শখ যখন পেশায় পরিণত হয়, তখন কার না ভালো লাগে? ব্রিটেনের এক তরুণ লন্ডন-প্যারিসের মতো শহরের অভিনব ছবি তুলে অসংখ্য মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন৷ ছবি বিক্রিও শুরু হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
শহরকে নতুন করে চেনায় সিজার কাট
02:21
এমনভাবে বোধহয় কেউ কখনো লন্ডন শহরের বিখ্যাত জায়গাগুলি দেখেনি৷ প্যারিস শহরেরও এমন সব ছবি তুলেছেন রিচ ম্যাককর৷ বয়স ২৮৷ ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা এক লাখেরও বেশি৷ ‘পেপারবয়ো' নামেও পরিচিত এই ফটোগ্রাফার বলেন, ‘‘ইনস্টাগ্রামের সদস্য হবার পর বুঝলাম, আমি বাকিদের মতোই লন্ডনের একই ছবি তুলি – সেই লন্ডন আই, বিগ বেন, বাকিংহাম প্রাসাদ ইত্যাদি, তাতে কী লাভ? আমি অন্য ছবি তুলতে চেয়েছিলাম৷ তখন বিগ বেন-কে হাতঘড়িতে পরিণত করার আইডিয়া এলো৷''
যে আট ছবি জয় করেছে সেরার পুরস্কার
২০১৫ সালে গোটা বিশ্বে অন্যতম আলোচনার বিষয় ছিল শরণার্থী সংকট৷ এই সংকট সম্পর্কিত এক ছবি চলতি বছর ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো অব দ্যা ইয়ার’ নির্বাচিত হয়েছে৷ চলুন দেখা যাক, পুরস্কারজয়ী আরো কয়েকটি ছবি৷
ছবি: Rohan Kelly/Daily Telegraph
ওয়ারেন রিচার্ডসন, অস্ট্রেলিয়া
সার্বিয়া-হাঙ্গেরি সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার নীচ দিয়ে একটি শিশুকে আরেকজনের হাতে তুলে দিচ্ছেন এক পুরুষ৷ এই ছবি চলতি বছর ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো অ্যাওয়ার্ড’ জয় করেছে৷ সাদা-কালো ছবিটিতে শরণার্থী সংকটের করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে৷
ছবি: Warren Richardson
মোরিসিও লিমা, ব্রাজিল
লিমা গত বছর আগস্টে সিরিয়ায় এই ছবিটি তোলেন৷ ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো প্রতিযোগিতার সাধারণ সংবাদ বিভাগে এই ছবিটি প্রথম পুরস্কার জয় করেছে৷ ছবিতে ‘ইসলামিক স্টেটের’ ১৬ বছর বয়সি এক যোদ্ধার পুড়ে যাওয়া শরীরে চিকিৎসককে মলম লাগাতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Mauricio Lima/The New York Times
ঝাং লি, চীন
চীনের উত্তরাঞ্চলে কুয়াশায় ঢেকে যাওয়া তিয়ানজিন শহরের এই ছবিটি তোলা হয় গতবছরের ডিসেম্বর মাসে৷ সমসাময়িক বিষয় বিভাগে প্রথম পুরস্কার জয় করেছে ছবিটি৷
ছবি: Zhang Lei/Tianjin Daily
কেভিন ফ্রেয়ার, কানাডা
চীনের সানক্সিতে কয়লানির্ভর একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশের রাস্তায় ত্রিচক্রযান টানছেন এক চীনা নাগরিক৷ ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটোর নিত্যদিনের জীবন বিভাগে প্রথম পুরস্কার জয় করেছে ছবিটি৷
ছবি: Kevin Frayer/Getty Images
