বাতিল জিনিস যত বেশি কাজে লাগানো যায়, পরিবেশের জন্য সেটা ততই ভালো৷ ভারতের চেন্নাই শহরের এক নারী বাতিল শিপিং কন্টেইনার বাসা, অফিস বা ক্যাফে তে রূপান্তরিত করে একাধিক সমস্যার সমাধান করছেন৷
বিজ্ঞাপন
এখন দেখলে বিশ্বাস না হলেও এটা কোনো এক সময়ে শিপিং কন্টেইনার ছিল৷ এখন রূপান্তর ঘটিয়ে ও সাজসজ্জা যোগ করে ভবিষ্যতের বাসিন্দার জন্য সেটি প্রস্তুত করা হয়েছে৷ ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেটি ব্যবহার করা যাবে৷
ভানমতি ও তাঁর কোম্পানি পরিত্যক্ত কার্গো উপকরণ বাসা ও অফিসে রূপান্তর করছেন৷ ছোট করেই সেই উদ্যোগ শুরু হয়েছিল৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘শুরুর দিকে আমরা গাছের নীচে শুধু মেরামতির কাজ করতাম৷ আমাদের একটা ওয়েল্ডিং ও কাটিং মেশিন ছিল৷ শুধু আমি, আমার স্বামী ও একজন ওয়েল্ডার ছিলাম৷ তারপর কন্টেইনারের অর্ধেক অংশ নিজেদের ব্যবহারের জন্য সাজিয়ে তুললাম৷ আলো আর পাখা লাগিয়ে আমাদের মাথায় ব্যবসার আইডিয়া এলো৷ এই সব কন্টেনার দিয়ে থাকার জায়গা তৈরি করার সংকল্প নিলাম৷''
শিপিং কনটেইনারে বাঁধিবো বাসা
03:24
ভানমতি চেন্নাই ও তুতুকুড়ি বন্দর থেকে বাতিল শিপিং কন্টেনার সংগ্রহ করেন৷ তাঁর টিম সব ক্ষয়ক্ষতি মেরামত করে মরচে প্রতিরোধ করতে এক স্তর ‘প্রোটেকটিভ কোটিং' বা রং লাগায়৷ তারপর গ্রাহকের বায়না অনুযায়ী কন্টেনারগুলি সাজানো হয়৷ ভানমতি বলেন, ‘‘মানুষ তাদের কন্টেইনার অর্ডার করতে এলে মনে হয় যেন তারা পারিবারিক পিকনিকে যাচ্ছেন৷ প্রথমদিকে পুরুষরাই সব সিদ্ধান্ত নিতেন৷ আজকাল মা, মেয়ে, বউ, শাশুড়ি, অর্থাৎ, পরিবারের মেয়েরাই ডিজাইন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন৷ তারাই রং, অভ্যন্তরীণ ফিচার, জানালা, টেবিল – সবকিছু বাছাই করেন৷''
বাতিল শিপিং কন্টেইনারকে বাসায় রূপান্তরিত করতে প্রায় ২০ দিন সময় লাগে৷ রান্নাঘর, বাথরুম, জানালা ও বিদ্যুতের লাইনসহ এমন এক বাসার দাম প্রায় তিন লাখ ভারতীয় টাকা৷
কংক্রিটের তৈরি বাসভবনের তুলনায় কিছু পরিবেশগত সুবিধাও রয়েছে৷ পরিবেশ অ্যাক্টিভিস্ট জিও দামিন বলেন, ‘‘এক কিলো সিমেন্ট উৎপাদন করতে গেলে এক কিলো কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন ঘটে৷ ফলে লোহার রড ও সিমেন্ট দিয়ে তৈরি কংক্রিটের বাড়ি বিশাল পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড সৃষ্টি করে৷ তাছাড়া নির্মাণের ব্যয় প্রতিদিন বেড়েই চলেছে৷ ফলে মধ্য ও ক্ষুদ্র আয়ের মানুষের পক্ষে প্রচলিত বাসা কেনার সামর্থ্য কমে যাচ্ছে৷''
এই সব কন্টেনার শুধু সাশ্রয়ী বাসায় রূপান্তরিত করা যায় না৷ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিকদের জন্যও এটি আকর্ষণীয় হতে পারে৷ ক্যাফের মালিক হিসেবে রমেশ নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘‘আমি নিজের মতো করে নিজস্ব ক্যাফে চালু করতে চেয়েছিলাম৷ আমি সেটিকে অনন্য করতে চেয়েছিলাম৷ তাই আমি এই কন্টেনার বেছে নিলাম৷ সুবিধা হলো, এটিকে যে কোনো জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়৷ গ্রাহকদের কাছেও এটি আকর্ষণীয় এবং চালানোও সহজ৷ কারণ, এখানে কোনো ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজ নেই, আকারে ছোট এবং পকেটের নাগালের মধ্যেই রয়েছে৷''
ভানমতি এখনো পর্যন্ত তিন হাজারেরও বেশি কন্টেইনার বাসা তৈরি করেছেন৷ বেশিরভাগ কন্টেইনারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রয়েছে, তবে কোনো ইনসুলেশন নেই৷ তিনি অদূর ভবিষ্যতে হাসপাতাল ও শপিং মল তৈরির কথাও ভাবছেন৷ কন্টেইনারের সত্যি কোনো অভাব নেই৷
