পশ্চিমা দেশগুলির বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন রাশিয়া এবং চীনের প্রেসিডেন্ট। শক্তিশালী জোট গড়ে তোলার আলোচনা।
বিজ্ঞাপন
বুধবার প্রায় ৯০ মিনিট ভিডিও কলে কথা বলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। আগামী শীতকালীন অলিম্পিকে মুখোমুখি বৈঠকের সম্ভাবনা। রাশিয়া এবং চীনের সম্পর্ক আরো শক্তিশালী করে তোলার পাশাপাশি পশ্চিমা দেশগুলির বিরুদ্ধে এদিন সরব হয়েছেন দুই নেতা।
রাশিয়ারঅভিযোগ, গণতন্ত্র, মানবাধিকার সহ একাধিক অধিকারের নামে রাশিয়া এবং চীনের বিরুদ্ধে জোট গড়ে তুলছে অ্যামেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলি। তাদের একঘরে করার চেষ্টা করছে। বস্তুত, এর বিরুদ্ধে পাল্টা জোট তৈরির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে এদিন আলোচনা করেছেন পুটিন ও শি।
অ্যামেরিকার বড় শত্রু কারা?
ইরানের সঙ্গে অনেকটা যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে অ্যামেরিকার৷ আর চীনের সঙ্গে চলছে বাণিজ্য যুদ্ধ৷ মার্কিনিদের বিবেচনায় তাঁদের শত্রুদের চিনে নিন ছবিঘরে৷
ছবি: Imago/UPI//Imago/Russian Look
উত্তর কোরিয়া
জরিপের মাধ্যমে অ্যামেরিকার শত্রুদের তালিকা প্রকাশ করে থাকে গ্যালাপ৷ প্রতিষ্ঠানের ২০১৮ সালের জরিপে দেখা যায়, গত কয়েক বছরের মতো এবারও অ্যামেরিকার শত্রু তালিকার শীর্ষ দেশ হিসেবে উত্তর কোরিয়ার নাম আছে৷ ২০১৬ সালে ১৬ ভাগ মানুষ উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক শক্তিকে হুমকি হিসাবে বিবেচনায় নিয়েছিলেন৷ ২০১৮ সালে এসে হুমকি বিশ্বাসকারীদের সংখ্যা ৫১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রাশিয়া
অ্যামেরিকার সঙ্গে রাশিয়ার শত্রুতার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের৷ এর মধ্যে উত্থান-পতনও দেখা গেছে বিভিন্ন সময়ে৷ ২০১৬ সালে ১৫ শতাংশ অ্যামেরিকান বলেছেন, রাশিয়া তাঁদের সবচেয়ে বড় শত্রু৷ ২০১৮ সালে গিয়ে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ শতাংশে৷
চীনের সঙ্গে অ্যামেরিকার বাণিজ্য যুদ্ধ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বিশ্বের অন্যান্য দেশের অর্থনীতিকেও৷ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অর্থনৈতিক পরাশক্তি হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে চীন৷ দুই দেশের সাম্প্রতিক কিছু সিদ্ধান্ত উভয়ের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করছে৷ ২০১৬ সালে অ্যামেরিকার ১২ শতাংশ মানুষের বিবেচনায় চীন ছিল দেশটির সবচেয়ে বড় শত্রু৷ তবে, ২০১৮ সালে দেশটিকে বড় শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করেছেন ১১ শতাংশ অ্যামেরিকান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইরান
২০০৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত অ্যামেরিকানদের কাছে তাঁদের শত্রু তালিকায় শীর্ষে ছিল ইরান৷ পরের কয়েক বছর পরিস্থিতি ভালো হয় কিছুটা৷ তবে, ২০১৫ সালে ইরানকে নিজেদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করেছেন ৯ শতাংশ অ্যামেরিকান৷ ২০১৮ সালে এমন চিন্তার মানুষের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭ শতাংশে৷
ছবি: Imago/UPI//Imago/Russian Look
সিরিয়া
গ্যালাপের পাশাপাশি অ্যামেরিকার শত্রুদের তালিকা প্রকাশ করে থাকে ক্যানাডাভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অন গ্লোবালাইজেশন বা সিআরজি৷ তাদের বিবেচনায় ইরান, রাশিয়া ও ফিলিস্তিনের সঙ্গে সিরিয়ায় ক্ষমতাসীনদের সখ্যের কারণে সিরিয়ার সঙ্গে অ্যামেরিকার বিরোধ হয়েছে৷ আবার অ্যামেরিকা-ইসরায়েল মৈত্রীর ক্ষেত্রে বিপরীত অবস্থানে আছে সিরিয়া৷ ভূ-রাজনৈতিক কারণে সিরিয়ার উপর আধিপত্য রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Elfiqi
ভেনেজুয়েলা
সিআরজি বলছে, ভেনেজুয়েলার তেলের মজুদ ও সামাজিক-রাজনৈতিক কারণে অ্যামেরিকার সঙ্গে তাঁদের বিরোধ দীর্ঘদিনের৷ যদিও বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ভেনেজুয়েলা, তবুও সেই বিরোধ কমেনি মোটেও৷ দেশটির ক্ষমতাসীন মাদুরো সরকারকে হটাতে তৎপর অ্যামেরিকা৷ সম্প্রতি অ্যামেরিকার সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Miraflores
6 ছবি1 | 6
চীনের বক্তব্য, পশ্চিমা দেশগুলি এখন আর নিজেদের সীমার মধ্যে আটকে নেই, বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজিক লোকেশনেও তারা চীন ও রাশিয়ার অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে। প্যাসিফিক অঞ্চলে অস্ট্রেলিয়া, অ্যামেরিকা, জাপান এবং ভারত যেভাবে জোট তৈরি করেছে, তার সমালোচনা করেছে চীন। একইসঙ্গে ন্যাটোকেও একহাত নিয়ে তারা জানিয়েছে, রাশিয়ার দাবি ন্যাটোর মেনে নেওয়া উচিত।
রাশিয়ার দাবি, ন্যাটো আর অগ্রসর হতে পারবে না। অর্থাৎ, ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করা যাবে না। এর ফলে রাশিয়ার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। বিঘ্নিত হচ্ছে বলেই ইউক্রেনের সীমান্তে তারা সেনা পাঠাতে বাধ্য হয়েছে। রাশিয়ার এই দাবিকে সমর্থন করেছে চীন।
ব্যবসা এবং পারস্পরিক নিরাপত্তার বিষয়ে রাশিয়া এবং চীন যৌথভাবে কাজ করবে বলে এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আরো আলোচনা হবে বলেও তারা জানিয়েছেন।
স্বাভাবিকভাবে চীন ও রাশিয়ার এই বৈঠককে ভালো চোখে দেখছে না পশ্চিমা দেশগুলি। ভবিষ্যতে এই জোট কতদূর এগোয় তার দিকে তাকিয়ে কূটনৈতিক বিশ্ব।