ইন্দোনেশিয়ায় পুরুষদের বহুবিবাহে সহায়তা করছে একটি অ্যাপ৷ অ্যাক্টিভিস্টরা অবশ্য এমন অ্যাপের বিরোধিতা করে বলছেন, এটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুসলমান বাস করা দেশটিতে লিঙ্গবৈষম্য বাড়াচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
ইন্দোনেশিয়ায় পুরুষদের বহুবিবাহে সহায়তা করছে একটি অ্যাপ৷ অ্যাক্টিভিস্টরা অবশ্য এমন অ্যাপের বিরোধিতা করে বলছেন, এটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুসলমান বাস করা দেশটিতে লিঙ্গবৈষম্য বাড়াচ্ছে৷
ইন্দোনেশিয়ায় একজন পুরুষ চাইলে চারটি বিয়েও করতে পারেন, যদিও নারীর ক্ষেত্রে এই অধিকার শুধুমাত্র একটি বিয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ৷ এমন চর্চার বিরোধীরা তাই আগে থেকেই সক্রিয়৷ আর নতুন এক অ্যাপ বাজারে আসায় বিষয়টি জটিল আকার ধারণ করেছে৷
এমন নয় যে, বহুবিবাহ নতুন কিছু৷ বরং বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, হাজার হাজার বছর ধরেই এই চর্চা চলে আসছে৷ তবে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অনেক দেশে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ হয়েছে৷ শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার কয়েকটি দেশসহ এশিয়ার মুসলিমপ্রধান কয়েকটি দেশে এই চর্চা এখনো রয়ে গেছে৷ ইন্দোনেশিয়া সেসব দেশের একটি, যেখানে একজন পুরুষের একাধিক বিয়ের সুযোগ রয়েছে৷
'My grandfather had four wives, I have two'
05:48
বহুবিবাহের ক্ষেত্রে মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে মূলত ধর্মের কথা বলা হয়৷ কেননা, ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি চারটি পর্যন্ত বিয়ে করতে পারেন, যদি তার সব স্ত্রী-কে সমানভাবে ভরনপোষণের ক্ষমতা থাকে৷
ইন্দোনেশিয়ার ২৫০ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে আশি শতাংশের বেশি মুসলমান৷ দেশটিতে বহুবিবাহের হার কতটা, তা সঠিকভাবে জানার উপায় নেই, কারণ, অনেক বিয়েই নিবন্ধন করা হয় না৷ যদিও দেশটিতে মধ্যপ্রাচ্যের মতো বহুবিবাহের হার নেই, তাসত্ত্বেও সংখ্যাটি নেহাত কম নয় বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা৷
মুঠোফোন অ্যাপ নির্মাতা লিন্ডু প্রনায়মা সম্প্রতি একটি অ্যাপ বাজারে ছেড়েছেন, যা বহুবিবাহে আগ্রহী পুরুষদের সম্ভাব্য স্ত্রী খুঁজতে সহায়তা করে৷ ‘আয়ুপলিগামি'নামের অ্যাপটি ইতোমধ্যে দশ হাজারের বেশিবার ডাউনলোড হয়েছে৷ ‘আয়ুপলিগামি' কথাটির অর্থ ‘চলুন বহুবিবাহ করি৷'
‘‘বর্তমানে অনেক পুরুষ বহুবিবাহে আগ্রহী, কিন্তু গতানুগতিক ডেটিং সাইটগুলোতে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় অপশনগুলো নেই৷ এসব সাইটে দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ বিয়ে করার অপশন রাখা হয়নি,'' নিজের অ্যাপের গুরুত্ব বোঝাতে বলেন প্রনায়মা৷ তাঁর অ্যাপটি গত এপ্রিলে বাজারে ছাড়া হয়৷ ইন্দোনেশিয়ায় অনেকে এটিকে ডেটিং অ্যাপ টিন্ডারের সঙ্গে তুলনা করেছেন৷
তবে অ্যাক্টিভিস্টদের সমালোচনার কারণে সম্প্রতি অ্যাপটির নতুন এক সংস্করণ বাজারে ছেড়েছেন প্রনায়মা৷ এতে বহুবিবাহে আগ্রহী পুরুষদের আসল পরিচয় জানতে তাদের পরিচয়পত্র সংগ্রহের পাশাপাশি বর্তমানবৈবাহিক অবস্থা সম্পর্কে আরো স্বচ্ছ তথ্য প্রকাশের সুযোগ রাখা হয়েছে৷ তাছাড়া, বহুবিবাহের জন্য প্রথম স্ত্রী'র লিখিত অনুমতিপত্রও অ্যাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আবশ্যক বলে উল্লেখ করা হয়েছে৷
ইন্দোনেশিয়ার যেখানে শরিয়া আইন চালু আছে
জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম অধ্যুষিত দেশ ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের আচেহ প্রদেশে শরিয়া আইন চালু আছে৷ শাস্তি হিসেবে সেখানে বেত্রাঘাত করার পাশাপাশি মাথার চুলও কেটে নেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Mahyuddin
