মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী নেত্রী অং সান সুচি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেলেও ঐ দেশের নারীরা তেমন স্বাধীন নন৷ দেশজুড়ে নারী নির্যাতনের চিত্রটা ভয়াবহ৷ এর মধ্যে নারী বক্সারের স্বর্ণ জয় অন্য নারীদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
বক্সার নিউ নি উ মিয়ানমারের রক্ষণশীল সমাজে অন্যরকম একটি ভাবমূর্তি তুলে ধরেছেন দেশের নারীদের কাছে৷ ১৯ বছর বয়সি এই নারী নিজ দেশের রাজধানী নেপিদাও-এ অনুষ্ঠিত সাউথ-ইস্ট এশিয়ান গেমস-এ বক্সিং এ স্বর্ণ জিতেছেন৷ তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ফিলিপাইন্সের নারী, যাকে বেশ কয়েক পয়েন্টে হারিয়ে বিজয় মুকুট ছিনিয়ে নেন তিনি৷
জয়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘‘বিদেশিদের সামনে এটা আমার প্রথম লড়াই এবং আমি খুশি যে এই লড়াইয়ে আমি জিতেছি এবং নিজের ভক্তদের সামনে লড়াইয়ে জয়ী হয়েছি৷'' বলেন, পরিবারের উন্নত ভবিষ্যতের জন্য তিনি এ লড়াই চালিয়ে যাবেন৷ এএফপিকে জানান, তাঁর এ অবস্থানে আসার পেছনে পরিবারের অবদান সবচেয়ে বেশি৷
২০০১ সাল থেকে নিয়মিত বক্সিং খেলে আসছেন তিনি৷ অংশ নিয়েছেন স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায়৷ কিন্তু সেগুলোতে কখনোই স্বর্ণ জেতেননি৷ এর প্রধান কারণ ছিল সমর্থন ও অর্থের অভাব৷
মেয়ে বলে কি বক্সিং-এ মানা ?
চলুন বন্ধুরা, রাগ, দুঃখ আর অভিমান ভোলার সহজ উপায় জেনে নেওয়া যাক কিশোরী জোবায়দার কাছ থেকে৷
ছবি: picture alliance/RIA Novosti
সবকিছু বালির বস্তায় ঝেড়ে ফেলতে পারি
জোবায়দা মুরাদ খেলাধুলা করতে খুবই পছন্দ করে৷ তাই সে প্রায় প্রতিদিনই ট্রেনিং-এ যায়৷ জোবায়দা মনে করে, বক্সিং করলে সব কাজেই গতি বাড়ে৷ শুধু তাই নয়, শক্তি এবং মনোযোগও বাড়ে৷ কারণ বক্সিং-এর সময় খুবই মনোযোগী হতে হয় তাকে৷
ভবিষ্যতের স্বপ্ন – ডাক্তার হবে
জোবায়দা বার্লিনের নয়ক্যোলন পাড়ায় থাকে৷ এই এলাকার ৪০ শতাংশ মানুষই অভিবাসী৷ জোবায়দার পরিবার এসেছে তুরস্ক থেকে৷ ১৫ বছরের এই মেয়েটি হাইস্কুলে পড়ে৷ স্বপ্ন, ভবিষ্যতে একজন ভালো ডাক্তার হবে৷
ছবি: Alexander Raths/Fotolia.com
মা ও মেয়ে
জোবায়দার মা কোনোভাবেই বুঝতে পারেন না, এতো রকমের খেলাধুলা থাকতে তাঁর মেয়ে কেন বক্সিং-এ আগ্রহী৷ তিনি মনে করেন, বক্সিং ছেলেদের খেলা৷
ছবি: DW/ K. Jäger
বখাটেদের থেকে দূরে থাকি
এতোটুকু বয়সেই জোবায়দা বুজতে পেরেছে, উঠতি বয়সি বখাটে ছেলেদের কাছ থেকে নিজেকে বাঁচাতে হলে শুধু মনের দিকে থেকে নয়, শারীরিকভাবেও শক্ত হতে হবে৷ তাই সে বক্সিংকেই বেছে নিয়েছে৷
ছবি: Fotolia/Kzenon
ভালো থাকতে হলে, ভালো খেতে হবে
