রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনকে ইউক্রেন যুদ্ধের মনোজাগতিক প্রভাব নিয়ে খোলা চিঠি লিখেছেন বিশ্বের ২০টি দেশের প্রায় ৪০ জন মনোবিদ৷ ইউক্রেনে হামলার নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে তাকে ‘সচেতন' করার চেষ্টা করেন তারা৷
বিজ্ঞাপন
ইউনিভার্সিটি অব ফ্রাঙ্কফুর্টের সামাজিক মনোবিদ রল্ফ ফান ডিক এবং ইউনিভার্সিটি অব মারবুর্গের উলরিশ ভাগনার এই চিঠির মূল উদ্যোক্তা৷ চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্র, পোল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা, ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৪০ জন মনোবিদ স্বাক্ষর করেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা ডিপিএ৷ বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হাজির করে তারা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি এবং ব্যক্তি ও সমাজ-জীবনে এর প্রভাব পুটিনের কাছে তুলে ধরেন৷ এই যুদ্ধ শুধু শারীরিক ক্ষতিই নয় ‘বিচ্ছিন্নতারও’ জন্ম দেবে বলে সতর্ক করেন তারা৷ বলেন, দুই দেশের মানুষই যুদ্ধের কারণে ‘জাতিগত বিচ্ছিন্নতার’ শিকার হচ্ছেন৷ অন্যদিকে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তাদের মধ্যে ‘বঞ্চনার বোধ’ বাড়ছে যা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধ, বিক্ষোভ ও বিপ্লবের মূল কারণ হতে পারে৷ সাধারণ মানুষের পাশাপাশি অভিজাতদের উপরেও এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন তারা৷
চিঠিতে পুটিনকে সতর্ক করে তারা লিখেছেন, অতি আত্মবিশ্বাস খুব সহজেই ভেঙে যায় এবং এ ধরনের নেতারা এক পর্যায়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন৷ ‘‘বাস্তবতার বোধের কারণে মানুষ এক পর্যায়ে যুদ্ধ সূচনাকারী এবং দুর্ভোগ, ক্ষতি ও মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেন৷’’ পুটিনকে পরামর্শ দিয়ে তারা আরো বলেন, ‘‘মনোজাগতিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের প্রাথমিক প্রস্তাব হলো অবিলম্বে গুলি, বোমাবর্ষণ, লড়াই, হত্যা থামাতে হবে৷ ...যুদ্ধের বিষয়ে আপনার সিদ্ধান্ত নিয়ে আরেকবার ভাবুন, এই সহিংসতার মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত রুশ জনগণ বা ব্যক্তিগতভাবে আপনি আসলে কী অর্জন করবেন৷’’
চিঠিতে মনোবিদরা পুটিনকে আলোচনার জন্য সবসময় উদার থাকার আহ্বান জানান৷ তবে এই চিঠি আদৌ পুটিনের কাছে পৌঁছাবে কিনা সেই সন্দেহ উড়িয়ে দিচ্ছেন না অধ্যাপক ফন ডিক৷
এফএস/এসিবি (ডিপিএ)
ইউক্রেন রাশিয়ার স্বাভাবিক সম্পর্কের অতীত
রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের সম্পর্কের টানাপোড়েন দীর্ঘদিনের৷ তারপরও দুই দেশের মানুষের মধ্যে ছিল যোগাযোগ, কখনও কখনও সরকারের মধ্যেও ছিল স্বাভাবিক সম্পর্ক৷ দেখুন তেমনই কিছু ছবি৷
ছবি: Alexei Nikolsky/TASS/picture alliance
ইয়ানুকোভিচের সময়
চার মাসের রাজনৈতিক সংকটের অবসান ঘটিয়ে ২০০৬ সালে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী হন ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ৷ পরে ২০১০ সালে নির্বাচিত হন প্রেসিডেন্ট৷ তার সঙ্গে ছিলে পুটিন সরকারের নিবিড় সম্পর্ক৷ ছবিতে ২০১০ সালে রাশিয়ার তখনকার প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের সঙ্গে বন্দর সংক্রান্ত একটি চুক্তি সাক্ষর অনুষ্ঠানে দেখা যাচ্ছে তাকে৷ ২০১৪ সালে বিক্ষোভের মুখে ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতা ছেড়ে রাশিয়ায় আশ্রয় নেন৷
ছবি: AP
ইউক্রেনে পুটিন
২০০৯ সালে রাশিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুটিন ও ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া টিমোশেঙ্কোকে করমর্দন করতে দেখা যাচ্ছে৷ রাশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট পুটিন সেসময় জ্বালানি সংক্রান্ত এক আলোচনার জন্য ইউক্রেনে আসেন৷
ছবি: AP
জ্বালানি চুক্তি
২০০৯ সালের জানুয়ারিতে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন গ্যাজপ্রমের সঙ্গে চুক্তি করে ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাফগ্যাজ৷ ছবিতে মস্কোতে প্রতিষ্ঠান দুইটির তখনকার দুই প্রধানকে চুক্তিপত্র বিনিময় করতে দেখা যাচ্ছে৷ পেছনে দাঁড়িয়ে রাশিয়ার তখনকার প্রধানমন্ত্রীর ভ্লাদিমির পুটিন ও ইউক্রেনের ইউলিয়া টিমোশেঙ্কো৷
ছবি: AP
খেলার ময়দান
খেলাধুলায় রাশিয়া আর ইউক্রেনের অ্যাথলিটরা মুখোমুখি হয়েছেন বারবার৷ এই ছবিটি ২০০৯ সালের৷ ইউরোপীয়ান ভারোত্তোলন চ্যাম্পিয়নশিপে ইউক্রেনের স্বর্ণজয়ী ইহর শেমেচকো হাত ধরে আছেন রুশ ব্রোঞ্জজয়ী ইভগেনি পিসারেভ (ডানে) এবং জার্মানির সিলভারজয়ী আলমির ফেলাগিকের (বামে)৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অলিম্পিকে প্রতিপক্ষ
২০১৮ সালের শীতকালীন অলিম্পিকে ফ্রিস্টাইল স্কিয়ার ইভেন্টে স্বর্ণপদক জয় করেন ইউক্রেনের আলেক্সান্ডার আব্রামেঙ্কো৷ ছবিতে তার সঙ্গে ইউক্রেনের পতাকা জড়িয়ে ফটোসেশনে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে ব্রোঞ্জজয়ী রাশিয়ার ইলিয়া বুরোভকে৷
ছবি: picture-alliance/Sputnik/R. Sitdikov
জেলেনস্কির সঙ্গে পুটিন
বর্তমান প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক ভালো নয়৷ যুদ্ধ থামাতে সম্প্রতি তিনি পুটিনকে তার সঙ্গে বৈঠকে বসার আহ্বান জানালেও সাড়া পাননি৷ তবে দুই নেতা এর আগে এক টেবিলে বসেছেন৷ যেমনটা এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে৷ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে পূর্ব ইউক্রেন সংকট নিয়ে ফ্রান্সে চতূর্থ নরমান্ডি বৈঠক শেষের সংবাদ সম্মেলনে ফরাসী প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ ও জার্মানির তখনকার চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের সঙ্গে জেলেনস্কি ও পুটিন৷