পুটিনের সঙ্গে আবার মাক্রোঁর ফোনে কথা। মাক্রোঁর মতে, রাশিয়া পুরো ইউক্রেন দখল করতে চায়।
বিজ্ঞাপন
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত থামাবার জন্য বারবার কূটনৈতিক পথে আলোচনার চেষ্টা করছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ। তিনি আবার ফোন করেছিলেন পুটিনকে। দেড় ঘণ্টা ধরে দুই নেতার মধ্যে কথা হয়েছে। এরপর মাক্রোঁর ঘনিষ্ট সূত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ফোনে কথা বলার পর ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেছেন, পুটিন পুরো ইউক্রেন দখল করতে চান। পুটিন নিজেও বলেছেন, তিনি ইউক্রেনকে নব্য-নাৎসিদের হাত থেকে বাঁচাতে শেষপর্যন্ত যাবেন।
মাক্রোঁর মতে, পুটিনের সঙ্গে কথা বলে তার মনে হয়েছে, আরো ভয়ংকর সময় আসছে। তার জন্য প্রস্তুত থাকা দরকার। পুটিনও জানিয়ে দিয়েছেন, তাদের অভিযান পরিকল্পনামাফিক চলছে। তিনি নব্য-নাৎসীদের হাত থেকে পুরো ইউক্রেনকে মুক্ত করতে চান। তিনি মনে করেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মানুষের মধ্যে কোনো ফারাক নেই।
মাক্রোঁ পরে টুইট করে বলেছেন, ''পুটিন ইউক্রেনে হামলা থামাতে রাজি নন। কিন্তু মানবিক বিপর্যয় রোধ করতে আলোচনা দরকার। আমি সেই প্রয়াস চালিয়ে যাব। আমাদের আরো ভয়ংকর পরিণতি এড়িয়ে যেতে হবে।''
এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমা দেশগুলি চাইছে, রাশিয়া যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইউক্রেন থেকে সেনা সরিয়ে নিক। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেছেন, রাশিয়াকে অবিলম্বে ইউক্রেন থেকে সেনা সরাতে হবে। নাহলে তারা দীর্ঘদিন ধরে একঘরে হয়ে থাকবে। পুটিন যাবতীয় আন্তর্জাতিক আইন ভেঙেছেন। তিনি নিজের কাজের জন্যই এত নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছেন। এখন তিনি একঘরে হয়ে থাকবেন নিজের কাজের জন্যই।
রাশিয়া-ইউক্রেন লড়াইয়ের সাতদিন
সপ্তম দিনে লড়াই আরো তীব্র হয়েছে। ইউক্রেনের একটি শহর রাশিয়া দখল করেছে বলে সরকারিভাবে জানিয়েছে।
ছবি: Emilio Morenatti/dpa/AP/picture alliance
খেরসন রাশিয়ার কব্জায়
খেরসনের রাস্তায় রাশিয়ার সেনা ট্রাক। বুধবার রাতে রাশিয়া জানিয়েছে, অঞ্চলটি তারা দখল করে নিয়েছে।
ছবি: REUTERS
ইউক্রেনের বক্তব্য
খেরসনের মেয়র জানিয়েছেন এলাকা এখনও তাদের দখলে। লড়াই চলছে। পেন্টাগনও একই কথা বলেছে। খেরসনের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে রাশিয়ার ট্যাঙ্ক এবং সাজোয়া গাড়ি।
ছবি: REUTERS
কিয়েভের চিত্র
কিয়েভের খুব কাছে লাগাতার বোমা এবং রকেট ছুঁড়ছে রাশিয়া। ইউক্রেনের সেনাও পাল্টা জবাব দিচ্ছে।
ছবি: Alexander Ermochenko/REUTERS
ভাঙা ব্রিজে ইউক্রেনের সেনা
কিয়েভের খুব কাছে বোমার আঘাতে ভেঙে গেছে এই সেতুটি। ভাঙা সেতু পার করে শহরে ঢোকার চেষ্টা করছেন ইউক্রেনের সেনা। সেতু মেরামত করার চেষ্টাও চলছে।
ছবি: Emilio Morenatti/AP/picture alliance
বিস্ফোরণের ছবি
কিয়েভের খুব কাছে ইউক্রেনের শহর বরোদিয়াঙ্কা। সেখানে রাশিয়ার সেনার সঙ্গে ইউক্রেনের সেনার তীব্র সংঘর্ষ হয়েছে। জ্বলছে রাশিয়ার ট্যাঙ্ক।
ছবি: Alisa Yakubovych/EPA-EFE
বাড়িতে আগুন
কিয়েভের খুব কাছে একটি বাড়িতে রকেট এসে লেগেছিল। দাউ দাউ করে জ্বলছে বাড়িটি।
ছবি: Alisa Yakubovych/EPA-EFE
কিয়েভ রেল স্টেশন
রাজধানীর রেল স্টেশনের বাইরে সশস্ত্র পাহারায় দেশের সেনা বাহিনী। স্টেশন কার্যত ঘিরে রেখেছে তারা।
ছবি: Oleg Petrasyuk/EPA-EFE
স্টেশনে ভিড়
কিয়েভ রেল স্টেশনে সবচেয়ে ভিড়। সকলে ট্রেনে চড়েই পালানোর চেষ্টা করছে। কারণ, ট্রেনই হলো কিয়েভ থেকে বাইরে যাওয়ার সবচেয়ে নিরাপদ রাস্তা।
ছবি: Lafargue Raphael/abaca/picture alliance
মেয়েদের অগ্রাধিকার
স্টেশনে মেয়েদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তাদেরই ট্রেনে চড়তে দেওয়া হচ্ছে। এক বাবা মেয়েকে বিদায় জানাচ্ছেন। ইউক্রেনের সেনা সমস্ত পুরুষকে লড়াইয়ে যোগ দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছে।
ছবি: Dimitar Dilkoff/AFP
খারকিভের ছবি
খারকিভের অবস্থা ভয়াবহ। সেখানে তীব্র লড়াই চলছে। শহরজুড়ে বোমা ফেলছে রাশিয়া। চলছে রকেট হানা। খারকিভ সিটি সেন্টার এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
ছবি: Sergey Bobok/AFP
ভাঙা ঘর
কিয়েভের খুব কাছে গোরেঙ্কা শহরের ছবি। বোমার আঘাতে ভেঙে গেছে বাড়ি। তারই মধ্যে জিনিসপত্র খুঁজে বেড়াচ্ছেন এই নারী।
ছবি: Vadim Ghirda/AP/picture alliance
১০ লাখ শরণার্থী
জাতিসংঘের সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, ১০ লাখ ইউক্রেনীয় দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। অন্যদেশে শরণার্থীর জীবন যাপন করছেন তারা। আরো কিছুদিন লড়াই চললে সংখ্যাটি ৪০ লাখে পৌঁছাবে বলে আশঙ্কা।
ছবি: Arafatul Islam/DW
12 ছবি1 | 12
তবে পুটিন যে এই সব কথা বা চাপকে গ্রাহ্য করছেন না, তা মাক্রোঁর সঙ্গে তার দীর্ঘ ফোনালাপে স্পষ্ট হয়ে গেছে।
কী কথা হয়েছে
পুটিনকে মাক্রোঁ বলেছেন, তিনি নিজের কাছেই মিথ্যা কথা বলছেন এবং একটা বড় ভুল করছেন। মাক্রোঁর এক সহযোগী সংবাদসংস্থাকে বলেছেন, ''আপনারা বুঝতে পারছেন, কোন পর্যায়ে গেলে একজন প্রেসিডেন্ট আরেকজন প্রেসিডেন্টকে বলতে পারেন, আপনি মিথ্যা কথা বলছেন।'' তিনি জানিয়েছেন, ''প্রেসিডেন্ট পুটিন এমন কোনো কথা বলেননি, যাতে আমরা আশ্বস্ত হতে পারি। তিনি সেনা অভিযান চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।''
সংবাদসংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, মাক্রোঁ পুটিনকে সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, রাশিয়াকে এর ফল ভোগ করতে হবে এবং সেটাও দীর্ঘদিন ধরে। মাক্রোঁ বলেছেন, রাশিয়াকে দীর্ঘদিন ধরে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থাকতে হবে।
খাদ্য, ওষুধের সংকট আর আতঙ্কের শহর কিয়েভ
কয়েকদিন আগেও ইউরোপের অন্য দেশগুলোর রাজধানীর মতোই শান্তিময় ব্যস্ততার শহর ছিল কিয়েভ৷ রাশিয়ার হামলা শুরুর পর বদলে গেছে সব৷ ইউক্রেনের রাজধানীর মানুষের এখন পর্যাপ্ত খাবার, ওষুধ নেই, নেই জীবনের নিরাপত্তা...
ছবি: Emilio Morenatti/AP/picture alliance
সার্বক্ষণিক আতঙ্ক
রাশিয়ার সেনাবাহিনীর হামলার প্রধান লক্ষ্য রাজধানী কিয়েভ৷ হঠাৎ হঠাৎ তাই বোমার আঘাতে কেঁপে উঠছে কিয়েভ৷ ওপরের ছবিতে তেমনই এক হামলার পর জায়গাটি ঘুরে দেখছেন ইউক্রেনের এক সেনাসদস্য৷
ছবি: Efrem Lukatsky/AP/dpa/picture alliance
রাজধানীবাসীর দুর্বিষহ জীবন
১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সি পুরুষদের যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য দেশে থাকার নির্দেশ দিয়েছে ইউক্রেন সরকার৷ বাকিদের অনেকেই কিয়েভ ছেড়েছেন৷ যারা এখনো আছেন, তারা পড়ছেন নানা সমস্যায়৷ খাবার এবং ওষুধও শেষ হয়ে যাওয়ায় সুপারমার্কেট, মুদি দোকান, ফার্মেসি কিংবা এটিএম বুথের সামনে ভিড় করছেন তারা৷ সোমবার সুপারমার্কেটের সামনে অনেক মানুষকে টানা দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন ডয়চে ভেলের আলেক্সান্দার সাভিৎস্কি৷
ছবি: Lilia Rzheutska/DW
সাবোটাজের আশঙ্কায় কড়া নিরাপত্তা
রাশিয়ার কোনো সমর্থক হঠাৎ হামলা চালাতে পারে- এই আশঙ্কায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে কিয়েভে৷ ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল প্রায় বন্ধ৷ সব গাড়িতে চলছে ব্যাপক তল্লাশি৷
ছবি: Aytac Unal/AA/picture alliance
হাসপাতালেও আতঙ্ক
রাশিয়ার হামলার আশঙ্কায় হাসপাতালের রোগীদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ জায়গায়৷ বেশিরভাগ হাসপাতালে রোগীদের ঠাঁই হয়েছে বেসমেন্টে৷ ওপরের ছবিতে ওখমাদেত শিশু হাসপাতালে সন্তানকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছেন এক মা৷
ছবি: Emilio Morenatti/AP/picture alliance
বেসমেন্টেই চিকিৎসাসেবা
ওখমাদেত শিশু হাসপাতালের বেসমেন্টে রোগীদের অসুস্থতাজনিত সব তথ্য লিখে নিচ্ছেন এক নার্স৷
ছবি: Emilio Morenatti/AP/picture alliance
হাসপাতাল যখন বিকল্প আশ্রয়কেন্দ্র
রাশিয়ার বোমা হামলা থেকে বাঁচতে রোগীদের পরিবারের সদস্যরাও আশ্রয় নিয়েছেন ওখমাদেত শিশু হাসপাতালের বেসমেন্টে৷
ছবি: Emilio Morenatti/AP/picture alliance
নিরুপায় অবস্থান
যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য শুধু ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সি পুরুষদেরই দেশ না ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে ইউক্রেন সরকার৷ শিশু অসুস্থ, তাই নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও অন্য শহর বা দেশে যেতে পারেননি ছবির এই মা-শিশুরা৷
ছবি: Emilio Morenatti/AP/picture alliance
রেল স্টেশনে আশ্রয়
রাশিয়ার হামলার আঘাত থেকে বাঁচতে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন ট্রেন স্টেশনে৷
কিয়েভ ট্রেন স্টেশনের এটি এখন নিয়মিত দৃশ্য৷ পোল্যান্ডগামী ট্রেনের অপেক্ষায় হাজারো মানুষ৷
ছবি: Chris McGrath/Getty Images
হেঁটে অন্য দেশে...
রাশিয়ার হামলা শুরুর পর থেকে প্রায় সব বিদেশিই ইউক্রেনের পাশের দেশগুলোতে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন৷ অনেকে হেঁটেই পাড়ি দিয়েছেন দীর্ঘ পথ৷ ওপরের ছবিতে কিয়েভ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ভারতীয় শিক্ষার্থীর হেঁটে হাঙ্গেরিতে পৌঁছানোর মুহূর্ত৷
ছবি: ATTILA KISBENEDEK/AFP/Getty Images
10 ছবি1 | 10
পুটিনের অবস্থান
মাক্রোঁকে পুটিন বলেছেন, তিনি শেষ দেখে ছাড়বেন। এবং তিনি যে পরিকল্পনা করে এগিয়েছিলেন, সবকিছু সেইমতোই চলছে।
পুটিন এটাও জানিয়ে দিয়েছেন, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদীদের যে লড়াই হচ্ছে, তাতে তিনি কোনো সমঝোতা করতে চান না।
দুই নেতার সম্পর্ক
ফরাসি প্রেসিডেন্টের সহযোগীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবারের ফোনে কথা খুবই খোলাখুলি হয়েছে। অধিকাংশ সময়েই তারা শান্তভাবে আলোচনা করেছেন। প্রেসিডেন্ট পুটিন খোলাখুলি কথা বলেন এবং সরাসরি কথা বলেন। কখনো কখনো তিনি অধৈর্য হয়ে পড়ছিলেন। কিন্তু আলোচনার মধ্যে কোনো টেনশন ছিল না।
দুই নেতা এই আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। ইউক্রেনের বিষয়ে এই নিয়ে তিনবার দুই নেতার ফোনে কথা হলো।