প্যারিসে প্রায় দুই হাজার অবৈধ শরণার্থী শিবির উচ্ছেদ করেছে পুলিশ, যে শিবিরের বাসিন্দা সোমালিয়া ও আফগানিস্তানের মতো সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীরা৷
বিজ্ঞাপন
শরণার্থী শিবির উচ্ছেদকে রাজনৈতিক পদক্ষেপ বলে মনে করছেন ফরাসি অভিবাসন নীতির সমালোচকরা৷
মঙ্গলবার ফরাসি কর্তৃপক্ষ প্যারিসের উত্তরে একটি বিশাল অভিবাসী শিবির তুলে দিয়েছে, যে অবৈধ শিবিরটি সেন্ট ডেনিস শহরতলীর ফ্রেঞ্চ জাতীয় স্টেডিয়াম দ্য স্ট্যাড ডি ফ্রান্সের পাশেই ছিলো৷
পুলিশ জানিয়েছে, বর্তমান কোভিড -১৯ মহামারির সংক্রমণ এড়াতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে৷ শরণার্থীদের সহায়তা সংস্থা জানিয়েছে, শিবিরটিতে প্রায় দুই হাজার উদ্বাস্তুর মধ্যে শিশুসহ পরিবারও ছিলো৷ শিবিরের বাসিন্দাদের এবার রাস্তায় থাকতে হবে বলে আশঙ্কা শরণার্থী বিষয়ক আইনজীবিদের৷ অভিবাসীরা সেই শিবিরে খুবই খারাপ অবস্থায় ছিলেন বলে জানিয়েছেন ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন৷ উচ্ছেদ হওয়া অভিবাসী আশ্রয়প্রার্থীরা এসেছে মূলত আফগানিস্তান, সোমালিয়া, সুদান সহ অন্যান্য সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল থেকে৷ তাদের থাকার আশ্রয়কেন্দ্র বা তাঁবুগুলো ছিলো মূলত প্লাস্টিক এবং হার্টবোর্ডের তৈরি৷ কর্তৃপক্ষ অভিবাসীদের উচ্ছেদ করতে গিয়ে তাদের বাসে ওঠার নির্দেশ দেয়, অভিবাসীরা হুড়োহুড়ি করে বাসে উঠতে গেলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়৷ পুলিশ শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে শরণার্থীদের মধ্যে টিয়ার গ্যাস ছড়িয়ে দেয়৷ উচ্ছেদ করা শিবিরে সকলের জন্য জায়গা অপর্যাপ্ত ছিলো বলে জানান সলিডারিটি অভিবাসন সংগঠন উইলসনের স্বেচ্ছাসেবক ফিলিপ ক্যারো৷ উচ্ছেদের ফলে কিছু মানুষ রয়ে যাবে যাদের রাস্তায় ঘুমোতে হবে বলেও মনে করেন তিনি৷ গত কয়েক বছরে প্যারিসের আশেপাশে কয়েক ডজন শিবির উচ্ছেদ করেছে ফরাসি পুলিশ৷
শরণার্থী শিবির উচ্ছেদের সমালোচনা করেন ফরাসি অভিবাসন নীতির সমালোচকেরা৷ শরণার্থীদের মূল সমস্যার সমাধান না করেই শিবির উচ্ছেদকে একটি রাজনৈতিক প্রতীকী পদক্ষেপ বলে মনে করেন তারা৷
এনএস/কেএম (ডিপিএ, রয়টার্স)
গতবছরের জানুয়ারির ছবিঘরটি দেখুন...
প্যারিসে অভিবাসী উচ্ছেদ!
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের একটি ক্যাম্প উচ্ছেদ করেছে পুলিশ৷ চ্যাপেল রিং ব্রিজের নীচের এই অস্থায়ী এ ক্যাম্প উচ্ছেদের কিছু দৃশ্য দেখুন...
