পুলিশের কারণে যেন নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়: সিইসি
২২ নভেম্বর ২০১৮
সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে পুলিশের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা৷ বৃহস্পতিবার তিনি বলেছেন, পুলিশ প্রশাসনের কারণে যেন নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, তা লক্ষ্য রাখতে হবে৷
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা-বিষয়ক বিশেষ সভাটি হয় রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে৷ বিশেষ সভায় সিইসি এসব কথা বলেন৷ সেখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ১২ দফা নির্দেশনা দেন সিইসি৷
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় এবং ভোটের আগে-পরে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রাখতে দেয়া ১২ দফা নির্দেশনায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান জোরদার করা, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নারী ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়া নির্বিঘ্ন করা এবং ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা ও নির্বাচনি মালামালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেয়া হয়৷
পুলিশের ভূমিকা যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে যেন প্রশ্ন না ওঠে সেজন্য কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করেন সিইসি৷ এর মধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়া৷ বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে অনেক কর্মকর্তা অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন৷
‘‘বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহ করার কথা আমরা বলিনি,'' হুদা বলেন৷ ‘‘এটা আপনারা করবেন না৷ কারণ, এটা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে৷ যাঁরা ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, তাঁরা বিব্রত হন৷ আমরা এটা চাই না৷''
কারো সম্পর্কে খোঁজ নিতে হলে গোপনে নেয়া যেতে পারে বলে জানান তিনি৷
এছাড়া বিনা ওয়ারেন্টে কাউকে গ্রেপ্তার না করার কথা বলেন সিইসি৷
‘‘তফসিল ঘোষণার পর কাউকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার করবেন না, মামলা করবেন না৷ কাউকে হয়রানিমূলক মামলা বা গ্রেপ্তার করা যাবে না,
পুলিশের কাছ থেকে অন্য বাহিনীগুলো আইন-শৃঙ্খলার বিভিন্ন পর্যায়ের তথ্য ও পরামর্শ নেবে'' বলে জানান সিইসি৷
এছাড়া ১৫ ডিসেম্বরের পর সশস্ত্র বাহিনীর ছোট ছোট দল কাজ শুরু করবে বলেও জানান তিনি৷
‘‘১৫ ডিসেম্বরের পর সশস্ত্র বাহিনীর ছোট টিম পুলিশের সাথে দেখা করবে,'' হুদা বলেন৷ ‘‘প্রতি জেলায় থাকবে সশস্ত্র বাহিনীর ছোট টিম৷ এদেরকে নিয়ে সমন্বয় করে কাজ করবেন৷ তাদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করে রাখতে হবে৷ অন্যান্য বাহিনী ও ম্যাজিস্ট্রেটকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করবেন৷''
সভায় নির্বাচন কমিশনাররা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ইসি সচিব, অতিরিক্ত সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, পুলিশের আইজি, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক, ডিএমপি কমিশনারসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা৷
কর্মকর্তাদের অপসারণ চায় বিরোধী জোট
এদিকে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রশাসনের অন্তত ৯০ জন কর্মকর্তার প্রত্যাহার দাবি করেছে বিএনপি ও তাদের প্রাধান্যে গঠিত ঐক্যফ্রন্ট৷ বিএনপির মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে এ দাবি জানায় তারা৷
বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে ইসি সচিবের কাছে কর্মকর্তাদের তালিকার চিঠিটি জমা দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল৷
বিএনপির প্যাডে মির্জা ফখরুল স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদসহ জনপ্রশাসনের কয়েকজন সচিব, জ্যেষ্ঠ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কয়েকজন জেলা প্রশাসকের নাম রয়েছে৷
আরেক তালিকায় রয়েছে পুলিশের শীর্ষ পর্যায় থেকে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ৭০ জন কর্মকর্তার নাম৷
দক্ষিণ এশিয়ার নির্বাচন কমিশনগুলো
