রাশিয়াকে এবার সমঝে চলতে হবে৷ কারণ তাদের হাতে নাকি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মিসাইল৷ জাতির উদ্দেশে ভাষণে এমনটাই জানালেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷
বিজ্ঞাপন
রাশিয়ার হাতেই এখন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র৷ পৃথিবীর কোনো দেশ এখনো যা তৈরি করে উঠতে পারেনি৷ জাতির উদ্দেশে ভাষণে এমনই জানালেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷ তিনি জানিয়েছেন, রাশিয়া একটি নতুন মিসাইল তৈরি করেছে৷ পারমাণবিক যে মিসাইলকে কোনো মিসাইল ট্র্যাকার দেখতে পাবে না৷ সমুদ্রের গভীরেও ওই মিসাইল ব্যবহার করা সম্ভব৷ পুটিন বলেছেন, বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলির মধ্যে অন্যতম রাশিয়া৷ কিন্তু বহু সময়েই রাশিয়ার ক্ষমতাকে খাটো করা হয়৷ তাঁর আশা, এরপর সকলেই রাশিয়াকে সমঝে চলবে৷
স্বাভাবিক ভাবেই পুটিনের এই ঘোষণার পর সমালোচনার ঝড় উঠেছে বিশ্ব জুড়ে৷ অ্যামেরিকা বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে যে, রাশিয়ার এই পদক্ষেপ বিশ্বের শক্তিসাম্য নীতির বিরোধী৷ বস্তুত, রাশিয়ার এমন মিসাইল তৈরি করা অনুচিত হয়েছে বলে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছে অ্যামেরিকা৷ বিশেষজ্ঞেরাও বলছেন, ঠান্ডা যুদ্ধের সময় রাশিয়া যে ধরনের বিবৃতি দিত, পুটিনের বক্তব্যেও তার অনুরণন রয়েছে৷
কার, কতগুলো পারমাণবিক বোমা আছে
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের নয়টি দেশের কাছে বর্তমানে ১৩,৪০০টি আণবিক বোমা আছে৷ তবে এ সব বোমার সংখ্যা কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/KCNA
রাশিয়ার কাছে সবচেয়ে বেশি
স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউট সিপ্রি-র তথ্য অনুসারে রাশিয়ার কাছে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আণবিক বোমা রয়েছে৷ দেশটিতে এ ধরনের বোমার সংখ্যা ৬,৩৭৫টি৷ ১৯৪৯ সালে রাশিয়া প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা করেছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kolesnikova
দ্বিতীয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পারমাণবিক বোমা বানিয়েছে এবং একমাত্র দেশ যারা যুদ্ধেও এই অস্ত্র ব্যবহার করেছে৷ দেশটির কাছে এখন ৫,৮০০ টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Jamali
চীনও পিছিয়ে নেই
৩২০টি পারমাণবিক বোমা আছে চীনের৷ রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় সংখ্যাটা কম হলেও দেশটি ধীরে ধীরে এই সংখ্যা বাড়াচ্ছে৷ যেমন ২০১৯ সালেই তাদের কাছে ২৯০ টি বোমা ছিল৷ স্থল, আকাশ বা সমুদ্রপথে সেগুলো ছোঁড়া সম্ভব৷
ছবি: Getty Images
সাবমেরিনে পারমাণবিক বোমা
ফ্রান্সের কাছে পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে ২৯০টি৷ এগুলোর অধিকাংশই রয়েছে সাবমেরিনে৷ দেশটির অন্তত একটি সাবমেরিন সবসময় পারমাণবিক বোমা নিয়ে টহল দেয়৷
ছবি: AP
যুক্তরাজ্যেরও আছে পারমাণবিক বোমা
২১৫টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে যুক্তরাজ্যের কাছে৷ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এই দেশটি ১৯৫২ সালে প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kaminski
দক্ষিণ এশিয়ায় এগিয়ে পাকিস্তান
ইতোমধ্যে তিনবার প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছে পাকিস্তান৷ দেশটির আছে ১৬০টি আণবিক বোমা৷ সাম্প্রতিক সময়ে পারমাণবিক বোমার সংখ্যা বাড়িয়েছে দেশটি৷ অনেকে আশঙ্কা করেন, প্রতিবেশীর সঙ্গে দেশটির লড়াই কোন এক সময় পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AP
থেমে নেই ভারত
পারমাণবিক বোমার সংখ্যা বাড়াচ্ছে ভারতও৷ দেশটি প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় ১৯৭৪ সালে৷ সিপ্রির তথ্য অনুযায়ী, তাদের কাছে এখন ১৫০টি বোমা রয়েছে৷ ভারত অবশ্য জানিয়েছে, তারা আগে কোনো দেশকে আঘাত করবে না, আর যেসব দেশের পারমাণবিক বোমা নেই, সেসব দেশের বিরুদ্ধে তারা এ ধরনের বোমা ব্যবহার করবে না কোনোদিন৷
ছবি: Reuters
ইসরায়েল সম্পর্কে তথ্য কম
ইসরায়েল অবশ্য নিজের দেশের পরমাণু কর্মসূচি সম্পর্কে তেমন কিছু জনসমক্ষে প্রকাশ করে না৷ যদিও দেশটির নব্বইটি পারমাণবিক ‘ওয়ারহেড’ আছে বলে উল্লেখ করেছে সিপ্রি৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
উত্তর কোরিয়া সবার নীচে
পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে গোপনীয়তা অবলম্বন করে উত্তর কোরিয়াও৷ এখন দেশটির কাছে থাকা বোমার সংখ্যা আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০টি৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
রাজনৈতিক পরিদর্শক সুসেন স্পান ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ঠান্ডা যুদ্ধের সময় অ্যামেরিকা এবং পশ্চিম দুনিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার লড়াই স্পষ্ট ছিল৷ সে সময়েও রাশিয়া বার বার শক্তিপ্রদর্শন করে নিজেদের ক্ষমতা প্রকাশ করতো৷ বৃহস্পতিবার পুটিনের বক্তব্যেও সেই আগ্রাসন লক্ষ্য করা গিয়েছে৷ পুটিন বলেছেন, এবার রাশিয়াকে সমঝে চলতে হবে বিশ্বের সমস্ত দেশকে৷ তবে পাশাপাশি পুটিন জানিয়েছেন, যুদ্ধের জন্য ওই মিসাইল রাশিয়া তৈরি করেনি৷ নিজেদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতেই মিসাইলটি তৈরি হয়েছে৷ কিন্তু রাজনৈতিক পরিদর্শকদের মতে, রাশিয়ার বক্তব্যে আগ্রাসন স্পষ্ট৷
শুধু তাই নয়, অ্যামেরিকা জানিয়েছে, পুটিন যখন মিসাইলের কথা বলছিলেন, তখন একটি গ্রাফিক চালানো হয়েছিল৷ যেখানে দেখানো হয়েছে, মিসাইলটি অ্যামেরিকার উপর প্রয়োগ করা হচ্ছে৷ মার্কিন বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এমন দৃশ্য কখনোই কাম্য নয়৷
আগামী মার্চ মাসে রাশিয়ায় নির্বাচন৷ বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এবারো বিপুল ভোটে ক্ষমতায় ফিরবেন পুটিন৷ তার আগে জনগণকে উত্তেজিত করতেই এতটা আগ্রাসী বক্তব্য পেশ করলেন তিনি৷ এবং রাশিয়ার শক্তির পরিচয় দিলেন৷