ইসরায়েলের হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ১৭২-এ দাঁড়িয়েছে৷ নিহতের মধ্যে ৩০ ভাগই নারী ও শিশু৷ গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাতদিনের এই সহিংসতা বন্ধ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না তাঁরা৷
বিজ্ঞাপন
ইসরায়েলের বিমান এবং নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ গাজার ২০৪টি স্থান লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে৷ রোববার রাতভর এই অভিযান চলেছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী৷ গত দুই বছরের মধ্যে দু'পক্ষের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা বলা হচ্ছে এটাকে৷ অন্যদিকে, ফিলিস্তিনের হামাস গোষ্ঠী ইসরায়েলে ২০টি রকেট হামলা চালালেও এতে কেউ হতাহত হয়নি৷
হামাস নেতা ইজ্জত আল-রেসিক স্থানীয় এক টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এই ভয়ংকর যুদ্ধ শুরু করেছেন এবং তারই উচিত এটা শেষ করা৷''
যে লড়াই আজও চলছে...
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলমান সংঘাত নিয়ে গবেষণা করছে হাইডেলবার্গ ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল কনফ্লিক্ট রিসার্চ (এইচআইআইকে)৷ তাদের হিসেবে, গত বছর গোটা বিশ্বে চারশোর মতো সংঘাত ঘটেছে, যার বিশটি সরাসরি যুদ্ধ৷ এই নিয়ে ছবিঘর৷
ছবি: Reuters
শান্তির কোনো লক্ষণ নেই
ধর্মান্ধতা, দুষ্প্রাপ্য খনিজ পদার্থের লোভ কিংবা ক্ষমতা দখলের বাসনা – হাজার হাজার বছর ধরে যুদ্ধ, সংঘাতের কারণ ঘুরে ফিরে এগুলোই৷ ২০১৩ সালেও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি৷ হাইডেলবার্গ ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল কনফ্লিক্ট রিসার্চ (এইচআইআইকে) গত বছরের উল্লেখযোগ্য কিছু সংঘাত, যুদ্ধের কথা প্রকাশ করেছে ‘কনফ্লিক্ট ব্যারোমিটার ২০১৩’ শিরোনামে৷
ছবি: Reuters
ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো
গত বছর কিভু-তে সেনাবাহিনী নিয়মিত এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছে৷ ২০১৩ সালের শেষের দিকে অবশ্য সরকার ঘোষণা দেয়, বিদ্রোহীদের দমনে সক্ষম হয়েছে তারা৷ অন্যদিকে এম২৩ গোষ্ঠীর ঘোষণা, এখন থেকে রাজনৈতিক পথে দাবি আদায়ের চেষ্টা করবে তারা৷
ছবি: Melanie Gouby/AFP/GettyImages
মালি
মালিতে উগ্র ইসলামপন্থিরা ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছে৷ ২০১২ সালে সে দেশের উত্তরাঞ্চলের একটা বড় অংশ তাদের দখলে চলে যায়৷ ফলশ্রুতিতে মালি সরকারকে যুদ্ধে সহায়তায় এগিয়ে আসে ফ্রান্স৷ এরপর পিছু হটতে বাধ্য হয় উগ্র ইসলামপন্থিরা৷ বর্তমানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী মালিতে শান্তি রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে৷ তবে সে দেশে বিভিন্ন জঙ্গি এবং আত্মঘাতী হামলার খবর মাঝে মাঝেই শোনা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নাইজেরিয়া
উগ্র ইসলামপন্থি জঙ্গি গোষ্ঠী বোকো হারাম নাইজেরিয়ায় শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠা করতে চায়৷ এই লক্ষ্য পূরণে সে দেশের খ্রিষ্টান এবং মধ্যপন্থি মুসলমানদের উপর হামলা অব্যাহত রেখেছে গোষ্ঠীটি৷ ছবিতে একটি হামলায় নিহতদের জন্য সমাধি খুঁড়ছেন তাদের খ্রিষ্টান আত্মীয়রা৷ নাইজেরিয়ায় আরো একটি সংঘাত চলছে৷ তৃণভূমি ইস্যুতে খ্রিষ্টান কৃষকরা লড়াই করছেন গবাদি পশু পালক মুসলমানদের সঙ্গে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সুদান
গত দশ বছরের বেশি সময় ধরে দারফুর অঞ্চলে বসবাসকারী আফ্রিকার বিভিন্ন গোষ্ঠী সরকারি বাহিনী এবং তাদের অনুসারীদের সঙ্গে লড়াই করছে৷ যুদ্ধের কারণে কয়েক লাখ মানুষ ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে এবং অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আফগানিস্তান
আফগানিস্তানে নিযুক্ত ন্যাটো বাহিনী স্থানীয় বাহিনীর হাতে সে দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার পরও সংঘাত অব্যাহত রয়েছে৷ তালেবান এবং অন্যান্য চরমপন্থি গোষ্ঠী সে দেশের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আত্মঘাতী হামলা এবং ‘বুবি-ট্র্যাপ’-এর মাধ্যমে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে৷ বিশেষ করে সীমান্ত অঞ্চলে সংঘাত থামার কোন লক্ষণ নেই৷ জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, আফগানিস্তানে ২০১৩ সালে আড়াই হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মেক্সিকো
