পুটিনের সঙ্গে তিন ঘণ্টা কথা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর
৭ মার্চ ২০২২
মস্কো গিয়ে তিন ঘণ্টা ধরে পুটিনের সঙ্গে কথা বললেন নাফতালি বেনেট। তারপর জার্মানি এসে শলৎসের সঙ্গে বৈঠক।
বিজ্ঞাপন
রাশিয়া-ইউক্রেনের সংঘাত বন্ধ করার জন্য উদ্যোগী হলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট। তিনি শনিবার মস্কোতে গিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুটিনের সঙ্গে দীর্ঘ তিন ঘণ্টা ধরে কথা বলেন। তারপর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গেও তার ফোনে কথা হয়। মস্কো থেকে বার্লিনে আসেন বেনেট। জার্মানির চ্যান্সেলার শলৎসের সঙ্গে তিনি দেড় ঘণ্টা ধরে আলোচনা করেন।
বৈঠকের খুঁটিনাটি
মস্কোয় পুটিন-বেনেট বৈঠকের পর ক্রেমলিনের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ইউক্রেন নিয়েই দুই নেতার কথা হয়েছে। মস্কোয় বেনেট রুশ ভাষা জানা তার মন্ত্রিসভার সদস্য এলকিনকেও সঙ্গে করে নিয়ে গেছিলেন। এলকিনের জন্ম ইউক্রেনে।
আর শলৎসের সঙ্গে আলোচনার পর জার্মান সরকারের মুখপাত্র জানিয়েছেন, দুই নেতাই চান ইউক্রেনে সংঘাত যত দ্রুত সম্ভব শেষ হোক।
ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিচ্ছে যারা
ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে৷ রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে জ্যাভলিন অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক উইপন ও স্টিঙ্গার মিসাইল চেয়েছে ইউক্রেন৷
ছবি: Efrem Lukatsky/AP/dpa/picture alliance
যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনকে আরও অতিরিক্ত ৩৫০ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র দেয়ার নির্দেশ দেন৷ এর মধ্যে জ্যাভলিন (ছবি) এবং স্টিঙ্গারও রয়েছে৷ এছাড়া সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের জন্য বর্ম, ছোট অস্ত্র, অ্যান্টি-আর্মার থাকার কথা জানিয়েছে পেন্টাগন৷ ইতিমধ্যে জার্মানিতে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রের সংগ্রহশালা থেকে সেগুলো পোল্যান্ড হয়ে ইউক্রেনে পাঠানো হচ্ছে৷
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইইউ নেতারা কিয়েভে ৪৫০ মিলিয়ন ইউরোর অস্ত্র সরবরাহ করতে একমত হয়েছেন৷
ছবি: John Thys/AFP/Getty Images
জার্মানি
সংঘাত চলছে এমন জায়গায় এতদিন অস্ত্র না পাঠানোর নীতি অনুসরণ করত জার্মানি৷ তবে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনে এক হাজার অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক উইপন ও ৫০০ স্টিঙ্গার সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানি৷ এছাড়া সোভিয়েতদের তৈরি ২,৭০০ ‘স্ট্রেলা’ অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট মিসাইলও (ছবি) পাঠানোর অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে৷
ছবি: gemeinfrei
ফ্রান্স
ইউক্রেনের অনুরোধে ডিফেন্সিভ অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট ও ডিজিটাল উইপন পাঠিয়েছে ফ্রান্স৷
ছবি: Reuters/P. Wojazer
যুক্তরাজ্য