বাংলাদেশ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা উঠে যাবার পর দক্ষিণ এশিয়াতে কেবল পাকিস্তানেই এটি চালু আছে৷ তবে এ অঞ্চলে যেমন রাজতন্ত্র আছে, তেমনি আছে এশিয়ার সবচেয়ে পুরনো গণতন্ত্রও৷
ছবি: Wakil Kohsar/AFP/Getty Images
বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন
বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৯ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি ও সংসদ নির্বাচন, ভোটার তালিকা তৈরি, নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণ, সকল স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচন ও আনুষঙ্গিক কার্যাদির সুষ্ঠু সম্পাদন কমিশনের দায়িত্ব৷ কমিশন স্বাধীন এবং কেবল সংবিধান ও আইনের অধীন হবেন। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল কর্তৃপক্ষের কর্তব্য।
ছবি: DW/M. M. Rahman
ভারতের নির্বাচন কমিশন
ভারতের নির্বাচন কমিশন পাঁচটি স্বায়ত্ত্বশাসিত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের একটি৷ মূলত লোক সভা, রাজ্য সভা, রাজ্যের বিধানসভা, প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজন করার দায়িত্ব কমিশনের৷ এছাড়া কোনো বিশেষ সময়ে যখন বিদ্যমান আইনে সুরাহা হচ্ছে না, তখন নির্বাচন কমিশনের সেখানে ‘যথাযথ উপায়ে’ ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা আছে৷
ছবি: A.K Chatterjee
পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন
পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে৷ কোনো সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হবার পর বা কোনো কারণে সংসদ বিলুপ্তির পর এই সরকার দায়িত্ব নেয়৷ তারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে৷ তবে নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের৷ কমিশন জাতীয়, প্রাদেশিক ও অন্যান্য স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করে৷
ছবি: AAMIR QURESHI/AFP/Getty Images
শ্রীলঙ্কার নির্বাচন কমিশন
এশিয়ার সবচেয়ে পুরোনো গণতন্ত্র হলো শ্রীলঙ্কা৷ সেখানেও রাষ্ট্রপতি, সংসদ, প্রাদেশিক ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের৷
ছবি: AP
মালদ্বীপের নির্বাচন কমিশন
মালদ্বীপে আলাদা নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে মাত্র এক দশক আগে৷ ২০০৮ সালের আগষ্টে এই স্বাধীন কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়৷ এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয় নির্বাচন আয়োজন করত৷ পরে এই অফিসটি রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের অধীনে চলে যায়৷ রাষ্ট্রপতিই কমিশনার নিয়োগ দিতেন৷
ছবি: ADAM SIREII/AFP/Getty Images
নেপালের নির্বাচন কমিশন
১৯৫০ সালের নেপাল বিপ্লবের মধ্য দিয়ে নেপালের নির্বাচন কমিশনের জন্ম৷ এটি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান৷ শুধু জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন অনুষ্ঠানই নয়, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের নিবন্ধন করার দায়িত্ব রয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশনের কাঁধে৷ ছয় জন কমিশনারের সমন্বয়ে গঠিত কমিশন ছয় বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে৷
ছবি: PRAKASH MATHEMA/AFP/Getty Images
ভূটানের নির্বাচন কমিশন
ভূটানে রাজতন্ত্র আছে৷ তবে সংসদও আছে৷ সংসদের নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন৷ প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, সংসদের স্পিকার, জাতীয় কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলের প্রধানের দেয়া তালিকা থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও দুইজন কমিশনারকে নিয়োগ দেন রাজা৷ কমিশনের ক্ষমতাও অনেক৷ নির্বাচন ছাড়াও বিধি তৈরি, নির্বাচন পদ্ধতি রিভিউ করাসহ যে কাউকে তলব, তদন্ত ও কিছু অ্যাডজান্কটিভ ক্ষমতা রয়েছে৷
ছবি: AP
আফগানিস্তানের নির্বাচন কমিশন
যুদ্ধ-বিগ্রহ আর সহিংসতার কারণে আফগানিস্তানে ক্ষমতা বারবার পরিবর্তিত হয়েছে৷ সে অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন বা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষমতাতেও তার প্রভাব পড়েছে৷ তবে সংবিধান অনুযায়ী, রেফারেন্ডাম, রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে একেবারে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের৷