ছবি: REUTERS/B.Tessier
ব্রিজের নীচে বসবাস
প্যারিসের চ্যাপেল রিং ব্রিজের নীচে আবাস গড়ে তুলেছিলেন অবৈধ অভিবাসীরা৷ গত তিন-চার মাস যাবত এখানেই তাবু টানিয়ে অবস্থান করছিলেন তাঁরা৷ স্টোভে রান্না আর আশেপাশের স্টেশন ও শপিংমলের বাথরুমে গোসল ও অন্যান্য কাজ সেরে নিতেন তাঁরা৷
ছবি: REUTERS/B.Tessier
৩০০ জন
পুলিশ জানিয়েছে রিং ব্রিজের নীচে আবাস স্থাপনকারী অভিবাসন প্রত্যাশীর সংখ্যা ৩০০-র কাছাকাছি৷ এর মধ্যে শিশু ও কিশোরও রয়েছে৷
ছবি: REUTERS/B.Tessier
তাঁদের দেশ
চ্যাপেল ব্রিজের নীচে অবস্থান নেওয়া অভিবাসন প্রত্যাশীদের অধিকাংশই সুদান, সোমালিয়া এবং আফ্রিকার অন্যান্য দেশের নাগরিক বলে জানায় পুলিশ৷ তবে আফগানিস্তানের অভিবাসনপ্রত্যাশীও রয়েছেন এই দলে৷
ছবি: REUTERS/B.Tessier
অবৈধদের জন্য কঠোর ফ্রান্স
ফ্রান্সের প্রশাসন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আশ্রয় দিতে নারাজ না হলেও অবৈধদের প্রতি বরাবরই কঠোর৷ এ নিয়ে গত ৩ বছরে পঞ্চম অভিবাসী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করলো প্যারিস পুলিশ৷
ছবি: REUTERS/B.Tessier
প্যারিসের প্রতি বেশি নজর!
এ পর্যন্ত উচ্ছেদের যতগুলো ঘটনা ফ্রান্সের পুলিশ ঘটিয়েছে তার সবই প্যারিসে৷ ২০১৫ সালে এই চ্যাপেল ব্রিজ থেকেই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় সহিংসতার ঘটনা ঘটে৷ ২০১৬ সালে প্যারিসের স্ট্যালিনগ্রাদ মেট্রো স্টেশন থেকে উচ্ছেদ করা হয় ৩ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী৷ ২০১৭ সালে ফের চ্যাপেল ব্রিজে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়৷
ছবি: REUTERS/B.Tessier
কোথায় যান অভিবাসীরা
উচ্ছেদকৃত অভিবাসনপ্রত্যাশীদের শহরের বাইরে সরকার নিয়ন্ত্রিত একটি আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে প্যারিসের পুলিশ৷ শহর ও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷
ছবি: REUTERS/B.Tessier
স্বাস্থ্য ঝুঁকি
এভাবে খোলা আকাশের নীচে তাঁবুতে প্রচন্ড শীতে থাকা তিনশ’ অভিবাসী নিজেদের জন্য বিপদ ডেকে আনছেন৷ এতে বিপদে পড়তে যাচ্ছে অভিবাসী সেবাদানকারী সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও৷ তাঁদের সবাইকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পুলিশ৷
ছবি: REUTERS/B.Tessier
সম্বল কম্বল
এসব অভিবাসনপ্রত্যাশীকে যখন উচ্ছেদ করা হয়, তখন তাঁরা তাঁদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়েই পুলিশের গাড়িতে ওঠেন৷ সেই সময় দেখা যায়, গুটি কয়েক শীতের কাপড় ও কম্বল ছাড়া তাঁদের তেমন কিছু নেই৷
ছবি: REUTERS/B.Tessier
শরণার্থী নীতিমালা
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই শরণার্থীদের আশ্রয়ের ব্যাপারে একটি নীতিমালা গ্রহণ করেন৷ ওই নীতিমালায় ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১২ হাজার শরণার্থীকে অভিবাসী হিসেবে আশ্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়৷ সে মোতাবেক কাজও করে যাচ্ছে ফ্রান্স প্রশাসন৷