গত জানুয়ারিতে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস ইউক্রেনকে হালকা অ্যান্টি-আর্মার ডিফেন্সিভ উইপন সিস্টেম দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন৷ ২৩ ফেব্রুয়ারি ডাউনিং স্ট্রিট ‘লিথাল ডিফেন্সিভ উইপন’ দেয়ার অঙ্গীকার করে৷ ছবিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনকে ইউক্রেনের পতাকার রংয়ে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Jeff J Mitchell/Getty Images
পোল্যান্ড
কয়েক হাজার শেল ও আর্টিলারি অ্যামুনিশন, অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট মিসাইল, লাইট মর্টার (প্রতীকী ছবি) এবং শত্রুপক্ষের অবস্থান জানার জন্য ড্রোন ও অস্ত্র পাঠানোর অঙ্গীকার করেছে পোল্যান্ড৷
ছবি: Sgt Paris/Capers /UPI Photo/imago
সুইডেন, ডেনমার্ক
নিরপেক্ষ থাকার নীতি ভেঙে পাঁচ হাজার ‘এটি৪ অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক উইপন’ (ছবি) পাঠাচ্ছে সুইডেন৷ ডেনমার্ক পাঠাচ্ছে দুই হাজার ৭০০টি অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক উইপন৷
ছবি: StockTrek Images/imago images
নরওয়ে
নরওয়ে হেলমেট ও বর্ম ছাড়া প্রায় দুই হাজারের মতো এম৭২ অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক উইপন (ছবি) পাঠাচ্ছে৷
ছবি: U.S. Marines/ZUMA Wire/imago images
এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া
এস্তোনিয়া জ্যাভলিন মিসাইল এবং লিথুয়ানিয়া ও লাটভিয়া স্টিঙ্গার সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল দিচ্ছে৷ ১২ ফেব্রুয়ারির এই ছবিতে লিথুয়ানিয়ার সৈন্যদের ইউক্রেনে পাঠানোর জন্য স্টিঙ্গার মিসাইল ও বর্ম বিমানে তুলতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Lithuanian Ministry of National Defense/AP/picture alliance
ফিনল্যান্ড
দেড় হাজার সিঙ্গেল শট অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক উইপন, আড়াই হাজার অ্যাসল্ট রাইফেল (প্রতীকী ছবি), দেড় লাখ রাউন্ড গুলি পাঠাচ্ছে ফিনল্যান্ড৷
ছবি: Bernd Weißbrod/dpa/picture alliance
নেদারল্যান্ডস
২০০টি স্টিঙ্গার এয়ার ডিফেন্স রকেট (ছবি) এবং ৪০০ রকেটসহ ৫০টি অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক উইপন পাঠানো হবে বলে ২৬ ফেব্রুয়ারি সংসদকে জানায় সরকার৷
ছবি: LEILA GORCHEV/AFP/Getty Images
বেলজিয়াম
আরও তিন হাজার অটোমেটিক রাইফেল (প্রতীকী ছবি), ২০০ অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক উইপন ও ৩,৮০০ টন জ্বালানি পাঠাচ্ছে৷
কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেনে চার হাজার মর্টার, ৩০ হাজার পিস্তল, সাত হাজার অ্যাসল্ট রাইফেল, তিন হাজার মেশিন গান, অনেকগুলো স্নাইপার রাইফেল (প্রতীকী ছবি) ও দশ লাখ বুলেট পাঠানো হবে বলে শনিবার জানিয়েছিল দেশটি৷
ছবি: Bundeswehr/Walter Wayman
14 ছবি1 | 14
জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি এই আলোচনা চালিয়ে যেতে চান।
কেন বেনেটের এই উদ্যোগ?
রাশিয়া ও ইউক্রেন দুই দেশের সঙ্গেই সুসম্পর্ক আছে ইসরায়েলের। তাছাড়া রাশিয়া সিরিয়া যুদ্ধের সঙ্গেও জড়িত। সিরিয়া হলো ইসরায়েলের প্রতিবেশী দেশ।
দ্য টাইমস অফ ইসরায়েলের সম্পাদক ডেভিড হরোভিটজ জানিয়েছেন, ''বেনেটের এই সফর ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ইসরায়েল চায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে।''
রাশিয়া কি ভ্যাকিউম বোমা ব্যবহার করছে?
অ্যামেরিকায় ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত অভিযোগ করেছিলেন, রাশিয়া ভ্যাকিউম বোমের মতো মারণাস্ত্র ব্যবহার করছে।
ছবি: Anton Vergun/TASS/dpa/picture alliance
ভ্যাকিউম বোমা কী
নিউক্লিয়ার বোমা নয়। কিন্তু প্রায় তার কাছাকাছি ক্ষতি করতে পারে ভ্যাকিউম বোমা। একটি গোটা অঞ্চলকে মুহূর্তে তছনছ করে দেওয়ার ক্ষমতা থাকে এই বোমায়।
ছবি: Leonid Faerberg/ZUMAPRESS/picture alliance
কীভাবে তৈরি হয়
এই বোমায় ১০০ শতাংশ তেল বা ফুয়েল ব্যবহার করা হয়। সাধারণ বোমায় তেলের সঙ্গে অক্সিডেন্ট পার্টিকেল ব্যবহার করা হয়। ভ্যাকিউম বোমায় তা হয় না। বাতাস থেকে অক্সিজেন টেনে নেয় এই বোমা।
ছবি: Konstantin Mihalchevskiy/SNA/imago images
বোমার মারণ ক্ষমতা
এই বোমা ছুঁড়লে প্রথমে তা বিরাট মাপের বিস্ফোরণ ঘটায়। এরপর বাতাসে তেলের একটি চাদর তৈরি হয়। সেই চাদর বাতাস থেকে অক্সিজেন টেনে নিয়ে ফের বিস্ফোরণ ঘটায়। চারদিক কার্যত জ্বলে যায়।
যে এলাকায় এই বোমা ফাটানো হয়, সেখানে কারও পক্ষে বাঁচা সম্বব নয়। আশপাশের অঞ্চলেও ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। শরীরের ভিতরে রক্তক্ষরণ হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
ছবি: Irina Rybakova/REUTERS
রাশিয়া কি এই বোমা ব্যবহার করছে
সিএনএন প্রথম একটি রিপোর্টে জানায়, রাশিয়া এই বোমা ব্যবহার করছে। রাশিয়ার টিওএস-১ ট্যাঙ্ক দেখা গেছে। যে ট্যাঙ্ক এই বোমা ছুঁড়তে পারে।
ছবি: Viacheslav Ratynskyi/REUTERS
কোথায় হয়েছে বিস্ফোরণ
ইউক্রেনের ওখতিরকা শহরে রাশিয়া এই বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, তারা ফুটেজ দেখেছে। কিন্তু এখনো ওই বোমাই ফাটানো হয়েছিল কি না, তা প্রমাণ হয়নি। তবে এই বোমা ফাটানো যুদ্ধাপরাধের মধ্যে পড়ে বলে তারা জানিয়েছে।
ছবি: Maksim Levin/REUTERS
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বিস্ফোরণের ইমপ্যাক্ট দেখে মনে হচ্ছে, রাশিয়া ভ্যাকিউম বোমাই ব্যবহার করেছে।
ছবি: Maksim Levin/REUTERS
ইউক্রেন পরিস্থিতি
ইউক্রেন পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ চেহারা নিয়েছে। কিয়েভ, খারকিভ-সহ একাধিক শহরে ব্যাপক লড়াই চলছে। আরো ভয়াবহতার হুমকি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। কিয়েভের মেট্রো স্টেশনেও রাশিয়ার সেনা ঢুকে পড়েছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি।
ছবি: Viacheslav Ratynskyi/REUTERS
8 ছবি1 | 8
অ্যামেরিকায় ইসরায়েলের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাইকেল ওরেন বলেছেন, ''বেনেটের উদ্যোগ সাহসী কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ। পুটিন আজ একটা ভিন্ন অবস্থানে আছেন। সম্ভবত তিনি এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজছেন। বেনেট তাঁকে সম্ভবত সিঁড়িটা সরবরাহ করছেন।''