পুতুলখেলার ইতিকথা
২৪ মে ২০১৪সেলিম ভারোল, পেশায় শিল্পপতি, হলেন নানা ধরনের পুতুলের মালিক৷ এরা আবার নানা ধরনের খেলা, কমিক কিংবা ফিল্মের চরিত্র৷ সেলিমের সংগ্রহে এ ধরনের হাজার দেড়েক পুতুল আছে৷ তার মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ হল তথাকথিত ‘ডিজাইনার টয়'৷ একটি ডিজাইনার টয়ের দাম পাঁচ হাজার ইউরো অবধি হতে পারে৷ সেলিম তাঁর বারো বছর বয়স থেকে এই সব পুতুল জমাচ্ছেন৷ সেলিম বলেন, ‘‘এই সব পুতুল কাছে থাকলে, এই সব পুতুল নিয়ে খেললে, যা আবার জেগে ওঠে, তা হল অতীতের কল্পনাশক্তি৷ সেই কারণেই বহু মানুষের কাছে এবং আমার কাছেও খেলনার আজও একটা বড় ভূমিকা আছে৷''
ড্যুসেলডর্ফ শহরের ‘টয়কিয়ো' বিপণী: এটা হল দোকান, কাফে ও আর্ট গ্যালারির একটা সংমিশ্রণ৷ সেলিম ভারোল এই পন্থায় তাঁর নেশাটাকে অংশত পেশা করে তুলেছেন৷ নয়তো তিনি ও তাঁর ভাই ও বাবা মিলে একটি টেলিযোগাযোগ সংস্থা পরিচালনা করে থাকেন৷ কোন খেলনাগুলো তাঁর নিজের সংগ্রহ এবং টয়কিয়ো-র পণ্যসম্ভারে খাপ খায়, সেলিম সেদিকে কড়া নজর রাখেন৷ তাঁর বক্তব্য হলো, ‘‘খেলনা নতুন হতে হবে, এমন কিছু একটা, যা এ যাবৎ সংগ্রহে ছিল না৷ এবং সংগ্রহের যে সুবিশাল আকার, তাতে কাজটা খুব সহজ নয়৷ দোকানের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য৷ আমার যে সব খেলনা ভালো লাগে, সেগুলো আমি দোকানেও রাখবার চেষ্টা করি৷ স্বভাবতই সেগুলো সাধারণ জনতারও ভালো লাগে, অর্থাৎ সেগুলো কিছুটা কমার্শিয়ালও বটে৷''
টোকিও-র অনুকরণে টয়কিয়ো৷ কাজেই সে দোকান যে ড্যুসেলডর্ফের জাপানি পাড়ায় হবে, তা তো জানাই কথা৷ খোদ টোকিও আবার ডিজাইনার টয়-এর মহাতীর্থ বলে খ্যাত৷ ডিজাইনাররা নিজেরাই জাপানের রাজধানীতে গিয়ে অনুপ্রেরণা সংগ্রহ করে আসেন৷ সেলিম ভারোল টোকিও-য় গিয়ে এই সব পুতুল দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এগুলো আমার জীবনের অংশ, অর্থাৎ আমার অংশ৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে এরা আবার আমার আদর্শও বটে৷ এরাই আমার জীবন, আমার বন্ধুবান্ধব, অন্যান্য শিল্পীদের সঙ্গে আমার সম্পর্কের কথা বলে৷ এক হিসেবে আমার সংগ্রহই আবার আমি, বলা চলে৷''
সেলিম ভারোল একাই পুতুলখেলার ভক্ত নন – জার্মানদের এক-তৃতীয়াংশ নাকি খেলনা সংগ্রহ করে থাকেন৷ সেলিম ভারোল-এর পুতুলগুলো প্রায়ই নানা আর্ট গ্যালারিতে প্রদর্শিত হয়, যেমন ২০১২ সালে বার্লিনে৷ সবচেয়ে পুরনো পুতুলগুলো তাঁর শৈশবের সাথী ছিল৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা হল ব্যাটম্যান৷ ব্যাটম্যান ছিল প্রথম সুপারহিরো৷ এমনকি খুতনির দাগটা কোত্থেকে এসেছে, তাও আমি জানি৷ সে আমলে ব্যাটম্যান ছিল আমার নিত্যসঙ্গী৷ আজও তার জন্য আলাদা জায়গা আছে৷''
সেলিম ভারোলের কাছে পুতুল সংগ্রহ করাটা শুধু পুতুলদের কল্যাণেই নয়৷ তাঁর জীবনের অনেকটাই এই পুতুলের সংগ্রহকে ঘিরে৷ তিনি বলেন, ‘‘পুতুল সংগ্রহ করতে গিয়ে আমি অনেক বন্ধু খুঁজে পেয়েছি৷ শুধু যারা এই সব পুতুল ডিজাইন করেন, তাদের সঙ্গেই নয়, বরং অন্যান্য সংগ্রাহক, পুতুলের দোকানদার ও অন্যান্য মানুষের সঙ্গেও৷''
পুতুল সংগ্রহে একটা জীবন কাটিয়ে দেওয়া: এটা প্রাপ্তবয়স্ক হবার পরেও অন্তরের শিশুটিকে বাঁচিয়ে রাখার একটা সুন্দর পন্থা৷