যেভাবে শুরু
ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে অবস্থিত আচেহ প্রদেশে এখনো শরিয়া আইন চালু আছে৷ ঐ অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন থামানোর লক্ষ্যে সরকার ২০০১ সালে ঐ প্রদেশের জন্য ‘বিশেষ স্বায়ত্তশাসন’এর ব্যবস্থা করার পরই ইসলামি শরিয়া আইন বাস্তবায়ন শুরু হয়৷ এরপর ২০০৫ সালে শান্তিচুক্তি সই হওয়ার পর আইনের প্রয়োগ আরও জোরালো হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Mahyuddin
যেসব অপরাধে শাস্তি দেয়া হয়
জুয়া খেলা, অ্যালকোহল পান করা, সমকামিতা, বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক স্থাপন ইত্যাদি নানা কারণে অপরাধীদের শাস্তি দেয়া হয়ে থাকে৷ শাস্তি হিসেবে সাধারণত বেত্রাঘাত করা হয়৷ অপরাধের ধরণ বিবেচনায় নিয়ে বেত্রাঘাতের পরিমাণ ঠিক করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Simanjuntak
অবিবাহিতদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক
সোমবার (১৩ অক্টোবর) আচেহ প্রদেশের রাজধানী বান্দা আচেহ’র একটি মসজিদ প্রাঙ্গণে শরিয়া আইন না মানার কারণে ১৩ জনকে শাস্তি দেয়া হয়৷ এর মধ্যে ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সি ছয় জোড়া তরুণ-তরুণীও ছিল৷ তাঁদের অপরাধ, বিয়ে না করেই ঘনিষ্ঠ হয়েছেন৷ শরিয়া আইন বলছে, বিয়ে না করে ছেলে-মেয়েদের একে অপরকে ছোঁয়া, চুমু দেয়া, জড়িয়ে ধরা অপরাধ৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Mahyuddin
নিভৃত স্থানে একসঙ্গে সময় কাটানো
ছয় জোড়া যুগল ছাড়াও সোমবার আরেক ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়ার কারণ, তাকে গোপন স্থানে বিপরীত লিঙ্গের একজনের সঙ্গে এমনভাবে সময় কাটাতে দেখা গেছে যা হয়ত ব্যভিচার পর্যন্তও গড়াতে পারত৷
ছবি: picture alliance/dpa/H.Simanjuntak
হাসিঠাট্টায় মগ্ন দর্শক
বেতের আঘাতে ব্যথা পেয়ে একজন তরুণী যখন চিৎকার করে কাঁদছিল তখন চারদিকে দাঁড়িয়ে জনতা সেটি উপভোগ করছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Mahyuddin
ডেপুটি মেয়রের আশা
আচেহ’র ডেপুটি মেয়র জয়নাল আরিফিনের আশা, এই ধরণের শাস্তির ব্যবস্থা করার কারণে ভবিষ্যতে নাগরিকরা শরিয়া আইন ভাঙার মতো কাজে জড়াবে না৷
ছবি: picture alliance/dpa/F.Reza
নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি
সাম্প্রতিক সময়ে আচেহ’তে শাস্তি দেয়া বেড়েছে৷ আগের চেয়ে এখন বেশি সংখ্যক নারীকে এই আইনের আওতায় শাস্তি দেয়া হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Simanjuntak
মানবাধিকার কর্মীদের প্রশংসা
না, শরিয়া আইন বাস্তবায়নের জন্য প্রশংসা নয়, বরং বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছে আচেহ প্রদেশ কর্তৃপক্ষ৷ তবে সম্প্রতি এক সিদ্ধান্তের কারণে মানবাধিকার কর্মীরা আচেহর প্রশংসা করেছে৷ সেটি হচ্ছে, চাকরিরত নারী কর্মীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয়মাস করা হয়েছে৷ ইন্দোনেশিয়ার যে-কোনো প্রদেশের চেয়ে এটি বেশি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Simanjuntak
জুয়া খেলার শাস্তি
২০১২ সালের ৫ অক্টোবরের এই ছবিতে জুয়া খেলার দায়ে এক ব্যক্তিকে শাস্তি পেতে দেখা যাচ্ছে৷ সেদিন মোট তিনজনকে এই অপরাধে শাস্তি দেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/epa/H. Simanjuntak
যে কারণে এই শাস্তি
২০১১ সালের ডিসেম্বরে ‘পাংক’ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ৷ তারপর তাদের এই শাস্তি দেয়া হয়৷ এরপর তাদের জন্য ১০ দিনের একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির ব্যবস্থা করা হয়৷ সেখানে তাদের মানসিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা দেয়া হয়৷