পুরনো ঐতিহ্য ধরে রেখে নারীদের সহায়তা করা কোম্পানি
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
পোশাকের উপর এমব্রয়ডারির কাজ করে থাকে মাটেও ডিজাইন৷ এসব ডিজাইন প্রায় ২০০ বছরের পুরনো৷
রোৎসি ভাৎসির কোম্পানিতে ৪৫ জন সিনিয়র এমব্রয়ডার কারিগর কাজ করেন৷ তারা মাটেও এমব্রয়ডারি ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে চলেছেন৷ ইউনেস্কো এই এমব্রয়ডারিকে বিমূর্ত বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ ঘোষণা করেছে৷ নিজ কোম্পানির মাধ্যমে রোৎসি স্থানীয় নারীদের সহায়তাও করছেন৷
রোৎসি ভাৎসি বলেন, ‘‘এখানে কাজ করে তারা শুধু অর্থ উপার্জনই করছেন না, তারা অনুভব করতে পারেন যে তাদের কাজটা গুরুত্বপূর্ণ এবং তারা সমাজের অংশ৷ মাটেও ডিজাইন জীবনের প্রতি পরিপূর্ণ মনোভাব তুলে ধরে৷ টার্ডে আমরা সবাই এক বড় পরিবার৷''
রোৎসি ভাৎসি ছোটবেলাতেই এসব এমব্রয়ডারির সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন৷ এই ডিজাইনগুলোকে তিনি এখনকার পোশাকে অন্তর্ভুক্ত করছেন৷ তিনি কীভাবে বিষয়টি শিল্প ও সম্প্রদায়- অর্থাৎ, সবার জন্য লাভজনক করে তুললেন?
হাঙ্গেরির উত্তরে স্লোভাকিয়ার সীমান্তের কাছে টার্ড গ্রামটি অবস্থিত৷ কয়েক প্রজন্ম ধরে সেখানকার নারীরা মাটেও ডিজাইন নিয়ে কাজ করে আসছেন৷ এই ডিজাইনে স্যাটিন-স্টিচ কৌশল ব্যবহার করে প্রধানত গোলাপের মোটিফ তুলে ধরা হয়৷ ২০১২ সালে এই ডিজাইনকে বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ঘোষণা করে ইউনেস্কো৷ রোৎসির কোম্পানির লক্ষ্য শুধু এই ডিজাইন টিকিয়ে রাখা নয়, তারা স্থানীয় নারীদেরও সহায়তা করতে চান৷
ভায়েদ মিকলোসনে নামের এক এমব্রয়ডার কারিগর বলেন, ‘‘আমি বাড়িতেও কাজ করতে পারতাম, কিন্তু যখন আমরা একসঙ্গে কাজ করি তখন বেশি মজা হয়৷ আমরা কথা বলি, দক্ষতা ভাগাভাগি করি, এমনকি কাজ করতে করতে দৈনন্দিন সমস্যারও সমাধান করে ফেলি৷''
হায়ডু মিকলোসনে নামের আরেক এমব্রয়ডার কারিগর বলেন, ‘‘আমি যখনই আমাদের পোশাকের দিকে তাকাই আমার খুব ভালো লাগে৷ এত সুন্দর! এগুলো টার্ডে তৈরি হয় বলে আমি খুশি৷''
কাটা স্টেফান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘‘আমি এমন ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে স্কুলে যেতে চাইতাম না, কিন্তু আমি টি-শার্ট পরবো৷ তাহলে সবাই আমাদের সংস্কৃতি ও ডিজাইন দেখতে পারবে৷ এমন পোশাক আপনি প্রতিদিন পরতে পারবেন, যেমনটা আমাদের নানি-দাদিরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরেছেন৷''
প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে, ঐতিহাসিক পোশাক ও বালিশে করা ঐতিহ্যবাহী প্যাটার্নগুলো এখনকার ফ্যাশনে তুলে ধরা৷
২০২১ সালে হাঙ্গেরির সরকার স্কুলে সমকামিতা বিষয়ে পড়ানো নিষিদ্ধ করা এবং এ সংক্রান্ত সাহিত্য সৃষ্টি কঠিন করে আইন পাস করার পর রংধনু রংয়ে হার্ট আঁকা টি-শার্টের বিক্রি বেড়েছে৷ প্রত্যন্ত এলাকার নানি-দাদিদের এমব্রয়ডার করা এসব পোশাক হাঙ্গেরিতে এলজিবিটিকিউদের অধিকার আন্দোলনে ভূমিকা রাখছে৷
রোৎসি ভাৎসি বলেন, ‘‘হাঙ্গেরিতে এমন অনেক বিষয় আছে যা আমাদের জীবনযাপনকে সীমিত করে, আমাদের মূল্যবোধের উপর হামলা করে৷ এসব ব্যাপারে মাটেও ডিজাইন কোম্পানির পক্ষ থেকে কিছু করতে চেয়েছিলাম আমি৷ আমি সহনশীলতা ও অকপটতার পক্ষে দাঁড়াতে চাই এবং আমরা যেন অন্যদের ট্যাগ না করি তা নিশ্চিত করতে চাই৷''
বর্তমানে হাঙ্গেরিতে সহনশীলতা ও লিঙ্গসমতাকে উৎসাহিত করে এমন কিছু করাকে মাঝেমধ্যেই উসকানি বলে ধরে নেওয়া হয়৷
রোৎসি তার কাজের মধ্যে পরিবেশের ক্ষতি কমিয়ে আনার চেষ্টা করছেন৷ সেলাই করা, এমব্রয়ডারি করা, ইস্ত্রি করা, প্যাকেটজাত করা- সবকিছু স্থানীয়ভাবে করা হয়৷ প্রতিটি প্যাকেটে যিনি এমব্রয়ডারি করেছেন তার ছবি যুক্ত করে দেওয়া হয়: সেটাও হাতে তৈরি- কোথাও তৈরি করা নয়৷
আগনেস সাবো/জেডএইচ