: Sergey Pivivarov/REUTERS
মানবিক সহায়তা
মানবিক সহায়তার জন্য এগিয়ে এসেছে অনেক সংস্থা৷ সবজি প্যাক করার কাজ করছেন কর্মীরা৷
ছবি: Alexey Pavlishak/REUTERS
খাবারের ব্যবস্থা
ক্রিমিয়ার সিমফেরোপলে পাঠানো হবে এই প্যাকেটজাত খাবারগুলি৷ সবরকম পরিস্থিতির কথা ভেবে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে৷ পানীয় জল-সহ খাবারের প্যাকেট পাঠানোর কাজ চলছে৷
ছবি: Alexey Pavlishak/REUTERS
পুটিনের ঘোষণার ফল
সোমবার পূর্ব ইউক্রেনের রুশ-সমর্থিত দুই অঞ্চল দনেৎস্ক এবং লুহানস্ককে স্বাধীন বলে ঘোষণা করেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুটিন৷ এর ফলে সংকট আরো ঘনীভূত হয়েছে৷ ভয় বেড়েছে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যেও৷ নিরাপদ এলাকায় সরানো হয়েছে অনেককে৷ এক বৃদ্ধা একা বসে রয়েছেন রস্তভের অস্থায়ী আশ্রয়ে৷
ছবি: Sergey Pivivarov/REUTERS
ভবিষ্যতের পথে
ভরোনেজহের অস্থায়ী আশ্রয়ে বাসে করে নিয়ে যাওয়া হয় একদল মানুষকে৷ নিরাপত্তার কথা ভেবেই ঘর ছাড়তে হয়েছে তাদের৷ অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, কী করবেন কেউ জানেন না৷
ছবি: Vladimir Lavrov/REUTERS
হামলার শঙ্কা
যে কোনো সময় হামলা চালাতে পারে রুশ বাহিনী৷ ক্রিমিয়ার উপকূলে যুদ্ধজাহাজও ঘোরাফেরা করছে৷ রুশপন্থি বিদ্রোহীরা যুদ্ধের আশঙ্কায় সাধারণ মানুষদের সরিয়ে দিচ্ছে রাশিয়ায়৷ বিশেষ করে নারী, শিশু, প্রবীণদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে৷ অভিভাবিকার হাত ধরে দুই বালিকা চলেছে অস্থায়ী আশ্রয়ের দিকে৷ কিন্তু মুখে অমলিন হাসি৷ সংকটময় পরিস্থিতির কথা হয়তো তারা বোঝেনি এখনও৷
ছবি: Vladimir Lavrov/REUTERS
10 ছবি1 | 10
পুটিন জানিয়েছেন, পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রক্ষা করতেই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তাকে। বস্তুত, রাশিয়ার অভিযোগ, ইউক্রেনই পূর্ব ইউক্রেনে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উপর আগ্রাসন চালাচ্ছে। তাদের রক্ষা করতেই রাশিয়াকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হলো। এর আগেই পূর্ব ইউক্রেনে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদত দিতে সেনা পাঠিয়েছিল রাশিয়া। পুটিনের ঘোষণার পরেই সমস্ত যাত্রীবাহী উড়ান বাতিল করে দেয় ইউক্রেন। এয়ার স্পেস বিমানবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। দেশে জারি হয়েছে মার্শাল আইন। তারই মধ্যে কিয়েভে শক্তিশালী বিস্পোরণ হয়েছে বলে জানা গেছে। রাশিয়া কিয়েভে মিসাইল হামলা চালিয়েছে বলে ইউক্রেনের সংবাদমাধ্যমের দাবি। যদিও পুটিন জানিয়েছিলেন, শুধুমাত্র পূর্ব ইউক্রেনেই আক্রমণ চালানো হবে। সেখানে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে অস্ত্র ফেলে আত্মসমর্পণের কথা বলেছেন তিনি।
এদিকে বুধবার রাতে অ্যামেরিকায় ইউক্রেন সংকট নিয়ে তৃতীয় জরুরি বৈঠকে বসে জাতিসংঘ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির অনুরোধেই দ্রুত বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে। অনুরোধে জেলেনস্কি জানিয়েছিলেন, রাশিয়া যে কোনো সময় 'যুদ্ধ' শুরু করে দিতে পারে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বৈঠক শুরু হয়। জাতিসংঘের প্রধান পুটিনের কাছে হামলা বন্ধ করে শান্তি বৈঠকে বসার অনুরোধ জানান। কিন্তু পুটিন সে কথায় কান দেননি। যুদ্ধঘোষণা করে দিয়েছেন বৃহস্পতিবার সকালে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠক শুরু হয়েছে। সেখানে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার প্রস্তাব পেশ হয়েছে। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া অন্যতম সদস্য। প্রস্তাবে তারা ভেটো দিলে তা কোনোভাবেই পাশ হবে না বলে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য।
বৃহস্পতিবার রাশিয়ার ঘোষণা গোটা ইউরোপে শান্তির আবহ তৈরি করবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।