ইমাম ভাতা চালু করেছিলেন আগেই। এ বার চালু করলেন পুরোহিত ভাতা। তারপরেই বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়।
বিজ্ঞাপন
ভোট এলেই ক্ষমতাসীন দল বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে খুশি করতে দানছত্র খুলে বসে। দুই হাতে তারা সুযোগ-সুবিধা বিলি করতে থাকে। অবশ্যই ভোটপ্রাপ্তির উদ্দেশ্যে। পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেটাই করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দিন কয়েক আগে তিনি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছেন। এক, রাজ্যে আট হাজার পুরোহিতকে প্রতিমাসে এক হাজার টাকা করে ভাতা দেয়া হবে। এর আগে তিনি ইমাম-ভাতা চালু করেছিলেন। এ বার পুরোহিত-ভাতা চালু করলেন। দুই, দলিত সহিত্য একাডেমী গঠন করা। তিন, মতুয়া উন্নয়ন পর্ষদ পুনর্গঠন করা।
এই সিদ্ধান্তগুলি নিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সব চেয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে তাঁর প্রথম সিদ্ধান্ত অর্থাৎ, পুরোহিতদের মাসে এক হাজার টাকা ভাতা দেয়া নিয়ে। এই সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি হলো, ''ইমাম-মোয়াজ্জেমরা সামাজিক কাজ করেন। তাই সরকারের থেকে ভাতা পান। হিন্দুদের মধ্যে এমন কিছু নেই। সনাতন ধর্মে ব্রাক্ষ্মণরা পুজো করেন, তাঁদের অনেকের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। তাঁরা আমাদের কাছে আবেদন করেছিলেন। এমন আট হাজার আবেদন পেয়েছি।''
অর্থাৎ, ভোটের আগে গরিব ব্রাক্ষ্মণ পুরোহিতদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য সরকার জানিয়েছে, তাঁদের বাড়িও বানিয়ে দেয়া হবে। কোলাঘাটে সনাতন হিন্দু তীর্থস্থানের জন্য এক টাকায় জমি দেয়া হয়েছে।
ধর্মের রাজনীতি ও তরুণ প্রজন্ম
ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রসার ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে উৎসাহ, উদ্বেগ দুই-ই আছে৷ আর সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক দল ও ইসলামপন্থিদের উত্থানের বিষয়টিকে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ৷ ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে কী ভাবছে আজকের প্রজন্ম?
ছবি: Reuters
পিয়ান মুগ্ধ নবীর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের শিক্ষার্থী পিয়ান মুগ্ধ নবীর কাছে ধর্ম বিষয়টা পুরোপুরি ব্যক্তিগত হলেও রাজনীতি ব্যক্তিগত বিষয় নয়৷ তবে ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে তিনি কখনোই সমর্থন করেন না৷
ছবি: DW
শিবরাজ চৌধুরী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী শিবরাজ চৌধুরী৷ তার মতে, ধর্ম এবং রাজনীতি কখনোই এক হতে পারে না৷ ধর্মের মূল বিষয় মনুষত্ব বা মানুষের মধ্যকার শুভবোধ৷ তবে ধর্মের নামে যদি কখনো মৌলবাদ কিংবা চরমপন্থা চলে আসে, সেটা কখনোই গ্রহনযোগ্য নয়৷
ছবি: DW
শিহাব সরকার
ঢাকার একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী শিহাব সরকার৷ তার মতে, ধর্ম ধর্মের জায়গায় আর রাজনীতি রাজনীতির জায়গায়৷ বলা বাহুল্য, ধর্মের নামে রাজনীতি তিনিও সমর্থন করেন না৷
ছবি: DW
আসিফ হামিদী
আসিফ হামিদীও মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন৷ তিনিও মনে করেন ধর্ম এবং রাজনীতি কখনোই এক হতে পারে না৷ তাই ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ঘোর বিরোধী তিনি৷
ছবি: DW
মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর
ঢাকার একটি মাদ্রাসা থেকে উচ্চশিক্ষা শেষ করেছেন মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর৷ তাঁর মতেও রাজনীতি ধর্মভিত্তিক হতে পারে না৷ তবে আল্লাহ এবং রাসুলের কিংবা ইসলামের উপর কোনোরকম আঘাত আসলে তার বিরোধীতা করা সব মুসলমানের নৈতিক দ্বায়িত্ব বলে মনে করেন তিনি৷
