1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পুরস্কার ও অনুদান প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে প্রতিবাদ

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণের বিচার চেয়ে অনুদান থেকে পুরস্কার, সরকারি আনুকূল্য প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে।

আরজি করে নির্যাতিতার ন্যায়ের দাবিতে প্রতিবাদ।
আরজি কর নিয়ে প্রতিবাদ হচ্ছে নানাভাবে। রাজ্য সরকারের দেয়া পুরষ্কার ফিরিয়ে দিচ্ছেন অনেক শিল্পী, সাহিত্যিক। ছবি: Satyajit Shaw/DW

পুজো কমিটি থেকে বিশিষ্ট নাগরিকরা এই প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে জানাচ্ছেন প্রতিবাদ।

আরজি করের মর্মান্তিক ঘটনার পর প্রায় চার সপ্তাহ কেটে গেলেও প্রতিবাদের তীব্রতা কমেনি, বরং বেড়েছে। এই প্রতিবাদে সামিল হয়েছে বিভিন্ন স্তরের মানুষ। একইসঙ্গে বিভিন্ন সংগঠনও।

পুরস্কার প্রত্যাখ্যান

কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিক চলতি পরিস্থিতিতে প্রতিবাদ জানাতে সরকারের দেয়া পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন।

গত সপ্তাহে আলিপুরদুয়ারের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক পরিমল দে ‘বঙ্গরত্ন' ফিরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত জানান। ২০১৬ সালে উত্তরবঙ্গ উৎসবের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘বঙ্গরত্ন' সম্মান তুলে দেন তার হাতে।

প্রবীণ শিক্ষক বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরেই নৈরাজ্য চলছে। দুর্নীতি হয়েছে, পাশাপাশি আরজি করে যে অমানবিক ঘটনা ঘটেছে, তাতে উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলা। এই আন্দোলনের পাশে দাঁড়াতে বঙ্গরত্ন সম্মান ফিরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।'' 

নাট্যক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘দীনবন্ধু মিত্র পুরস্কার'। এই সম্মান ফিরিয়ে দেয়ার কথা জানিয়েছেন প্রবীণ নাট্যকার চন্দন সেন। সম্প্রতি শাসক দলের বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিক জুনিয়র চিকিৎসকদের সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করায় ব্যথিত এই নাট্যব্যক্তিত্ব।

প্রবীণ নাট্যকার বলেন, "আমার মনে হয়, কাঞ্চন যেভাবে সাজিয়ে কথা বলেছেন, তা রাজ্যে সরকার শিখিয়ে দিয়েছে। পরে দুঃখপ্রকাশ করেছেন, কিন্তু তাতে কী হবে! যে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রতিবাদ চলছে, সেটার কথা শুনে আমার এমন ঘেন্না লেগেছে যে মনে হয়েছে, আমি কেন পুরস্কার নিলাম। তাই পুরস্কার ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলেছি।"

অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী ফিরিয়ে দিয়েছেন রাজ্যের দেয়া বিশেষ পুরস্কার। 

নাট্য অ্যাকাডেমি সেরা নির্দেশকের পুরস্কার দিয়েছিল বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এই নির্দেশক তার সন্মান ফিরিয়ে দিয়েছেন। 

অধ্যাপক ও গবেষক অভ্র ঘোষ প্রতিবাদে ফিরিয়েছেন বিদ্যাসাগর পুরস্কার। তার আজীবন গবেষণা কর্মের স্বীকৃতি এই সম্মান। তিনি ডিডাব্লিউকে বলেন, "বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মবার্ষিকীতে পুরস্কারটা আমি পেয়েছিলাম। পুরস্কার দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের উচ্চশিক্ষা দপ্তর। হাতে তুলে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আরজি কর কাণ্ডে সরকারের ভূমিকা আমাদের কাছে অত্যন্ত দুঃখের। সেই প্রতিবাদেই আমি পুরস্কার ও তার অর্থমূল্য ফিরিয়ে দিয়েছি।"

কাঞ্চনের মন্তব্য সম্পর্কের তার প্রতিক্রিয়া, "এটা একটা কুৎসিত ও তীব্র সমালোচনাযোগ্য মন্তব্য। ক্ষমা চাইলেও তার ভিতরের মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে।"

