1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পুরুষদের মধ্যে ‘নারী রাজা’ বিবি হাকমীনা

১৫ অক্টোবর ২০১১

বিবি হাকমীনা একজন আফগান নারী৷ কিন্তু আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলের খোস্ত প্রদেশে হাকমীনা বাস করেন ঠিক একজন পুরুষের মতোই৷ স্থানীয়রা তাই তাঁকে ডাকেন ‘নারী রাজা’ হিসেবে৷

বিবি হাকমীনাছবি: DW

নারী-পুরুষের বৈষম্য নতুন কিছু নয়৷ বিশেষ করে আফগানিস্তানে৷ সহিংসতা, দুর্বল স্বাস্থ্যসেবা, দারিদ্র্য – এই সব উপাদান একযোগ হয়ে দেশটি আজ নারীদের জন্য সবচাইতে বিপজ্জনক স্থানে পরিণত হয়েছে৷ অথচ তারই মধ্যে নিজেকে পুরুষের সমকক্ষ করে তুলেছেন বিবি হাকমীনা৷ আফগানিস্তানের খোস্ত প্রদেশে যাঁকে এড়িয়ে যাওয়া যায় না কোনো মতেই৷ সেখানকার সব মানুষের কাছে হাকমীনা একনামে পরিচিত – তাঁদের ‘নারী রাজা' হিসেবে৷

হাকমীনা জানান, ‘‘মনে মনে নিজেকে আমি একজন পুরুষ হিসেবেই দেখি৷ মানসিকভাবেও আমার নিজেকে একজন পুরুষ বলেই মনে হয়৷ চলাফেরাতেও আমি একজন পুরুষ৷ আসলে কোনোদিনই আমি নিজেকে একজন নারী হিসেবে দেখি নি৷''

সত্যিই তাই৷ সেই ছোট্টবেলা থেকেই হাকমীনা পুরুষদের পোশাক পরতেই অভ্যস্ত৷ আর আজ, এই ৪০ বছর বয়সেও সেই অভ্যাসের কোনো পরিবর্তন হয় নি৷ আজও বিবি হাকমীনার পরনে ঢিলে-ঢালা পাজামা, হাঁটু পর্যন্ত লম্বা একটা কুর্তা আর মাথায় পাগড়ি৷ ঠিক একজন আফগান পুরুষের মতো৷

তবে এখানেই শেষ নয়৷ ‘নারী রাজা' বিবি হাকমীনা বাড়ির বাইরে বের হলেই সঙ্গে নেন তাঁর প্রিয় ‘কালাশনিকভ'-টি৷ তাঁর নিজের কথায়, ‘‘এ অস্ত্র আমার সর্বক্ষণের সঙ্গী৷ আমি নিজের সম্মান রক্ষার খাতিরেই সব সময় এটা সঙ্গে রাখি৷ পাস্তুনদের মধ্যে একটা কথা আছে৷ লোকে বলে, ‘অস্ত্র নিয়ে চলাফেরার ঝক্কি থাকতে পারে, কিন্তু কখনো-না-কখনো এ অস্ত্রই হয়তো তোমার জীবন বাঁচাবে৷' আমিও এ কথা বিশ্বাস করি৷''

ছবি: DW

ছেলেবেলাতে হাকমীনার বড় ভাই কাবুলে উচ্চশিক্ষার জন্য চলে যাওয়ার পর থেকেই, পরিবারের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব এসে পড়ে বিবি হাকমীনার ওপর৷ তখন তিনিই যেন বাড়ির বড় ছেলে হয়ে ওঠেন৷ মা, ছোট বোনের সম্মান রক্ষা, বাবার জমি-জমার দেখাশোনা করা – সবই করতে হয় তাঁকে৷  

বিবি হাকমীনা বিয়ে করেন নি কোনো দিন৷ তাই মাতৃত্বের স্বাদ থেকেও তিনি বঞ্চিত৷ কিন্তু, স্বামী-সংসারের বদলে মুজাহিদদের সঙ্গে একজোট হয়ে সোভিয়েত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন তিনি৷ ওষুধ-পত্র, খাদ্য-সামগ্রী, গোলা-গুলি পাচার করাও ছিল তাঁর কাজ৷ খোস্ত প্রদেশের বাসিন্দা আব্দুল কাদির জানালেন, ‘‘নারী হয়েও বিবি হাকমীনা তাঁর মাতৃভূমির জন্য লড়েছেন৷ তিনি একজন পুরুষের মতোই শক্তিশালী৷ কিন্তু তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ হলো, তিনি স্থানীয় মেয়েদের জন্য, তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করেছেন আজীবন৷''

খোস্ত প্রদেশের এই ‘নারী রাজা'-কে রান্না-বান্নার কাজের বদলে লাঙল দিয়ে জমি চাষ করতে হয়েছে৷ নিজে কোনোদিন স্কুলেও যান নি তিনি৷ কিন্তু এরপরও তালেবান জঙ্গিদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতেও ভয় পান না হাকমীনা৷ দেশের, দশের উন্নতির জন্য রাজনীতিকে বেছে নিয়েছেন তিনি৷ ধর্ম মানলেও, গণতন্ত্র এবং শান্তিই তাঁর কাছে কাম্য৷

বিবি হাকমীনা জানেন যে, দশ বছরের পশ্চিমা হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও আফগানিস্তানে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি৷ দেশটিতে আজও ৮৭ শতাংশ নারী নিরক্ষর৷ তাই খোস্ত-এর এই ‘নারী রাজা' বললেন, ‘‘এ অঞ্চলে নারীদের অবস্থা এখনও খুব করুণ৷ এখনও তাঁদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়া হয়৷ দুর্বল চিকিৎসা-সেবার কারণে সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে ১১ জন মায়ের মধ্যে ১ জন মারা যান৷ এমনকি উচ্চশিক্ষার অধিকারও তাঁদের নেই৷''

স্বাভাবিকভাবেই দ্রুত এ অবস্থার পরিবর্তন চান বিবি হাকমীনা৷ তা নাহলে পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কিভাবে এগিয়ে যাবেন আফগান নারীরা?

প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