ছবি: DW
সাদমান আহমেদ সুজাত
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদমান আহমেদ সুজাত৷ তাঁরও ঐ এক কথা৷ ‘‘ধর্ম এবং রাজনীতি কখনো এক হতে পারে না৷’’ তিনি জানান, ‘‘ধর্ম আমরা সাধারণত জন্মগতভাবে পাই, কিন্তু রাজনীতিকে আমরা অনুসরণ করি৷’’
ছবি: DW
সাজ্জাদ হোসেন শিশির
ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন শিশির৷ তাঁর মতে, রাজনীতি সবসময়ই ধর্ম নিরপেক্ষ হওয়া উচিত৷ তাঁর বিশ্বাস, ধর্মের সঙ্গে রাজনীতিকে মিশিয়ে ফেললে তার ফল কখনো ভালো হয় না৷
ছবি: DW
দাউদুজ্জামান তারেক
ঢাকার আরেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দাউদুজ্জামান তারেক মনে করেন, রাজনীতির সঙ্গে ধর্মের কখনো মিল হতে পারে না৷ কারণ বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা একই রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসরণও করতে পারেন৷
ছবি: DW
8 ছবি1 | 8
বিরোধীদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী পুরোহিতদের দিকে যে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এবং যে ঘোষণা করেছেন, তা ধর্মের ভিত্তিতে। ২০১৬-র নির্বাচনের আগে যখন তিনি ইমাম-মোয়াজ্জেমদের ভাতা দেয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন, তখনও সমালোচনা হয়েছিল যে ধর্মের ভিত্তিতে কেন সুবিধা দেয়া হবে? এ বারও সেই একই সমালোচনার মুখে পড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি সকলেই তাঁর এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে। অভিযোগ উঠেছে রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে মেশানোর।
রাজ্যের বিরোধী নেতা আব্দুল মান্নান ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''রাজ্যের দায়িত্ব হলো বেকারদের চাকরি দেয়া, দারিদ্র্য দূর করা, উন্নয়নের কাজ করা। তা হলে ধর্ম, জাত, বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই তার সুফল পাবেন। কিন্তু মমতা সেই কাজ না করে এখন বিজেপি-র পথে হাঁটছেন। এটা দুর্ভাগ্যজনক। এরপর তো বৌদ্ধ, জৈন সহ সব ধর্মের থেকেই এই দাবি উঠবে। এই ভাবে ভাতা দেয়া সরকারের কাজ নয়।''
সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হান্নান মোল্লা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''একটি অ-বিজেপি দল আরএসএস ও বিজেপি-র সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামছে, কে কতটা সাম্প্রদায়িক, তা নিয়ে। মমতা আগে ইমামদের ভাতার কথা বলে মুসলিম ভোট পওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এই নির্বাচনের আগে তিনি পুরোহিতদের ভাতার কথা বলে হিন্দু ভোটকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন।'' তাঁর মতে, ''আরএসএস ও বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার কথা প্রচার করার চেষ্টা করছে। সেই জায়গায় মমতার উচিত ছিল ধর্মনিরপেক্ষ সকলকে একজোট করা। কিন্তু তিনি উল্টে সাম্প্রদায়িক পথ নিচ্ছেন।''
ধর্ম ও রাষ্ট্রের মধ্যে পৃথককরণ
তৃতীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসনের আমল থেকে ‘‘ধর্ম ও রাষ্ট্রের মধ্যে বিচ্ছেদ’’ কথাটি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে চালু৷ বিভিন্ন দেশের সংবিধানে এই সমস্যার মূল্যায়ন ও সমাধান আজও আলাদা৷ তার কিছু নমুনা৷
ছবি: Jewel Samada/AFP/Getty Images
অস্ট্রেলিয়া
কমনওয়েলথ দেশটির সংবিধানে কোনো ধর্ম প্রতিষ্ঠা বা সরকারি পদ গ্রহণের জন্য কোনো ধর্ম পরীক্ষা নিষেধ করা আছে৷ অপরদিকে যে কোনো ধর্ম মুক্তভাবে পালন করার অধিকার দেওয়া হয়েছে৷ (ছবিতে সিডনির সংসদ ভবনের উপর অস্ট্রেলিয়ার লোগো)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/L. Coch
ব্রাজিল
ব্রাজিলের বর্তমান সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে; কোনো রাষ্ট্রীয় গির্জা প্রতিষ্ঠা নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ সরকারি কর্মকর্তাদের ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে কোনো ধরনের ‘‘জোট গঠন বা নির্ভরতা’’ নিষিদ্ধ৷ (ছবিতে ব্রাজিলের কনগ্রেসো নাসিওনাল বা জাতীয় কংগ্রেস, যার দুই কক্ষ হলো সেনেট এবং চেম্বার অফ ডেপুটিজ)৷
ছবি: Voishmel/AFP/Getty Images
চীন
গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সংবিধানে বলা হয়েছে, ‘‘কোনো সরকারি বিভাগ, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি নাগরিকদের কোনো ধর্মে বিশ্বাস করতে বা না করতে বাধ্য করতে পারবে না; এছাড়া যে সব নাগরিক কোনো ধর্মে বিশ্বাস করেন অথবা করেন না, তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য করা চলবে না৷’’ (ছবিতে বেইজিং-এর গ্রেট হল অফ দ্য পিপল, যেখানে প্রতিবছর ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/How Hwee Young
ফ্রান্স
ধর্ম ও রাষ্ট্রের বিচ্ছেদকে ফরাসিতে বলা হয় ‘লাইসিতে’৷ ফ্রান্সে ধর্ম ও রাজনৈতিক ক্ষমতাকে পরস্পরের থেকে আলাদা রাখার চেষ্টা করা হয়েছে৷ একদিকে যেমন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ থেকে সুরক্ষিত করার চেষ্টা করা হয়েছে, অপরদিকে সরকারি ক্ষমতাকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির প্রভাবমুক্ত রাখার চেষ্টা করা হয়েছে৷ (ছবিতে প্যারিসের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি বা জাতীয় সম্মেলন)৷
ছবি: picture-alliance/ZB/M. Tödt
জার্মানি
জার্মান সংবিধানে ধর্মের স্বাধীনতার গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে, যদিও জার্মানিতে গির্জা ও রাষ্ট্রের মধ্যে পুরোপুরি বিচ্ছেদ নেই৷ সরকারিভাবে স্বীকৃত গির্জাগুলিকে পাবলিক কর্পোরেশনের মর্যাদা দেওয়া হয়, তাদের প্রাপ্য কিছু কিছু কর সরকার আদায় করে দেন – তবে বিনামূল্যে নয়৷ ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক পাঠ্য বিষয় নয়৷ (ছবিতে বার্লিনের বুন্ডেসটাগ বা জার্মান সংসদ)৷
ছবি: imago/Schöning
জাপান
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন দখলদারির সময় ধর্ম ও রাষ্ট্রের বিচ্ছেদ সংক্রান্ত মার্কিন ধ্যানধারণা জাপানে আরোপিত হয়৷ জাপানের সংবিধানে ধর্মপালনের স্বাধীনতা সুরক্ষিত করা হয়েছে, অপরদিকে সরকার ধর্মপালনের জন্য কোনোরকম চাপ দিতে পারবেন না, অথবা কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে সরকারি অর্থ ব্যয় করতে পারবেন না৷ (ছবিতে টোকিও-র সংসদভবন)৷
ছবি: Reuters
সুইজারল্যান্ড
সুইশ কনফেডারেশনের ফেডারাল সংবিধানে ‘‘ধর্ম ও বিবেকের স্বাধীনতা’’-র গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে৷ বিশেষভাবে বলা হয়েছে যে, ‘‘কোনো ব্যক্তিকে একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ে যোগ দিতে বা অঙ্গ হতে, কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে বা ধর্মীয় নির্দেশ অনুসরণ করতে বাধ্য করা চলবে না’’৷ (ছবিতে বার্ন শহরের বুন্ডেসহাউস বা ফেডারাল প্যালেস, যেখানে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির অধিবেশন বসে)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Klaunzer
যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যের চার্চ অফ ইংল্যান্ডের প্রধান হলেন ব্রিটিশ নৃপতি স্বয়ং, তিনিই গির্জার উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের নিয়োগ করেন৷ হাউস অফ লর্ডস-এও ২৬ জন বিশপের আসন আছে৷ সব সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যে গির্জা ও রাষ্ট্রের মধ্যে যোগাযোগ সীমিত, যুক্তরাজ্যে সরকারি শাসনও অপেক্ষাকৃতভাবে ধর্মনিরপেক্ষ৷ ব্রিটেনের অলিখিত সংবিধান অনুযায়ী অপরাপর ধর্মীয় গোষ্ঠীও ব্যাপক স্বাধীনতা উপভোগ করে৷ (ছবিতে প্যালেস অফ ওয়েস্টমিনস্টার)৷
ছবি: Mohammad Karimi
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
গির্জা ও রাষ্ট্রের বিচ্ছেদ সম্পর্কে জেফারসনের প্রখ্যাত উক্তি মার্কিন সংবিধানে উল্লিখিত নেই৷ ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্টে বলা হয়েছে যে, ‘‘(মার্কিন) কংগ্রেস কোনো ধর্ম প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে, বা মুক্তভাবে ধর্মপালন নিষিদ্ধ করে কোনো আইন প্রণয়ন করবে না’’৷ (ছবিতে ক্যাপিটল হিল-এ মার্কিন কংগ্রেসের আসন)৷
ছবি: Jewel Samada/AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
বিজেপি-র প্রশ্ন হলো, এত বছর মুখ্যমন্ত্রী কী করছিলেন? যুব বিজেপি-র সর্বভারতীয় সম্পাদক সৌরভ শিকদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''এটা নির্বাচনের আগের গিমিক মাত্র। আমি আজকের একটা ঘটনা বলি। আজ গরিব পরিবারের লোকেরা তর্পণ করতে এসেছিলেন। গতবার আমাদের সভাপতি জে পি নাড্ডা যেখানে তর্পণ করেন, আমরা সেখানেই আয়োজন করেছিলাম। পুলিশ আমাদের করা মঞ্চ ভেঙে দেয়। আমরা বলি, শুধু গরিবরা তর্পণ করবেন। কিন্তু পুলিশ মঞ্চ ভেঙে দেয়। তাঁরা অন্য ঘাটে গিয়ে তর্পণ করেছেন। পুরোহিতদের ভাতা দিয়ে হিন্দুবিরোধী নীতি ঢাকতে পারবেন না মুখ্যমন্ত্রী।''
বিরোধী সবকটি রাজনৈতিক দলেরই অভিযোগ, তৃণমূল নেত্রী ধর্মের নামে ভোট পাওয়ার চেষ্টা করছেন। এমনকী যে বিজেপি-র বিরুদ্ধে হামেশা এই অভিযোগ ওঠে, তারাও একই কথা বলছে। এই দলগুলি মনে করে, ব্যর্থতা ঢাকতে মুখ্যমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''হঠাৎ ভোটের মুখে কেন পুরোহিত ভাতার কথা মনে পড়ল? এটা সরকারের ব্যর্থতা ও হতাশার চেহারা। যেখান থেকে যেভাবে হোক কিছু ভোট ম্যানেজ করার চেষ্টা। ইমাম ভাতা দিয়ে মুসিলম, পুরোহিত ভাতা দিয়ে হিন্দুদের খুশি করার চেষ্টা। মানুষকে উনি ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করে দিয়ে ধর্মকে নিজ রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছেন।'' সুজন চক্রবর্তীর মতে, ''ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়কে ব্যবহার করে বন্দোবস্ত করাটা আমাদের দেশের রাজনৈতিক শিষ্ঠাচারের সঙ্গে, সংবিধানের সঙ্গে যায় না।''
এর পাশাপাশি মমতা জানিয়েছেন, দলিত সাহিত্য একাডেমী গঠন করা হবে। সেখানে নমঃশূদ্র, মতুয়া, বাগদি, বাউরি, কোল, মাঝি সহ সকলের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। দলিতদের সাহিত্য ও তাঁদের যন্ত্রণার কথা একাডেমী তুলে ধরবে। সূত্র জানাচ্ছে, এর পিছনে প্রশান্ত কিশোর বা পিকে-র অবদান আছে। তিনি তৃণমূলের প্রচারের দায়িত্ব নিয়ে দেখেছিলেন, দলিতদের মধ্যে বিজেপি-র প্রভাব বাড়ছে। সেই জায়গায় তৃণমূলের আধিপত্য ফিরিয়ে আনর জন্য চেষ্টা করার কথা বলেছিলেন তিনি। একই দিনে তাই ব্রাক্ষ্মণ পুরোহিত, দলিত ও মতুয়াদের খুশি করতে চেয়ে তিনটি সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন মমতা।
ইতিমধ্যেই এক সাহিত্যিক তির্যকভাবে ফেসবুকে ব্রাক্ষ্মণ সাহিত্য একাডেমী গঠন করার দাবি তুলেছেন। বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, জাতপাতভিত্তিক এই ধরনের প্রয়াস আগে হলেও খুব সূক্ষ্ণভাবে হয়েছে। এটা ভালো না খারাপ সেটা অন্য প্রসঙ্গ। দলিতদের ক্ষমতায়ণ অবশ্যই স্বাগতযোগ্য। কিন্তু ভোটের জন্য জাতপাতের ব্যবহার মানা যায় না। ফলে সেই সমালোচনাও শুনতে হচ্ছে তৃণমূল নেত্রীকে।