জোবায়দা বক্সিং করতে গিয়ে শিখছে শারীরিক এবং মানসিকভাবে ফিট থাকতে হলে নানা রকম পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি প্রচুর ফল ও সবজি খাওয়া প্রয়োজন৷ যা ওর বয়সি ছেলেমেয়েদের খেতে তেমন একটা লক্ষ্য করা যায়না৷
ছবি: DW/Shoo
ফাস্টফুড
ওর বন্ধুরা সাধারণত ফাস্টফুড খেতেই বেশি পছন্দ করে, ফলে বেশিরভাগ বন্ধুই বেশ মোটা৷
ছবি: dreamer12 - Fotolia.com
পরিবারের সাথে মধুর সম্পর্ক
নিজের যে কোন সমস্যা নিয়ে পরিবারের সাথে আলোচনা করা প্রয়োজন, যা সাধারণত খাবার টেবিলেই হয়ে থাকে৷
ছবি: Kathy Banda Sikombe
‘আমিও এদেশেরই একজন’
‘অভিবাসী পরিবারের জন্ম হয়ে এবং সেরকম একটি পরিবেশে বসবাস করে জোবায়দা চায় স্কুলের অন্যদের মতো সাধারণ জীবনযাপন করতে এবং অবসর সময়ে কিছুটা কাজ করে নিজের হাত খরচ জোগাড় করতে৷
ছবি: Fotolia/Yuri Arcurs
টিনএজার-দের প্রতি জোবায়দার পরামর্শ
জীবনে কিছু পেতে চাইলে নিয়ম মেনে সময়মতো কাজ করতে হবে৷ সবকিছুরই ট্রেনিং দরকার. বক্সিং-এর মধ্য দিয়ে সে সেটা করতে পারছে৷ যা নাকি কিছুদিন আগেও তার পক্ষে করা সম্ভব ছিলোনা৷ সব বয়সেই সমস্যা আসে, যা স্বাভাবিক৷ তাই নিজের পছন্দমতো উপায় বেছে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে৷ ‘আমি রাগ, দুঃখ ভোলার জন্য বক্সিংকেই বেছে নিয়েছি’৷
ছবি: picture alliance/RIA Novosti
9 ছবি1 | 9
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ জানিয়েছে, মিয়ানমারের দুই তৃতীয়াংশ অধিবাসী নারী এবং এদের বেশিরভাগকে শ্রমের বিনিময়ে স্বল্প পারিশ্রমিক দেয়া হয়৷
বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী দেশের অধিবাসীরা বেশিরভাগই রক্ষণশীল এবং তারা সেখানকার ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরেন৷ এ কারণে সেখানে কোনো প্রতিযোগিতার আয়োজন হলে আয়োজকরা নারী ক্রীড়াবিদদের পোশাক নিয়েই বেশি ভাবনায় পড়েন৷ ফলে বাদ পড়ে যায় জিমন্যাস্টিক এবং বিচ ভলিবলের মতো অনেক খেলা৷
কিন্তু বর্তমানে মিয়ানমারের নারীরা কেবল ভলিবল নয়, ফুটবলেও ভালো করছে৷ বক্সিং এ স্বর্ণ জয়ের পর মিয়ানমারের পুরো বক্সিং দলকে বিশেষ সংবর্ধনা দেয়া হয়৷ কারণ কেবল স্বর্ণই নয়, এই দলই একটি রৌপ্য এবং দুইটি ব্রোঞ্জও জিতেছে৷
নারী অধিকারকর্মী মে সাবে পিয়ু জানালেন, ক্রীড়া যে-কোনো দেশের নারীর ভূমিকাকে সমাজে সুদৃঢ় করে৷ যখন নারী ক্রীড়াবিদ কোনো পুরস্কার জেতেন, তখন তাঁকে পুরুষের সমকক্ষ মনে করা হয়৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও সুচির মুখে একই ধরনের কথা শোনা গিয়েছিল৷ তিনি বলেছিলেন, আমরা সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চাই৷