পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও রাস্তায় নেমেছিলেন তিউনিশিয়া ও মিশরে
১২ এপ্রিল ২০১১গত জানুয়ারী মাসে মিশর আর তিউনিশিয়ার মহিলাদের নতুন এক ছবি দেখেছে পশ্চিমা বিশ্ব৷ কোন মহিলার মাথা স্কার্ফে ঢাকা নয়, কিশোরী, তরণী, বৃদ্ধা সবাই রাস্তায় নেমেছিলেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে৷ কর্মজীবি, ছাত্রী, গৃহিণী কেউই বাদ যায়নি৷ সবাই ছিলেন প্রতিবাদে সোচ্চার৷ দাবি ছিল একটাই – গণতন্ত্র চাই৷
কীভাবে এরা হঠাৎ করে এত বছর পর সক্রিয় হলেন? তারা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন তারা কী চান – কোনো লুকোচুরি ছাড়া, স্লোগান দিয়েছেন তিউনিশ আর কায়রোর রাস্তায়, আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন৷ একে ওপরকে জানিয়েছেন, আন্দোলনে আসতে উদ্বুদ্ধ করেছেন৷ প্রশ্ন, এবার কী তাহলে আরব বিশ্বের রাজনৈতিক পটে মহিলাদের দেখা যাবে? নাকি তারা আগের মত পিছিয়ে থাকবেন? বাবা, স্বামী, ভাই এবং ছেলের অধীন হয়েই কী সারাজীবন কাটাতে হবে?
কায়রোর নিউ ওম্যান ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আমাল আব্দেল্লাহি জানালেন, ধৈর্য ধরতে হবে৷ একদিনে সবকিছু আসবে না৷ তিনি জানান, ‘‘সবাই ভাবছে, যে এখন আমাদের একটি সংসদ হবে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হবে দেশে, নারীরা তাদের অধিকার আদায়ে আরো বেশি সোচ্চার হবেন৷ আমি মনে করি চিত্রটি হবে ভিন্ন – গণতন্ত্রের পথ অত্যন্ত দীর্ঘ, আমরা সবেমাত্র এই পথে হাঁটা শুরু করেছি৷ রাজনৈতিক দলগুলো ধীরে ধীরে উন্মোচিত হবে৷ প্রতিটি দলের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দিষ্ট কর্মসূচী থাকতে হবে৷ আর প্রতিটি ক্ষেত্রেই মহিলারা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবেন৷ তবে এটি অনেকগুলো পদক্ষেপের মধ্যে শুধুমাত্র একটি পদক্ষেপ৷''
এখনো যে অনেক কাজ বাকি তা বর্তমান সাংবিধানিক কমিশন পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে৷ এই কমিশনে কোন মহিলা নেই৷ যদিও আমাল আব্দাল্লাহির মতে সংবিধানের বিভিন্ন বিষয়ে এমন অনেক মহিলা বিশেষজ্ঞ রয়েছেন কিন্তু কমিশনে তারা পুরোপুরি অনুপস্থিত৷ মহিলাদের বিভিন্ন অধিকার আদায়ে সংঘবদ্ধ হয়েছে প্রায় বারোটি নারী সংগঠন৷ আমাল'এর কথায়, ‘‘সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ভাবে, সভ্য সমাজের নিদর্শন হিসেবে আমরা নিয়মিত রাজনীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিতর্কের আয়োজন করতে চাই৷ আমাদের দাবি নতুন একটি সংবিধান, এমন একটি সংবিধান যেখানে সূচনাতেই দেশের জনগণের কথা বলা হবে৷ মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ থাকবে না৷ পুরুষ এবং নারীকে একই দৃষ্টিতে দেখা হবে৷ ধর্ম, গোত্র, বর্ণ কোন ভূমিকা পালন করবে না৷''
তিউনিশিয়াতেও একই দাবি উচ্চারিত হয়েছে৷ সেখানে গণতন্ত্রের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন সানা বেনাশুর৷ এখন কী করা হবে তা নিয়েও অনেকেই সন্দিহান৷ বেনাশুর বললেন, ‘‘সরকার পতনের পর সামাজিকভাবেও বেশ কিছু পরিবর্তন আমাদের চোখে পড়েছে৷ নারীদের আবারো ঠেলে পিছনে পাঠিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে৷ তবে তা'তে বিশেষ কোনে সুবিধা হয়নি, কেননা আমরা দলে অনেক বেশি ছিলাম৷''
তবে মিশর আর তিউনিশিয়ার মত অবস্থা লিবিয়ায় নয়৷ সেখানে বিক্ষোভরত মহিলারা আতঙ্কিত অবস্থায় আছেন৷ বেশ কয়েকজন মহিলাকে গাদ্দাফির বাহিনী জোর করে তুলে নিয়ে গেছে৷ তাদের ছেড়েও দেয়া হয়েছে পরে৷ তারা সবাই অভিযোগ এনেছেন তাদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছে৷ বেশ কয়েকজন মহিলা গায়ে বিভিন্ন নিপীড়নের চিহ্ন দেখিয়েছেন৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী