পুরোনো ভবন সংস্কারের ব্রত নিয়েছেন দুই স্থপতি
৩০ মার্চ ২০২৩স্থপতি হিসেবে ওন্দ্রেই চিবিক ও মিশাল ক্রিশটফ পুরানো ভবন বাঁচানোর ব্রত গ্রহণ করেছেন৷ ২০১২ সালে তাঁরা চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগ থেকে ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ব্র্যুন শহরে এক দফতর প্রতিষ্ঠা করেন৷
১৯৯২ সালে তৈরি একটি ভবনও সেখানে রয়েছে৷ আগে সেখানে গাড়ির দোকান ছিল৷ আজ এক চেক আসবাবের কোম্পানি ভবনটিকে শোরুম হিসেবে ব্যবহার করছে৷ গোটা ভবনটিকে কোম্পানির তৈরি ৯০০ প্লাস্টিক চেয়ার দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে৷
সেই সমাধানসূত্র শুধু অর্থ ও বিদ্যুৎ সাশ্রয় করছে না, কোম্পানির নিজস্ব পরিচয় আরও স্পষ্ট করে তুলে ধরছে৷ ভবনের ভেতরের অংশ সংস্কার করে আধুনিক রূপ দেওয়া হয়েছে৷ তিনটি বিভাজনযোগ্য অংশে কোম্পানির পণ্যের সম্ভার শোভা পাচ্ছে৷
একেবারে নতুন নির্মাণের তুলনায় ভবন সংস্কারের ব্যয়ের মাত্রা ছিল অনেক কম৷ তবে ওন্দ্রেই চিবিকের কাছে সেটাই একমাত্র জরুরি বিষয় নয়৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার মতে, এমন তাজা এক ভবন ভেঙে ফেলার কোনো অর্থ হয় না৷ সেটা মোটেই টেকসই প্রক্রিয়া নয়৷ স্থাপত্যের প্রতি আমাদের মনোভাবের মাধ্যমে আমরা ভবনটি বাঁচিয়েছি৷ যেমনটা দেখছেন, সব উপকরণ রক্ষা করেছি৷ ভবনটি এখন সবার পরিচিত, একটা প্রতীক হয়ে উঠেছে৷ কেউ আর এই ভবনটি ধ্বংস করবে না৷''
৫০ জনেরও বেশি টিমসহ এই দুই স্থপতি মূলত ইউরোপেই বিভিন্ন প্রকল্পের রূপায়ন করেন৷ সেগুলির মধ্যে নতুন নির্মাণের প্রকল্পও রয়েছে৷ যেমন চেক প্রজাতন্ত্রের দক্ষিণে জনাইম শহরের কাছে ভিনিয়ার্ডের একটি ভবন৷ বর্তমানে তাঁরা চেক প্রজাতন্ত্রের সবচেয়ে উঁচু ভবন ‘ওস্ট্রাওয়া টাওয়ার'-এ কাজ করছেন৷ ২৩৫ মিটার উচ্চতার ভবনটির কাজ ২০২৭ সালে শেষ হবার কথা৷
তবে পুরানো ভবনের সংস্কারই দুই স্থপতির হৃদয় সবচেয়ে বেশি স্পর্শ করে৷ ওন্দ্রেই চিবিক বলেন, ‘‘আমার মতে, সভ্যতা হিসেবে আমরা ইতোমধ্যেই যথেষ্ট নির্মাণের কাজ করেছি৷ অস্তিত্ব রয়েছে, এমন কিছু নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে চাই৷ অতীতের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত প্রেক্ষাপট বোঝার চেষ্টা করে সেটির রূপান্তর বা তাতে সমসাময়িক কিছু যোগ করতে চাই৷''
দুই স্থপতির কাছে কোনো ভবনের ইতিহাস এবং ভবনটির উৎপত্তির সময়ের প্রতিফলনেরও মূল্য রয়েছে৷ এমনকি ব্রুটালিস্ট শৈলিতে তৈরি ব্র্যুন শহরের বাস স্টেশনেরও গুরুত্ব দেখেন তাঁরা৷ অনেকে সেটিকে দেশের সমাজতান্ত্রিক অতীতের কালো ছায়া মনে করেন৷ ওন্দ্রেই মনে করেন, ‘‘এমন ভবনেরও একটা সৌন্দর্য রয়েছে, সেগুলি আমাদের ইতিহাসের অংশ৷ সেগুলি ভেঙে ফেলার অর্থ আমরা যেন আমাদের ইতিহাসের এই অংশ এড়িয়ে যাচ্ছি৷ আমার মতে, সেটা ভুল হবে৷''
রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ১৯৮৮ সালে তৈরি রেল স্টেশনের বেহাল অবস্থা হয়েছিল৷ ছাত্র বয়সে দুই স্থপতিই সেই স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করেছেন৷ ২০১১ সালে তাঁরা স্টেশন ভবনের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন৷ ওন্দ্রেই চিবিক বলেন, ‘‘একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের শহরের এমন গুরুত্বপূর্ণ এক জায়গা এত খারাপ অবস্থায় রয়েছে জেনে আমার খুব লজ্জা হয়েছিল৷ অবস্থার উন্নতি করতে সাহায্য করতে পেরে আমরা খুশি৷''
স্টেশনের সংস্কারের জন্য তাঁদের হাতে সব মিলিয়ে ৫০ লাখ ইউরো ছিল৷ সেই কাজের আওতায় তাঁরা ছাদের কাঠামোয় সাদা রং করেছেন, নতুন আলোকসজ্জা বসিয়েছেন, এনট্রেন্স হল বানিয়েছেন এবং প্ল্যাটফর্মের নতুন বিন্যাস করেছেন৷
ওন্দ্রেই চিবিকের কাছে সেই কাজ মোটেই স্থাপত্যের মাইলফলক ছিল না৷ শহরের মানুষের জন্য উন্নতি আনাই ছিল সেই প্রয়াসের লক্ষ্য৷ তিনি বলেন, ‘‘পেশাদার ব্যক্তি ও স্থপতি হিসেবে আমাকে নিজেদের বিশেষ ক্ষমতার প্রতি বিশ্বাস রাখতেই হয়৷ আমরা ঠিকমতো ও সাফল্যের সঙ্গে কাজ করলে সেই উদ্যোগ হয়তো সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে অবদান রাখতে পারে৷
চিবিক ও ক্রিশটফ দেখিয়ে দিচ্ছেন, যে তার জন্য সব সময়ে নতুন ভবনের প্রয়োজন হয় না৷
রুবেন কালুস/এসবি