মাদক, মানবপাচার, ব্ল্যাকমেল এবং চোরাচালানের মতো কর্মকাণ্ড মেক্সিকোর মাফিয়াদের অর্থ উপার্জনের উৎস৷ আয়ের এসব উৎস নিরাপদ রাখতে মাফিয়ারা একে অপরের সঙ্গে এবং প্রয়োজনে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়৷ সে দেশে প্রতি সপ্তাহেই দাঙ্গার ঘটনা ঘটে৷ মেক্সিকো সরকারের হিসেব অনুযায়ী, গত বছর সে দেশে ১৭ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সিরিয়া
সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে৷ সেদেশ কার্যত বিভিন্ন অংশে ভাগ হয়ে গেছে৷ কিছু অংশের দখল রয়েছে সে দেশের প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারি বাহিনীর কাছে, বাকি বিভিন্ন অঞ্চল মধ্যপন্থি বিরোধী দল, উগ্র ইসলামপন্থি গোষ্ঠী এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দখলে চলে গেছে৷ সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধে এখন পর্যন্ত এক লাখের বেশি মানুষ নিহত এবং নব্বই লাখের মতো মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে৷
ছবি: Mohmmed Al Khatieb/AFP/Getty Images
ফিলিপাইন্স
চল্লিশ বছরের বেশি সময় ধরে ফিলিপাইন্সে মোরো সম্প্রদায় স্বাধীনতার দাবিতে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে৷ মাঝে কিছুদিন অপেক্ষাকৃত শান্ত থাকার পর ২০১৩ সালে আবারো তারা শুরু হয়েছে সহিংস সংগ্রাম৷ বিদ্রোহী গোষ্ঠী এমএনএলএফ সে দেশের দক্ষিণের দ্বীপগুলোর স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে৷ যুদ্ধের কারণে এক লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে৷
ছবি: Reuters
সোমালিয়া
সোমালিয়ায় আল-শাবাব জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে সরকারি বাহিনীর যুদ্ধ চলছে গত আট বছর ধরে৷ জাতিসংঘ এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের সেনাদের সহায়তায় সোমালিয়া সরকার আল-শাবাবকে ঠেকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে৷ তবে এখনো সে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি বড় অংশ জঙ্গি গোষ্ঠীর দখলে রয়েছে৷
ছবি: Mohamed Abdiwahab/AFP/Getty Images
দক্ষিণ সুদান
তিন বছর আগে স্বাধীনতা লাভ করা দক্ষিণ সুদানে এখনো সংঘাত অব্যাহত রয়েছে৷ সে দেশের ভাইস-প্রেসিডেন্টের পক্ষের সেনারা প্রেসিডেন্সিয়াল ফোর্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে৷ এছাড়া প্রতিবেশী দেশ সুদানের দুটি রাজ্যে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে চলমান আন্দোলনের সঙ্গেও সম্পৃক্ত রয়েছে দক্ষিণ সুদানের সেনারা৷
ছবি: Reuters
11 ছবি1 | 11
ইসরায়েল জানিয়েছে, গাজার একটি ড্রোন তারা ভূপাতিত করেছে৷ রোববার ভোরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় তিন বছর বয়েসি একটি মেয়েশিশু মারা গেছে৷ এরও কয়েক ঘণ্টা আগে গাজার পুলিশ প্রধানের বাসভবন লক্ষ্য করে চালানো বিমান হামলায় অন্তত ১৮ জন নিহত হয় বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে৷ নিহতদের বেশিরভাগই সাধারণ নাগরিক বলে জানিয়েছেন তাঁরা৷
এরই মধ্যে গাজায় কমান্ডো অভিযানও শুরু করেছে ইসরায়েল৷ হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে রোববার সংঘর্ষে জড়িয়েছে ইসরায়েলের নৌ কমান্ডোরা৷ গাজায় ইসরায়েলের ছয় দিনব্যাপী বিমান হামলার মধ্যে এটিই সেখানে প্রথম স্থল হামলা বলে মনে করা হচ্ছে৷
আরব লিগের বৈঠক
এই সংকট নিরসনে সোমবার রাতে কায়রোতে বৈঠকে বসার কথা আরব লিগের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ক্রমাগত চাপের কারণে সহিংসতা বন্ধে আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছেন এই নেতারা৷
পালাচ্ছে মানুষ
জাতিসংঘ জানিয়েছে, দু'পক্ষের সংঘর্ষ শুরুর পর অন্তত ৭০ হাজার মানুষ গাজা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে৷ সংঘর্ষে আহত হয়েছে অন্তত ১,২৩০ জন৷ গাজাভিত্তিক একটি মানবাধিকার সংগঠন জানিয়েছে, গাজার ৮৬৯টি বাড়ি ইসরায়েলের হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে৷
ঘটনার শুরু তিন ইসরায়েলি কিশোরকে অপহরণ ও নিহতের ঘটনার জের ধরে৷ ঐ তিন কিশোরকে অপহরণ ও নিহতের জন্য হামাসকে দায়ী করে ইসরায়েল৷ পরে সন্দেহভাজনদের ধরতে গাজায় সাঁড়াশি অভিযান চালায় ইসরায়েলি পুলিশ৷ হামাস যোদ্ধা সন্দেহে গাজার শতাধিক বাসিন্দাকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ পরে এক ফিলিস্তিনি কিশোরকে পুড়িয়ে মারার পর পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে৷ গাজা থেকে রকেট হামলা চালানো হচ্ছে অভিযোগ তুলে সেখানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল৷