সেন্থিল কুমার/এসবি
জার্মানির সাতটি ভৌতিক কিন্তু সুন্দর স্থান
পরিত্যক্ত শিল্প ভবন, ভুলে যাওয়া ভিলা, অব্যবহৃত হাসপাতাল: অনেকের কাছে এগুলো চক্ষুশূল, তবে আলোকচিত্রীদের কাছে ছবির খনি৷ এখানে থাকছে সাতটি পরিত্যক্ত স্থানের কথা, যেগুলো স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে এখনো টিকে আছে৷
ছবি: Juergen Schwenkenbecher/picture alliance
দ্যসিডেন কাসেল, সাসনিৎস
বাল্টিক সাগরের উপকূলে র্যগেন দ্বীপে ব্যাংকার এডল্প ফন হান্সেমান-এর সুন্দর ভবনটির ধ্বংসাবশেষ এখনো দেখা যায়৷ বেলেপাথর, গ্রানাইট আর মার্বেল দিয়ে তৈরি এই প্রাসাদটি তৈরির সময় অন্যতম ব্যয়বহুল স্থাপনা ছিল৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর স্থাপনাটিকে কিছুদিনের জন্য শরণার্থী এবং সঙ্গনিরোধ শিবির হিসেবে ব্যবহার করা হয়৷ এরপর ১৯৪৮ সালে ইট তৈরির উদ্দেশ্যে সেটি ভাঙ্গা হয়৷ তবে, এখনো প্রাসাদটির অংশবিশেষ টিকে আছে৷
ছবি: Stefan Sauer/picture-alliance
স্যিপেনডর্ফ স্পা হোটেল, শোয়েরিন
পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে লেক শোয়েরিনে ১৯১০ সালে এই স্পা হোটেলটি তৈরি করা হয়েছিল৷ এরপর সেটির মালিকানা এবং ব্যবহার বদলেছে কয়েকবার৷ তবে হোটেলটিতে সবসময়ই কোন না কোন সমস্যা থাকতো৷ ১৯৯০ সাল থেকে সেটি পরিত্যক্ত হিসেবে পড়ে আছে৷
বর্ণবাদী কারণে নাৎসিরা যেসব ভবন হাজার হাজার বিকলাঙ্গ মানুষ, শারীরিক ও মানসিক রোগাক্রান্ত শিশু এবং বয়স্কদের হত্যা করতে ব্যবহার করেছে সেগুলোর একটি এটি৷ অসুস্থ মানুষদের হত্যাকেন্দ্রে পাঠানোর আগে এখানে এনে জড়ো করা হতো৷ ভবনটি কয়েক দশক অযত্নে পড়ে ছিল৷ তবে ২০১০ সাল থেকে এখানে ঘোরাঘুরি, কনসার্ট এবং নাটকের আয়োজন করা হয়৷
ছবি: Jens Büttner/dpa/picture alliance
হ্যোহেনশ্যুনহাউসেন প্রিজন, বার্লিন
হ্যোহেনশ্যুনহাউসেন প্রিজনের ছিল ভয়াবহ এক স্থান৷ পূর্ব জার্মানির সিক্রেট পুলিশ কয়েদিদের দিয়ে এটির বেজমেন্টে ৬০টি জানালা ছাড়া কক্ষ তৈরি করেছিল৷ সেসব কক্ষে শুধু একটি কাঠের খাট এবং বালতি ছিল৷ ২০ হাজারের বেশি রাজনৈতিক কয়েদিকে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে এসব কক্ষে৷ বর্তমানে জেলখানাটিকে একটি মেমোরিয়াল হিসেবে ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: Rolf Kremming/picture alliance
টয়ফিল্সব্যার্গ, বার্লিন
টয়ফিল্সব্যার্গ পাহাড়ের চূড়ায় মার্কিন সামরিক বাহিনীর পাঁচটি রাডার ডোম রয়েছে৷ এগুলো ব্যবহার করে নানা তথ্য সংগ্রহ করতে তারা৷ আর পাহাড়টি তৈরি করা হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ধ্বংসাবশেষ দিয়ে৷ বর্তমানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উৎসব এবং গ্রাফিতি আঁকতে স্থানটি ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: Monika Skolimowska/dpa/picture alliance
স্প্রেপার্ক, বার্লিন
একটি ভৌতিক জাহাজ, রাজহান নৌকা এবং উপড়ে ফেলা ডাইনোসরের প্রতিকৃতি - সাবেক পূর্ব বার্লিনের বিনোদন কেন্দ্রে এখন এসবই অবশিষ্ট আছে৷ অথচ অতীতে একসময় এখানে বছরে সতের লাখের মতো পর্যটক আসতেন৷
ছবি: Ole Spata/dpa/picture alliance
গ্রাবো লেক হেল্থ সেন্টার, অ্যরিনিয়েনবার্গ
জর্জ ক্লুনি এবং ম্যাট ডেমন এরইমধ্যে এখানে এসেছেন৷ তবে সেই ভ্রমণ স্বাস্থ্যগত কোন কারণে ছিল না৷ এখানে তাদের সিনেমা ‘দ্য মন্যুমেন্টস ম্যান’ এর চিত্রায়ণ করা হয়েছিল৷ বর্তমানে সেটিকে সংস্কারের দাবিতে প্রচারণা চলছে৷