রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছিল জার্মানি ও ফ্রান্স। বাতিল করল ইইউ।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন। বৈঠকের পর দুই দেশই জানিয়েছে, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। বহু বিষয়ে মতান্তর থাকলেও আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা হয়েছে। জেনেভায় সেই বৈঠকের পরেই পুটিনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে আগ্রহ প্রকাশ করে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ এবং জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল। তাদের প্রস্তাব ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে পাঠিয়েছিলেন তারা। কিন্তু ২৭ দেশের ব্লক বৈঠকে রাজি হয়নি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অধিকাংশ দেশের বক্তব্য, রাশিয়া যে ভাবে রাজনীতি করছে, তাতে এখন রাশিয়াকে আলোচনায় ডাকলে ভুল বার্তা দেওয়া হবে। বরং রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরো কড়া মনোভাব নেওয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বেশ কিছু দেশ। নতুন করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে ইইউ-র পররাষ্ট্র সম্পর্কের প্রধান জোসেফ বরেলকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা করতে বলা হয়েছে।
রাশিয়ায় পাঁচ হাজার নাভালনি সমর্থক আটক
রাশিয়ার বিরোধী নেতা আলেক্সি নাভালনির মুক্তির দাবিতে রবিবার দেশটির একশ’র বেশি শহরে বিক্ষোভ হয়েছে৷ এদিন পাঁচ হাজার তিনশ’র বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে একটি পর্যবেক্ষক সংস্থা৷
ছবি: Olga Maltseva/AFP
নাভালনির মুক্তির দাবি
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের বিরোধিতা করার জন্য সবচেয়ে পরিচিত ৪৪ বছর বয়সি আলেক্সি নাভালনি৷ গত আগস্টে পুটিন ও অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবি তাকে বিষ দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ তার৷ জার্মানিতে প্রায় পাঁচ মাস চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরলে গত ১৭ জানুয়ারি মস্কো বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ নাভালনির মুক্তির দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে৷
ছবি: Kira_Yarmysh/AP/picture alliance
টানা দ্বিতীয় সপ্তাহান্ত
রবিবার রাশিয়ার একশ’র বেশি শহরে নাভালনির মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে৷ এদিন পাঁচ হাজার তিনশ’র বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে পর্যবেক্ষক সংস্থা ‘ওভিডি ইনফো’৷ বিরোধী পক্ষের সমাবেশ থেকে কতজনকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, সে হিসেব রাখে ওভিডি৷ এই সংস্থার হিসেবে মস্কো থেকে প্রায় ১,৮০০ জন ও সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে প্রায় ১,২০০ জনকে আটক করা হয়৷
ছবি: Peter Kovalev/TASS/dpa/picture alliance
সাংবাদিক গ্রেপ্তার
ওভিডি বলছে, ৩১ শহর থেকে সর্বোচ্চ ৯০ জনের মতো সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে৷ আটক বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ৫০ জনেরও বেশি জনকে আটক অবস্থায় মারধর করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি৷
ছবি: Olga Maltseva/AFP
সবচেয়ে বেশি আটক
ওভিডি সংস্থা ৯ বছর আগে কার্যক্রম শুরু করে৷ এই সময়ের মধ্যে রবিবারই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ব্যক্তিকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছে তারা৷ এর আগের সপ্তাহান্তে প্রায় চার হাজার বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছিল৷ উপরের ছবিটি ২৩ জানুয়ারির৷ এতে এক বিক্ষোভকারীকে ধরে নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Alexander Zemlianichenko/AP/picture alliance
শাস্তি
বিক্ষোভ আয়োজনের অনুমোদন না থাকায় আটক ব্যক্তিদের জরিমানা কিংবা কারাদণ্ড হতে পারে৷
ছবি: Alexander Zemlianichenko/AP Photo/picture alliance
ক্রেমলিনের বক্তব্য
রবিবারের বিক্ষোভে অনেক গুণ্ডা ও উসকানিদাতা অংশ নিয়েছে বলে সোমবার দাবি করেছেন ক্রেমলিনের এক মুখপাত্র৷ তাদের সঙ্গে আলোচনা অসম্ভব বলে জানিয়েছেন তিনি৷
ছবি: Iliya Pitalev/Sputnik/pda/picture alliance
নাভালনির জেল হতে পারে
২০১৪ সালে এক মামলায় নাভালনির বিরুদ্ধে সাসপেন্ডেড রায় দেয়া হয়েছিল৷ সম্প্রতি সেটিকে বাস্তবে পরিণত করার আবেদন করেছে জেল কর্তৃপক্ষ৷ মঙ্গলবার সেই আবেদনের উপর রায় দেয়া হবে৷ তবে জেনারেল প্রসিকিউটরস অফিস সোমবার জানিয়েছে, তারা জেল কর্তৃপক্ষের আবেদন সমর্থন করছে৷ ফলে নাভালনির আড়াই বছরের জেল হতে পারে৷
ছবি: Kirill Kudryavtsev/AFP
জার্মানির প্রতি ফ্রান্সের আহ্বান
নাভালনিকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে রাশিয়ার সঙ্গে একটি গ্যাসলাইন প্রকল্প থেকে সরে আসতে জার্মানির প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে বলে সোমবার জানান ফ্রান্সের ইউরোপ বিষয়ক মন্ত্রী ক্লেম বোন৷ যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের অনেক দেশ ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ নামক এই প্রকল্পের সমালোচনা করেছে৷ তাদের অভিযোগ, এর ফলে গ্যাস পেতে রাশিয়ার উপর জার্মানি ও ইউরোপের নির্ভরতা বাড়ছে৷
ছবি: Odd Andersen/AFP
8 ছবি1 | 8
বৈঠকে ম্যার্কেল বলেছিলেন, আলোচনাই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ। বিতর্ক না বাড়িয়ে রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠকে বসা হোক। মাক্রোঁর বক্তব্য ছিল, ইউরোপ মহাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে বিবাদ মিটিয়ে আলোচনায় বসা জরুরি। কিন্তু অধিকাংশ ইইউ রাষ্ট্র তা মানতে চায়নি।
২০১৪ সালে রাশিয়ার সঙ্গে শেষবার আলোচনায় বসেছিল ইইউ। এরপর রাশিয়ার ক্রিমিয়া আক্রমণ নিয়ে পুটিনের সঙ্গে ইইউ-র দূরত্ব তৈরি হয়। লাটভিয়ার প্রধানমন্ত্রী এদিনের বৈঠকে বলেছেন, ক্রেমলিন শুধুমাত্র ক্ষমতার রাজনীতি বোঝে। সুতরাং তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার অর্থ হয় না। বৈঠক করা মানে, ভুল বার্তা দেওয়া। লিথুয়ানিয়াও একই কথা বলেছে বৈঠকে।
গত এক বছরে রাশিয়ার সঙ্গে ইইউ-র দূরত্ব আরো বেড়েছে। বিশেষত রাশিয়ার রাজনীতিক নাভালনিকে যেভাবে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল এবং পরে যে ভাবে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তা নিয়ে ইইউ-র সঙ্গে রাশিয়ার তীব্র বিতর্ক হয়েছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাও জারি হয়েছে। এদিনের বৈঠকের পর আরো কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।