1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পুনর্বাসন ও পরিকল্পনাহীন আত্মসমর্পণ কাজে আসছে না

গোলাম মোর্তোজা
৩০ এপ্রিল ২০১৯

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে একসময় সর্বহারা পার্টির দৌরাত্ম্য ছিল আতঙ্কজনক৷ ‘সর্বহারা' একসময় আদর্শিক রাজনৈতিক অবস্থান হলেও, সেই পার্টির মধ্যে কোনো আদর্শ ছিল না৷

ছবি: DW/ISPR

ছোট ছোট দলে, উপদলে বিভক্ত হয়ে ডাকাতি-চাঁদাবাজি ছিল তাদের প্রধান কাজ৷ অর্থের বিনিময়ে মানুষ হত্যাও করত তারা৷

রাজনৈতিক দলের নেতারাও তাদের নানা অপকর্মে ব্যবহার করত৷ এক নেতার পক্ষ হয়ে আরেক নেতা বা তার কর্মী-ক্যাডারদের হত্যা করত৷ নিজেদের ভেতরে দলাদলি, একে-অপরকে হত্যা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষিতে কয়েকশ' সর্বহারা আত্মসমর্পণ করে৷ এলাকায় পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না এলেও, এক ধরনের শান্তি ফিরে আসে৷ এটা ছিল ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের ঘটনা৷ এরপর আজ থেকে মাত্র কয়েক মাস আগে সুন্দরবনের বেশ কয়েকটি ডাকাত দল আত্মসমর্পণ করে৷ এমনকি সম্প্রতি আত্মসমর্পণ করে ১৫ জেলার প্রায় ৬০০ চরমপন্থি

অন্ধকারে জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ সময় কাটিয়ে তারা সম্ভবত ক্লান্ত হয়ে পড়ে৷ স্বাভাবিক জীবন বলতে কিছু থাকে না৷ মৃত্যুর আতঙ্কও হয়ত পেয়ে বসে৷ স্বাভাবিক জীবনে ফেরার একটা আকাঙ্খা তৈরি হয় এ সব সন্ত্রাসীদের ভেতর৷ তৃতীয় কোনো একটি পক্ষের মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের ভিত্তিতে আত্মসমর্পণের ঘটনা ঘটে৷ সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলা-জেলদণ্ড সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করা হবে৷ তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে করাও হয়৷ সন্ত্রাসীরা অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দেয়৷ দৃশ্যমানভাবে ফিরেও আসে৷

স্বাভাবিক জীবনে ফেরার ক্ষেত্রে সমস্যা শুরু হয় জেল থেকে বের হওয়ার পর৷ আত্মসমর্পণ করলেও কিছু সন্ত্রাসী থেকে যায় অন্ধকার জগতে৷ তারা এই আত্মসমর্পণ মেনে নিতে চায় না৷ তাদের সব তথ্য জানিয়ে দিতে পারে প্রশাসনকে, এই সন্দেহে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা অনেককে হত্যা করা হয়৷ যে সব ব্যবসায়ীকে তারা চাঁদা দিতে বাধ্য করত, হত্যাকাণ্ডগুলোর পেছনে তাদেরও ভূমিকা থাকে৷ যে রাজনৈতিক নেতা তাদের ব্যবহার করতে, তথ্য ফাঁস আতঙ্ক তার বা তাদের ভেতরেও থাকে৷ কোনোক্ষেত্রে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সন্ত্রাসীরা এ সব রাজনীতিবিদদের ইশারাতেও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়৷ প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক নেতাও প্রতিশোধ নিয়ে থাকে৷

গোলাম মোর্তজা, সাংবাদিকছবি: Golam Mortoza

এছাড়া দৃশ্যমানভাবে অস্ত্র জমা দিলেও, কিছু অস্ত্র তারা নিজেদের কাছে রেখে দেয়৷ একটা বিবেচনা থাকে নিজেদের নিরাপত্তা৷ তারা দীর্ঘ বছর স্বাভাবিক কাজকর্ম ছাড়া চোরাচালান-ডাকাতি-চাঁদাবাজি নির্ভর জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে৷ অন্যদিকে স্বাভাবিক ব্যবসা করে অর্থ আয় করে জীবনযাপন করাও তাদের জন্যে কঠিন হয়ে পড়ে৷ ফলে ভেতরে ভেতরে তারা নানারকম অপকর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে বা হয়ে পড়ে৷ স্বাভাবিক জীবনযাপন বলতে যা বোঝায়, তা আসলে খুব একটা হয়ে ওঠে না৷ অনেকেই ভয়-আতঙ্ক-দুঃখ-কষ্টে দিন কাটাতে থাকে৷

সরকার তাদের যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে আত্মসমর্পণ করায় তাতে মামলা-জেলদণ্ডের দিকটি ছাড়া অন্য কোনো সংবেদনশীল বিষয় থাকে না৷ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পুনর্বাসন৷ এ ক্ষেত্রে সরকার প্রায় কোনো দায়িত্ব পালন করে না৷ অথচ স্বল্প সুদে ঋণ, নানা ধরনের প্রশিক্ষণের বিষয়ে জাতীয় উদ্যোগ নিলে সুফল মিলতে পারত৷ এনজিওদের সম্পৃক্ত করেও তাদের কাজের সুযোগ তৈরির চেষ্টা করা যায়৷ কিন্তু এ সব কোনো কিছুই সরকারকে করতে দেখা যায় না৷

তাদের বিষয়গুলো যে বিশেষ দৃষ্টিতে দেখা দরকার, তা স্থানীয় প্রশাসন বিবেচনায় নেয় না৷ শুধু তাই ময়, তাদের নিরাপত্তার দিকটিও প্রশাসন দেখে না৷ ফলে এলাকায় কিছুদিন বা কয়েক বছর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কমলেও, আস্তে আস্তে তা আবারো বৃদ্ধি পেতে থাকে৷ আত্মসমর্পণ করা সন্ত্রাসীদের অনেকে আবার পুরনো জগতে ফিরে যায়৷ নতুন দল গঠন করে৷ গড়ে ওঠে পুরনো-নতুন মিলিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী৷

১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে যে সব জেলার সন্ত্রাসীরা আত্মসমর্পণ করেছিল, ২০১৯ সালে সেসব জেলার সন্ত্রাসীরা আবার আত্মসমর্পণ করলো৷ ফলে সরকার যদি সু্ষ্ঠু গবেষণালদ্ধ একটি পুনর্বাসন পরিকল্পনাসহ উদ্যোগ না নেয়, তবে এ সব আত্মসমর্পণে সাময়িক সাফল্য মিলবে, স্থায়ী নয়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