পুনর্নির্বাচিত হলে পশ্চিম তীরে বসতি বাড়াবেন নেতানিয়াহু
৭ এপ্রিল ২০১৯
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন যে চতুর্থবারের মতো পুনর্নির্বাচিত হলে জর্ডান নদীর পশ্চিমাংশে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করবেন তিনি৷ তবে, তাতে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু শনিবার জানিয়েছেন যে পুনর্নির্বাচিত হলে পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণ করবেন তিনি৷ আগামী সপ্তাহে ইসরায়েলে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের আগে এমন মন্তব্য করলেন তিনি৷
‘‘আমি একটি বসতিও সরিয়ে নেবো না৷ এবং আমি অবশ্যই নিশ্চিত করবো যে জর্ডান নদীর পশ্চিমাংশ আমরা নিয়ন্ত্রণ করছি,'' ইসরায়েলি টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে একথা বলেন তিনি৷
ইসরায়েল: দেশটি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য
ফিলিস্তিনের সঙ্গে এবং সেই কারণে বলতে গেলে প্রায় গোটা মুসলিম বিশ্বের সঙ্গেই ইসরায়েল নামের রাষ্ট্রটির বৈরিতা৷ তবে ইহুদি অধ্যুষিত এ দেশ সম্পর্কে এই তথ্যগুলো কি জানেন? জানলে সত্যিই অবাক হবেন৷
রাষ্ট্র ভাষা কয়টি?
জানেন ইসরায়েলের রাষ্ট্রভাষা ক’টি? দু’টি৷ আধুনিক হিব্রু ভাষা এবং আরবি৷ হিব্রু ভাষার কথা তো সবাই শুনেছেন, কিন্তু ‘আধুনিক হিব্রু’ বলতে ঠিক কী বোঝানো হচ্ছে তা হয়ত অনেকেই বুঝতে পারবেন না৷ এই ভাষাটি গত ১৯ শতকের শেষভাগ পর্যন্তও বিকশিত হয়েছে৷ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আধুনিক হিব্রুর শেকড় প্রাচীন হিব্রু হলেও এখন এ ভাষায় ইংরেজি, স্লাভিচ, আরবি এবং জার্মানসহ অনেকগুলো বিদেশি ভাষার প্রভাব রয়েছে৷
ছবি: Fotolia/Ivan Montero
ইসরায়েলের আয়তন কত?
ছোট্ট দেশ৷ কিন্তু কত ছোট? ইসরায়েলের আয়তনই বা কত? কাজির গরু নাকি গোয়ালে থাকে না, গাছে থাকে৷ ইসরায়েলের ক্ষেত্রে কথাটা একটু অন্যভাবে বলা যায়৷ ইসরায়েলের ভূমি চুক্তিতে থাকে না, বাস্তবে থাকে৷ ১৯৪৯ সালে ইসরায়েল, লেবানন, জর্ডান ও সিরিয়ার মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল সেই চু্ক্তি অনুযায়ী দেশটির আয়তন হওয়ার কথা ২০ হাজার ৭৭০ বর্গ কিলোমিটার৷ কিন্তু ইসরায়েলের আয়তন এখন ২৭ হাজার ৭৯৯ বর্গ কিলোমিটার৷
ইসরায়েলের ‘সবাই’ সেনাসদস্য
ইসরায়েল একমাত্র দেশ যেখানে প্রাপ্ত বয়স্ক সব নাগরিকের জন্যই সেনা প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক৷ সুতরাং দেশটিতে যতজন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক সেনাসদস্যও এক অর্থে ততজন৷ সেনাপ্রশিক্ষণও স্বল্পমেয়াদি হয় না৷ সব প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেকে ৩ বছরের এবং মেয়েকে অন্তত ২ বছরের প্রশিক্ষণ নিতে হয়৷
ছবি: dapd
ইসরায়েলিও ফিলিস্তিনের সমর্থক?
ইহুদিদের একটি ধর্মীয় সংগঠন জিওনিজম মতবাদ এবং ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে৷ সংগঠনটির নাম, ‘নেতুরেই কার্টা’ বা ‘নগর রক্ষক’৷ ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই সংগঠনটি ‘ফিলিস্তিনের সমর্থক’ হিসেবে পরিচিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আইনস্টাইন প্রেসিডেন্ট হননি
নোবেল বিজয়ী জার্মান পদার্থ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদিনিধন বন্ধ করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন৷ ইসরায়েল তাঁর কথা শুধু কৃতজ্ঞচিত্তে মনেই রাখেনি, তাঁকে সম্মানও জানাতে চেয়েছিল প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব দিয়ে৷ ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন আইনস্টাইন৷
ছবি: Imago/United Archives International
ঈশ্বরের কাছে চিঠি
ইসরায়েলের মানুষ সত্যি সত্যিই ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে প্রচুর চিঠি লিখে৷ প্রতি বছর জেরুসালেমের ডাক বিভাগ এমন অন্তত হাজার খানেক চিঠি পায় যেখানে প্রাপকের জায়গায় লেখা থাকে ‘ঈশ্বর’!
