রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনকে সাধারণত খুব একটা হাসতে দেখা যায় না৷ তবে এবার তাঁকে হাসিয়েছেন তাঁর কৃষিমন্ত্রী আলেক্সান্দার কাচোভ৷ কীভাবে? খুব সোজা: ইন্দোনেশিয়ায় শূকরের মাংস রপ্তানির কথা বলে৷
বিজ্ঞাপন
নিন্দুকে বলছে, রুশ কৃষিমন্ত্রী সরাসরি রাশিয়া থেকে ইন্দোনেশিয়ায় – এবং অপরাপর দেশে – শূকরের মাংস রপ্তানির প্রস্তাব দিয়েছেন৷ কথাটা ডাহা মিথ্যে৷ মন্ত্রীমশায় – অথবা তাঁর সচিবের নোট নেওয়া-দেওয়ার সময় কি করে যেন জার্মানির ইন্দোনেশিয়ায় শূকরের মাংস রপ্তানির কথাটা ঢুকে পড়ে৷ আহা, অমনটা তো হতেই পারে; মানুষের কি আর ভুল হয় না? বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুসলিম অধিবাসী সম্বলিত দেশে শূকরের মাংস রপ্তানির কথাটা যদি মন্ত্রী-সান্ত্রী-সচিব-নাকিব কারো মাথায় এসে থাকে, তাহলে বলতে হবে সেদেশের কৃষিমন্ত্রী নয়, শিক্ষামন্ত্রীর সর লাও৷
কাচোভের বেশ ‘ফোলো' এসে গিয়েছিল৷ ‘‘এই দেখুন জার্মানরা তাদের শূকরের মাংসের উৎপাদনের অর্ধেকটাই রপ্তানি করে থাকে৷ জার্মানিতে বছরে ৫৫ লাখ টন শূকরের মাংস উৎপাদন হয়, তার মধ্যে প্রায় ৩০ লাখ রপ্তানি হয় নানা দেশে: চীনে, ইন্দোনেশিয়ায়, জাপানে, কোরিয়ায়, অন্যান্য দেশে৷ কাজেই আর যাই হোক, আমাদের শূকরের মাংসে থামলে চলবে না৷ আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে৷ আপনারা জানেন, দূরপ্রাচ্যে আন্তরিকভাবে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে...৷''
ঠিক তখনই সেই একই টেবিলে বসা প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন বলে বসলেন: ‘‘ওরা শূকরের মাংস খায় না...৷''
কাচোভ তখনও বলছেন: ‘‘ওরা খাবে...'', অর্থাৎ আজ যদি না খায়, তো কাল খাবে৷ তার এক সেকেন্ডের মধ্যে নিজের বেচালটা বুঝতে পেরে বলছেন: ‘‘আমি আসলে দক্ষিণ কোরিয়ার কথা বলছিলাম৷ উৎপাদন বৃদ্ধি যার ফলশ্রুতি, সেটা হলো...''
পুটিন তখন হেসেই যাচ্ছেন, দু'হাতে মুখ ঢেকে হাসছেন৷ করবেনই বা কি৷ দেশের কৃষিমন্ত্রী যদি ইন্দোনেশিয়ার মতো মুসলিম-প্রধান দেশে শূকরের মাংস রপ্তানির কথা ভাবতে অথবা বলতে পারেন, তাহলে সেদেশের রাষ্ট্রপ্রধানের মাত্র দু'টি পন্থা বাকি থাকে: হয় হাসা, নয়ত কাঁদা৷
তাহলে পুটিন হেসে কি দোষ করেছেন, বলুন?
এসি/ডিজি
ভ্লাদিমির পুটিন: গোয়েন্দা থেকে প্রেসিডেন্ট
পড়াশোনা শেষে গোয়েন্দা হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন ভ্লাদিমির পুটিন৷ এরপর কয়েক বছরের মধ্যেই রাজনীতির শীর্ষে চলে আসতে সক্ষম হন তিনি৷
জন্ম ১৯৫২ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে৷ ১৯৭৫ সালে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে সাবেক সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিতে যোগ দিয়েছিলেন৷ তাঁর প্রথম দায়িত্ব ছিল নিজ শহর লেনিনগ্রাদে (পরবর্তীতে নাম হয় সেন্ট পিটার্সবার্গ) বিদেশি নাগরিক ও কনস্যুলেটের কর্মীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা৷ এরপর বদলি হন পূর্ব জার্মানির ড্রেসডেনে৷ বার্লিন প্রাচীর পতনের পর তিনি কেজিবির অনেক ফাইল পুড়িয়ে ফেলেন বলে জানা যায়৷
বামে তরুণ পুটিনকে দেখতে পাচ্ছেন? ছবিতে যে ব্যক্তিকে এক নারীর সঙ্গে হাত মেলাতে দেখা যাচ্ছে, তাঁর নাম আনাতোলি সবচাক৷ তিনিই প্রথম পুটিনকে রাজনীতিতে নিয়ে আসেন, নিজের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন পুটিনকে৷
ছবি: Imago/ITAR-TASS
উল্কার বেগে উত্থান
খুব দ্রুতই সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে মস্কো চলে গিয়েছিলেন পুটিন৷ ১৯৯৭ সালে তৎকালীন রুশ প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলিৎসিন তাঁকে নিজের প্রশাসনে মাঝ পর্যায়ের এক পদে নিয়োগ দেন৷ এই পদটি আসলে ছিল গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বন্ধুত্ব গড়ে তোলার পদ, যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা পেয়েছিলেন পুটিন৷
ছবি: picture alliance/AP Images
বন্ধুর মৃত্যু
২০০০ সালে সবচাকের মৃত্যু পুটিনকে আবেগে আক্রান্ত করেছিল৷ কারণ, যাঁরা পুটিনকে রাশিয়ার ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন তিনি৷ সবচাকের মৃত্যুর বছরখানেক আগে তাঁর বিরুদ্ধে থাকা প্রতারণার অভিযোগ নিজের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে বাতিল করেছিলেন পুটিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Chirikov
অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট
২০০০ সালের জুনে ইয়েলিৎসিন ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পুটিন অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন৷ এরপর যখন তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছিলেন, তখন তাঁর বিরুদ্ধে সেন্ট পিটার্সবার্গ প্রশাসনে থাকাকালীন দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছিল৷ কিন্তু অভিযোগ যিনি এনেছিলেন, সেই সাংসদ মারিনা সালিয়েকে শেষ পর্যন্ত শহর ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল৷
ছবি: Imago/ITAR-TASS
রাজনৈতিক সঙ্গী
সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দু’বার দায়িত্ব পালনের পর ২০০৮ সালে আর তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হওয়া সম্ভব ছিল না পুটিনের৷ তাই সেই সময় তিনি তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মী দিমিত্রি মেদভেদেভকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সমর্থন দিয়েছিলেন৷ আর নিজে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন৷ সেবারই সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয় আর প্রেসিডেন্টের মেয়াদকাল চার থেকে বাড়িয়ে ছয় বছর করা হয়৷ এরপর ২০১২ সালে আবার প্রেসিডেন্ট হন পুটিন৷
ছবি: Imago/ITAR-TASS
চতুর্থবার প্রেসিডেন্ট
১৮ মার্চ, ২০১৮ রবিবার অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবারও জয়লাভ করেন পুটিন৷ ফলে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকছেন তিনি৷ ২০৩০ সালেও তিনি প্রার্থী হবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে পুটিন সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘১০০ বছর বয়স পর্যন্ত কাজ করে যাবার কোনো ইচ্ছা তাঁর নেই৷’’