পুরস্কার ফিরিয়েছেন চিন্তাবিদ, গবেষক আশীষ লাহিড়ী। তিনি ডিডাব্লিউকে বলেন, "আরজি করে যে নারকীয় ঘটনা ঘটেছে আর বর্তমান সরকার তাকে যেভাবে আড়াল করার চেষ্টা করছে, তা পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকদের যৌথ বিবেকে প্রচন্ড আঘাত দিয়েছে। প্রত্যাখ্যানপত্রে আমি লিখেছি, ২০২০ সালে মহান মানবতাবাদী বিদ্যাসাগরের নামাঙ্কিত যে পুরস্কার আমাকে দেয়া হয়েছিল, তা আমি প্রত্যাখ্যান করছি। এর স্মারক ও অর্থমূল্য কবে ফেরত দেব, সেটা আমাকে দয়া করে জানান।"

সুরকার শুভদীপ গুহ রাজ্য সরকারের কাছ থেকে শম্ভু মিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন। তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন এই সম্মান। কার্টুনিস্টদের সংগঠন 'কার্টুন দল' রাজ্য সরকার আয়োজিত চারুকলা মেলা বয়কট করেছে। এর আগে টানা ১০ বছর ধরে এই মেলায় তারা অংশ নিয়েছিল। কিন্তু এবার নায্য বিচারের দাবি তুলে তারা মেলায় থাকছে না।

শিল্পী সনাতন দিন্দাও রাজ্য চারুকলা পর্ষদের সদস্যপদ ছেড়ে দিয়ে বলেছেন, ভারমুক্ত হলাম। 

‘পুরস্কার ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলেছি’

This browser does not support the audio element.

এই প্রথম নয়, অতীতে রাজ্যে বিশিষ্টদের পুরস্কার ফেরানোর নজির রয়েছে। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বাম আমলের প্রগতিশীল বিদ্বজ্জনেরা যেমন পথে নেমেছিলেন, তেমনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন সরকারি সম্মাননা। সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে চলতি সময়ে।

অনুদান প্রত্যাখ্যান

পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রতি বছর দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে অনুদান দেয়। আর মাসখানেক পর পুজো। রাজ্য সরকার প্রতি কমিটিকে এবার ৮৫ হাজার টাকা অনুদান দিচ্ছে। মোট ৪৩ হাজার পুজো কমিটিকে  অনুদান দিচ্ছে রাজ্য।

হুগলির উত্তরপাড়ার তিনটি কমিটি সরকারি অনুদান নেবে না। এর মধ্যে একটি নারী পরিচালিত পুজো। বৌঠান সঙ্ঘ জানিয়েছে, আরজি করের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তারা অনুদান নেবে না। 

উত্তরপাড়া শক্তি সঙ্ঘ জেলার অন্যতম বড় পুজোর আয়োজন করে। তারা ফিরিয়ে দিচ্ছে অনুদান। এই এলাকার 'আপনাদের দুর্গাপুজো' নামের কমিটি জানিয়েছে, তারাও অনুদান নেবে না।

হুগলির কোন্নগরের একটি ক্লাব একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মাস্টারপাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি ৮৫ হাজার টাকা নেবে না। একই সিদ্ধান্ত 'মুদিয়ালি আমরা কজন' ক্লাবের। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গার্ডেনরিচ এলাকার এই পুজো কমিটির কর্তা, কংগ্রেস নেতা মহম্মদ মোক্তার বলেছেন, "হাসপাতালের মধ্যে নৃশংসভাবে এক নারী চিকিৎসককে খুন করা হয়েছে। এর প্রতিবাদ হিসাবে আমরা সরকারের দেয়া অর্থ প্রত্যাখ্যান করছি।''

মালদহের একটি নাট্যদল ফিরিয়ে দিয়েছে নাট্যমেলা আয়োজনের জন্য প্রাপ্ত সরকারি অনুদান। গত ৩১ আগস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর 'মালদহ সমবেত প্রয়াস' নামের নাট্যদল নাট্যমেলার আয়োজন করে। এজন্য আবেদনের ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গ নাট্য অ্যাকাডেমি তাদের ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেয়। সেই টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে নাটকের দলটি।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