মেরি এফ. কালভার্ট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প বিভাগে প্রথম পুরস্কার জয় করেছে ২০১৪ সালের মার্চে তোলা এই ছবিটি৷ ছবিতে ২১ বছর বয়সি নাতাশা শ্যুটেকে দেখা যাচ্ছে, যিনি এক সহকর্মীর হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার শিকার হওয়ার পর অভিযোগ করায় মার্কিন সামরিক বাহিনীর পুরস্কার জয় করেন৷ সাহসিকতার জন্য তাঁকে এই খেতাব দেয়া হয়েছিল৷
ছবি: Mary F. Calvert
রোহান কেলি, অস্ট্রেলিয়া
আতঙ্কিত হওয়ারও সময় নেই! সিডনির বন্ডি সমুদ্রতটের কাছে যখন একটি মেঘ সুনামি সৃষ্টি হচ্ছিল, তখনও বই পড়ছিলেন সূর্যস্নানরত এক নারী৷ গত বছর নভেম্বরে তোলা ছবিটি প্রকৃতি বিভাগে সেরা পুরস্কার জয় করে৷
ছবি: Rohan Kelly/Daily Telegraph
মাটিচ জর্মান, স্লোভেনিয়া
মানুষ বিভাগে এই ছবিটি প্রথম পুরস্কার জয় করে৷ সার্বিয়ার কাছে একটি শরণার্থী কেন্দ্রে নিবন্ধনের আশায় রেইনকোট পড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক শিশুকে দেখা যাচ্ছে ছবিতে৷
ছবি: Matic Zorman
ক্রিস্টিয়ান ভালগ্রাম, অস্ট্রিয়া
ভালগ্রাম গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত এফআইএস ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ চলাকালে ছবিটি তোলেন৷ ক্রীড়া বিভাগে সেরা পুরস্কার জয় করেছে এটি৷
ছবি: Christian Walgram/GEPA pictures
8 ছবি1 | 8
রিচ ম্যাককর কর্মসূত্রে লন্ডনে এসেছিলেন৷ ফটোগ্রাফি শুধু তাঁর হবি ছিল৷ সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে তিনি নিত্য-নতুন ফ্যান পেয়ে চলেছেন৷ ফলে হবিকেই তিনি পেশা করতে চান৷ শহরে ঘোরাফেরার সময়ে তিনি এমন সব গল্প শুনতে পান, যা তাঁকে প্রেরণা যোগায়৷ রিচ বলেন, ‘‘অনেক লোকেশনকে ঘিরে এমন সব ঘটনা, মজার গল্প ও তথ্য রয়েছে৷ অনেকগুলি ছবির সঙ্গে আবার সেই জায়গার সঙ্গে কোনো সম্পর্কই নেই৷ দেখতে বেশ মজার, যেমন প্যারিসের আর্ক অফ ট্রায়াম্ফের উপর লেগোম্যান৷ এর মাধ্যমে ছবিগুলিকে আমি আলাদা মাত্রা দিতে চাই৷ লন্ডনে ছবি তোলার সময় শহর সম্পর্কে অনেক নতুন বিষয় জানতে পেরেছিলাম৷ ছবির মধ্যে সে সব ঢোকাতে চেয়েছিলাম৷''
রিচ-এর কোনো স্টুডিও নেই৷ যেখানেই চলমান অফিস বসানোর সুযোগ রয়েছে, তিনি সেখানেই কাজ করেন৷ তাঁর ‘সিজার কাট' ছবি দেখতে সহজ মনে হলেও তার বৈশিষ্ট্যই হলো খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে ভালোবাসা৷
রিচ ম্যাককর তাঁর ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন, কারণ ‘সিজার কাট'-এর কারণে সেগুলি দৃষ্টি আকর্ষণ করে৷ খুবই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়৷ কিছু কোম্পানি নিজেদের বিজ্ঞাপনে ব্যবহারের জন্য ছবি কিনতে শুরু করেছে৷ একে সাফল্যের পথে প্রথম ধাপ বলা চলে৷
ইনস্টাগ্রাম লেন্সের চোখে বার্লিন
বার্লিনে ফেব্রুয়ারি মাস মানেই ধূসর, বরফে ঢাকা, বৃষ্টি-ভেজা পরিবেশ৷ কিন্তু ইনস্টাগ্রামের ফটোগ্রাফারদের জন্য এর আলাদা আকর্ষণ রয়েছে৷ কী দেখেন তাঁরা নিজেদের লেন্সের চোখে? বার্লিনে ইনস্টাগ্রামের জগতেই বা কী চলছে?