ছবি: Fotolia/V. Kudryashov
জেরুসালেম যা যা সয়েছে
ইতিহাস বলছে, প্যালেস্টাইনের রাজধানী জেরুসালেমে এ পর্যন্ত ২৩ বার ভয়াবহ আগুন লেগেছে আর বহিঃশক্তির আক্রমণের শিকার হয়েছে ৫২ বার৷ জেরুসলেম দখল এবং পুনরুদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে ৪৪ বার৷
ছবি: DW/S. Legesse
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ নোট
ইসরায়েলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে বিশেষ মুদ্রা৷ ‘ব্রেইল’-এর মতো বর্ণের সহায়তায় কাগুজে নোটগুলোতে লেখা থাকে বলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের কেনাকাটা বা মুদ্রা বিনিময়ে কোনো অসুবিধা হয় না৷ সারা বিশ্বে ইসরায়েল ছাড়া ক্যানাডা, মেক্সিকো, ভারত আর রাশিয়াতেও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য এই বিষেষ ব্যবস্থা রয়েছে৷
ছবি: picture alliance/landov
8 ছবি1 | 8
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিগত মেয়াদকালগুলোতে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণে উৎসাহ যোগালেও এর আগে কখনো এভাবে প্রকাশ্যে পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণের কথা বলেননি নেতানিয়াহু৷
ঝুঁকিতে দ্বিজাতি সমাধান
প্রসঙ্গত ১৯৬৭ সালে ছয়দিনের যুদ্ধের পর থেকে পশ্চিম তীর দখলে রেখেছে ইসরায়েল৷ প্রায় ত্রিশ লাখ ফিলিস্তিনি সেখানে বসবাস করেন৷ তাদের সঙ্গে রয়েছেন কয়েক হাজার ইসরায়েলি ইহুদি, যারা বিগত বছরগুলোতে সেখানে বসতি গড়েছেন৷
সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে সংঘাত নিরসনে নেয়া দ্বিজাতি সমাধানে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের জন্য স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ার বিষয়টি রয়েছে৷ বিশ্বের অনেক দেশ এক্ষেত্রে ফিলিস্তিনিদের সমর্থন দিচ্ছে৷ জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী, যুদ্ধে দখলকৃত অঞ্চলে বসতি স্থাপন অবৈধ৷
ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শান্তি ফেরাতে যে শান্তি আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তাতে পশ্চিম তীরের ইহুদি বসতিগুলো জটিলতা সৃষ্টি করছে৷ সেই আলোচনা অবশ্য ২০১৪ সাল থেকে স্থবির হয়ে আছে৷ এখন পশ্চিম তীরে যদি ইসরায়েল আরো বসতি সম্প্রসারণ করতে চায়, তাহলে দ্বিজাতি সমাধান আরো ঝুঁকিতে পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
নেতানিয়াহুর জয়ের সম্ভাবনা কতটা?
নির্বাচনপূর্ব জরিপগুলো বলছে প্রধানমন্ত্রী পদে মূল দুই প্রার্থীর প্রতি সমর্থন কাছাকাছি পর্যায়ে থাকবে৷ তবে, নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির পক্ষে জোট গড়ে নতুন সরকার গঠনের সম্ভবনা তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বেনি গেনৎসের মধ্যপন্থি নীল এবং সাদা পার্টির চেয়ে বেশি৷ নেতানিয়াহু দাবি করেছেন যে গেনৎস জিতলে ইসরায়েলের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে, কেননা ফিলিস্তিনিদের আঞ্চলিক ছাড় দেয়া হতে পারে৷
এক ফিলিস্তিনির বাড়িঘর তছনছ করল ইসরায়েলিরা
01:05
এদিকে, পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণ সংক্রান্ত নেতানিয়াহুর মন্তব্যের জবাবে কোনো বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট৷ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ইসরায়েলে নির্বাচনের আগে নিজেকে নিরপেক্ষ অবস্থানে রাখার কথা বলেছেন৷ তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের নেয়া দু'টি নীতিগত সিদ্ধান্ত নেতানিয়াহুর পক্ষেই গেছে৷ সিদ্ধান্ত দু'টি হচ্ছে: জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন স্বীকৃতি দেয়া এবং অধিকৃত গোলান হাইটসে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করে নেয়া৷
মার্কিন এই নীতিগত পরিবর্তনকে নিজের সাফল্য হিসেবে শনিবার উপস্থাপন করেছেন নেতানিয়াহু৷ তিনি জানিয়েছেন যে ট্রাম্পকে ব্যক্তিগতভাবে চাপ দিয়ে এই সিদ্ধান্তগুলো আদায় করেছেন তিনি৷