ছবি: Instagram/Tobias Koch
কুৎসিত, অথচ আকর্ষণীয়
বার্লিন শহর নোংরা, ধূসর, কুৎসিত৷ যুদ্ধের ক্ষতচিহ্নের অভাব নেই৷ অনেক বাড়িঘর কিছুটা তৈরি হয়ে পড়ে আছে, অথবা ভেঙে দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু সেটাই তো চোখে পড়ার মতো! বার্লিন প্রাচীর পতনের পর থেকে মুক্তি ও সৃজনশীলতার তাগিদ অনুভব করা যায় বলে মনে করেন মিশায়েল শুলৎস৷ তিনিই ইনস্টাগ্রামে বার্লিনের সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাকাউন্ট @berlinstagram-এর স্রষ্টা৷
ছবি: Instagram/Michael Schulz
মোবাইল নয়, আসল ক্যামেরার কারসাজি
‘আমার ফোন কখনো কাদায় পড়ে যায়নি’ – গর্ব করে এ কথা বলতে পারেন ক’জন? মোবাইল ফোনের ক্যামেরার অনেক উন্নতি সত্ত্বেও লিন্ডা ব্যার্গ (@lindaberlin) কিন্তু তাঁর পেশাদারী ডিএসএলআর ক্যামেরার উপরই নির্ভর করেন৷ সেই ক্যামেরার অনেক কারসাজি দিয়ে অভিনব প্রেক্ষাপটে শহরের স্থাপত্য তুলে ধরেন তিনি৷
ছবি: Instagram/Linda Berg
বাড়ির উঠানেই জীবনের কাহিনি
ডকুমেন্টরি ফটোগ্রাফার কারোলিন ভাইনকফ (@careauxphotography) বার্লিনের সদা পরিবর্তনশীল দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ছবি তোলেন৷ ইনস্টাগ্রাম যেন তাঁর ভার্চুয়াল ডায়রি৷ ধৈর্য ধরে সব সময়ে ‘মোটিফ’-এর সন্ধান করে বেড়ান তিনি৷ আচমকা অসাধারণ মুহূর্ত উঠে আসে চোখের সামনে৷ প্রস্তুত না থাকলেই সেটি চিরকালের জন্য হাতছাড়া হয়ে যায়৷
ছবি: Instagram/Carolin Weinkopf
লেন্সের সামনে খাদ্যের সমাহার
মুখে জল আনা খাবার-দাবার ক্যামেরাবন্দি করার চেষ্টা করেন এৎসগি পোলাট (@ezgipolat)৷ তবে ফিল্টার নয়, স্বাভাবিক আলোতেই ছবি তুলতে ভালেবাসেন তিনি৷ স্থানীয় বাজার থেকে তাজা ফলমূল, তরিতরকারি এনে সুন্দরভাবে সাজিয়ে দেন তিনি৷ হাটেও আনাগোনা রয়েছে তাঁর৷ শহরের কোন পাড়ায় কবে কোন হাট বসে, সে খবর তাঁর ঝুলিতে রয়েছে৷
ছবি: Instagram/Ezgi Polat
অন্যদের সঙ্গে আদান-প্রদান
খুঁটিনাটি নিয়ে মাথা ঘামানো বৃথা বলে মনে করেন মিশায়েল শুলৎস৷ আনাড়ি ফটোগ্রাফারদের জন্য তাঁর পরামর্শ – নিখুঁত ছবির বদলে নিজস্ব আগ্রহের মোটিফ ও গল্প বলার ভঙ্গি গড়ে তোলাই মূল কাজ৷ স্থানীয় ফটোগ্রাফারদের কাজ দেখতে, চলতি প্রবণতা বুঝতে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা উচিত (যেমন #igersberlin, #berlin, #kreuzberg)৷ ছবির ‘জিওট্যাগিং’ করাও জরুরি৷
ছবি: Instagram/Michael Schulz
মোটিফ সর্বত্র, প্রস্তুত থাকা চাই
ফটোগ্রাফার হিসেবে টোবিয়াস কখ (@tokography) আরও ব়্যাডিকাল হতে পিছপা হন না৷ তিনি ব্যস্ত রাজপথের মাঝখানে গিয়ে সবার ভ্রূকুটি অগ্রাহ্য করে ছবি তোলেন৷ ফোনের ক্যামেরাই তাঁর সঙ্গী৷ সেটি কখনো হাত ফসকে কাদায় পড়েনি৷ বিষয় বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনো ছুতমার্গ নেই তাঁর৷ রাস্তার গর্ত থেকে শুরু করে দোকানের জানালা – যে কোনো জায়গায় আকর্ষণীয় মোটিফ খুঁজে পাওয়া যেতে পারে৷